রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 06

0
1977

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_০৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
মুনতাহা আর শখ বসে লিখছে পাশেই বসে আছে আয়ান।শখের যে লিখতে কষ্ট হচ্ছে আয়ান ভালো করেই বুঝতে পারছে।
এবার শখ খাতা টা আয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।
–স্যার নিন হয়ে গেছে আমার।
আয়ান অবাক হয়ে শখের দিকে তাকিয়ে আছে।এত জটিল একটা অংক এত তাড়াতাড়ি করে ফেললো।আয়ান বেশ খুশি হলো মেয়েটা মনে হয় খুব ভালো ছাত্রী।খুব আগ্রহ নিয়ে বললো।
–কই দেখি দাও তো।কেমন লিখলে।
তারপরে শখ খাতাটা আয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো।খুশি হয়ে খাতাটা নিলে’ও এখন রাগে আয়ানের চোখ লালা হয়ে গেছে।
–এগুলো কি শখ।
শখ কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।আর বললো কি স্যার অংক।
–তা তো আমি’ও দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তুমি এগুলো কি করছো।আর তোমার হাতের লিখার এই অবস্থা কেনো।হাতের লেখার যদি এই অবস্থা হয়।তাহলে পরীক্ষাতে ভালো নাম্বার পাবে না।তোমার এই কাকের ঠ্যাং এর মতো লেখার জন্য কিছু নাম্বার কেটে দিবে।
–স্যার আপনি এটা বলতে পারলেন।আমি কতো সুন্দর করে অংকটা করে দিলাম। আপনার তো আমাকে নোবেল দেওয়া উচিৎ।
–হ্যাঁ,নোবেল তো অবশ্যই দিব।নাও হাত পাতো।
–কিকক,,কিন্তু কেনো স্যার।
–তোমাকে নোবেল দিব।
স্যারের কথা তো আর অমান্য করা যায় না। তাই নিরুপায় হয়ে হাত পাতলো শখ।আয়ান স্কেল দিয়ে শখের দুই হাতে মারলো।শখ ব্যথায় হাত সরিয়ে নিলো।
–পেয়েছো নোবেল।আর লাগবে।
শখ তখন কাঁদো কাঁদো হয়ে ইনোসেন্ট ফেইস করে বললো।
–না স্যার লাগবে না।এমনিতেই নোবেলটা অনেক সুন্দর ছিলো।আমার সারাজীবন মনে থাকবে।(শালা বজ্জাত ব্যাডা আমার বাসায় এসে আমাকেই মারিস তোর দেইকা নিমু হুম তানা হলে আমার নাম ও শখ না)
–আমাকে গালি দেওয়া শেষ হলে।এবার পড়াশোনায় মন দাও।আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না।তুমি কিন্তু ভালো করেই জানো।
–স্যার জানেন আমি না পদার্থ বিজ্ঞান এ চার বার ফেল করছি।
আয়ান শখের কথা শুনে অবাকের চরম পযার্য়ের পৌঁছে গেলো ফেলে করছে চার বার আবার গর্ব করে বলছে।আয়ান রাগি চোখ নিয়ে তাকাতে’ই।শখ ভয়ে আর কোনো কথা না বলে পড়াশোনায় মন দিলো।
এভাবেই কাটছিলো শখ ও আয়ানের জীবন সময় তো আর কারো জন্য থেমে থাকে না।এভাবে ঝগড়া,রাগ,খুনসুটি দিয়ে দিনের পর দিন।মাসের পর মাস কেটে যাচ্ছিলো।আয়ান ঠিক প্রতিদিন এর মতোই আজ ওদের পড়াতে আসছে।
–আপু তোমার একটা কলম দিবে গো।আমার কলমের কালি শেষ হয়ে গেছে। উপরে যেতে ইচ্ছে করছে না।
–যেতে ইচ্ছে করছে না।নাকি আমার এই কলমের প্রতি যে তোর কতোটা লোভ সেটা বল।জানিস তোকে কলম টা দিলে আর ফেরত নিব না।সেজন্য কৌশলে নিতে চাইছিস।
–এসব তুমি কি বলছো আপু।এমনিতে তোমার কলম টা খুব সুন্দর। আমার বেশ পছন্দ। অনেক খুঁজে’ও পাই নাই। তুমি কোথায় থেকে কিনেছো আপু।আমি তোমাকে টাকা দিব আমাকে একটা এনে দিবে।
–তোর সব সময় আমার প্রতি এত হিংসা কেনো রে।একে তো বাবা মাকে আমার থেকে কেঁড়ে নিয়েছিস।এখন আমার জিনিসে নজর দিচ্ছিস।বাবা কি তোকে কলম কম কিনে দেয় নাকি রে।যে আমার কলম টাই তোকে দিতে হবে।
–আপু তুমি সব সময় এমন করো কেনো আমার সাথে। একটু ভালো করে কথা বলতে পারো না।
–বেয়াদব মেয়ে চুপ।একদম চুপ থাক তুই। এখন তোর থেকে শিখতে হবে।আমি কি ভাবে কথা বলবো না বলবো।আর একটা কথা বললে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিবো।বলে দিলাম।খুব মুখে মুখে তর্ক করতে শিখে গেছো তাই না।
আয়ান সবকিছু দেখছিলো এবার রেগে গিয়ে বললো।
–কি হচ্ছেটা কি তোমাদের সামনে আমি বসে আছি।তোমাদের কি সেদিকে খেয়াল আছে।বেয়াদবের মতো ঝগড়া করে যাচ্ছো।আর মুনতাহা শখ না হয় ছোট। তুমি তো বড় তোমার এটা কেমন ব্যবহার।
–আপনি স্যার স্যারের মতো থাকবেন। পড়াতে আসছেন পড়িয়ে চলে যাবেন।আপনাকে পড়ানোর জন্য রাখা হয়েছে। জ্ঞান দেওয়ার জন্য নয়।
–মুনতাহা….
চিৎকার শুনে শখের বাবা মা চলে আসলো।ওদের দেখে আয়ান রেগে বললো।
–স্যার আমি আপনার এই বেয়াদব মেয়েকে পড়াতে পারবো না।আমাকে মাফ করবেন।বলেই চলে যেতে লাগলো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ যান আমিও আপনার মতো শিক্ষক এর কাছে পড়তে চাই না। এই মেয়ের সাথে একসাথে পড়াশোনা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার সবকিছু কেঁড়ে নিয়ে শান্তি হয় নাই। এখন আসছে আমার জিনিস নিতে।লজ্জা করে না।অন্যের জিনিস চাইতে।
–সরি আপু আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আর কোনোদিন তোমার থেকে কোনোকিছু চাইবো না।
–তুই মরতে পারিস না।তুই মরলে আমার শান্তি। আপদ বিদায় হলেই বাঁচি। তুই তোর মা…
–মুনতাহা…বলেই মুনতাহার বাবা ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
–তুমি যদি আর একটা কথা বলেছো।আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।আমি তোমাকে ঠিক মতো মানুষ করতে পারি নাই। তোমার জন্য কোথাও গিয়ে নিজের সন্মান রক্ষা করতে পারি না।কি পাপ করছিলাম আমি যে তোমার মতো মেয়ে দিলো আমাকে আল্লাহ।
–এখন নিজের মেয়েকে দেখতে পারো না অথচ অন্য….
–মুনতাহার আম্মু ওকে আমার চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাও।তা না হলে ওকে কি করবো আমি নিজেও জানি না।বেয়াদব মেয়ের জন্ম দিয়েছি।
–আমার রুম আমি কেনো যাব।তোমরা সবাই আমার রুম থেকে বের হয়ে যাও।আর হ্যার এই স্যার আমাকে কাল থেকে যেনো না পড়াতে আসে।
শখের বাবা মা সবাই চলে আসলো মুনতাহা দরজা লাগিয়ে দিলো।
–আয়ান বাবা আমি আমার মেয়ের হয়ে।তোমার কাছে মাফ চাচ্ছি।আমি আমার মেয়েটাকে মানুষ করতে পারি নাই। আমার জন্য তোমাকে অসন্মানিত হতে হলো তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
–এসব কি বলছেন স্যার।আপনার কোনো দোষ নেই। আপনি কেনো মাফ চাইবেন।কাল থেকে আমি আর পড়াতে আসবো না স্যার আমাকে মাফ করবেন।এমন বেয়াদব মেয়ে আমার পক্ষে পড়ানো সম্ভব না।
–প্লিজ বাবা এমন করো না।এখন তুমি না পড়ালে আমার মেয়ের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।আচ্ছা বাবা বলো আমার শখ কি তোমার সাথে কোনো বেয়াদবি করছে।
–না আংকেল শখ খুব ভালো মেয়ে মুনতাহার মতো বেয়াদব না।
–তাহলে বাবা মুনতাহাকে না পড়াও আমার শখকে তুমি পড়া’ও।ওর সামনে পরীক্ষা এখন যদি পড়াশোনা ঠিক মতো না করতে পারে।তাহলে রেজাল্ট খারাপ হয়ে যাবে ওর।বাসায় একটুও পড়তে বসে না।
আয়ান একটু ভেবে বললো।আচ্ছা ঠিক আছে স্যার আমি শুধু শখকেই পড়াবো।কিন্তু যদি আপনার বড় মেয়েকে পড়ানোর কথা বলেন। তাহলে আমাকে মাফ করবেন।
–না বাবা তোমার আমার বড় মেয়েকে পড়াতে হবে না।আমার শখকে পড়ালেই হবে।
–আচ্ছা স্যার আজ তাহলে আমি আসি।
তখনি শখ ব্যাগ হাতে করে নিয়ে নিচে নামল।
–কিরে মা তুই ব্যাগ নিয়ে আসলি কেনো।
–আপু আমাকে ভালোবাসে না।দেখতে পারে না।আপু মনে করে আমার জন্য তোমরা ওকে ভালোবাসো না।তাই আমি চলে যাচ্ছি। তাও আপু ভালো থাকুক। বলেই শখ চলে গেলো।
–কি গো মেয়েটা চলে যাচ্ছে আটকাও।
–একটু পরে আবার দৌড়ে আমার কাছে আসবে। খালি একটু অপেক্ষা করো।
–স্যার শখ বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আর আপনি ওকে কিছু বলছেন না।
–একটু অপেক্ষা করো বাবা।তুমি নিজের চোখে’ই দেখতে পাবে।
একটু পরে দৌড়ে শখ এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
–বাবা আমাকে বাঁচাও তিনটা কুকুর আমাকে মেরে ফেললো প্লিজ আমাকে বাঁচাও বাবা।কান্না করতে করতে বললো।
–কেনো এখন আমি বাঁচাবো কেনো।তুই না বাড়ি ছেড়ে চলে গেলি এই সাহস নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছিলি।
–আমি যেতে পারবো হুম।আমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসো।
–কতদূর কুকুর পর্যন্ত।এগিয়ে দিয়ে আসবো।তাহলে হবে।
–না লাগবে না।আমি কোথাও যাব না ভাই।
এবার সবাই হো হো করে হেঁসে উঠলো। পাগলি মেয়ে আমার আমি জানতাম তোর এত সাহস নেই।যা রুমে যা।শখ রুমে চলে গেলো।আয়ান বাসায় চলে গেলো।
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here