#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_১১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
মুনতাহা আর শখ বাসায় এসে দেখে।ওর বাবা,মা,আর ভাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
আহনাফ সাহেব মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। দেখে’ই বোঝা যাচ্ছে,উনি কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করছে।শখকে দেখে শখের আম্মু দৌড়ে আসলো।
–কিরে মা তোর কিছু হয় নাই তো।দেখি কোথায় ব্যাথা পাইছিস।খুব লেগেছে তাই না বাবু।বলল রাহেলা বেগম।
–আম্মু তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো।আমার কিছু হয় নাই। আপু আমার কিছু হতে দেয় নাই। কিন্তু তোমরা জানলে কি করে।
–কিরে মুনতাহা তুই ঠিক আছিস তো সোনা তোর কোথাও লাগে নাই তো দেখি।
–হয়েছে আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না।তোমাদের নাটক কে দেখতে চেয়েছে আমি চেয়েছি কি।তোমরা বরং তোমাদের মেয়েকে-ই দেখো।আমি মরলে’ই কি আর বাঁচলে’ই বা কি তোমাদের কি আদো’ও কোনো যায় আসে।
তখনি আহনাফ সাহেব উঠে এলেন মেয়েদের সুস্থ দেখে কিছুটা শান্তি পেলেন।
–এভাবে বলে না।আমরা জানি তুই শখকে কতোটা ভালোবাসিস।শুধু মুখে প্রকাশ করিস না।তাই।ঠিকি নিজের জীবনের পরোয়া না করে নিজের বোনকে বাঁচালি।
–শুনো আমার সাথে আসছিলো ওর কিছু হলে সবকিছু আমার ওপরে এসে পড়তো সেজন্য বাঁচিয়েছি।আর কিছু না ওকে।ওর মরে গেলেই ভালো হতো মরলো না কেনো।
–মুনতাহা আর একটা কথা বললে তোর সব দাঁত খুলে ফেলে দিব।বলল ফিয়াজ।
–তোমার এত লাগছে কেনো ভাইয়া।কই আমার জন্য তো এত লাগে না।শখকে মরার কথা বললে এমন ভাব করো যেনো আমাকে এই কথা বলার জন্য তুমি নিজে-ই আমাকে খুন করে ফেলবে।
–বাজে কথা বলবি না। মুনতাহা। শখ যেমন আমার বোন।তুই’ও ঠিক তেমন আমার বোন।
–এত বোন বোন করছো তাহলে বোনকে বাঁচাতে আসলে না কেনো।ভিডিও করে নিয়ে এসে বাবা,মাকে কেনো দেখালে।
–ও তো ভালো কাজ-ই করেছে মুনতাহা। ও যদি ভিডিও না করতো।তাহলে আমরা জানতে-ই পারতাম না।তুই আমাদের শখকে কতোটা ভালোবাসিস।বলল আহনাফ সাহেব।
–শুনো বাবা।ভাই বললেই ভাইয়া হওয়া যায় না।ওখানে আরো বড় দূর্ঘটনা হতে পারতো।ভাইয়া কি করলো।বিপদে এগিয়ে আসলো-ই না আবার ভিডিও করছে বসে বসে।বাহ আর তোমরা ওটাকে সন্মধোন করছো।আজ যদি শখের কিছু হয়ে যেতো তাহলে তোমার ছেলেকে এভাবে-ই সাই দিতে।
–দেখ মুনতাহা তুই আমাকে ভুল বুজছিস।তুই যেটা ভাবছিস।আসলে সে রকমটা নয়।আমি আসলে।
–হয়েছে যা হবার হয়ে গেছে। এই।নিয়ে আর একটা কথা’ও শুনতে চাই না আমি।এখন সবাই ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও।আমাদের অনুষ্ঠান বাড়ি যেতে হবে দাওয়াত আছে।
কেউ আর কোনো কথা না বলে রাগে গজগজ করতে করতে যে যার রুমে চলে গেলো।
সন্ধ্যা বেলা শখদের গাড়িটি একটা বড় বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।সবাই মিলে গাড়ি থেকে নেমে আসলো।
–বাবা কতো বড় বাসা।এটা বাসা না পুরো রাজপ্রাসাদ। এটা কাঁদের বাসা গো আব্বু।
বলল শখ।
আহনাফ সাহেব কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা মেয়ে এসে আহনাফ সাহেব কে সালাম দিলো।
–আসসালামু আলাইকুম স্যার।কেমন আছেন। আপনাদের আসতে কোনো সমস্যা হয় নাই তো।বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো।ভেতরে আসুন।
–আলাইকুমুস আসসলাম।আলহামদুলিল্লাহ মা ভালো আছি তুমি কেমন আছো।আমাদের আসতে কোনো সমস্যা হয় নাই মা।
–তাহলে ভেতরে আসুন স্যার।তারপরে মেয়েটি সবাইকে ভেতরে নিয়ে গেলো।
শখের একটা অভ্যাস কোথাও গেলে চুপচাপ বসে থাকতে পারে না।তাই এদিক ওদিক ঘুরে বেরোচ্ছে। হঠাৎ করেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো শখ।গালি দিতে যাবে তাকিয়ে দেখলো সেই মেয়েটি।
–স্যারি আপু আসলে আমি বুজতে পারি নাই।
–আচ্ছা আপু সমস্যা নেই। তুমি তো ভারি মিষ্টি দেখতে।তোমার নাম কি আপু।
–আমার নাম আফরিন আয়াত শখ।আপনার নাম কি আপু।
–আমার নাম রুহি চৌধুরী।তুমি স্যারের কে হও।
–স্যার মানে আপনি আব্বুর কথা বলছেন।উনি তো বাবা হয়।কেনো আপনি জানেন না।
–কিন্তু স্যারের তো।
–শখ মামনি তুই এখানে একা একা কি করছিস।অচেনা জায়গা একা একা ঘোড়ার দরকার নেই। যা-ও আম্মুর কাছে যা-ও।
–আব্বু একা একা ভালো লাগছে না।আপু’ও আমার সাথে কথা বলে না। ভালো করে।
–ওলে আমার লক্ষি বোনটা। ডানদিকে আমার রুম তুমি গিয়ে বসো আমি এসে তোমার সাথে গল্প করবো কেমন।
শখ খুশি হয়ে বললো।আচ্ছা আপু শখ দৌড়ে গিয়ে রুহির রুমে চলে গেলো।
রুহির রুমের সামনে বড়বড় করে লিখা অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।
–বাবা আপু মনে হয় খুব রাগি।আমাকে তো আপু অনুমতি দিয়েছেন-ই।আমি রুমে গিয়ে বসি।
শখ রুমে প্রবেশ করে দেখলো রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো। বাবা আপু খুব সুন্দর করে থাকে তো দেখছি।আচ্ছা আপুর রুমে এত বই কেনো। আপু বই পড়তে ভালোবাসে নাকি।মনে হচ্ছে আমি একটা বইয়ের লাইব্রেরিতে চলে আসছি।
শখ বিছানায় বসে সবকিছু দেখছিলো।ঠিক সেই সময়ে ওয়াশরুম খোলার শব্দ আসলো।
ওরে বাবা ওয়াশরুমে কে আপুর হাসবেন্ড নয় তো।আমাকে যদি বলে এখানে কেনো আমি কে কি করতে এসেছি।দূর আপু বিবাহিত কি না এটাই তো জানিনা।যাই ভাই মানে মানে কেটে পড়ি।
শখ যেই বেরোতে যাবে।ঠিক তখনি আয়ান টাওয়াল পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।
আয়ান শখ কে দেখে শখ আয়ানকে দেখে।দুই দুইজনকে দেখে চিৎকার করে উঠলো।
–এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয়।আমার অনুমতি ছাড়া আমার রুমে প্রবেশ করার।বেড়িয়ে যাও বলছি।তুমি এখানে আসলে কি করে।
শখ হা হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। মাত্র সাওয়ার নিয়েছে। সামনের চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে।লোম বিহীন সাদা বুক দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।অসম্ভব সুন্দর লাগছে আয়ানকে শখের কাছে।
শখ ওকে দেখছে।তা ফলো করে আয়ান দুই হাত দিয়ে নিজেকে লুকাইতে ব্যস্ত।
–এই মেয়ে কি দেখছো হ্যাঁ।তোমার লজ্জা করে না।আমার অর্ধেক ইজ্জত দেখে নিলো রে।বিয়ে আগে অন্য একটা মেয়ে আমাকে এভাবে দেখলো।কি লজ্জা।আমি এখন আমার বউ এর সামনে মুখ দেখাবো কি করে।
–আয়ানের কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো শখ।কিন্তু পরের কথা গুলো শুনে হাঁসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
–এই আপনি পাগল হয়ে গেছেন।কি সব যাতা বলছেন। আমার রুচি এত খারাপ হয়েছে। যে আপনার মতো গরুর দিকে তাকিয়ে থাকবো।ভুলে যাবেন না স্যার এটা কলেজ না।যে আপনি যা বলবেন তাই শুনবো।না শুনলে শাস্তি দিবেন।সারাদিন ছাগলের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতেই থাকেন আপনি।
বলেই বললো শখ বাঁচতে চাইলে পালা।শখ যেই দৌড় দিতে যাবে তার আগেই আয়ান বললো তবে রে।
শখ দরজারকাছে আসতেই আয়ান শখের হাত ধরে ফেললো। আয়ান দরজা লাগিয়ে দিলো।
–আপনি দরজা লাগিয়ে দিলেন কেনো স্যার।
–কেনো তোমার সাথে প্রেম আলাপ করবো তাই জন্য। স্টুপিড মেয়ে কারো রুমে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিতে হয় জানো না।
–এমন ভাব করছেন মনে হয়। এটা আপনার বাসা।
–তাই তো এটা আমার বাসা হতে যাবে কেনো আমি এই বাসায় ভাড়া থাকি।
–থাকেন তো ভাড়া তাহলে এত কথা বলছেন কেনো।আমি আপনার রুমে আসি নাই।আমি রুহি আপুর রুমে আসছি।রুহি আপু আমাকে আপুর রুমে বসতে বলছে।এসে আমার সাথে গল্প করবে সেজন্য।
–ওও আচ্ছা আপু তোমাকে আপুর রুমে যেতে বলছে তুমি ফুল করে চলে আসছো।চলে যখন আসছো এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।(মনে মনে বললো আয়ান।)
–কারো রুমে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিতে হয়।তাহলে আমার থেকে অনুমতি নিলে না কেনো।
–আমি মনে করছিলাম। এটা আপুর রুম।আপু তো বসতেই বলছে তাই জন্য আর কি….আমার হাত ছাড়ুন আমার লাগছে।
–ভুল যখন করেছো তখন শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।
–মানে।কির করবেন আপনি।আমার মতো মাসুম বাচ্চারে আপনি শাস্তি দিতে পারবেন স্যার।আপনার কষ্ট লাগবে না।মায়া লাগবে না।আপনি এত পাষাণ।
–এই মেয়ে চুপ করো।তখন থেকে ফালতু বকেই যাচ্ছো।
–আমাকে ছেঁড়ে দিলেই তো পারেন।যেমন ভাবে ধরে আছেন।মনে হচ্ছে আমি আপনার ঘরের বউ। কোনো বড় ভুল করে ফেলছি।ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাব।
–শখ….রেগে গিয়ে চিৎকার করে উঠলো।এসব কি ধরনের কথা হ্যাঁ আমি তোমার স্যার আর স্যারের সাথে কি করে কথা বলতে হয়।তুমি জানো না।
–আমি আপনার ছাত্রী স্যার বউ নই।তাহলে আমার হাত এভাবে ধরে আছেন কেনো।আমার লাগছে না হ্যাঁ।(দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বললো শখ।)
শখের কথা শুনে আয়ান রেগে শখের হাত ধরে টান দিয়ে আরো শক্ত করে ধরলো।
শখ আয়ানের অনেকটা কাছে চলে এসেছে আল্লাহ মালুম আমাকে এখন এই রাক্ষসটার হাত থেকে বাঁচবে কে।একটু শয়তানি বুদ্ধি এটে বললো আইডিয়া। এবার কোথায় যাবে চান্দু।বলে আয়ানের হাতে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে কামর বসিয়ে দিলো শখ তারপরে আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে দে দৌড় শখকে আর পায় কে।
শখ হাঁপাতে হাঁপাতে নিচে চলে আসলো।
–কি হয়েছে তুমি হাঁপাচ্ছ কেনো।তুৃমি কোথায় গিয়েছিলে।আমি তোমাকে খুঁজে পেলাম না রুমে গিয়ে।
শখ হাঁপাতে হাঁপাতে বললো উ রাক্ষস আমাকে খেয়ে ফেলবে।
শখের কথা শুনে রুহি অবাক হয়ে বললে রাক্ষস কোথায় রাক্ষস। আমাদের বাসায় রাক্ষস নেই তোমার ভুল হচ্ছে কোথাও।
আচ্ছা তুমি চলো আমার রুমে বসে ঠান্ডা হয়ে সব বলবে কেমন।
–আপু তোমার রুম তো বাম দিকে তাহলে আমাকে ডানদিকে বললে কেনো।
–সরি আপু আমি আসলে তাড়াহুড়ো’য় বলে ফেলছিলাম।
তারপরে’ও রুহি আর শখ মিলে অনেক গল্প করলো দুজনের বেশ ভালো মিল হয়ে গিয়েছে।
–আপু আসবো।বলল আয়ান।
আয়ানকে দেখে শখ বললো আপু রাক্ষস বলেই রুহির পেছনে লুকালো।
–কি হয়েছে তুমি আয়ানকে ভয় পাচ্ছো কেনো।
–উনি-ই রাক্ষস আপু এই তোমাদের বাসায় ভাড়া থাকে আপু।তোমরা রাক্ষসদের বাসা ভাড়া দাও।
আয়ান দরজার কাছে দুই হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে। আর শখের কথা গুলো শুনছে।রাগি দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
–ওমা আয়ান রাক্ষস হতে যাবে কেনো।আয়ান তো আমার ছোট ভাই।এটা তো ওরি বাসা।ও ভাড়া থাকতে যাবে কেনো।
রুহির কথা শুনে শখ অবাক তারপরে বললো আমাকে মিথ্যা কর বলা হচ্ছে দাড়াও বের করছি।
–আয়ান কি বলবি বল।আমার কাজ আছে রে।
–কিছু না আমি পরে আসবো।বলেই চলে গেলো।
চলবে……..