রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 26

0
1847

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_২৬(বিয়ে স্পেশাল ২)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
শুভ মুনতাহাকে টানতে টানতে কাজী অফিসের সামনে নিয়ে গিয়ে ফেলে দিলো।
–আপনি কি মানুষ। একে তো টানতে টানতে নিয়ে আসছেন।আবার ফেলে দিলেন।
–এখনো কিছু-ই করি নাই, তোমার সাথে,তুমি যা করেছ তার শাস্তি তুমি পাবে।
–বেয়াদব ছেলে,মেয়েদের সন্মান করতে জানে না।আবার বড় বড় কথা বলছে।আপনার মতো বেয়াদব ছেলেকে আমি কিছুতে-ই বিয়ে করবো না।চললাম আমি।
মুনতাহা উঠে চলে যেতে লাগলে শুভ মুনতাহার হাত ধরে ফেললো।
–তোমার সাহস তো কম না।একে তো অন্যায় করেছ।আবার মুখে মুখে কথা বলছো।আগে তুমি বড়দের সন্মান করতে শিখো।
–আপনি আগে ছোটদের ভালোবাসতে শিখেন।তারপরে ছোটদের থেকে সন্মান আশা করবেন।
–তুমি অন্যায় করে,এত কথা বলছো কি করে তোমাকে তো আমি….
–আমি কোনো অন্যায় করি নাই। অন্যায় তো আপনি করছেন।স্বার্থপর ছেলে একটা।
–তোমাকে পাওয়ার জন্য, যদি আমাকে স্বার্থপর হতে হয়।তাহলে আমি সেটা হতে’ও রাজি।
–তাহলে আপনার এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো এতদিন। যখন….থাক আপনাকে বলে লাভ নেই। আপনার মতো বেয়াদব ছেলে এটা বুজবে না।আমি বাসায় চলে গেলাম।বলেই হাঁটা শুরু করলো মুনতাহা। শুভ এসে মুনতাহা কলে তুলে নিলো।
–খুব শখ তাই না রে আমার থেলে পালানোর। আমি যতদিন বেঁচে আছি।আমার হাত থেকে তোর মুক্তি নেই। এই জীবন টা আমার সাথে-ই তোর কাটাতে হবে।
–আমি মরে যাব।তবু’ও আপনার মতো ছেলের সাথে আমি সংসার করবো না।নামান আমাকে বলছি।বলেই শুভর বুকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করলো।শুভ তো শুভ-ই মুনতাহার এমন পাগলামি বেশ ভালো লাগছে তার কাছে।
–পাগলামি করে লাভ নেই পাখি।তুমি আমার খাঁচায় বন্দি,এখানে থেকে তোমার মুক্তি নেই।
–অসভ্য ছেলে আমাকে নামান।আপনার লজ্জা করে না।এতরাতে একটা মেয়ে তার বিয়ের আসর থেকে তুলে এনেছেন।এখন আবার কলে তুলে নিছেন।কোন অধিকারে।
শুভ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।
–আমার বউকে আমি নিয়ে আসছি।ভাইয়া শখকে ভালোবাসে। তুমি কেনো ওদের মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হবে।আর অধিকারের কথা বলছো চলো।বলেই কাজী অফিসের ভেতরে নিয়ে গেলো।
মুনতাহা অফিসের ভেতরে গিয়ে দেখলো একটা মেয়ে আর একজন মধ্যে বয়ষ্ক মহিলা, দাঁড়িয়ে আছে।
–আপনি..কাজী সাহেব বলল।
–আপনি।এখানে।তার মানে এটা আপনার অফিস। বলল শুভ।
–অসম্ভব আমি এ ছেলের বিয়ে পড়াতে পারবো না।
–ঠিক বলেছেন,কাজী সাহেব একদম এই বেয়াদব ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবেন না।আমি না আপনার মেয়ের মতো আপনি এভাবে আমার জীবন টা নষ্ট করে দিবেন না কাজী সাহেব। বলল মুনতাহা।
–তুই আর একটা কথা বললে,তোর গলা টিপে এখনি মেরে ফেলবো।রেগে বলল শুভ।
–আমাকে কোলে থেকে নামান আমার লজ্জা লাগছে।
–কি রে শুভ এটা তোর কি ধরনের ব্যবহার।বলল শুভর মা।
–আসলে আম্মু…
ও আচ্ছা তাহলে এটা শুভর আম্মুর এবার তোমাকে দেখাচ্ছি মজা সাধু।
–আন্টি আপনার ছেলে খুব খারাপ। আমাকে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল। আমি অনেক খোঁজা খুঁজি করি কিন্তু খুঁজে পাই না। আজ আমার বিয়ে কোথায় থেকে জানি এসে বিয়ে থেকে তুলে আনলো।আমার বাবা মায়ের একটা সন্মান আছে না বলেন।আমি এই বিয়ে কিছুতে-ই করতে পারবো না।
–নাটক কর হলে এদিকে আসো ফটাফট রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে কবুল বলে দাও।আমাকে রাগি’ও না মুনতাহা। পরিণাম খুব খারাপ হবে।খুব শান্ত হয়ে বললো।
তা,দেখে মুনতাহা কিছু’টা ভয় পেয়ে গেলো। চুপচাপ গিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসলো।
–কাজী সাহেব, ভালো-ই ভালো-ই বিয়ে পড়াবেন নাকি অন্য রাস্তা দেখবো।
–আমি শুধু তোমার মায়ের জন্য বিয়েটা পড়াচ্ছি।না হলে তোমার মতো বেয়াদব ছেলের বিয়ে কোনোদিন পড়াতাম না।বলেই বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিলো।
শুভকে কবুল বলতে বললে সেকেন্ডের মধ্যে কবুল বলে দিলো।সাথে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দিলো।
মুনতাহাকে কবুল বলতে বললে মুনতাহা কান্না করে উঠলো।একটা মেয়ের বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে সেখানে বাবা মা অত্নীয়স্বজন,কেউ নেই।এমন ভাবে বিয়ে করতে কে চাই। বাবা মার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি তো এতটা কষ্ট ওনাদের দিতে চাই নাই।
–মা,আমি তোমার মনের কথা বুজতে পারছি।কষ্ট পেয়ো না,মা।আমি তোমাদের বিয়ের পরে নিজে তোমার বাবা মায়ের কাছে নিয়ে যাব।কথা দিলাম। বিয়ে টা করে না-ও লক্ষ সোনা মা আমার।
শুভর মায়ের কথায় মুনতাহা ভালোবাসা খুঁজে পেলো তাই কবুল বলে দিলো বড়দের কথা অমান্য করা যায় না।এবার রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দিলো।
আরো তিনজন আসলো।দু’জন মেয়ে একজন ছেলে।তারা মুনতাহা আর শুভর বিয়ের সাক্ষী হয়ে সাইন করলো।
আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে সম্পূর্ন হলো।আজ থেকে ওরা স্বামী স্ত্রী। দোয়া করি সারাজীবন সুখে সংসার করো।তারপরে সবাই কাজী অফিসে বেড়িয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো।
এদিকে…
–আয়ান তোকে দিব একটা কানের নিচে।এখন তোর পাশে থাকা উচিৎ। তা-না করে তুই উল্টা পাল্টা কথা বলছিস।
–এমন স্বামী যেনো শত্রু’ও
না হয়।কান্না করতে করতে বলল শখ।শখের কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো।আয়ান রাগি চোখে শখের দিকে তাকালো।শখ সাথে সাথে মুখ ঘরিয়ে নিলো।
অবশেষে গাড়ি তার গন্তব্যে এসে পৌঁছল। এখন শখকে সবাই কতটা মেনে নিবে।তা নিয়ে বেশ চিন্তা সবার।
দরজার কাছে আয়ানের মা দাঁড়িয়ে আছে। নতুন বউকে বরন করে নেওয়ার জন্য।শখকে দেখে উনি বেশ খুশি হয়েছে।তার মুখ দেখে’ই বোঝা যাচ্ছে।রুহি আগেই ফোনকে তার মাকে জানিয়ে দিয়েছিলো।সেজন্য আর কোনো সমস্যা হয় নাই। কিন্তু আমাদের সামজের মানুষ তো।কানাকানি না করলে তাদের পেটের ভাত হজম হয় না।তাই তারা তাদের কাজ শুরু করে দিলো।
–শেষে কি না আয়ান একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করে আনলো।
–এই মেয়েতো নিজে-ই বাচ্চা। এই বড় হবে কবে।আবার বাচ্চা কাচ্চা মা হবে কবে।
–হ্যাঁ গো আয়ানের মা।নাতি নাতনীর মুখ দেখতে পারবে তো।
–এই বাচ্চা মেয়ে সংসার করতে পারবে তো।নাকি পালিয়ে যাবে।
–আমার তো মনে হয় না।আয়ানের সাথে সংসার করে খাবে।দেখবে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে দুই দিন পরে চলে যাবে।
সবাই যে যার মতো বলেই যাচ্ছে। এসব শুনে শখের খুব খারাপ লাগছে।কিছু বলতে পারছে না।কান্না করে যাচ্ছে নীরবে। আয়ান রেগে বললো।
–এক কাজ করেন আপনারা বরং আমার বউকে আপনাদের সাথে নিয়ে যান।মনে হচ্ছে বিয়ে আমি না আপনার করছেন।সংসার আপনাদের সাথে করবে।তাই আপনাদের এত লাগছে।আর কল্পনা আন্টি কি বললেন আপনি।বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমার বউ পালিয়ে যাবে।আপনি তো আপনার মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন আর আপনার মেয়ে বিয়ের দিন তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গেছে।সেজন্য আপনি সবাইকে নিজের মেয়ের মতো ভাবছেন।
–কি বেয়াদব ছেলেরে বাবা।নীলিমা এখনি তোমার ছেলে বউ এর হয়ে কথা বলছে।একটা কথা মাটিতে পড়তে দিচ্ছে না।দু’দিন পড়ে তোমাদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুড়াবে।
–আচ্ছা তোমরা বিয়ে খেতে এসেছ।বিয়ে খেয়ে চলে যাবে।এত কথা বলার কি আছে।সত্যি কথা-ই তো বলেছে আমার আয়ান।
আমাদের দাওয়াত দিয়ে এভাবে অপমান। এই সবাই চল থাকবো না।বলেই সবাই চলে গেলো।
শখকে দেখে আয়ানের বাবা মুখ কালো করে রুমে চলে গেলো।শখ কান্না করছিলো রুহি কোনো রকম শখকে বুঝিয়ে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসলো।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here