#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_১০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
পরের দিন সকাল বেলা সবাই কলেজে আসে আসছে।কয়দিন পড়ে কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।তা-ই জন্য সবাই যে যার মতো নাচ,গান,কবিতা,নাটক আরো অনেক কিছু। যে যার মতো তার প্রতিভা চর্চা করছে।
–শখ তুই তো ভালো নাচ পাসির।দিবি না।বলল আয়েশা।
–আমি নাচ দিব না।তাই কখনো হয়।নাচ,গান,কবিতা যা যা আছে সব দিমু।
–তুই গান শুরু করলে রাস্তার কুত্তা গুলো একটা’ও রাস্তার থাকবে না।বলল কাব্য।
–হ্যাঁ ঠিক বলছিস।সবাই কলেজের অনুষ্ঠানে চলে আসবে শখের গান শুনতে। বলল সিয়াম।
–তোরা থাকতে কি আর নতুন কুকুরের দরকার আছে নাকি রে।তোরা-ই এক কুত্তা তোরা থাকলে নতুন করে আর কুত্তার দরকার নেই।
–শখের বাচ্চা আমরা কুত্তা তাহলে তুই কিরে।কেওড়া গাছের পেতনী তুই। সারাদিন ভাউ ভাউ করিস।বলল আমান।
–প্রথম মত আমার কোনো বাচ্চা নেই। আমি নিজেই একটা বাচ্চা। আর আমি কেওড়া গাছের পেতনী নারে আমি হলাম হাজারো ছেলের ক্রাস।(একটু ভাব নিয়ে বললো)
শখের কথায় ছেলেরা হেঁসে দিলো।
–কিরে শখ তুই আয়নায় নিজের মুখ কখনো দেখেছিস।তোকে তো কুত্তা বিলাই এর মতো দেখতে।মানুষের রুচি এতটাই খারাপ যে তুই ওদের ক্রাস হতে যাবি।আমি মনে করি যাদের রুচি খারাপ তাঁরাই তোকে পছন্দ করবে।বলল কাব্য।
–কাব্যের বাচ্চা তোরে আজ খাইছি বলেই কাব্যের চুল টানতে শুরু করলো শখ।
–আমান তোরা দাঁড়িয়ে দেখছিস।আমারে বাঁচা এই ডাইনি রাক্ষসী মেয়ে আমাকে মেরে ফেললো রে।আমার হবু বউ বিয়ে হবার আগেই বিধবা হয়ে যাবে রে।
–শালা মরবি তা-ও বিয়ে আর খাওয়ার কথা ভুলবি না।বলল সিয়াম।
–শখ তুই যে শালার কপালে আছিস।ঐ শালার কপাল পুড়ছে। আমি তোর বরের চিন্তা করি।বেচারার ভাগ্য কতোটা খারাপ হলে শখের মতো মেয়ে ওর বউ হবে।নিশ্চয় কোনো পাপ করছিলো।জীবনটা তেজ পাতা করে দিবে শখ।
–তুই যেমনটা ভাবসিছ তেমনটা না ও হতে।হতেই পারে শখের কপালে আয়ান স্যারের মতো রাগি লোকের সাথে বিয়ে হলো।তখন শখ ভেজা বেড়ালের মতো ম্যাও ম্যাও করবে।হাহাহা।বলল আয়েশা।
আয়েশার কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠলো।
–আয়েশা তুই আমার বেস্টু নাকি শত্রু বল তো।আল্লাহ যেনো তোদের মতো ফ্রেন্ড কাউকে না দেয়।(ইনোসেন্ট ফেইস করে বললো)
তখনি সেখানে এসে উপস্থিত হলো আয়াশ।
–কি অবস্থা সবার কি করছো এখানে। বানরের দল গুলোর খালি সারাদিন ঝগড়া।
–ভাইয়া আপনি।এখানে।আপনি কিন্তু আমাদের অপমান করলেন।বলল আমান।
–রাগছো কেনো ভাই আমি মজা করলাম তোমাদের সাথে। আচ্ছা সরি।
–ঠিক আছে ভাইয়া।সমস্যা নেই। এমন করে বলবেন না।খারাপ লাগে।আমরা সবাই সারাদিন এমনি করি।এমন করি জন্য’ই ভালো থাকি।আমাদের দেহ আলাদা হতে পারে।কিন্তু আত্না একটাই সবার।
–বাবা রে ছোট ভাই আমার রেগে গেছে। আচ্ছা বলো আমি কি করতে পারি।কি করলে তোমাদের রাগ কমবে।
কাব্য টুস করে বলে উঠলো আমাদের রেস্টুরেন্ট নিয়ে গিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ান।তাহলে আমরা আর রাগ করবো না।
–হাহা এই ব্যাপার এটা কোনো বিষয়-ই না।চলো আজ আমি তোমাদেরকে খাওয়াবো।
–খাব্যের বাচ্চা। তোকে এত ফটর ফরটর করতে বলছে কে।তোর বাপ মা কি তোকে কম খাওয়ায় রে।তুই যার তার কাছে খেতে চাইবি।
–তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি।আমার না কাব্য খাব্য না।
–তোর নাম কাব্য না হয়ে খাব্য হওয়ায় ভালো ছিলো।খাদক রাখলে সব থেকে ভালো হতো।
–শখের বাচ্চা। তোকে তাজা গিলে খামু আমি।সারাদিন খালি সবাই মিলে আমাকে খাবারের খোটা দিস।
–আহা শখ কি শুরু করলে আমি তোমাদের বড় ভাই হয় না।আমি আমার ছোট ভাই বোনদের খাওয়ায়তেই পারি।প্লিজ তোমরা না করবে না।তাহলে আমার অপমান হবে।
কি আর করার সৌজন্যতা রক্ষা করার জন্য সবাই মিলে গেলো আয়াশের সাথে।
সবাই খাবার অর্ডার করলো যে যার মতো শখ বাদে।শখ কিছু খাবে না বলছে।কিছু না খেলেই না।তাই জন্য শখ কোল্ড কফি দিতে বলছে।
কফি নিয়ে আসলে আয়াশ নিজে হাতে শখকে কফিটা এগিয়ে দিলো।
দূর থেকে একজোড়া রাগী চোখ সবকিছু দেখছে ইচ্ছে করছে সবকিছু শেষ করে দিতে।কিন্তু পাবলিক প্লেসে কোনো সমস্যা তৈরী করা যাবে না।তাই চুপচাপ সবকিছু দেখছে আয়ান।
আসলে সকালে বাসা থেকে রাগ করে না খেয়ে বেড়িয়ে ছিলো আয়ান।প্রচন্ড ক্ষুধা লাগায়।সে রেস্টুরেন্টে খেতে আসছিলো।এসেই শখদের দেখতে পেলো।তার আবার ছেলের সাথে। ছেলেটি কেমন করে শখের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ানের সয্য হচ্ছে না।কেনো জানি।
–শখ তোমার মাথায় কি জানি পড়েছে দেখো।
–কোথায়। দেখতে পারছি না।
–দ্বারা আমি দেখি। বলল আয়েশা।
–না থাক তুমি খাও।আমি ঠিক করে দিচ্ছি।বলল আয়াশ।
আয়াশ যেই শখের দিকে হাত বাড়াতে যাবে।ঠিক তখনি আয়ান রেগে উঠে আসলো।
–তোমরা এখানে তোমাদের ক্লাস নেই। বলল আয়ান।
–আয়ানের কথা শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেলো।দেখে বোঝা যাচ্ছে অনেক রেগে আছে। রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে।
–আসলে স্যার আমাদের খুব ক্ষুধা লাগছিলো তাই খেতে আসছিলাম।বলল মেধা।
–কেনো কলেজে ক্যান্টিন নেই। কলেজ এসে বেড় হতে হবে।
–সরি স্যার আর হবে না।এখনি চলে যাচ্ছি আমরা।বলল স্নেহা।
–আর তুমি…তুমি তো এসের সাথে পড় না।তাহলে তুমি এদের সাথে কি করছো।(শখের সামনে কে বসে আছে তা দেখার জন্য সামনে তাকাতেই আয়াশকে দেখতে পেলো আয়ন)
–স্যার আসলে আমি ওদের খাওয়াইতে নিয়ে আসছিলাম। ছোট ভাই বোনদের আবদার ফেলতে পারি নাই। বলল আয়াশ।
–তুমি আমাকে স্যার বলছো কেনো তুৃমি তো…
–স্যার চলেন ক্লাস আছে আমাদের।বলল আয়াশ।
তারপরে সবাই কলেজের চলে গেলো।
আয়াশ:শুনো আয়ান তুমি ওদরে আমার বিষয়ে কিছু বলবে না।এটা আমার রিকোয়েস্ট।
–কিন্তু কেনো।আর তুমি কেনো ওদের মিথ্যা বলছো।
–কাদের মিথ্যা বলছে স্যার।পেছনে থেকে শখ বললো।
–আরে শখ তুমি।আরে স্যারের সাথে আমার একটু কথা আছে তুমি যদি কিছু মনে না করো।তাহলে এখন আসতে পারো।শখের ক্লাসের সময় হয়ে গেছে তাই শখ চলে গেলো।
আয়ানের’ও ক্লাস আছে তাই সে’ও আর কথা বাড়ালো না।চলে গেলো।আয়াশ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।
এদিকে।
স্যার কি করবো বলেন বড় সাহেবর জন্য কিছু করতে পারছি না।বড় সাহেব সব সময় মেয়েটার সাথে লেগে থাকে ঢাল হয়ে।এভাবে চলতে থাকলে আমরা কিছু করতে পারবো না।
–তোদের মাসে মাসে টাকা দিয়ে আমি এমনি পালছি।একটা কাজ ঠিক মতো করতে পারিস না।আর কয়টা মাস তারপরেসব অপেক্ষার শেষ। এখন যে করেই হোক। ঐ মেয়েকে অসুস্থ করে দিতে হবে।তাহলে আমাদের কাজ সফল হবে।ঔ মেয়ে সুস্থ থাকলে কিছু করতে পারবো না।
–স্যার আমরা তো আমাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছি।কিন্তু বড় সাহেব সব সময় চলে আসছে।এখন ভুল করে যদি বড় সাহেবর কিছু হয়ে যায়।
–এই খবরদার।আমার কলিজার গায়ে একটা আচর যেনো না লাগে। যদি আমার ছেলের কিছু তাহলে তোদের প্রত্যেকের লাশ ফেলে দিব।বলে দিলাম।দেখে শুনে সময় নিয়ে কাজ কর।এখনো সময় আছে।আমি দেখছি কি করা যায়।
লোকটি আর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দিলো।
শখ তোর বড় বোন আসছে তোকে নিতে।কথাটা শুনা মাত্রই শখ যেনো আকাশ থেকে পড়লো।মুনতাহা আপু তা-ও আমাকে নিতে আসছে।
–তুই মজা করছিস তাই না আয়েশা।
–আমি মজা করতে যাবো কেনো রে।বিশ্বাস না হলে তুই বাহিরে গিয়ে দেখে আয়।
শখ আয়েশার কথা মতো বাহিরে গিয়ে দেখলো সত্যি সত্যি মুনতাহা এসেছে।
–আপু তুমি আমাকে নাকি নিতে আসছো।আয়েশা বললো।
–বলছে যখন তখন ঢং করছিস কেনো যা ব্যাগ নিয়ে আয়।বাসায় যেতে হবে সন্ধ্যায় আমাদের দাওয়াত আছে।যেতে হবে তাই বাবা তোকে নিয়ে বাসায় যেতে বললো।
–তুমি আমাকে কল করে যেতে বলতে পারতে এত কষ্ট করে আসার কি দরকার ছিলো।
–হয় তোকে এই ভর দুপুর বেলা একা একা যেতে বলবো।
–আপু তুমি আমাকে নিয়ে ভাবছো।তারমানে তুমি আমাকে ভালোবাসো। ইয়ে কি মজা আমার আপু আমাকে ভালোবাসে।
–শুন নাটক করবি না একদম। তুই আমাদের বাসায় থাকিস।তোর কিছু হলে আমাদেরই দেখতে হবে। বুঝতে পারলি।তাই কথা না বলে ব্যাগ নিয়ে আয় বাসায় যাব।
শখ আর কোনো কথা না বলে ব্যাগ নিয়ে আসতে চলে গেলো।
–কিরে শখ আজ হেঁটে গেলে কেমন হয়।বলতো আমি ভাবছি আজ হেঁটে যাব তোর কোনো সমস্যা আছে নাকি রে।
–না আপু আমার কোনো সমস্যা নাই। আমার হাঁটতে তো ভালোই লাগে।
–আচ্ছা ঠিক আছে চল।
তারপরে দুই বোন মিলে হাঁটা শুরু করলো মুনতাহা ফোন ঘাঁটছে। আর শখ এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে।ফোন ঘাটার জন্য মুনতাহা কিছুটা পিছিয়ে গেছে আর শখ হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগিয়ে আসছে।
মুনতাহা খেয়াল করলো একটা গাড়ি প্রচন্ড বেগে শখের দিকে এগিয়ে আসছে।শখের অনেকটা কাছে চলে আসছে।একি লোকটির হাতে ওটা কি।শখের মাথায় তো লাগবে।একবার মাথায় লাগলে শখ তো মরেই যাবে।
–মুনতাহা শখ দূর সরে যা বোন।এই শখ।কে শুনে কার কথা ফুল গাছ দেখায় ব্যস্ত।শখ তো কিনারেই আছে।গাড়িটি এত জাগায় রেখে কিনার দিয়েই আসছে কেনো।তাহলে কি শখকে মারার জন্য। নাহহ মুনতাহা দৌড়ে যাচ্ছে শখের কাছে।
–শখ পাশে তাকিয়ে দেখলো মুনতাহা পাশে নেই। এই আপু গেলো কোথায়।আমার পাশেই তো ছিলো।সামনে তাকাতেই। শখ চিৎকার করে বলে উঠলো আপু……
মুনতাহা দৌড়ে এসে শখকে ফেলে দিলো নিজেও পড়ে গেলো।ধাক্কা দেওয়ার কারনে শখ কিছুটা দূর ছিটকে পড়েছে।
মুনতাহা উঠে শখের কাছে গেলো খুব ভয় পেয়েছে মেয়েটা যেনো মৃত্যুকে কাছে থেকে দেখেছে।
–কিছু হয় নাই শখ তোর। বোন আছে না।আমি থাকতে তোর কিছু হতে দিবে না।তাকা কিছু হয় নাই।
–আমাকে মেরো না আমি কিছু করি নাই।
–এই শখ তাকা দেখ কেউ নেই। চলে গেছে ওরা।শখ তাকিয়ে দেখলো সত্যি কেউ নেই চলে গেছে। মুনতাহা শখকে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিলো।শখ মুনতাহাকে শক্ত করে ধরে আছে ছেড়ে দিলেই মুনতাহা পালিয়ে যাবে।
–শখ চল বাসায় যেতে হবে কিছু হয় নাই। তোর বোন তোর সাথে আছে না। তুই নিশ্চিন্তে থাক তোর বোন থাকতে তোকে কোনো বিপদ ছুঁতে’ও পারবে না।
–আমাকে নিয়ে কেনো ভাবছো আপু তুমি। আমাকে বাঁচালে কেনো।আমি মরে গেলেই তো তোমারি ভালো ভালো আপদ বিদায় হবে।সবকিছু তোমার হবে।
–চুপ থাক বেয়াদব মেয়ে।বড়দের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় জানিস না।আর একটা কথা বললে থাপ্পড় লাগিয়ে দিব।তোর ফালতু পেচাল শুনতে ভালো লাগছে। তাড়াতাড়ি বাসায় চল।
বলেই শখের হাত ধরে নিয়ে চলে আসলো একটু সময়ের জন্য শখের হাত ছাড়ে নাই। শখ অনেক বাড় বলছে আপু আমি ছোট বাচ্চা নাকি।আমার হাত ধরে রাখতে হবে।আমি একা যেতে পারবো।উত্তের মুনতাহা রেগে ওকে কথা শুনিয়ে দিয়েছে।বলছে বেয়াদব মেয়ে বড়দের মুখে মুখে তর্ক করিস থাপ্পড় খেতে না চাইলে চুপ থাক।তবু’ও শখের হাত ছেড়ে দেয় নাই শখের আর কি বলার আছে আর কোনো কথা না বলে বোনের সাথে বাসায় চলে আসলো।
বাসায় এসে দেখে…..
চলবে……..