রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 29

0
1944

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_২৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–কেনো করলেন আহনাফ সাহেব এমন’টা।কেনো আমার বাবা-র থেকে এতগুলো বছর দূরে সরিয়ে রাখলেন।কি উদেশ্য আপনার।আমাকে বলতেন শখের নামে অনেক জায়গা জমি,টাকা পয়সা আছে।যেগুলো কেবল শখের আঠারো বছর পূর্ণ হলে-ই আমরা নিতে পারব।আপনি তো শখকে মারতে’ও চেয়েছিলেন।
–ছিঃ বাবা তুমি আর কতো নিচে নামবে।আজ আমি এত বেয়াদব,রাগী হয়েছি,শুধু মাত্র তোমাদের জন্য আমি যখন ছোট ছিলাম।শখ আর ফিয়াজ ভাইয়াকে নিয়ে আসলে,তোমরা সব সময় শখকে বেশি ভালোবাসতে।এটা দেখে আমার খুব খারাপ লাগতো।কিন্তু যখন জানতে পারলাম শখকে তোমরা শখকে মারার প্ল্যান করছো।তখন আমি পাঁচ বছরের বাচ্চা সবকিছু শুনে ফেলি।তারপরে থেকে শখের জন্য আমার খুব খারাপ লাগতো।তোমরা চাইতে আমি শখের সাথে খারাপ ব্যবহার করি ওকে আঘাত করি যার কারনে ও মরে যায়।আর বাচ্চাদের হিংসা খুব মারাত্মক।কিন্তু আমি তখন থেকে-ই ঠিক করে নেই শখের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করবো।কিন্তু শখের কোনো ক্ষতি হতে দিব না।বড় বোন হিসেবে শপথ নিয়েছিলাম। আমি ভাবছিলাম তোমরা হয়তো সবকিছু ভুলে গেলো।অন্য কেউ শখকে মারার চেষ্টা করছে।তাই স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তুমি আমার সব বিশ্বাস ভেঙে দিলে বাবা।আমি তোমাকে ঘৃণা করি।তোমার মতো বাবা যেনো,আল্লাহ কাউকে না দেয়।শখ তোমার নিজের মেয়ে না হতে পারে।কিন্তু তোমার মেয়ে তো সেই বাচ্চা থেকে বড় করছো।তোমার মায়া লাগে না কষ্ট হয় না।কলিজাতে লাগে না।উত্তর দিচ্ছো না কেনো বাবা।
–তোরা সবাই একদিন সবকিছু বুজতে পারবি।আমাকে কিছু বলতে হবে না।আর সবকিছু বলে আমি তোদের বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারি না।
–কি বিপদ শখকে মেরে আমার নামে চাপিয়ে দেবে।বলবে মুনতাহা শখকে দেখতে পারে না।শখের ওপরে খুব রাগ তাই জন্য শখকে মেরে ফেলেছে। অবশ্য তোমরা এটা’ও করতে পারবে।ছোট বেলায় তুমি আর ঐ মহিলা মিলে আমার বোনটাকে ছাঁদ থেকে ফেলে দিয়ে আমার ওপরে সব দোষ দিয়ে দিতে চেয়েছিলে,সবকিছু শুনে ফেলছিলাম বাবা।তারপরে থেকে আরো বেশি ঘৃনা জমে গিয়ে ছিল।
–মুনতাহা আমি যা করেছি তোদের ভালোর জন্য-ই করেছি।একদিন ঠিক বুজবি।আজ দোষ না করে’ও সবার কাছে আমি’ই দোষী।তবু’ও তোরা ভালো থাক এটা’ই আমি চাই।
–আচ্ছা বাবা তুমি তোমার মেয়েদের ভালোর জন্য করেছ।কিন্তু আমি কি দোষ করছি,যে তুমি আমার বাবাকে আমার থেকে দূরে সরালে।
আহনাফ সাহেব মাথা নিচু করে আছে।
–কিন্তু আমি তো এনাকে বাবা হিসেবে জানি না।আমি তো আমার বাবাকে-ই বাবা হিসেবে জানি।ভাইয়া তুমি এনাকে কি করে বাবা হিসেবে জানো।বলল মিহু।
–আমি বলছি তোদের সবকিছু। কি হয়েছে তবে শোন।আয়ানের বাবা আমার নিজের ভাই তোরা তো জানিস।তোর বাবা ছিলেন প্রবাসী, ওনার অর্ধেক জীবন প্রবাসে-ই কেটে যায়।এক সময় তিনি দেশে আসেন।আর আমাদের বিয়ে হয়।তখন আমার পেটে শুভ আসে।শুভ যখন দুই বছর বয়স। তখন মিহু আমার পেটে।তোর বাবার নামে মিথ্যাে মামলা করে যার কারনে তোর বাবাকে আবার প্রবাসে ফিরে যেতে হয়।এই তো জীবন কাটছিল সুন্দর।তারপরে মিহু হলো,তখন আমি আয়ানদের বাসায় থাকতাম।মিহুর এক বছর পূর্ণ হলে আমি আবার শুভর বাবার বাসায় ফিরে আছি।একদিন বিকেলে মিহুকে খাওয়াচ্ছিলাম।হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে ওঠে আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখি আহনাফ সাহেব। আমি ওনাকে চিন্তে পারি নাই। উনি আমরা মাথায় সরাসরি বন্দুক ঠেকিয়ে বলে,একদম চিৎকার করবেন না।তাহলে জানে মেরে দিব। আমি’ও ভয় পেরে একটা কথা বলছিলাম না।উনি আমাকে বলল।আমি যা যা বলবো তা যদি না করে রায়হান কে মেরে ফেলবে।সাথে আমাকে দেখালো রায়হান কে আটকে রেখে কি অত্যাচার-ই না করছে।স্ত্রী হয়ে এমন কিছু দেখা সত্যি খুব কষ্ট কর আমি ওনার পা ধরে বললাম প্লিজ আমাকে স্বামীকে ছেড়ে দেন।আপনি যাহ বলবেন আমি তাই শুনবো।তারপরে উনি আমাকে বললেন।শুভকে উনার ছেলের পরিচয়ে বড় করতে হবে।আর শুভ বড় হলে উনি শুভকে দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করাবে আমি কিছু বলতে পারবো না।আমি শুভর বাবাকে বাঁচাতে রাজি হয়ে যায়।উনি আমাদের সব সময় ভালো খারাপ দেখাশোনা করতো।কখনো খারাপ ব্যবহার করতো না।আমাদের একটা গুপ্ত রুম আছে ওখানে মাঝে মাঝে আসতো।কিছু কথা বলতো।আবার চলে যেতে তাছাড়া আর কোনো কথা হতো না।আমি শুভর বাবাকে পাগলরে মতো খুঁজেছি।কিন্তু কোথাও পাই নাই। তাই ওনার সবকথা আমি শুনি।শুভ আহনাফ সাহেবকে বাবা হিসেবে জানালে’ও মিহুকে তা জানতে দেয় নাই। মিহুকে সব সময় আয়ানদের বাসায় রাখতাম। মিহুর যখন ১৭ বছর বয়স মিহু আয়ানের জন্য পাগল হয়ে যায়।আয়ানকে বিয়ে করতে চায়।আরো পাগলামি শুরু করে দেয়।যার ফলে মিহুকে বিদেশে পাঠাতে আমরা বাধ্য হই।শখের আঠারো বছর পূর্ণ হবার আগে আমি শুভর বাবাকে খুঁজে পাই। শুভর বাবাকে মিথ্যা কথা বলে বাসা থেকে বেড় করে নিয়ে গিয়েছিল পরে আটকে রেখেছিল,আহনাফ সাহেব। পরে আমি সেখানে থেকে শুভর বাবাকে নিয়ে এসে লুকিয়ে রাখি।হাজর চেষ্টা করলে-ও আহনাফ সাহেব শুভর বাবাকে খুঁজে পায় না।না পারে শখকে মারতে।এত টাকা পয়সার নেশায় আমাদের সুখের সংসার শেষ হয়ে গেলো।না পারলাম সংসার করতে না পেলাম স্বামী,ছেলেমেয়ে-কে একসাথে কাছে।না পেলে শুভ,মিহু তার বাবার ভালোবাসা। আর বাকি সবকিছু তোরা তো জানিস-ই কথা গুলো বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লে তিনি।
সবটা শুনে শুভ রেগে আহনাফ সাহেবের কলার ধরে বলল।
–আমি আপনাকে শেষ করে দিব আহনাফ সাহেব। আপনি আমার জীবন থেকে সবকিছু কেঁড়ে নিয়েছেন।আমি আপনার জীবন টাই কেঁড়ে নিব।বলে-ই বন্দুক বের করলো।
তখনি শুভর মা দৌড়ে এসে তাকে আটকালো।
–কি করসিছ শুভ।ছেড়ে দে।আমি আর কোনো ঝামেলা চাই না। তোর বাবা আর তোদের এক করতে পেরেছি।এখন এই বুড়ো বয়স’টা তোদের সাথে নিয়ে সুখে সংসার করতে চাই। ওনার বিচার আল্লাহ করে দিবেন।একটা কথা মনে রাখবি।বিচারের মালিক আল্লাহ আমরা না।সবকিছু ওনার ওপরে ছেড়ে দে।উনি ওনার পাপের ফল পাবেন।আপনি এখন আসতে পারেন।আহনাফ সাহেব যেনো এই কথাটারি অপেক্ষা করছিলেন। বলার সাথে সাথে মাথা নিচু করে চলে গেলেন।
শুভ অবাক আহনাফ সাহেব কে এতদিন ধরে দেখছে।উনি এত সহজে সবকিছু মেনে নেওয়ার মতো লোক না।কিছু তো গরবর আছে’ই।
শুভ বাবা আমার জান আমার লক্ষ সোনা ছেলে আমার একবার বাবা বলে ডাক না।কিরে মিহু আমাকে বাবা বলে ডাকবি না।তোরা কেনো ডাকছিস না আমি কত বছর প্রহর গুনে আছি,এই দিনটার জন্য।
শুভ বাবা বলে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। মিহুকে’ও কাছে টেনে নিলো তার বাবা।শুভর মা-ও ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়াল।অবশেষে আমাদের পরিবার’টা পূর্ণতা পেল।বলল মিহু।
–কেমনে পূর্ণতা পেলো রে মিহু।আমার আরেক’টা মেয়েকে দেখ দূরে দাঁড়িয়ে বোকার মতো কান্না করে যাচ্ছে।এই দিকে আয়া মা।বলল শুভর মা।মুনতাহা আসছে না দেখে শুভর আম্মু নিজে গিয়প মুনতাহাকে জড়িয়ে ধরলো।
–কান্না করিস না মা।তোর বাবার অপরাধের শাস্তি তোকে আমরা দিব না।আমরা এতটা’ও খারাপ না।মুনতাহা এবার জোরে কান্না করে উঠলো।
–পাগলি মেয়ে আমার কান্না করবি না একদম।মিহু যেমন আমার একটা মেয়ে ঠিক তেমনি,তুই আমার আরেকটা মেয়ে।
মুনতাহা আর কিছু বলল না দৌড়ে রুমে চলে আসল।কোনো মেয়ে-ই তার বাবার এমন অপরাধ মেনে নিতে পারবে না।বাবা তো যত-ই খারাপ হোক না কেনো। কেউ কিছু বললে ঠিকি খারাপ লাগে।এখন যদি তাকে সেই খারাপ কথা শুনতে হয়।শুভ কি আমাকে ভুল বুজবে।সত্যি কি বাবার শাস্তি আমাকে দিবে।আমি যদি বাবার কাছে রেখে আসে।এসব ভাবছে আর কান্না করছে।তখনি শুভ আসে রুমে।মুনতাহার সাথে কোনো কথা না বলে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে মুনতাহার সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়ে।
মুনতাহা আর কোনো কথা না বলে শুভ পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে ঘম আসছে না।মা থাকলে ভালো হতো।জড়িয়ে ধরে ইচ্ছে মতো কান্না করতে পারতাম।কিছুই ভালো লাগছে না। কি যে করি।কালকে ঠিকি আমাকে জড়িয়ে নিয়েছিল একদিনে-ই এতটা বদলে কিভাবে যায় মানুষ। বলে-ই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মুনতাহা।
রাত বারোটা বেজে গেছে। সবাই চলে গেছে। পুরো বাসা একদম ফাঁকা,রুহি আর কাজের লোকরা মিলে পুরো বাসা পরিষ্কার করে ফেলছে।প্রচুর ক্লান্ত লাগছে।শখ রুমে এসে শাড়ি বদলে একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে নিলো।আয়ানের আসার নামে কোনো খোঁজ নেই। আগে নাকি এমন করতো না।আমি আসার পড়ে থেকে এমটা শুরু করেছে।এসব ভাবতে ভাবতে আয়ানরে আগমন।
–এতক্ষণ কোথায় ছিলেন।
–সব কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে।
–হ্যাঁ দিতে হবে।
-কেনো দিতে হবে।তুমি আমার কে,যে আমার সবকিছু তোমাকে বলতে হবে।
–আমি আপনার বউ তাই আপনি সবকিছু আমাকে বলতে বাধ্য।
–বউ(তাচ্ছিল্যের হাঁসি দিয়ে বলল)
–আপনি এমন করছেন কেনো বলেন তো,আমার আর ভালো লাগছে না।
–এতটুকুতে’ই হাঁপিয়ে গেছো।আমি যে দুইটা বছর ধরে সয্য করছি।
–মানে।
–কিছু না তুমি বুজবে না।
–আমাকে বুঝিয়ে বললে ঠিক বুজবো।
–প্রয়োজন মনে করছি না।
–কেনো আমাকে এত শাস্তি দিচ্ছেন।
–তুমি কে যে তোমাকে আমার শাস্তি দিতে হবে।
–স্যার…
–হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছো।তুমি আমার ছাত্রী আর আমি তোমার স্যার।এটা-ই আমাদের সম্পর্ক।
–আপনাকে কি ভূতে ধরছে স্যার।
–তাতে তোমার কি।
–আপনি সব সময় এমন করেন কেনো ভালো করে কথা বলতে পারেন না।
–ভালো ব্যবহার পেতে হলে ভালো কাজ করতে হয়। তুমি কি কোনো ভালো কাজ করছো।যার জন্য আমি তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করবো।শ
শখর কোনো কথা বলল না। মাথা নিচু করে ফেলল।একটা অপরাধ করেছে এখন কি তার শাস্তি সারাজীবন পেতে হবে।আর কথা বলে লাভ নেই। তাই শখ গিয়ে বিছানার এক কোণে শুয়ে পড়ল।
–শখ তুমি জানো,আমি আমার বেড কারো শেয়ার করতে পছন্দ করি না।কালকে বলে দিয়েছি।মনে নেই।
এমনি তেই শখের মনটা ভালো নেই। কেমন জানি অজানা কারনে ভেতরে খুব খারাপ লাগছে শখরে।তাই কোনো কথা না বলে,উঠে এসে চুপচাপ ফ্লোরে শুয়ে পড়ল।
আয়ান অবাক সে ভেবেছিল শখ হয়তো ওর অধিকার নিয়ে ঝগড়া করবে।তার ভাবনা সম্পূর্ন উল্টো করে দিয়ে শখ নিচে শুয়ে পড়ল।
কেনো এত অস্তির লাগছে।কেনো শান্তি পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে।কিছু হতে চলেছে।আমি কি আমার কাছের কোনো মানুষকে হারাবো।না আর নিতে পারছি না।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।মা-গো,ও মা আজ কেনো জানি তোমার কথা খুব মনে পড়ছে।বলছে আর কান্না করছে।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here