স্মৃতিতে তোমার বন্দনা – Part 4

0
318

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৪
#Saji_Afroz
.
.
রাতের খাবার খাচ্ছে পরশ তার পরিবারের সদস্যদের সাথে । হালকা কেশে শফিউল আহম্মেদ বললেন-
তাহিয়ার কথা মনে আছে তোর পরশ?
.
খেতে খেতেই পরশ জবাব দিলো-
না থাকার কারণ নেই । সম্পর্কে আমার ফুফাতো বোন হয় সে ।
-তোর যা ভোলা মন! তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম ।
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
এতো ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে কথা না বলে, কি বলতে চাইছো তা বলে ফেলো ।
-তাহিয়ার জন্য ছেলে দেখছে । মানে ওর বিয়ের জন্য পাত্র দেখছে । ভারী মিষ্টি মেয়ে । আমাদের পরশের সাথে ভালো মানাবে । কি বলো সাফিনা?
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
মিষ্টি তো আমার বোনের মেয়েও । ওর জন্যও ছেলে দেখছে । ওর সাথেও মানাবে পরশকে ।
-তাহিয়ার সাথে ভালো মানাবে ।
-না রিনির সাথে ভালো মানাবে ।
-তাহিয়া সব দিক থেকে পারফেক্ট পরশের জন্য ।
-রিনিও কম কি! দেখতে সুন্দরী, পড়াশোনা করছে । সবচেয়ে বড় কথা আমার বোনের মেয়ে!
-ওটাই তো সমস্যা ।
-কি বললে তুমি?
.
এপর্যায়ে কথা বলে উঠলো পরশ-
কি শুরু করেছো তোমরা! শান্তিতে খেতে দিবেনা নাকি?
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
তুই বল পরশ? তাহিয়া পারফেক্ট তোর জন্য নাকি রিনি?
-দুজনেই ।
-দুটো বিয়েতো করতে পারবিনা ।
-তা জানি । যে যার জায়গায় পারফেক্ট । কিন্তু আমার ওদের কাউকেই বিয়ে করার ইচ্ছে নেই ।
.
শফিউল আহম্মেদ বললেন-
কেনো?
-কারণ জানা নেই ।
.
শফিউল আহম্মেদ কিছু বলতে চায়লে, ইশারায় নিষেধ করলেন সাফিনা আহম্মেদ ।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন তিনি ।
.
.
সেই কবে থেকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে ছোঁয়া । নয়নতারা বেশ কয়েকবার এসে ডাকলো । কোনো সাড়া দেয়নি সে । বাধ্য হয়ে আফিয়া জান্নাত এসে দরজায় কড়া নেড়ে বলতে লাগলেন-
দরজা খোল ছোঁয়া । অসুস্থ শরীর নিয়ে উঠে এসেছি কিন্তু ।
.
মায়ের কথা শুনতেই দরজাটা খুলে দিলো ছোঁয়া ।
গম্ভীরমুখে বললো-
আমি ভাত খাবোনা । ক্ষিদে নেই ।
.
বিছানার উপরে মুখ গোমড়া করে বসে পড়লো ছোঁয়া । আফিয়া জান্নাত তার পাশে বসে বললেন-
আচ্ছা যা আমার ভুল হয়েছে । কিন্তু তুই বড় হচ্ছিস । একটু বুদ্ধিসুদ্ধি নিয়ে কাজ করতে শিখ । টাকা দিতে হলে আমরা দিবো । তুই যে এমন করলি, অসম্মানজনক নয় কি এসব?
-আমি উনার টাকা শোধ করতে চাইছি । এতো দোষ কি করলাম?
-তোর বাবা মারা যাবার পরে আমার অবস্থা একেবারেই বেহাল ছিলো । তখনো প্রায় অনেক টাকাই নেয়া হয়েছে ওর কাছ থেকে । এসব আমার মাথায় আছে । শোধ তো করতেই হবে । তবে তুই যেভাবে চেয়েছিস সেভাবে নয় ।
-কিভাবে?
-রাফসান কি বললো শুনিস নি? বড় হয়ে করতে ৷ তখন করিস ।
.
কথাটি বলে মুচকি হাসলেন আফিয়া জান্নাত । মায়ের এই হাসির পেছনে যে অন্য একটি কারণ আছে, এটা ছোঁয়ার অজানা নয় ।
.
.
সারাদিনের এতো ধকলের পরেও ঘুম আসছেনা পরশের । সে মোবাইলে সময় দেখলো, রাত দেড়টা বাজে । শরীরটা প্রচন্ড ক্লান্তিতে ভেঙে যাচ্ছে । মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে-
ছোঁয়া, ছোঁয়া আর ছোঁয়া!
.
উঠে পড়লো পরশ । আস্তেধীরে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে আসলো । বেসিনে এসে ট্যাপটা ছেড়ে দিলো । চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করতে থাকলো । হঠাৎ বেসিনের আয়নায় তার চোখ আটকে যায় । ছোঁয়া তার দিকে তাকিয়ে হাসছে ।
দুহাত ভরে পানিতে নিজের মুখমণ্ডল আবার ভালো করে ধুয়ে আয়নার দিকে তাকালো সে । না, সে ঠিকই দেখেছে ।
সে আয়নার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো । আয়না স্পর্শ করতেই দেখলো, ছোঁয়া নেই ।
পরশ আপনমনে বললো-
স্পর্শের বাইরে থাকবে কি তুমি এভাবেই?
.
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুখটা মুছতে লাগলো পরশ । এভাবে কোনো মেয়ের জন্য নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে ভাবেনি সে । কি আছে ছোঁয়ার মাঝে? কেনো তার জন্য এতো উতলা হয়ে আছে পরশের মন! আর কি কখনো ছোঁয়ার দেখা পাবেনা সে? কিন্তু তার দেখা না পেলে যেনো স্বস্থির নিঃশ্বাসটাও নিতে পারছেনা পরশ । কোনো কি উপায় নেই, ছোঁয়ার দেখা পাওয়ার?
ভাবতে ভাবতে হাসপাতালের কথা মাথায় এলো পরশের । রিসিপশনের এন্ট্রি ফাইলে নিশ্চয় ছোঁয়ার বা তার পরিবারের কারো ফোন নাম্বার আছে । এটা কিভাবে ভুলে গেলো সে! কাল সকাল সকাল যেতে হবে হাসপাতালে ।
কিছুটা নিশ্চিত হয়ে শুয়ে পড়লো পরশ । কবে যে সকাল হয়ে আরেকটা নতুন দিনের দেখা পাবে আর তার ছোঁয়ার দেখা পাবে সে!
.
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো ছোঁয়া । পরীক্ষা শেষ হবার কারণে কলেজ বন্ধ তার । ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো, সকাল ৭টা বাজছে । মা আর বোন ঘুমোচ্ছে ।
তাদের ডাকলোনা সে । আজ সে নিজের হাতে তাদের জন্য নাস্তা বানাবে ৷ এই উদ্দেশ্যে উঠে পড়লো সে ।
রান্নাঘরে এসে দেখলো ময়দা নেই । রুটি কিভাবে বানাবে? তাদের বাসার পাশের মুদি দোকানটি খুব ভোরে খোলা হয় । বুড়ো চাচার নাকি ভালোই লাগে সকাল সকাল দোকান খুলতে ।
নিজের রুমে ফিরে এলো ছোঁয়া । ফ্রেশ হয়ে চুলটা আঁচড়ে নিলো সে । টেবিলের উপর থেকে হাতব্যাগটা নিলো । টাকা নিতে হবে ময়দা কেনার জন্য । ব্যাগের ভেতরে হাত দিতেই একটা কার্ড পেলো সে । এইতো সেই কার্ডটি, যেটি তাকে সেই সাইকিয়াট্রিস্ট দিয়েছিলো । পরশ আহম্মেদ….
.
.
হাসপাতাল থেকেই ফোন নাম্বার জোগাড় করতে পারলো পরশ । কিন্তু এটা ঠিক কার ফোন নাম্বার সে বুঝে উঠতে পারছেনা । কেননা শুধুমাত্র রোগীর নাম লেখা রয়েছে । ফোন নাম্বার কার সেটি উল্লেখ নেই ।
পরশ কি ফোন দিয়ে দেখবে?
দেখবেই বা না কেনো! তার বাবা বলেন, প্রেমে পড়লে অনেক কিছুই করতে হয় । আর যে প্রেমে তাড়াতাড়ি সফল হওয়া যায়, সে প্রেম বেশিদিন টিকেনা । যেমন তার বাবার প্রেম বেশিদিন টিকেনি!
পরশ চায় ছোঁয়াকে আজীবনের জন্য । তাই এতোটুকু সাহস কি সে করতে পারেনা?
আর কিছু না ভেবে নাম্বারটিতে ডায়াল করলো পরশ ।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here