অবুঝ প্রেম – পর্ব 07

0
531

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ৭
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
এইসব ভাবতে ভাবতে চারিদিকে অন্ধকার ঘন হতে থাকে। সাথে সাথে মনের জিদ গুলোও পাহাড় সমান হয়। ফিরবো না বাড়ি, কোন ভাবেই ফিরবো না।
কারো গাড়ি স্কুল গেইটের সামনে এসে থামে। আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছি। গেইট বন্ধ বলে তুর্জ সারা!!সারা!! বলে ডাকতে শুরু করে। আমি তখন বাইরে বেরিয়ে আসি। তুর্জ আমাকে দেখে আরো রেগে যায়। তারপর বলে,, তুমি কি সত্যিই পাগল? দুইদিন আগের এমন ঘটনা ঘটাতেও কি তোমার শিক্ষা হয় নি? আবারও এখানে এতো রাত ভর কোন সাহসে আছো তুমি??
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। তুর্জ বলে, চল বাড়ি চল,, সবাই কান্নাকাটি করছে।
আমি পিছনের সিটে বসে পরলাম, তুর্জও কিছু বললো না।বাসায় গিয়ে দেখি মামুনিকান্না করছে,শাশুড়ী মা আমার মামুনিকে জরিয়ে ধরে আছে। আর বাবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। তুর্জের পিছনে আমি ধিরে ধিরে আসছি,,মা তুর্জকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো পেয়েছিস মেয়েটাকে? তুর্জ কোন জবাব না দিয়ে হনহন করে উপরে চলে গেলো। মামুনি আমাকে দেখে দৌড়ে এসে কান্না করতে লাগে। তারপর কাছে বসিয়ে বলে, তুর্জের মা আমার মামুনিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলো আমি ওখানে গেছি নাকি।আর আজ তো মামুনির এ বাড়িতে আসার করা কথা ছিলো। তাও ওখানে যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করারে সন্দেহ হয় বলে সাথে সাথে চলে এসেছে। তারপর তুর্জকে ফোন করে কিন্তু তুর্জের মিটিং থাকার জন্য সে ফোন পিক করতে পারে নি। রাত ৮ টার পরে ১০০+ মিসড কল দেখে অবাক হয়ে কল ব্যাক করে তুর্জ। তখন জিজ্ঞেস করে তার সাথে আমি আছি না কি?
তারপরের ঘটনা গুলো আপনারা জানেন। সারাদিন কিছু খায় নি। মামুনি নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি, এমন ভাবে রাগ করা উচিত হয় নি৷ বাসার সবাই খুব টেনশনে ছিলো। খাওয়া শেষ হতে না হতেই মুখ ভরে আবারও বমি চলে আসে। কোন রকম দৌড়ে ওয়াশরুমে যায়। জানিনা কেন মাঝে মাঝে খাওয়া শেষে এভাবে বমি হয়। সারাদিন না খেয়ে থাকার পরে এখন আবারও বমি হওয়াতে প্রচুর ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
মা আমাকে ধরে উপরে নিয়ে গিয়ে সুইয়ে দিলেন। তুর্জ হয়তো ফোনে কথা বলছিল কিন্তু আমাদের দেখে ফোন রেখে দিলো।
আমি চুপচাপ সুয়ে আছি এমন সময় তুর্জ আমার কাছে এসে বলে,,দেখো সারা তুমি এখনো অনেক ছোট্ট। কোনটা ভালো কোন টা মন্দ তা বুঝার বয়স তোমার এখনো হয় নি। শুধু মাত্র তোমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর বাবা মায়ের কথা রাখতে তোমাকে কাগজে বিয়ে করেছি। তুমি বড় হও পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তোমার পার্ফেক্ট জীবন সঙ্গী খুঁজে নিও।
আমি আস্তে করে জিজ্ঞেস করি,আপনি কি ওই মেয়েটাকে ভালোবাসেন?
হ্যাঁ, পাঁচ বছর আগে থেকে আমার আর তনিমার রিলেশন,, তোমার সাথে এমন কিছু না হলে এতোদিন বাসায় বলতাম তনির (ডাক নাম) কথা।
আমি আর কোন কথা না বলে পাশ ফিরে সুয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম। বারান্দায় তুর্জ তনিমার সাথে কথা বলছে তা শুনতে পাচ্ছি। তুর্জ বলছে,, প্লিজ এতো এক্সাইটেড হচ্ছো কেন? বিষয় টা তো আমি হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করছি।
কেন এমন হলো? সত্যিই কি আমি ছোট,, অনেকের তো দেখি আমার মতো বয়সে বিয়ে হয়ে বাচ্চা হয়েছে, তাদের বর গুলাও তো তুর্জের মতো বড়। তাহলে শুধু আমার ক্ষেত্রে এমন হবে কেন। কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে চুপচাপ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছে যায়। মা রান্না ঘরে নাস্তা তৈরি করছেন। আমি কোন হ্যাল্প করবো কি না জিজ্ঞেস করলে মা বলে, শুধু হ্যাল্প না, সব কিছু তোমাকে করতে হবে তবে তা এখন না। সময় হোক। এখন গিয়ে রেডি হয়ে আসো,, তুর্জ তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসবে।
মনে মনে ভাবছি, আমি উনার সাথে যাবো না,, জানি আজও ওই তনিমা ফনিমাকে সাথে নিয়ে যাবে। উনার পাশে কাউকে মেনে নিতে আমার খুব কষ্ট হয়। তারচেয়ে ভালো একা একাই যাবো। খাওয়ার সময় মা তুর্জকে বলে, আজও আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে।আমিও চুপচাপ খাওয়া শেষ করে বাইরে চলে আসছি। উনি আমাকে পিছনে বসতে বলেন। কিন্তু আমি সোজা হাটা শুরু করি। কিছুক্ষণ পরে উনি পিছনে থেকে ডেকে বলে,, প্রব্লেম কি তোমার? সব কিছু তে ঘাড়ত্যাড়ামি করো কেন?
আমি আপনার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারিনা। আমার অনেক কষ্ট হয় আপনাকে তনিমার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখলে তার পাশাপাশি হাটতে দেখলে। আমাকে আপনি যতটা ছোট ভাবেন আমক ততটাও ছোট না। আপনি আমাকে wife হিসেবে না মানলেও আমি আপনাকে husband হিসেবে অনেক আগেই মেনে নিয়েছি।
আর কিছু বলতে পারলাম না। সোজা হাটা দিলাম। কিন্তু স্কুল তো অনেক দূরে কিভাবে এতো দূর হেটে যাবো। আমার কাছে তো টাকাও নাই। খুব জোরে জোরে হেটে চলেছি,, প্রায় আধাঘন্টা পরে স্কুলে পৌঁছে গেলাম। পা দুটো টনটন করছে ব্যাথায়। রাহুল আর শিমুলের থেকে কিছু টাকা ধার নিলাম বাসায় যাওয়ার সময় রিক্সার ভাড়া দিবো ভেবে। সারাদিন তুতুল মিঠি রাহুল শিমুল আমাকে নানা কিছু বলে আমার মন খারাপের কারণ জানতে চায় কিন্তু আমি কিছুই বলিনি।
স্কুল শেষে রাস্তায় রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি তখন তুর্জ আসে আমাকে নিতে।
গাড়িতে উঠো,,
,,,,,
বললাম, গাড়িতে উঠো!!
এই মামা যাবেন,,, বলতেই তুর্জ গাড়ি থেকে নেমে হাত ধরে টেনে ওর পাশের সিটে বসিয়ে দিয়ে ওইপাশ দিয়ে তুর্জ ও উঠে বসে। সিটবেল্ট বাধিনী বলে তুর্জ আমার সিটবেল্ট বেঁধে দিচ্ছে। আমি কোন কিছু না ভেবে তুর্জকে জরিয়ে ধরে বলি,, পারবো না আপনাকে অন্য কারো হতে দেখতে। এই ছোট্ট সারার সারা-মন প্রাণ জুড়ে আপনি আছেন। সত্যিই আমার বুক ফেটে যায় আপনি অন্য কারো এটা ভাবতে।
তুর্জ কোন শব্দ না করে আমাকে ছাড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে। মনে হচ্ছে আমার কষ্ট গুলো তার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ দাগ কাটেনি। আমাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে তুর্জ আবারও অফিসে চলে যায়।
রাতে আমি পড়ছিলাম তখন তুর্জের ফোনে বারবার কল আসছে কিন্তু তুর্জ পিক করছে না। তারপর ফোন হাতে নিয়ে বাইরে কোথাও চলে যায়। আমিও কিছুক্ষণ পরে বাইরে এসে দেখি ড্রয়িংরুমে নাই,, ভাবলাম মনে হয় ছাদে গেছে তাই আমি চুপিচুপি ছাদে উঠে গেলাম।
তুর্জ এতো রোমান্টিক ভাবে কারো সাথে কথা বলতে পারে তা আমার জানা ছিলো না। কিভাবে আহ্লাদী সুরে বলছে,,
আমার তনী সোনাকে আমার বুকের ভেতর রাখি,,ফোন পিক করিনি বলে কি আমি তোমার পর হয়ে গেলাম। জান তোমার নিশ্বাসের শব্দ গুলো এখনো আমার হৃদপিণ্ডে আঘাত করে গো। তোমার শরীরের স্মেইল মাতাল করে তোলে,,,
ওই প্রান্তে থেকে কি কথা হলো জানিনা,, তুর্জ আবারও বলা শুরু করে,,,
উউফ আর বলো না,, নিজের কন্ট্রোল হারাচ্ছি। এভাবে বললে হয়তো দেখবা আমি তোমার রুমে,তোমার মাঝে আবারও ডুবে যেতে হাজির হয়েছি,,,,,
না আমার পক্ষে আর কিছু শোনা সম্ভব না। কেন আসলাম এখানে, যেচে কষ্ট নিতে। ছিহ্ তুর্জ এত নোংরা,, ওদের মাঝে ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছে তা বুঝতে পারছি। ভাবছি কাল আমি চলে যাবো এখান থেকে। আমি চায় না এমন কারো সাথে আমার জীবন কাটুক। ভাগ্য ভালো অল্পতেই নিজের ভুল বুঝতে পারছি আমি।
এতো কিছু ভাবনার ঘোরে ভুলক্রমে সিড়ি থেকে পড়ে গেলাম। না চাইতেও ওমাগো বলে চিৎকার বেরিয়ে আসছে। তুর্জ দৌড়ে এসে আমাকে তোলার চেষ্টা করে,, আমি উনার হাত ঝাকুনি দিয়ে সরিয়ে দিলাম, আর বললাম,
খবরদার আপনার এই নোংরা হাতে আমাকে স্পর্শ করবেন না। আপনাকে আমি ভদ্র ভেবে ভুল করেছি,, যে ছেলে বিয়ের আগে গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ওইসব করতে পারে তার মতো খারাপ মানুষ দুনিয়াতে নাই।
তুর্জ আমাকে কোলে নিয়ে রুমে যেতে যেতে বললো,, আড়িপাতছিলে বুঝি?? তুমি জানো না অন্য কারো কথা আড়ি পেতে শুনতে নাই। দেখছো তো অন্যায়ের শাস্তি হাতেনাতে পেলে।
আমি উনার কোল থেকে নামার জন্য ছটফট করছি কিন্তু উনার শক্তির কাছে আমার শক্তির কোন মুল্যই নাই। উনি বিছানায় সুইয়ে দিয়ে বলে, দেখি কোথায় লেগেছে?
আমি উনাকে পা দেখাবো না তাই বললাম, কোথাও লাগে নি। এমনই এমন চিৎকার দিয়েছি!!
ওও তার মানে তুমি আমার রোমান্টিক মুহূর্ত কে নষ্ট করতে চেয়েছিলে??কিন্তু আমার মাঝে তো এখনো সেই রোমান্টিক ভাব টা আছে,, এখন তো এর মাসুল আদায় করে নিবো!! কি করি বলো তো??
ম মায়ানেএএ,,,ক কি বলতে চায়াইছেন!!
আমি কি বলবো,, তুমি আগে বলো তুমি কি কি শুনেছো?
আমি কিচ্ছু শুনিনি,,
ওহহ তাই, তাহলে তখন কি যেন বললা,,আমার নোংরা হাত, ওইসব করেছি,,,ওইসব বলতে কোন সব বোঝালে??
দেখুন ভালোই ভালো আপনি চুপ করুন, নয়তো আমি মা কে ডাক দিবো।
আমি আমার বউয়ের সাথে কথা বলছি এখানে মা এসে কি করবে?
কে আপনার বউ হুম, আমি আপনার বউ টউ না। আমি সারা,, শুধু সারা অন্য কিছু না।
ওও তাই বুঝি,, সকালেই তো বললা, তুমি আমার wife আমি তোমার husband,, আরো কি যেন বললা,, আমি তোমাকে যত ছোট ভাবি তুমি নাকি তত ছোট না,,, আচ্ছা তাহলে দেখি তো তুমি আসলে কত বড়,, বাকা হাসি দিয়ে বললো তুর্জ।
ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে গেছে, এই ব্যাটা মহব্বত আলি থুক্কু বদজাত লম্পট কি করতে চাইছে?? ইয়া খোদা রক্ষা করো আমাকে, আমি তোমার নামে মুরগী কোরবানি দিবো। তুর্জ দরজা বন্ধ করে ধিরে ধিরে এদিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ে কাচুমাচু হয়ে চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বললাম,
ভালো হবে না কিন্তু, আমি সবাইকে বলে দিবো আপনি আমার সাথে ওইসব করেছেন।
কোনসব করেছি সেটাই তো জানতে চাই,, বলো কোনসবের কথা বলবা সবাইকে।
,,,,,,
আচ্ছা, তুমি কতটা বড় হয়েছো সেটা দেখা শুরু করি। কি দিয়ে শুরু করবো বলো,, দাড়াও পা থেকে শুরু করি।আজ তুমি না বললে আমি বুঝতেই পারতাম না, আমার ঘরে এতো বড় একটা বউ থাকে।
উনি আমার পা থেকে প্লাজু টা একটু উপরে তুলে দিলো। বুকের ভেতর দুরুদুরু করছে,, নিশ্বাস গুলো অনবরত উঠানামা করছে। উনার হাতের স্পর্শ গুলো অন্য রকম শিহরণের সৃষ্টি করেছে। উনি আমার অন্য পায়ের প্লাজু টাও উপরে তুলে দিলেন।
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here