#অদ্ভুদ_বর
#দিয়া_মনি
#পর্ব_০৩
দিয়ার একদম কাছে চলে এসেছে রওশন। রওশনের গরম নিঃশ্বাস দিয়ার মুখে আছড়ে পড়ছে। দিয়া আমতা আমতা করে বললো।
—- ঠিক আছে,, ঠিক আছে। সরি বলেছেন তো আমি এখন সব ভুলে গেছি। প্লিজজ দূরে যান।
—- কেন দূরে যাবো কেন..??
—- আপনি যা করতে চাইছেন তা কখনো হবে না। আমি এখনো ছোট। আপনার থেকে কম করে হলেও ৭-৮ বছরের ছোট। বাচ্চা মেয়ে ইয়ে করার বয়স হয়নি।
—- যাক ম্যাচিউরিটি আছে তাহলে। এবার তো দেখছি সবই বোঝো তাহলে না বোঝার ভান করো কেন..??
—- না বোঝার ভান করি..?? আমি সব বুঝি কিন্তু কিছু বলি না। কারন আব্বু বলে দিয়েছে যেন আমি আপনাদের সাথে তর্ক না করি।তর্ক করলে নাকি আপনারা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। আর গ্রামে ফিরে গেলে মানুষের অনেক কথার সম্মুখীন হতে হবে। আর তার জন্য আব্বু কষ্ট পাবে।
—- একটু আগেই তো বলছিলে চলে যাবে। তা বাবার বাড়ি গেলে তখন তো এসব শুনতেই হতো।
—- কে বলেছে আপনাকে আমি আব্বুর কাছে যাবো..?? আম্মু চলে যাওয়ার পর আব্বু অনেক কষ্ট করেছে। আব্বু চাইলেই আবার বিয়ে করতে পারতো কিন্তু করেনি কারন কি জানেন.? কারনটা হলাম আমি। আমার জন্য আব্বু অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। আর আমিই কিনা ফিরে গিয়ে আবার কষ্ট দিবো..?
—- তাহলে কোথায় যেতে..?
—- দরকার হলে রাস্তায় থাকতাম। কোনো না কোনো ড্রাইভার ঠিকই আমাকে সাহায্য করতো।
—- কেন তোমার চেনা ড্রাইভার আছে নাকি..??
—- না তবে আম্মুর কাছে যেতে পারতাম।
—- দিয়াহ
আর কথা বাড়ালো না দিয়া। কারন একবার থাপ্পড় খেয়েছে আর খেতে চায় না। ও ভেবেছিলো রওশনরা ওকে বের করে দিলে ও আর বাড়ি ফিরবে না। হয়তো রাস্তাতেই কোনো এক এক্সিডেন্টে,,, ঢাকায় তো এমন সচারাচরই হয়। তাই ওরও হতে পারে। তাইনা ?
বিকালে ঘুম ভাঙে দিয়ার। ঘুম ভাঙ্গতেই দিয়া দেখতে পায় রওশন ওর পাশের চেয়ারে বসেই হাতের ওপর ভর দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। স্যালাইন খুলে দিয়েছে নার্স তাই ও উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেয়। মোটামুটি সবকিছুই চিনে ফেলেছে ও। ফ্রেস হয়ে এসে দেখে রওশন নেই। কেবিনের দরজা খুলে উকিঝুকি মারার পরও রওশনকে পায়না।
—- উনি কি চলে গেছে? আমাকে একা রেখে চলে গেলো..?? এখন আমি কোথায় যাবো..?? কিভাবে যাবো..??
মুখে ওরনা গুজে কাঁদতে লাগলো দিয়া। রওশন নিচে গিয়ে সব ডকুমেন্ট কালেক্ট করে বিল পে করে সবে মাত্র কেবিনের দরজা খুলেছে,, অমনি দিয়া ভয়ে পর্দার আড়ালে লুকালো,,, দিয়ার কান্ড দেখে রওশন বেশ খানিকটা চমকে যায়। এদিকে দিয়া ভাবছে রওশন তো চলে গেছে তাহলে এখন কে এলো হসপিটালের কেউ? এখন নিশ্চই টাকা চাইবে আর টাকা না পেলে হসপিটালের সব কাজ ওকে দিয়ে করাবে। রওশন আলতো করে পর্দা সরালো। ভয়ে দিয়ার কাচুমাচু হয়ে যাওয়া দেখে রওশনের প্রচুর হাসি পাচ্ছে। তারপরেও রাগি রাগি গলায় বললো,,
—- লুকাচ্ছো কেন..?
রওশনের কন্ঠ শুনে যেন দিয়া নিজের প্রাণ ফিরে পেলো। উৎফুল্ল কন্ঠে বললো
—- আপনি আমাকে ছেড়ে যাননি..??
—- তোমাকে ছেড়ে যাবো এমন কথা ছিলো নাকি..?? এই তুমি পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছিলে..?? ভুলেও এ চিন্তা মাথায় আনবে না।
—- বেশি বেশি ভাবি আমি। ধুরর। চলুন বাড়ি যাই। শুনুন যাওয়ার সময় ফুচকা খাবো…
—- তোমার টক খাওয়া বারন। ডাক্তার টক খেতে মানা করেছেন।
—- ওহহ। কাল কলেজে যাবো..?? দেখুন বোরকা পড়লে আমার দম আটকে আসে।
—- গাউন, থ্রিপিচ, স্কার্ট। এই তিনটা জিনিস ছাড়া আর কিছুই পড়বা না। মানে কলেজে এগুলো পড়বে আর বাড়ি তোমার যা ইচ্ছা তাই পড়বা। ঠিক আছে..?
—- আপনি আমার বর নাকি টিচার..?? খালি জ্ঞান দেন কেন..??
—- কেন আমার কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগে..?? আর আমি তোমার টিচারও কাল কলেজে গেলেই বুঝতে পারবে আমি কি।
—- #অ_দ্ভু_দ
—- কিভাবে..??
—- অনেক এঙ্গেল থেকে। তবে সেটা আজ নয় অন্য একদিন বলবো। আচ্ছা আপনি আমাকে বউ হিসাবে মেনে নিলেন কিভাবে..?? আমি তো শ্যামলা।
—- সিরিয়াল দেখো..??
—- হ্যা কেন..?
—- সিরিয়ালে দেখো না, গ্রামের কালো মেয়ে বিয়ে করার পর ছেলেরা তাকে ধুয়ে, ঘসে মেজে ধবধবে সাদা বানিয়ে ফেলে। তোমাকেও আমি তেমনভাবে ফর্সা বানিয়ে দিবো।
—- সত্যিই
—- হুম এবার বাড়ি চলো।
রওশন আগে থেকেই বাড়িতে দিয়ার খবর জানিয়ে রেখেছিলো তাই দিয়া বাড়ি ফেরার সাথে সাথে রিমিকা দিয়াকে টেনে খাবার টেবিলে বসায়। সামনে কম করে হলেও ১৫রকমের খাবার। এই সব খাবার দিয়াকে খেতে হবে। দিয়া অসহায় দৃষ্টিতে রওশনের দিকে তাকালো। অমনি রিমিকা দিয়াকে ধমক দিয়ে বললো,,,
—- রওশনের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। এই সব তোকে খেতে হবে। ১৭ বছর বয়স অথচ ওজন ৫০ ও না। আর শোন আজ থেকে তুই রশনির সাথে থাকবি। রওশনের রুমের ধারেকাছে একদম যাবি না। আমি চাইনা তোর এতো কম বয়সে কোনো এক্সিডেন্ট হোক। আমরা তোর ছেলে মেয়ের মুখ না দেখে মরবো না। তাই এতো তাড়াহুড়ার প্রয়োজন নেই। ২০ বছর হবে তারপর বাচ্চার প্লানিং করবি।
রওশন মাঝ থেকে বলে উঠলো,,,
—- তোমার বউমা তুমি রাখো। আমার লাগবে না।
—- না লাগলেই ভালো। তোর ইচ্ছার জন্য আমি এই পিচ্চি মেয়েটাকে বিপদে ফেলতে পারবো না। কম বয়সে বাচ্চা নিলে, মা এবং বাচ্চার দুজনেরই ক্ষতি।
—- তো এতো বলার কি আছে ? আমি কি বলছি আমি তোমার বউমাকে আদর করবো বা করতে চাই..??
—- তোর মা আমি। তোর বাপটা যেমন তুই তার চেয়েও বেশি তাই সবটা জানি। তাই চুপচাপ নিজের রুমে যা।
দিয়া ওদের লাগাম ছাড়া কথাবার্তা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। কোনো আম্মু ছেলে এবং ছেলের বউ এর সাথে যে এমন ভাবে ফ্রিলি কথা বলতে পারে তা দিয়ার জানা ছিলো না। দিয়া খুশিতে কান্না করে ফেলে। রিমিকা রওশনের সাথে কথা শেষ করে দিয়ার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় দিয়া কাঁদছে।
—- দিয়া, কাঁদছিস কেন মা..?? মাথা ব্যাথা করছে..? আমাকে বল..?
—- জানো আমি ভেবেছিলাম আমার শাশুড়ি আম্মুও সিয়িয়ালের মতো ভিলেন টাইপের হবে। আমাকে দিয়ে বেশি বেশি কাজ করাবে, গরম খুন্তির ছ্যাকা দিবে,,, ঝাড়ু দিয়ে পিটাবে। ছেলের কাছে মিথ্যা নালিশ করবে। কিন্তু তুমি..?? তুমি সবার চেয়ে আলাদা। আমাকে কত্তো ভালোবাসো। আচ্ছা তুমি কি এ বাড়ির সবার সাথেই এমন ভাবে কথা বলো..??
—- কেমন ভাবে..??
—- এই যে এতোক্ষন যা যা বললে,,,
—- ওহ ( মুচকি হেসে উত্তর দিতে লাগলেন। ) জানিস আমি মেডিকেলের স্টুডেন্ট। বলতে গেলে কলেজের বেস্ট স্টুডেন্ট ছিলাম। কিন্তু বিয়ের চক্করে পড়ে আমার লেখাপড়াটাই বাদ হয়ে গেলো। যেহেতু আমি ডাক্তারি পড়েছি তাই সব বিষয়েই আমি জানি। আর আমি এবং রায়হান আমরা দুজন রশনি আর রওশনের শুধু বাবা-মা নই বন্ধুও।তাই সব বিষয়েই খোলামেলা কথা বলতে পারি। কিছুদিন পর তুইও পারবি। এখন এসব বাদ দিয়ে খেয়ে নে।
রিমিকা দিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে। দিয়া খাচ্ছে আর এটা সেটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে,, রিমিকাও দিয়ার সব উত্তর দিচ্ছে কিন্তু একটা প্রশ্ন এড়িয়ে গেলো সেটা হলো কেন রিমিকার পড়া হলো না। বিয়ে নিয়ে কি এমন হয়েছিলো। দিয়া খাওয়া শেষে রশনির ঘরে গেলো।
—- আপু আসবো..??
—- আরে দিয়া ভাবি আসো। আজ থেকে তো তুমি আমার রুমে শিফট হচ্ছো তাইনা..?
—- হুম। আচ্ছা তুমি আমাকে ভাবি বলো কেন..?? নাম ধরেই তো ডাকতে পারো। আমি তো তোমার ছোট।
—- হ্যা পারি কিন্তু ডাকবো না। কেন জানো..? কারন আমি আমার ভাইয়াকে সম্মান করি ভালোবাসি। হয়তো তুমি বয়সে আমার চেয়ে ছোট কিন্তু সম্পর্কে এবং সম্মানে আমার চেয়ে একটু হলেও বড়। আর বড় ভাইয়ার বউ ছোট হলেও তার নাম ধরে ডাকার শিক্ষা আম্মু আমাকে দেয় নি। ভবিষ্যৎ এ যদি দেয় তাহলে অবশ্যই ডাকবো। তবে হ্যা তোমাকে আমি অন্য একটা নামেও ডাকতে পারি।
—- কি নাম..??
—- পিচ্চি ভাবি। সুন্দর না..?? কাল কিন্তু দেরি করে কলেজে যাবো তাই আগে থেকে রেডি হওয়ার প্রয়োজন নেই।
—- কেন কাল কলেজে কি..??
—- ভাইয়ার ২বছরের টিচার লাইফ সেলিব্রেট করবে স্টুডেন্টসরা।
—- তোমার ভাইয়ার স্যার হওয়ার বয়স ২বছর..? কম বয়সে চাকরি পেলো কিভাবে..?
—- ভাইয়ার বয়স ২৮ বছর। তোমার চেয়ে ১১ বছরের বড় ভাইয়া। কম বয়স হলো নাকি..??
বয়স শুনে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।
—- শেষে কিনা আব্বু বুড়োর সাথে বিয়ে দিলো। আগেই জানতাম বড়লোকরা বুড়ো হয়। তবে তোমার ভাইয়াকে দেখে তো ২১-২২ বছরের ছেলে মনে হয়।
—- সবারই এমন মনে হয়। কলেজের চকলেট স্যার।
—- চকলেট স্যার মানে..?? উনি কি কলেজে চকলেট বিতরণ করেন..?
—- চকলেট বয় চিনো..? কুল, ড্যাসিং, হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং,। যেহেতু ভাইয়া স্যার সেজন্য চকলেট স্যার।
—- ভারি মজার তো।
—- হুম। আচ্ছা তুমি কখনো প্রেম করেছো..??
—- না। তুমি করেছো..??
—- এখনো করি। কলেজে চলো তোমার সাথে আলাপ করিয়ে দিবো নিঝুমের।
—- তোমার প্রেমিক মেয়ে..??? তুমি মেয়েদের সাথে প্রেম করো..?? ( হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে দিয়া )
—- প্রথমে আমিও ভাবছি ওটা মেয়ে। পরে জানতে পারি নিঝুম ছেলে মেয়ে উভয়ের নাম হয়।
এভাবেই রাত ১১টা পর্যন্ত আড্ডা দেওয়ার পর রওশনের কল আসে রশনি ফোনে।
—- কি গো ভাইয়া এতো রাতে আমাকে কল করলা..?
—- ভুলে গেছিস কাল কি..?? ১১:৫০ এ দিয়াকে নিয়ে ছাদে আসবি।
—- ওহ হো ভুলেই গেছিলাম। কাল তো জুনের ৬তারিখ পিচ্চি ভাবির জন্মদিন। তুমি চিন্তা করো না আমি ঠিক নিয়ে আসবো। তুমি শুধু এরেন্জমেন্টটা ঠিক করে করো।
—- ও কোথায়..??
—- ওয়াসরুমে ব্রাশ করতে গেছে। পিচ্চি ভাবি দুবেলা ব্রাশ করে।
—- ঠিক আছে রাখছি এখন তুই ঠিক টাইমে চলে আসিস।
ঘড়ির কাটা ১১টা বেজে ৪৫। রশনি জোর করে দিয়ার চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলো। তারপর সবার আড়ালে আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে দিয়াকে নিয়ে ছাদে চলে আসে। দিয়া বারবার রশনি কে প্রশ্ন করছে যে রশনি কেন দিয়াকে এভাবে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো উত্তরই পায়নি। অবশেষে দিয়ার চোখ খুলে দেওয়া হলো।
চলবে,,,,
[ আসসালামুয়ালাইকুম। আশা করি ভগবান / আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আজ আরেকটা পর্ব দিলাম। কারন আপনাদের ২টা কথা বলার আছে আমার।
১. অনেকে বলছেন এটা #অদ্ভুদ_বউ হলে ভালো হবে। কারন দিয়া উদ্ভট চিন্তা ভাবনা করে,, বোকা সোকা মেয়ে। তাদের বলছি,,, ২পার্ট পড়েই সবটা ধরে নেওয়া ঠিক না। অন্ততো ৫-৬ টা পার্ট যেতে দিন তাহলেই গল্পের নামের সাথে গল্পের মিল পেতে শুরু করবেন।
২. আগামীকাল অনলাইনে থাকবো না। অনেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছেন, দিচ্ছেন আর দিবেন তাদের জন্য বলছি,,,, আপনারা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেওয়ার পর কমেন্ট বক্সে আমাকে জানিয়ে দিবেন তাহলে আমি সেটা দেখে এক্সেপ্ট করে নিবো। ধন্যবাদ।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।