তুমি বললে আজ – পর্ব ২০

0
615

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ২০

.
ঘুমটা হালকা হতেই হাতের কাছে কিছু একটা জড়িয়ে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা চালালাম। কিন্তু শক্ত কিছুর অনুভব হতেই ঘুমটা পুরোপুরি ভেঙে গেল। বোঝার চেষ্টা করলাম ঠিক কোথায় আছি। আস্তে আস্তে মনে পড়ে গেল সকালে করা আমার কর্মকাণ্ড গুলো। হঠাৎ তীব্র মাথা ব্যাথার কারণটা ঠিক ধরতে পারলাম না। হয়তো মাইগ্রেনের ব্যাথার জন্যই এমন হয়েছিলো, কিন্তু এতটা যন্ত্রণা হবে বুঝতে পারি নি। আগেও মাথা ব্যাথা তীব্র হলেও এমন গভীর পর্যায়ে যায় নি। এখন হালকা ব্যাথা হলেও আগের মতো অতটা না। শুধু মাথার দু’পাশে টিপটিপ ব্যাথা করে যাচ্ছে। একটু নড়েচড়ে চোখ মেলে তাকাতেই ভেসে উঠলো চিরচেনা কাঙ্ক্ষিত সেই চেহারাটা। মোবাইল দেখায় ব্যাস্ত তিনি। আমি আর একটু নড়েচড়ে উঠার চেষ্টা করতেই উনি মোবাইল রেখে ধরলেন আমাকে। হন্তদন্ত হয়ে বললেন,

“উঠছিস কেন? মাথা ব্যাথা কি আবার হচ্ছে? কষ্ট হচ্ছে খুব? কি হচ্ছে বল আমাকে।”

ওনার পাগল প্রায় অবস্থা দেখে হালকা করে হাসলাম আমি। আস্তে করে বললাম,

“এখন ঠিক আছি, আর ব্যাথা করছে না।”

আমার কথায় তাসফি ভাইয়া হয়তো কিছুটা স্বস্তি পেলেন। আমাকে ধরে উঠতে সাহায্য করলেন। তারপর গালে হাত রেখে বললেন,

“সত্যিই তো ব্যাথা কমেছে, নাকি বকা খাওয়ার থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যা কথা বলছিস?”

“না.. না সত্যি বলছি। সকালে ওই একটু ব্যাথা হয়েছিলো, এখন আর নেই।”

“একটু ব্যাথা? আমাকে বোঝাতে আসিস না। আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝেছি কেমন একটু ব্যাথা হয়েছিলো। বলতে হবে না আর কিছু।”

ওনার কথা শুনে একটুও খারাপ লাগলো না, বরং ভালোলাগা কাজ করছে। হালকা হালকা মাথা ব্যাথাও একদম ভ্যানিশ হয়ে গেল। মুচকি হেঁসে তাসফি ভাইয়ার কথায় সায় দিয়ে মাথা ঝাঁকালাম। ফ্রেশ হবার জন্য বিছানা ছেড়ে নামতেই আমাকে শক্ত করে ধরে ফেললেন। বললেন,

“এখন আবার কোথায় যাওয়া হচ্ছে? চুপচাপ বসে থাকো, কোথায় যেতে হবে না। কি লাগবে আমাকে বলো, আমি এনে দিচ্ছি।”

ওনার কথায় ফ্যালফ্যাল করে তাকালাম। কিছু একটা ভেবেই হেঁসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন তাসফি ভাইয়া। ওনার তাকানো দেখে আস্তে করে বললাম,

“ওয়াশরুমে যাবো।”

আর কিছু না বলে বিছানা ছেড়ে নামার জন্য জায়গা করে দিলেন আমায়। আমি আস্তে করে নেমে দাঁড়াতেই হঠাৎ কোলে তুলে নিলেন আমার। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলাম।

“উফ্! কানটা গেল আমার। এভাবে চিৎকার করে কানের মাথা খাচ্ছিস কেন?”

“আহহ্ নামান.. নামান বলছি। কোলে নিয়েছেন কেন? নামান এক্ষুনি আমায়।”

“দুই ধাপ গেলেই তো চিৎপটাং হয়ে যবি। একদম চুপ করে থাক, আমি নিয়ে যাচ্ছি না।”

কেন জানি আর কথা বলতে না। হারাতে ইচ্ছে হলো না এই মুহুর্তটা। অনুভূতি হতে লাগল অদ্ভুত রকমের। হাত দুটো দিয়ে আঁকড়ে ধরলাম ওনার গলা। উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে সোজা ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে নেমে দিলেন। গড়া গলায় বললেন,

“আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে চলে আয়।”

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানালাম। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই উনি একই ভাবে কোলে তুলে বিছানায় বসালেন। আমাকে চুপ করে বসে থাকতে বলে বেড়িয়ে যেতে লাগলেন। আমি ‘কই যাচ্ছেন’ বলতেই উনি জানালেন খাবার আনতে যাচ্ছে আমার জন্য। তখন হঠাৎ আমার কি হলো জানি না, আবদার করে বসলাম আমি নিচে গিয়েই খাবে, এখানে আনতে হবে না। উনি সামান্য রাগ দেখিয়ে বললেন,

“নিচে কিভাবে যাবি? আমি এখানেই তোর জন্য খাবার আনছি। নিচে যেতে হবে না, আবার মাথা ব্যাথা বেড়ে যাবে।”

আমি সাথে সাথেই অকপটে বলে উঠলাম,

“কেন? কোলে করে নিয়ে যাবেন। একটু আগে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেন না? সেভাবে।”

আমার কথা শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য চুপ করে গেলেন তাসফি ভাইয়া। তারপর ঠোঁটে রহস্যময়ী হাসি ফুটিয়ে আমার কাছে এগিয়ে আসলেন।

“কোলে উঠবা সেটা সরাসরি বললেই তো হয়। এত ঘুড়িয়ে বাহানা দেখাতে হবে কেন? হুম! তুমি বললে আজ সারাদিন কোলে নিয়ে বসে থাকবে, আমার কিন্তু কোন সমস্যা নেই।”

বলেই ফট করে কোলে তুলে নিলেন আমায়। আর সাথে সাথে একদল লজ্জা এসে জেঁকে ধরলো। ওনার দিকে তাকাতে যেয়েও পারলাম না। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে গভীর চোখে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছে এই চোখে তাকালেই আমি হারিয়ে যাবো কোথাও। হারিয়ে যাবো ওনার ভালোবাসায়। ওনার দিকে তাকাতে না পারলেও কেন জানি হারাতে ইচ্ছে হচ্ছে। আঁটকে রাখতে বাসনা জাগছে এই মুহুর্তকে। এখানেই থেমে যাক না সময়টা, গভীরভাবে পরিচিত হই এই অনুভুতির সাথে।
আমার চুপ করে থাকায় তাসফি ভাইয়া বললেন,

“আমার বউটা যে এত লজ্জা পায়, সেটা তো জানতামই না। আমি তো জানতাম শুধু ঝগড়া করতেই জানে। বাই দ্যা ওয়ে, আগের চেয়ে মোটা হয়ে গেছো।”

ওনার শেষের কথাটা শুনে লজ্জা ফেলে রাগ এসে জড়ো হলো। শক্ত গলায় বললাম,

“আবার আমায় মোটা বলছেন? আমাকে দেখে কি মোটা মনে হচ্ছে? নামান… নামান আমাকে। কোলে নিতে হবে না আপনাকে, ছাড়েন।”

আমি ছুটাছুটি করতে লাগলে উনি আরও শক্ত করে ধরলেন। আমার রাগ অবস্থা দেখে হাসতে লাগলেন। তারপর আস্তে আস্তে আমাকে ফেলে দেবার মতো করে বললেন,

“দিবো ছেড়ে? হুম!”

আমি ‘না…’ করে হালকা চিৎকার করে শক্ত করে ওনার গলা জড়িয়ে ধরে বুক ও গলার মাঝে মাথা আঁটকে নিলাম বাচ্চাদের মতো করে। যেন ফেলে দিতে না পারে। আমার অবস্থা হো হো করে হেঁসে উঠলেন উনি। আমি কোন কথা না বলে চুপ করে মুখ গুজে রইলাম। আমার চুপ করে থাকায় উনি বললেন,

“তোমাকে যখন একবার বেঁধে নিয়েছি তখন অতি সহজে তো আর ছাড়বো না। বরং আরও শক্ত করে বেঁধে নিবো আমার ভালোবাসার বাঁধনে। শত চেষ্টার ফলেও যেন সে বাঁধন ছিন্ন করতে না পাবো।”

বলেই চুলের মাঝে দিয়ে কপালে চুমু দিলেন উনি। কেঁপে উঠলাম আমি, আরও শক্ত করে ধরলাম ওনাকে। মুখ ফুটে কথা বের করতে পারলাম না, আর না পারলাম মুখ তুলে তাকাতে। লজ্জা, অস্বস্তি, একদল অনুভুতি এসে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরেছে আমায়। কোন কিছুই মনোযোগ না দিয়ে শুধু অনুভব করে চলেছি মুহুর্তটা।

তাসফি ভাইয়া আর কথা না বাড়িয়ে সেভাবেই নিচে নিয়ে আসলেন আমায়। সোজা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে একগাদা খাবার সামনে রাখলেন। শুধু রাখলেন না জোর করে অনেকটা খাইয়েও দিলেন। তারপর কোন কথা না বলে একই ভাবে কোলে নিয়ে রুমে আসলেন। দু একটা কথা বলার পর কড়া গলায় জানিয়ে দিলেন বিকেলের দিকে যেন রেডি হয়ে থাকি, মাথা ব্যাথার উৎস জানতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। ভাবতে লাগলাম সামান্য মাথা ব্যাথার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে কেন? তাও যেটা এখন সেরে গেছে। মাইগ্রেনের সমস্যার জন্য মাঝে মাঝেই একটু মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে, যদিও আজকের পরিমাণ একটু বেশি তবুও ডাক্তারের কাছে যাবার মতো না। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছুই বললাম কিন্তু কাজ হলো না, শেষে ওনার পরীক্ষার দোহাই দিয়ে বললাম,

“আপনার না আর মাত্র কয়েক দিন পর বিসিএস পরীক্ষা। পড়াশোনায় ফাঁকি দেবার জন্য আমাকে ডাক্তারের কাছে নিতে চাচ্ছেন? বিসিএস পরীক্ষায় না টিকলে আপনার ভার্সিটিতে জব পাবেন কি করে? আপনার স্বপ্নটা পূরণ করতে পারবেন তো তখন? ভালোভাবে পড়াশোনা না করে শুধু ফাঁকি দেবার চিন্তা, তাই না?”

আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জোরে নিশ্বাস ছাড়লেন। তারপর বলে উঠলেন,

“আপনার থেকে লেখাপড়া শিখতে হবে না ম্যাডাম। ছোট বাচ্চাদের মতো আমাকে ভুলিয়ে রাখলে হবে না। একবার বলছি যখন যেতেই হবে।”

“একদম-ই যেতে হবে না। সামান্য মাথা ব্যাথার জন্য ডাক্তারের কাছে ছুটতে হবে কেন? আজব! দেখছেন না একদম ঠিক আছি আমি, মাঝে মাঝেই তো এমন হয় মাইগ্রেনের জন্য।”

এবার হয়তে একটু বোঝার চেষ্টা করলেন তাসফি ভাইয়া। নরম হয়ে এলো কিছুটা। জোরে একটা শ্বাস ফেলে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে ধমকানোর সুরে বলে উঠলেন,

“যার যা ইচ্ছে হয়, তাই সেটাই করুক। আমার কি তাতে। নেক্সট টাইম মাথা চেপে ধরে টু শব্দ টাও যদি করিস না, তখন বোঝাবো মজা। বেয়াদব!”

ওনার কথা শুনে ঠোঁট চেপে হাসলাম আমি। ওনার ধমকানে তে রাগ হলো না আমার বরং এই শাসনটা অনেক ভালো লাগলো। এমন হাজারো কেয়ার মিশ্রিত ধমক খেতে ইচ্ছে জাগলো। মনে পড়লে লাগলো ওনার ছোট ছোট ধমক দিয়ে কেয়ার নেওয়াটা। ওনার এই ছোট ছোট ধমকগুলো মানিয়ে নয় বরং ভালবেসে জড়িয়ে নিতে শুরু করেছি।
হঠাৎ ওনার আবেগ মিশ্রিত ভালবাসাময় কথাগুলো মনে পড়তেই শিহরণ বইতে লাগলো শরীরও মন জুড়ে। মনে কোণে দানা বেঁধে ধরলো একটা প্রশ্নের। তাসফি ভাইয়া কি আমাদের বিয়ের সম্পর্কটা এগিয়ে নিতেই মানিয়ে নিচ্ছেন আমাকে? নাকি ভালবাসেন। এত অল্প সময়ে কি কাউকে ভালবাসা যায়? কিন্তু ওনার গভীর অনুভূতির সংস্পর্শে তো মনে হয় উনি আমাকে ভালোবাসেন। তাহলে কি আরও অনেক আগে থেকেই উনি আমাকে ভালবাসেন? আমাদের বিয়েরও আগে থেকে?

ভেবেই কেঁপে উঠলাম আমি। ধুকধুক করে উঠলো বুকের বা পাশে। উনি সত্যিই আমায় অনেক আগে থেকেই ভালবাসেন। আর আমি? আমিও কি ওনাকে ভালবাসতে শুরু করেছি? কথাটা ভেবেই হুট করে তাসফি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন উনি। হঠাৎ আমার হাত ধরে টেনে ওনার পাশে শুয়ে দিলেন। হালকা করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,

“মস্তিষ্ক বিহীন এই ছোট মাথায় কি এত চিন্তা করো সারাদিন? আজেবাজে চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে আমাকে নিয়ে একটু চিন্তা করলেও তো পারো।”

.
প্রায় এক মাসের মতো থেকে ফুপি চলে গেছেন প্রায় দু’সপ্তাহের বেশি হবে। কাজের লোক রাখা হয়েছে, উনি বাসার সমস্ত কাজ করে বিকেলের দিকে চলে যায়। তাসফি ভাইয়া একা থাকাকালীন রান্নাটা উনিই করতেন। ফুপি থাকতে ফুপিই করেছে আর এখন আমি করি রান্নাটা। একদম শখের বসেই প্রায় দিনই করা হয়। রান্নার হাত পাকা না হলেও মোটামুটি ভালোই পারি রান্নাটা। আর, কেউ খাবার পর একটু হলেও প্রশংসা করবে এটাও জানি।
সকালে মাথা ব্যাথার কারণে বিছানা ছেড়ে উঠতে না পারায় আন্টিই রান্না করে গেছিলেন সকাল ও দুপুরের খাবারটা। তাই রাতে দুজনের জন্য অল্প কিছু রান্না করলাম। রাতের খাবারের জন্য মি. বজ্জাত তাসফিকে ডাকতে গেলে ধমক দিয়ে একাকার করলেন আমায়। ধমকের কারণ জিজ্ঞেস করলো বললেন, আমি নাকি অসুস্থ। এই শরীর নিয়ে রান্না করতে কেন গেছি? ওনার কথা শুনে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে ছিলাম।
আমার আবেগ, অনুভূতি মিশ্রিত ভালোলাগা নিয়ে অন্য এক তাসফির সাথে সময় কাটতে লাগলো আমার। সময় পেরোতে লাগলো নদীর স্রোতের মতো। যত সময় বইতে লাগলো ততই যেন নিজেকে আরও জড়িয়ে নিতে লাগলাম তাসফি নামক মানুষটার সাথে। নিজের ছোট বড় আবদার করতে শুরু করলাম তার কাছে। ওনার ছোট ছোট কাজে অভিমানী করে তুলতে লাগলাম নিজেকে।

সেই সাথে এগিয়ে আসলো ওনার বিসিএস পরীক্ষার দিন। শক্ত ছেলেটাকে নার্ভাসনেস হতে দেখলাম প্রথম। সমস্ত পরীক্ষায় এক থেকে পাঁচের মধ্য স্থান পাওয়া ছেলেটাকে, পরীক্ষায় কেমন প্রশ্ন হবে এটা নিয়ে টেনশন করতে। পরীক্ষা দিতে যাবার আগে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলেন আমায়, বারবার বলছিলেন ভালোভাবে পরীক্ষাটা দিতে পারবো তো? আমিও ওনার মনের ভয়টা দূর করার চেষ্টা করে নানার ভাবে বুঝালাম। সমস্ত চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে মাথা ঠান্ডা করে যেন পরীক্ষা দেয়। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ ওনার মনের ইচ্ছে পূরণ করবে। উনিও আমার কথা শুনে হালকা চিন্তামুক্ত হয়ে আমাকে সাবধানে থাকতে বলেন। তারপর বেরিয়ে যান পরীক্ষা হলের উদ্দেশ্যে।

.
.
(চলবে…..)

রি-চেক করার সময় পাই নি। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যারা পড়বেন সবাই রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন।🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here