আজও বৃষ্টি নামুক – Part 9

0
452

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৯
_________________
‘ চলো তাহলে যাওয়া যাক বুবু।’
আচমকাই ‘বুবু’ শব্দটা কানে আসতেই চমকে উঠলো প্রিয়তা। বিস্মিত ভরা চোখ নিয়ে তাকালো সে আরোহীর মুখের দিকে। আরোহী মুঁচকি হেঁসে বললো,
‘ আসলে তোমরা নামটা জানা হয় নি তো তাই আর কি। চলো ভিতরে যাই তোমার সাথে পরিচিত হতে হবে তো নাকি। তুমি আমার বড় না ছোট তাও তো জানি না।’
বলতে বলতে প্রিয়তার হাত ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো আরোহী। আর প্রিয়তা চুপচাপ শুনছিল আরোহীর কথা তবে মনটা পড়ে রইলো তাঁর বুবুটার জন্য। বড্ড চিন্তা হচ্ছে তার, না জানি কেমন আছে তাঁর বুবু।’
অপূর্বরা দৃষ্টির বাহিরের চলে গেছে অনেক আগেই। প্রিয়তা আর ফিরে তাকায় নি সেখানে এগিয়ে চললো তাঁর মতো করে।’
____
সন্ধ্যা শেষে রাত হবে হবে এমন। প্রিয়তার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রেমা। রাগ নেই তাঁর তবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে খুব না জানি বোনটা কোথায় আর কেমন আছে। প্রেমা আজ চলে যাবে তাঁর স্বামীর বাড়ি। স্বামীর হুকুম এই রাতেই নিয়ে যাবে তাঁকে। ঘড়িতে এখন প্রায় আটটার কাছাকাছি বাজতে চললো। প্রেমার শশুর বাড়ি খুব একটা দূরে নয় এখান থেকে। এবার গেলে আবার কবে আসতে পারবে জানা নেই প্রেমার। তবে আবার এসেও বা কি করবে তাঁর বোনটাই যে নেই আর। প্রেমা ঘরের সব জায়গায় চোখ বুলালো হঠাৎই তাঁর চোখ গেল টেবিলের একটা বইয়ের ভাঁজে হাল্কা দৃশ্যমান একটা কাগজের দিকে। প্রেমা কৌতুহলী এগিয়ে গেল সেখানে, প্রিয়তা কিছু লিখে যায় নি তো তাঁর জন্য। প্রেমা এগিয়ে গিয়ে বইটা খুলে কাগজটা বের করলো তারপর ভাজ খুলে শুরুতেই দেখতে পেল। লেখা সেখানে,
‘ বুবু!’
প্রেমা থেমে গেল তাঁর ধারনাই ঠিক প্রিয়তাই কিছু লিখে গেছে তাঁর জন্য। প্রেমা সর্বপ্রথম দৌড়ে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর বিছানায় বসে পড়তে লাগলো। সেখানে লেখা,
‘ বুবু আমায় ভুল বুঝিস না। তুই তো জানিস বুবু ছোট বেলা থেকেই আমার পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই বুবু। আর চাঁচি যে আমার সাথে অন্যায় করেছে তার শাস্তিও দিতে চাই। আমি জানি আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসলে চাঁচি তোর ওপর অত্যাচার করবে তাই বলেছিলাম আমার সাথে আসতে কিন্তু এলি না। আমার জন্য চিন্তা করিস না বুবু আমি তোর জামাইর নাম্বার লিখে নিয়ে গেলাম সাথে তোর বাড়ির নাম্বারটাও। আমি নিজের একটা ব্যবস্থা করে তোকে ঠিক ফোন করবো। আমার জন্য চিন্তা করিস না। ভালো থাকিস।’
ইতি
প্রিয়তা।’
চিঠি পড়ে চোখ বেয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো প্রেমার। বাবা মা চলে যাওয়ার পর তাদের দু’বোনটার জীবনটা যেন নরোগ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে গেছে। এমন সময় দরজায় নক পড়লো, চাচা ডাকছে। বলছেন,
‘ প্রেমা মা কই তুই জামাই বাবা কিন্তু চলে এসেছে।’
উওরে প্রেমাও চোখ মুখ মুছে বলে উঠল,
‘ এই তো ছোট আব্বু আসছি আমি।’
অতঃপর চিঠিটা নিজের শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে চললো প্রেমা শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। চাঁচি সারাদিনে তেমন একটা চেঁচামেচি করে নি তবে গম্ভীর হয়ে ছিল হয়তো সকালের আসা সেই ছেলেগুলো এখনও তাঁর বোনটার কোনো খোঁজ আনতে পারে নি।’
___
তুহিনের বাড়ির সোফায় বসে আছে অপূর্ব চোখ মুখ যথেষ্ট স্বাভাবিক থাকলেও ভিতরে ভিতরে যথেষ্ট রেগে আছে সে। অপূর্বের মাথায় আসছে না মুখার্জি মশাই ব্যতীত আর এমন কে থাকতে পারে যে ইলেকশনের আগেই তাঁকে রাস্তা থেকে সরাতে চাইছে। মুখার্জি মশাই তাঁকে নিজের দলে টানতে চাইছে সাথে বাজে কাজে লিপ্ত করতে চাইছে। তবে কি মুখার্জি মশাই বারন করার জন্য তাঁর ক্ষতি করতে চাইছে কিন্তু সেটা যদি হয় তাহলে কাল রাতে বাসে বসে তাঁকে ফোন করে নিজের দলে টানার কথা বলতো না। আর তার কথার ধরন শুনেও অপূর্বের মনে হয় নি মুখার্জি মশাই এমন কিছু করতে পারে।’
অপূর্বের ভাবনার মাঝেই অপূর্বের পাশে বসে থাকা আকিব বলে উঠল,
‘ ভাই আমরা এখানে এসেছি কেন?’
প্রতি উওরে অপূর্ব কিছু বলবে এরই মাঝে ল্যাপটপ হাতে সেখানে এগিয়ে আসলো তুহিন। বললো,
‘ অপূর্ব ভাই। আপনি যেভাবে বলেছিলেন কাজটা হয়ে গেছে। আপনার গাড়ি প্রথমে যেখানে থেমেছিল সেখানের ফুটেজ দেখেছি আমি। একটা গামছা পরিধিত লোকই আপনার গাড়িতে,
তুহিনের কথার মাঝেই হাত দেখিয়ে তুহিনকে থামতে বললো অপূর্ব। তুহিনও থেমে গেল। তুহিন থামতেই অপূর্ব আকিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ একটা গ্লাস পানি নিয়ে আসো আকিব?’
আকিব বেশ মনোযোগ দিয়েই তুহিনের কথা শুনছিল সে সত্যি বুঝতে পারছে না কিসের গাড়ি আর কিসের গামছার কথা বলছে। আকিব অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ভাই তুহিন কিসের কথা বলছে?’
উওরে অপূর্ব আকিবের দিকে দৃষ্টি রেখে শান্ত গলায় বললো,
‘ আগে একগ্লাস পানি আনো তারপর বলছি।’
‘ আপনার কি খুব পানি পিপাসা পেয়েছে ভাই,
‘ মনে করো তেমনটাই।’
‘ আমি না আসা পর্যন্ত আপনারা কোনো কথা বলবেন না কিন্তু ভাই?’
‘ হুম তুমি নিশ্চিতে যাও আকিব।’
আকিব চলে গেল। দ্রুত গিয়ে টেবিলের উপর থেকে কাঁচের গ্লাসে করে পানি এনে এগিয়ে দিল অপূর্বের দিকে। অপূর্ব পানিটা নিলো না উল্টো আকিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ কাঁচের গ্লাসে কেন নিয়ে এসেছো যাইহোক এটাকে শক্ত করে ধরে রাখবে ভেঙে গেলে কিন্তু বুঝতেই পারছো।’
আকিব অবাক হলো, ভীষণ অবাক হলো অপূর্বের কথা শুনে এখানে ভাঙার মতো কি ঘটনা আছে। আকিবের ভাবনার মাঝেই অপূর্ব তুহিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ এবার বলো তুহিন কাল কে রেখেছিল বোম আমার গাড়িতে,
অপূর্বের কথা শুনে থর থর করে কেঁপে উঠলো আকিব। হাতের গ্লাস কাঁপতে লাগলো তক্ষৎনাত। আকিব কাঁপতে কাঁপতে বললো,
‘ বববববব মমমমমম আপনার গাড়িতে,
উওরে অপূর্ব বললো,
‘ হুম বম। হাতের গ্লাস যেন না ভাঙে আকিব।’
আকিব শক্তপক্ত হয়ে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো পানির গ্লাসটাকে। এরই মাঝে তুহিন বলে উঠল,
‘ ভাই কে রেখেছে তা তো বুঝতে পারছি না কারন লোকটার চেহারা ঢাকা ছিল। এই দেখুন সিসি টিভি ফুটেজের ভিডিও।’
বলেই অপূর্বের দিকে ল্যাপটপটা এগিয়ে দিল তুহিন অপূর্বের দিকে। অপূর্বও দেখতে লাগলো। এটা হলো কাল বিকেলের ঘটনা। যখন অপূর্ব নিজের গাড়ি করে খুলনা থেকে ফিরছিল।’
‘ফ্লাসবেক’
ঘড়িতে তখন প্রায় বিকেল চারটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। অপূর্ব নিজের কাজ সেরে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল একাই ছিল সে। কারন অপূর্ব খুলনা একাই এসেছিল। হঠাৎই মোবাইলে রিচার্জ করার কথা মাথায় আসতেই অপূর্ব রিচার্জের একটা দোকান দেখে সেখানে থেমে যায়। অপূর্ব থামতেই দূর সীমানায় একটা ট্রাকও থেমে যায় যেটা অপূর্ব খেয়াল করে নি। অপূর্ব গাড়িটাকে সাইডে রেখে এগিয়ে যায় রিচার্জের দোকানের উদ্দেশ্যে। দোকানটা রাস্তার অপজিটে থাকার কারনে অপূর্ব সেদিকেই যায়। অপূর্ব যেতেই তাঁর গাড়ির গা ঘেঁষে থামে একটা ট্রাক। অপূর্বের গাড়ির পাশের দিকটা কোনো দোকানপাট না থাকায় কেউ কিছুই দেখতে পায় নি। ট্রাক থেকে নামে একজন মুখে গামছা পেঁচানো লোক তারপর সেই গাড়ির পিছনে একটা বোম ফিট করে চলে যায়। অপূর্বের গাড়িটা যেখানে থেমে ছিল সেখানে একটা খাম্বা থাকে। যেখানে কিছু বিশেষ কারনে সিসি টিভি ক্যামেরা রাখা ছিল যেটা ওই গামছা পড়া লোকটা খেয়াল করে নি।’
কাজটা শেষ হতেই অপূর্ব আসার আগেই ট্রাক সমেত লোকটা চলে যায়। সাথে কাউকে ফোন করে বলে,
‘ কাজটা হয়ে গেছে বস?’
উওরে অপরপ্রান্তে থাকা সাদা পাঞ্জাবি পড়া এক যুবক তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
‘ গুড।’
অতঃপর ফোনটা কেটে দেয় যুবকটি।’

অপূর্ব তাঁর মোবাইল রিচার্জ করে এগিয়ে আসে তাঁর গাড়ির কাছে। ঠিক সেই মুহূর্তেই একজন বৃদ্ধা মহিলা হাঁটতে হাঁটতে পড়ে যায় অপূর্ব গাড়ির ডিকির কাছে। অপূর্ব তক্ষৎনাত এগিয়ে গিয়ে ধরে বৃদ্ধা মহিলাটাকে। পানি খাওয়ায় অল্প। সাথে বলে,
‘ আপনি ঠিক আছেন তো দাদিমা?’
উওরে দাদিমাও পানিটা খেয়ে মুচকি হেঁসে বলে,
‘ হুম দাদুভাই।’
তারপর দু’মিনিটের মতো বৃদ্ধা মহিলাটির সাথে কথা বলে চলে যায় মহিলাটি। হঠাৎই অপূর্ব খেয়াল করে তাঁর গাড়ির ডিকিটা খানিকটা ফাঁক আছে। অপূর্ব কি ভেবে যেন হাতের খালি বোতলটা সেখানে রাখার জন্য গাড়ির ডিকিটা খোলে সাথে সাথে গাড়ির ভিতর বম দেখে চরম অবাক হয়। খানিকটা চমকে ছিল ঠিকই তবে ভয় পায় নি মোটেও উল্টো নিজেলে সামলে রেখে আশেপাশে তাকায় তখনই সিসি টিভিটা দেখে সে। তবে বেশি ভেবে তক্ষৎনাত গাড়িতে ঢুকে গাড়ি স্পিড বাড়িয়ে চালাতে থাকে। বোমটায় টাইম সেট করে গেছে আর মাত্র ১৯ মিনিটের মাঝেই বোমটা ফাটবে। অপূর্ব যেখানে গাড়িটা থামিয়েছিল সেখানে থেকে আসার সময় একটা প্রারমারি স্কুল পেরিয়ে এসেছিল অপূর্ব। স্কুল ছুটি দিয়েছিল তখন তাই কোনো রিস্ক না নিয়ে তক্ষৎনাত গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যায় অপূর্ব। তারপর জনশূন্য জায়গায় দেখে একটা গাছের সামনে গাড়িটা রেখে মোবাইল নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসে সেখানে থেকে অপূর্ব বের হওয়ার চার মিনিটের মাথাতেই গাড়ি সমেত বম ফাঁটে। অপূর্বের তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি আর কোনো মানুষেরও ক্ষতি হয় নি তবে আশেপাশের কিছু গাছগাছালি পুড়ে গিয়েছিল।’
অপূর্ব নিজেকে সামলায় তারপর বেশি না ভেবেই এগিয়ে যায় খুলনা বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে। আর যাওয়ার আগে তুহিনকে ফোন করে বলে সবটা। তারপর তুহিনই সকালে খুলনা এসে সব দেখে সিসি টিভি ফুটেজ টাও নিয়ে যায় সঙ্গে করে।’
‘ফ্লাসবেক ওভার’
আকিব কাঁপছে থর থর করে কাঁপছে কি সাংঘাতিক ব্যাপার গাড়িতে বম দেখেও গাড়ি নিয়ে ছুট লাগায় অপূর্ব ভাই। যদি ওই সময় আকিব ওখানে থাকতো তাহলে কি করতো নির্ঘাত বম বম করে চিল্লিয়ে নিজেও জ্ঞান হারাতো সাথে ওখান কার লোকজনগুলোকেও বিপদে ফেলতো। ভাবতেই হেঁচকি উঠে গেল আকিবের। যা দেখে অপূর্ব বললো,
‘ পানি খাও আকিব?’
আকিবও তাই করলো অপূর্বের জন্য আনা পানি সে নিজেই ঢক ঢক করে খেয়ে নিলো। অপূর্ব বললো,
‘ এবার বুঝলে পানির পিপাসা কার পেয়েছিল।’
আকিব থমলে গেল তাঁর মানে অপূর্ব ভাই তাঁর জন্যই পানি আনতে বলেছিল। অপূর্ব বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর বললো,
‘ চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ওই লোকটাকে আমার চাই তুহিন?’
উওরে তুহিনও বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ হয়ে যাবে ভাই। অলরেডি ট্রাকটা কোথায় থেমেছে তাঁর হদিস পেয়েছি।’
‘ কোথায় থেমেছে?’ (অপূর্ব)
‘ বাগেরহাট।’
চোখ মুখ জ্বলে উঠলো অপূর্বের। রাগে মাথা গরম হচ্ছে খুব। অপূর্ব রাগ মাখা কন্ঠ নিয়েই বলে উঠল,
‘ খোজ লাগাও তুহিন বাগেরহাটের কোন কর্নারে লুকিয়ে আছে ওকে আমার জীবন্ত চাই, কালকের মধ্যে ওকে আমার চায়ই চাই।’
‘ ঠিক আছে ভাই হয়ে যাবে অলরেডি লোক পাঠিয়ে দিয়েছি আমি।’
অপূর্ব আর দাঁড়ালো না তক্ষৎনাত বেরিয়ে গেল ওখান থেকে। এই কাজের পিছনে কার হাত আছে সেটা তাঁকে জানতেই হবে। ভাবতে ভাবতে চলে গেল অপূর্ব। অপূর্ব বের হতেই আকিবও দৌড়ে বেরিয়ে গেল। অপূর্ব যে ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে তা সে হারে হারে বুঝতে পেরেছে। লোকটাকে কাছে পেলে কি যে করবে অপূর্ব কে জানে? আকিব আনমনাই বির বির করে বলতে লাগলো,
‘ তোমার জন্য শুভকামনা ভায়া। খুব শীঘ্রই দেখা হোক তোমার সাথে অপূর্ব ভাইয়ের। তুমিও তো জানো অপূর্ব ভাই কি জিনিস?’
#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here