#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ১৯
.
“চুপ করবা তোমরা। ফুপি তুমিও ওনার সাথে শুরু করলা? আমাকে দেখে কি জোকার মনে হচ্ছে? মা-ছেলে দু-টোই এক, হু।”
আমার কথা শুনে ফুপি থামার চেষ্টা করলেও তাসফি ভাইয়া আরও জোরে হেঁসে উঠলো। বললেন,
“তুই তো একটা মাথামোটা গাধী। প্রথম দিনেই নিজের সেয়ানাগিরী দেখাতে গেছিলি, তারপর কি হলো? নিজের ফাঁদে নিজেই পা দিলি। আমি না থাকলে যে আরও নাকানি চুবানি খেতি, সেটা কিন্তু নিশ্চিত।”
“আপনি…. আপনি, আপনার জন্যই এমনটা হয়েছে। ”
বলেই একটু শ্বাস নিলাম জোরে, তারপর আবারও ফুপির দিকে তাকিয়ে রাগ রাগ চোখে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,
“সব তোমার ছেলের দোষ। আমাকে একা একা ভেতরে যেতে বলেছিলো কেন? আমি কি জানতাম নাকি এমন হবে? তোমার ছেলেকে বলে, ওদের সাথে উনিও কেন আমার পিছনে লেগেছিলো? আর এখন তুমিও ওনার সাথে যুক্ত হয়েছো, তাই না?”
সামনের এই দুই মানব মানবীকে সবচেয়ে অসহ্যকর বলে মনে এই মুহুর্তে আমার কাছে। কারণটা হয়তো তাদের দাঁত কেলিয়ে হাসিটা দেখে। এই মা-ছেলে যে একদম একই ধাচের, সেটা ঠিক বোঝা হয়ে গেছে আমার। লাগামবিহীন হেঁসেই চলেছে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে। তাদের হাসি দেখে কিছুটা রাগ, কিছুটা লজ্জা এসে জড়ো হয়েছে। আর সহ্য করতে না পেরে হালকা চেচিয়েই বললাম শেষ কথাটা।
ভার্সিটি থেকে আসার পর তেমন সময় হয়নি ফুপির সাথে গল্প করার। রাতের খাবার খাওয়ার পর একটু আধটু কথা বলতেই ভার্সিটিতে প্রথম দিন কেমন কাটলো আমার সেটাই জানতে চাইলো ফুপি। আমিও উত্তেজিত গলায় গড়গড় করে বলতে লাগলাম সমস্তকিছু। তাসফি ভাইয়াকে টাইট দেবার জন্য র্যাগিং-এর বিষয়টা আরও জটিল করেই বললাম। এমনকি বোকার মতো, ক্যাম্পাসে সবার সামনে তাসফি ভাইয়াকে চুমু খাওয়ার ব্যাপারটাও বলে ফেললাম। আমার কথা শুনে ফুপি চুপ করে গেলেন একদম। এদিকে তাসফি ভাইয়া কিছু একটা বলে শুধু চুপ করতে বলছিলেন আমায়। কিন্তু আমি তো আমিই, থামার কোন নামই নেই নি। তারপর হঠাৎ মনে হলো কি বলে ফেললাম আমি, সাথে সাথে দু’হাতে নিজের মুখ চেপে ধরেছি।
আমাকে ভেজা বিড়ালের ন্যায় চুপ হতে দেখে শুরু হলো মি. বজ্জাত তাসফির হাসিতে ফেটে পড়া, আর তার সাথে যুক্ত হলো আমার আপন ফুপির হাসি।
আমার কথা শুনে ফুপি বলতে লাগলো,
“আমি তোদের সাথে নাই বাবা। তোদের ব্যাপার তোরাই বুঝে নে, আমাকে টানিস না।”
“এতক্ষণ যে আমাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছিলো তার বেলায়? তোমার আদরের ছেলেকে কিছু বলছো না কেন? আমাকে নিয়ে তো খুব হাসাহাসি হলো এতক্ষণ, এখন ওনার বিচার করো তুমি।”
আমার কথা শুনে ফুপি তাসফি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে চাইলো, কিন্তু তার আগেই উনি বললেন,
“আম্মু কি বললে তোকে? তোর মতো গাধার কথা শুনে আম্মু আমাকে কি বলবে? তুই তো আগ বাড়িয়ে কিস করলি আমাকে। আর এখন সেটা বড় মুখ করে আম্মুর কাছে বলছিস? ক্যাম্পাসে তো আমার ইজ্জতের ফালুদা বানালি, এখন আম্মুর কাছে সেটা রসিয়ে রসিয়ে বলছিস? লজ্জা থাকা উচিত তোর।”
“দেখুন, আপনি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছেন। নিজের দোষ আমার ঘাড়ে দিচ্ছেন, ফুপি তুমি কি্….”
হঠাৎ চুপ হয়ে গেলাম। আশেপাশে কোথায় ফুপিকে দেখতে পেলাম না। ফুপিকে বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না কিছু। হয়তো রুমে চলে গেছে আমাদের ঝগড়া দেখে। হতাশ হলাম কিছুটা, এবার এই বজ্জাত লোকটা আরও পেয়ে বসবে আমাকে। না… কিছুতেই তা হতে দেওয়া যাবে না। কাঠ কাঠ গলায় কিছু বলার জন্য উদ্যোগ হতেই উনি বলে উঠলেন,
“সবার সামনে এভাবে আমার ইজ্জত লুটপাট করেছিস কেন? রুমে থাকলে করতে পারিস না? রুমে থাকলে যা যা ইচ্ছে হয় করবি, চুমু খাবি, আদর করবি আমি কিন্তু বাঁধা দিবো না। এই পুরো আমি টা-ই কিন্তু তোর।”
“অভদ্র-অসভ্য-অশ্লীল একটা ছেলে। কি বলছেন এগুলো.. হ্যাঁ? কি বলছেন আপনি?”
রেগে উঠে কথাটা বলেই মারতে গেলাম ওনাকে। উনিও সরে যেতে যেতে বলতে লাগলেন,
“তবুও যদি ঠিক-ঠাক ভাবে কিসটা করতে পারতি। এখনো কিস করা শিখলি না, কিন্তু জনসম্মুখে আমার ইজ্জতের বারোটা বাজিয়ে দিলি।”
“এই.. আপনি, আপনিই আমাকে জোর করেছেন, এখন আমাকে বলছেন? আপনাকে তো আমি…”
বলেই মারার উদ্যোগ নিয়ে আবারও এগিয়ে যেতে গেলাম। উনি আর দাঁড়িয়ে থাকলেন না, বড় বড় পা ফেলে ছুটে উপরে উঠতে লাগলেন। আমিও দাঁড়িয়ে না থেকে ছুটতে লাগলাম ওনার পিছনে। ওনার পিছনে সোজা রুমে এসে ছুটতে লাগলাম পিছনে, উনিও আমাকে এটা সেটা বলে রাগ বাড়িয়ে দিতে লাগলেন। হঠাৎ ওনার কাছে যেতেই পায়ে নিজের ওড়না বেঁধে দুজনেই পড়ে গেলাম বিছানায়। বিছানায় পরার পরেও থেমে থাকলাম না আমি। তাসফি ভাইয়াকে আরও কাছে পেয়ে মারতে লাগলাম ওনার বুকে। উনিও নিজের আর্ত-রক্ষায় লেগে গেলেন। হঠাৎ আমার দু’হাত নিজের হাতে বেঁধে ঘুড়িয়ে নিচে ফেলে দিলেন আমাকে। আমি ছুটাছুটিতে ব্যাস্ত হতেই উনি বলে উঠলেন,
“এ-বার কি করবা? তোমার এই পুঁচকে পুঁচকে হাত দিয়ে খুব তো জোর দেখালে, এখন কি হবে? হুম!”
“ছাড়েন, ছাড়েন বলছি। নিজে তো খুব দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে হাসছিলেন, তার বেলায়? অসভ্য ছেলে, ফুপির সামনে কি করছিলেন, হ্যাঁ।”
“ফটফট করে সব বলার সময় মনে ছিলো না? আর প্রথম দিন ভার্সিটিতে গিয়ে খুব সেয়ানাগিরী দেখানো হচ্ছিলো, তাই না? আমি না থাকলে কি হতো? আমার জায়গায় অন্য ছেলে থাকলে কি হলো, হ্যাঁ?”
শেষ কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে খুব জোরেই বলে বললেন তাসফি ভাইয়া। আমি কিছুটা ভয় পেলেও দমে গেলাম না একদমই। উল্টে ওনাকে জ্বালাতে আফসোসের সুরে বললাম,
“থাকলে তো বেশ হতো, আমার জীবনের প্রথম চুপু খাওয়াটা বৃথা যেত না। আপনার জায়গায় অন্য ছেলে থাকলে মিষ্টি করে, টাইট করে চুমুটা খেতে পারতাম। ফাস্ট কিস-টা নষ্ট হতো না আমার।”
“ওওও আচ্ছা তাই?”
বলেই গলার ভাজে মাথা ঠেকিয়ে জড়িয়ে নিলেন আমাকে। হঠাৎ এমন হওয়ায় চমকে উঠলাম আমি, জমে গেলাম বরফের ন্যায়। আওয়াজ বের করতে পারলাম না কোন। সেভাবেই বললেন,
“খুব শখ না অন্য ছেলেকে কিস করার? তাও আবার মিষ্টি করে, টাইট করে। তাই না? এগুলো যত তারাতাড়ি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলবা ততই ভালো তোমার জন্য। আর যেভাবে ইচ্ছে হবে সেভাবে শুধু আমাকেই চুমু খাবে। দরকার হলে পুরো এই আমাকেই খাবে, বাঁধা দিবো না। তবুও যেন আর অন্য কোন ছেলের কথা তোমার মুখে না শুনি।”
থমকালাম আমি। বুঝতে পারলাম নিশ্বাসের মাত্রা অধিক থেকে অধিক হচ্ছে ক্রমাগত। বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না, আর না পাচ্ছি ওনাকে সরিয়ে দেবার মতো শক্তি। আমাকে বরফের ন্যায় জমে থাকতে দেখে হাসলেন হয়তো উনি। গলায় মুখ গুজে ই বললেন,
“হাত চালানো, মুখ চালানো দুটোই অবশেষে বন্ধ হয়েছে তাইলে। কিন্তু নিশ্বাসের মাত্রা এত বেড়ে যাচ্ছে কেন? হুম!”
এবার কেঁপে উঠলাম আমি, ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো পুরো শরীর আমার। আমার অবস্থা উপলব্ধি করে আবারও হাসলেন উনি। ক্রমাগত ওনার নিশ্বাস ছুঁয়ে দিতে লাগলো আমার গলা ও কাঁধ জুড়ে। তাতে যেন আরও জমে গেলাম আমি। শিহরণ বইতে লাগলো মনে, অদ্ভুত এক শিহরণ। সাথে শত-শত লজ্জা এসে ভীর জমালো। হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে লাগলাম ওনাকে, কিন্তু আমার এই কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে এক চুলও সরাতে পারলাম না। আস্তে করে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
“ক্..কি ক…করছে..ন? ছ..ছাড়েন আ….”
কথাটা শেষ না হতেই আরও গভীর করে জড়িয়ে নিলেন আমায়। যেটুকু কথা বেরিয়েছিল এবার সেটাও বন্ধ হয়ে গেল আমার। বললেন,
“কি আর করবো? বউকে চুমু খাওয়া শেখাচ্ছি, আর বর ছাড়া অন্য ছেলের কথা যেন মাথায়, মুখে ও মনে না আনে সেটাই বোঝাচ্ছি। আমার বউটা তার সমস্ত ইচ্ছে অনুভূতি যেন আমাকে দিয়েই পূরণ করে সেই অধিকার দিচ্ছি। আমাকে যেন অনেক বেশিই ভালোবাসে সেটাই অনুভব করাচ্ছি।”
.
সকাল কয়টা ঠিক জানা নেই, তবে অনুভব করলাম বেশ বেলা হয়ে গেছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে গাড়ো রোদ এসে ছুয়ে দিচ্ছে চোখে মুখে। সেই রোদের ছোঁয়া-তেই ভেঙে গেল আরামের ঘুমটা। হালকা চোখ খুলে তাকালাম কাঙ্ক্ষিত মুখটা দেখার আসায়। কিন্তু তাসফি নামক মানবটার দেখা পেলাম না। কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে গেল কিছুটা, বিছানার সাথে লেপ্টে গেলাম আর-ও। সেভাবেই কিছুক্ষণ থেকে আস্তে করে উঠতে লাগলাম। মাথাটা ভারী ভারী লাগছে ভীষণ। বিছানায় উঠে বসে সামনে তাকাতেই চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে গেল হঠাৎ, মাথায় চিনচিন ব্যাথা হয়ে ঘুড়তে লাগলো চারদিকে। ঠিক বুঝতে পারলাম না আমি ঘুড়ছি নাকি চারপাশটা ঘুড়ছে। দু’হাতে মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে হেলিয়ে পড়লাম বিছানার, সাথে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলাম।
কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম কেউ একজন জড়িয়ে নিয়েছে আমায়। মিটমিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হলাম। যতটুকু শক্তি পাচ্ছি শুধু মাথাটা চেপে ধরে আছি। উনি সমানে গালে হাত দিয়ে ডেকে চলছে আমায়। কণ্ঠ শুনে যতদূর বুঝলাম তাসফি ভাইয়ের গলা। উনি ছাড়া আর কে-ই বা আসবে। ফুপি চলে গেলে সপ্তাহ খানিক আগে। ছোটোখাটো এই বাসায় আমাদের দুজনেরই বাস এখন।
“এই রূপা কি হয়েছে? এমন করছো কেন? কি হয়েছে তোমার?”
আদুরে গলায় বললেও এই মুহুর্তে ঠিক সহ্য হলো না ওনার কথাগুলো আমার। সমস্ত শক্তি দিয়ে সড়িয়ে দিতে লাগলাম ওনাকে, তারপর আবারও মাথা চেপে ধরলাম। উনি আবারও এসে ধরলেন আমায়। এবার আরও শক্ত করেই ধরলেন।
“কি হয়েছে হঠাৎ, কথা বলছো না কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে? বোঝানোর চেষ্টা করো।”
পারলাম না ওনার কথার জবাব দিতে। মাথায় হাত দিয়ে শুধু ছটফট করে যাকে যাচ্ছি। গভীর ভাবে অনুভব করতে পারছি, মাথার পিছন থেকে চিনচিন ব্যাথাটা।
“মাথায় ব্যাথা হচ্ছে? কিছু তো বলো কোথায় কষ্ট হচ্ছে? কিছু বলছিস না কেন বেয়াদব? বল না কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোর?”
কানে নিতে পারছি না তাসফি ভাইয়ার কথাগুলো। মনে হচ্ছে ওনার কথাগুলোয় আমার মাথায় যন্ত্রণা আরও বেড়ে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে সমানে পানি ঝড়তে লাগলো। উনি হয়তো বুঝতে পারলেন। বুকের সাথে মাথা আঁকড়ে নিলেন আমার। মাথা থেকে আমার হাত দু’টো ছাড়িয়ে নিয়ে ওনার হাত দিয়ে মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরলেন। ওনার শক্ত হাতে চেপে ধরায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলাম যেন, থেমে গেল আমার ছটফটানি। আস্তে আস্তে শান্ত হতে লাগলাম। সেভাবেই ওনাকে দু’হাতে জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে চুপ করে রইলাম।
.
.
(চলবে…..)
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন আমার আইডি রেস্ট্রিকটেড করা হয়েছিলো, তাই এতদিন গল্পটা দিতে পারি নি। গল্পের রিচ-য়ের অবস্থা আরও শোচনীয়। গল্পের সকল পাঠকের কাছে যাচ্ছে না আমার লেখাটা।🙁 সবাই বেশি বেশি কমেন্ট করবেন প্লিজ, স্টিকার হলেও সমস্যা নাই। যদি পারেন শেয়ারও করে দিবেন একটু।🥺
এতদিন পর লেখার ফলে আজকের পর্বটা কেমন যেন মনে হচ্ছে আমার কাছে। ভালো হয়ছে না খারাপ, ঠিক বুঝতে পারছি না। তাই ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল দিবো ইনশাআল্লাহ।🙂