অবুঝ প্রেম -পর্ব 26+27

0
510

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ২৬
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
আমার বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে এক কোটি টাকার কন্ট্রাক্ট ফাইনালে আমার সাইন, সব কিছু আমি জেনে বুঝে করেছি। আপনার ফেসবুক একাউন্টে আপনার ডিমান্ড তো দেখি অনেক বেশি,, মুহুর্তেই হাজার হাজার রিয়েক্ট কমেন্ট আসে,, মিস্টার রুদ্রের ফোনে তো বেশ কিছু স্পেশাল ভিডিও আছে দেখলাম,, সেগুলো আপলোড দিলে সবাই অনেক মজা নিয়ে দেখবে। কি দিবো নাকি??
না না স্যার প্লিজ এমন টা করবেন না,,
আচ্ছা করলাম না,, তাহলে বলুন কে আপনাকে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে??
,,,,,,,,,
তুর্জ একজনকে ইশারা করতে সে রুদ্রকে ইচ্ছে মতো কিল ঘুষি মারতে থাকে। এক সময় নাক ফেটে রক্ত বের হতে শুরু করে। পাশের একটা চেয়ারে তুর্জ বাম পায়ের উপর ডান পা রেখে বসে আবারও তুড়ি বাজাতেই একজন ব্ল্যাক জিন্স প্যান্ট আর শর্ট স্কার্ট পড়া মেয়ে রীতির হিজাব সহ বোরখা খুলে হাতের কাছে একটা প্লাস রেখে দেয়। তারপর তুর্জ রীতির আঙুল গুলো দেখে বলে,
ওওওয়ায়াও,, ভেরি কিউট ফিঙ্গার!! সত্যিই অনেক স্টাইলিশ আপনি,, কি বড় বড় নখ,,, জানেন এই নখ গুলো প্লাস দিয়ে টেনে তুলতে ভিষণ মজা লাগে,, একটা তুলে দিচ্ছি, দেখুন না কতটা মজা লাগে,,
স্যার প্লিজ ক্ষমা করুন,, আমার ভুল হয়ে গেছে। আর এমন ভুল করবো না,, প্লিজ স্যার আমাদের ছেড়ে দিন আমরা চলে যাবো এই শহর থেকে,,,
চলে তো যেএতেই হবে,,, আপনারা না গেলেও আমি পাঠিয়ে দিবো ঠিক ওই উপরে। এখন ঝটপট বলুন তো,, কার ইশারায় এইসব করেছেন।
রীতি আবারও চুপ করে আছে দেখে, তুর্জ তার অফিসের সেই স্টাফ কে এক লাথি মেরে নিচে ফেলে দিতেই দুজন কালো প্যান্ট আর সাদা শার্ট পড়া লোক ছুটে এসে ফ্যানের সাথে একটা দড়িতে ফাসি বানিয়ে রেডি করে ফেলে। উনারা লোকটাকে নিয়ে ফাঁসির কাছে যাচ্ছিলো তখন তুর্জ বলেন,, আমি তো জানি যে, এমন বিউটি গার্ল রীতিকে আমার অফিসে জইন করতে এই বেঈমান টা রিকুয়েষ্ট করেছিল। ভাত ছেটালে যেমন কাকের অভাব হয় না তেমনি টাকা ছেটালে এমন দুই চারটা লাশ গুম করা কোন ব্যাপার ই না,,,,
ভয়ে রীতি এবং রুদ্র কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে,, উনি নিজের জীবন বারবার ভিক্ষা চাইতে শুরু করে,, কিন্তু এই পক্ষে থেকে তুর্জের কোন ইশারা না দেওয়ার জন্য উনাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হলো,, ঝুলন্ত অবস্থায় উনার ছটফটানি অনেক করুন ছিলো,, পা দুটো একটু মাটির স্পর্শ পেতে বারবার খুঁজে চলেছে। রীতি ভয়ে চোখ বন্ধ করে বলতে থাকে,, প্লিজ ছেড়ে দিন,, সব বলছি, প্লিজ মারবেন না,,
সাথে সাথে তুর্জের ডান হাতের চারটি আঙুল একটু উঁচু করে,, এক সেকেন্ড হতে না হতেই যে ব্যাক্তি দড়ি ধরে ছিলো তিনি দড়িটা ছেড়ে দিলেন। আর উনি মাটিতে পড়ে কাশি দিতে দিতে নিজের অবস্থা শেষ করে দিচ্ছে।
তুর্জ আবারও একটা ইশারা করার সাথে সাথে শর্ট স্কার্ট পড়া মেয়েটা রীতির চুল ধরে তুর্জে সামনে নিয়ে আসে। তুর্জ রীতিকে তার ফোন দিয়ে বলে,,
তোদের নাটের গুরুকে ফোন করে এখানে আসতে বল,,,,,,,,পিংকি??
ইয়েস স্যার!
সাথে সাথে মেয়েটার হাতের পিস্তল তুর্জকে দিয়ে দেয়। তুর্জ রীতির কানের ফুটো বরাবর তাক করে রেখেছে। এই মুহূর্তে রীতির হাত ভয়ে থরথর করে কাপছে। সে জানে তার সামান্য ভুলের সাথে সাথে প্রাণ পাখি খাচা থেকে উড়ে যাবে। কল সেট করার আগে নিজের গলা পরিষ্কার করে নিজেকে রিফ্রেশ করে নেয়।
রিং বেজে চলেছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। রীতি আবারও কল করবে বলে হাত দিতেই অপর পক্ষ থেকে কল আসে। রীতি কিছু বলার আছে অপর প্রান্তে থেকে তুর্জের বেশ পরিচিত কন্ঠঃ ভেসে আসে,,,
কি রে, তুই না বললি ফাইনালে তুর্জের সাইন আছে,, কই এখন তো নেই,, তুই এতোটা বোকামি করবি আমার ধারণায় ছিলো না। তোকে ফোন দিবো বলে অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু তোর পাশে ওই শু,,,,রের বাচ্চা আছে ভেবে ফোন দিইনি।
কি বলছিস,, আমার চোখের সামনে প্রতিটি পেইজে সাইন করিয়ে নিলাম। তারপর আবারও চেক করলাম, সব কিছু ঠিক ছিলো তো,, ভালো করে দেখ তুই,, তোরই হয়তো ভুল হচ্ছে,,,
আরে না,, ফাইল টা এখনো আমার হাতে,, দেখছি আর তোর সাথে কথা বলছি,,
আচ্ছা তুই ফাইল টা নিয়ে আমি যেখানে আছি সেখানে চলে আয়,, লোকেশন টেক্সট করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
রীতির কথা শেষ হতে না হতেই তুর্জ এক ঝটকায় ফোন নিয়ে নেয় আর আবারও একটা ইশারায় আট দশ জন এসে রীতি রুদ্র আর ওই স্টাফ কে নিয়ে রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরে নিয়ে যায়। একটা বড় পাতিলে ফুটন্ত পানি টগবগ করে ফুটছে। তুর্জের কাছে বেইমানীর শাস্তি অনেক ভয়াবহ।
তুর্জের গার্ড গুলো রুদ্রের পুরো দুটো হাত ফুটন্ত পানিতে চুবিয়ে রাখে,, রুদ্রের গগন ফাটানো চিৎকারে পুরো রেস্টুরেন্ট কম্পিত হচ্ছে,, অন্য দিকে যাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল সে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলো, বাসায় তার বউ বাচ্চা আর বৃদ্ধা মা আছেন,, উনার কিছু হলে তাদের দেখার কেউ থাকবে না বলে হাতে পায়ে ধরছে সবার।
অন্য কড়াইয়ে তেল গরম করা হয়েছে,, দুজন মেয়ে রীতির চোখ বেধে দিয়ে সেই গরম তেল রীতির মুখে ছুড়ে মারে। রীতির চিৎকারের সাথে সাথে সমস্ত মুখের চামড়া সাথে সাথে খসে পড়ে আর সাদা চর্বি গুলো গলে গলে পড়তে শুরু করে। এই মুহুর্তে রীতি হয়তো সেন্সলেস হয়ে গেছে, তাই তো প্রথমে চিৎকার করার পরে আর কোন নড়াচড়া নেই।
মাত্র কিছুক্ষণ আগে স্বয়ং মৃত্যুর কাছে থেকে ফিরে এসে, চোখের সামনে দুজনের এমন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে দেখে ওই স্টাফও সেন্সলেস হয়ে গেছে।
মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেস্টুরেন্টের আশেপাশের অবস্থা স্বাভাবিক করে দেয়। তুর্জের বাহিনী চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। তনিমা ব্ল্যাক স্কীন-জিন্সের সাথে ঘি রঙের টিউনিক আর হালকা ইয়োলো কেডস পায়ে হেলে দুলে হেটে আসছে । আলাদা একটা রুমে বসে তুর্জ সিসি ফুটেজে তনিমার আসা দেখেই তার টিমের সবাই কে এলার্ট করে দেয়। যে যার পজিশন অনুযায়ী রেডি হয়ে থাকে। তনিমা এখানে আসার কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত কোন একটা দরকারে আবারও অনেক বার রীতিকে ফোন করে,, কিন্তু রীতি সেন্সলেস হওয়ার জন্য ফোন পিক করতে পারেনি।
তনিমার ফোন রিসিভ না হওয়া দেখে তনিমা রাকিবের কাছে ফোন করে বলে,,
একটু আগেও রীতি আমাকে ফোন করে একটা রেস্টুরেন্টে ফাইল টা নিয়ে আসতে বলে এখন আর ফোন রিসিভ করছে না।রুদ্রের ফোন টাও সুইচটপ,,
কেন ফোন করেছিলে??
ওই ফাইলে নাকি রীতি সাইন করে নিয়েছি,,সে বারবার কনফিডেন্স সহ বলছিল, তাই আমি ভালো করে দেখলাম,, সত্যিই সেখানে সাইন ছিলো কিন্তু কোন কারণে তা ভেনিস। তবে পেইজে কলমের লেখার দাগ স্পষ্ট।
তনিমা তুমি একা ওখানে যেওনা,, একটু অপেক্ষা করো আমিও আসছি।
কিন্তু ততক্ষণে তনিমা রেস্টুরেন্টের বাইরে বারান্দায় চলে এসেছে। রেস্টুরেন্টের পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য কয়েকজন পাবলিক চলে এসেছে। তাই ভিতরে না গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে রাকিবের জন্য।
এদিকে সারা সন্ধ্যার পর থেকে জিদ ধরেছে সে আইস্ক্রিম খাবে। কিন্তু বাসায় কোন আইস্ক্রিম নাই। সে ছোট বাচ্চাদের মতো খুটখুট করে কান্না করছে। তা দেখে তুর্জের বাবা সারা কে নিয়ে নিচে চলে আসেন আইস্ক্রিম কিনে দেওয়ার জন্য। সারা তো মহা খুশি,, সে আইস্ক্রিম খাওয়া শেষে ফিরতেই পাশে ফুচকাওয়ালা মামাকে দেখতে পেয়ে ধিরে ধিরে হাটা শুরু করে। সারার এমন স্লো গতি দেখে তুর্জের বাবা বুঝতে পারে তার একমাত্র বউমার উদ্দেশ্য কি!!!
রাকিব রেস্টুরেন্টে বাইরে এসে দেখে রেস্টুরেন্টে চারিদিকে বেশ কিছু সেইম পোশাকের মানুষ বিভিন্ন কাজ করছে আবারও অনেকে ফোনে কথা বলছে,, রাকিবের ধারণা হয়তো সঠিক, রাকিব তনিমা কে টেক্সট করে বলে,,,
তুমি এখান থেকে ভিতরে যাবে না। নিশ্চয়ই তুর্জ সব কিছু ধরে ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে তুর্জকে জব্দ করার প্ল্যান অনেক আগে থেকেই এটে রেখেছিলাম,, এখন শুধু কাজে লাগাবো,,,
তুর্জের অতি যত্নে গোছানো প্ল্যান একটুর জন্য বিফলে যাবে তা হবে না। তুর্জ সবাইকে রেস্টুরেন্টের চারিদিকে এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করতে বলে। কোন ভাবেই যেন রাসেল এরিয়া ছাড়তে না পারে। কিন্তু রাকিব তো ছোট খেলোয়াড় হয়ে তুর্জের মতো বিচোক্ষন পার্সোনের সাথে লাগে নি। সেই দীর্ঘ প্ল্যান কশার পরে এই খেলায় নেমেছে। রাকিব জানে তুর্জের উইক পয়েন্ট কোথায়? সাথে সাথে রাকিব চলে আসে তুর্জের বাসায় গেটের সামনে। নিজের জামাকাপড়ে তাজা রক্ত লাগিয়ে মেইন রোডের ধারে অপেক্ষা করতে শুরু করে,, তুর্জের দারোয়ান কে আগেই দলে নিয়েছে রাকিব। দারোয়ান প্রতিনিয়ত সবার আসা যাওয়ার আপডেট দিয়ে যেতো। তাই রাকিব তার প্ল্যান সাকসেস হওয়ার অপেক্ষা করছে।
সারা আর তুর্জের বাবাকে দেখার সাথে সাথে রাকিব রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে শুরু করে। তুর্জের বাবা আর সারা এক্সিডেন্ট হয়েছে ভেবে রাকিব কে তুলতে যায়। তখনই একটা কার এসে সেখানে থামে আর ভিতর থেকে দুজন লোক বেড়িয়ে এসে বলেন,, উনাকে তো এক্ষুনি হসপিটালে নিতে হবে। প্লিজ আপনারা একটু ধরুন। সারা তুর্জের বাবা আর উনারা দুইজন ধরাধরি করে গাড়িতে উঠাতে গেলে তুর্জের বাবা রাকিবের মাথার দিক নিয়ে কারের ভিতর উঠে যায় আর সারা পায়ের সাইড ধরে নিচে দাঁড়িয়ে থেকে রাকিবকে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ঠিক তখনই কেউ একজন এক ঝটকায় সারাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা লক করে গাড়ি স্টার্ট করে দেয়। রাকিব উঠে বসে হো হো করে হাসছে। সারা একটু ভালো করে লক্ষ্য করতেই রাকিব কে চিনে ফেলে।
চলবে,,,,,,

অবুঝ প্রেম
পর্ব ২৭
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
সারা একটু ভালো করে লক্ষ্য করতেই রাকিব কে চিনে ফেলে। সারা একদম চুপচাপ বসে আছে । যদিও তুর্জের বাবা চিল্লাচিল্লি এবং লাফালাফি করছেন। রাকিব তুর্জের বাবা সাথে খারাপ ব্যবহার করতেই সারা হিংস্র বাঘীনির মতো খেপে উঠে। সে বারবার বলে,, একবার তুর্জের থেকে ছাড়া পেয়েছিস ভেবে মনে করিস না বারবার পাবি। তোর মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে জম হয়ে আসবে তুর্জ। এখনো সময় আছে, নিজের ভালো চাস তো ছেড়ে দে আমাদের!!
উউহ্ তোমার এই তেজ আমার অন্য রকম ভালো লাগে,, সবার মাঝে এমন ত্যাজি ভাব থাকে না। সেদিন পাখি খাচা থেকে উড়াল দিতে পারলেও আজ পারবে না। আজ সবার আগে সেদিন এর অসম্পূর্ণ কাজ টা সম্পুর্ন করে অন্য কাজে হাত দিবো।
সাথে সাথে সারা এক ঝটকায় কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারে। সারার কমল হাতের থাপ্পড় এতো জোড়ালো ছিলো যে,রাকিব সামনের সিটের সাথে ধাক্কা খেয়ে ফেলে। রাকিব রাগে ফোসফোস করতে বলে,,
এই হাতে কতটা জোর আছে তা আমি দেখবো আজকেই।
গাড়ি চলছে রাকিবের প্ল্যান মাফিক। সারা এবং তুর্জের বাবা আর কোন কথা বলছে না। রাকিব মাঝে মাঝে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে,, তবে কার সাথে কথা বলছে তা বুঝা যাচ্ছে না।
তুর্জের টিম প্রায় এক ঘন্টা তন্নতন্ন করে খোজার পরেও রাকিবের নাগাল পেলো না। তুর্জ রাগে হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই আছড়ে ফেলে দিচ্ছে। চারিদিকে আফ্রিকান মাগুর চাষের বিশাল বড় একুয়ারামের মাঝ খানে মাত্র ১ ফিট যায়গা তে তনিমাকে প্রায় ৩০ মিনিট থেকে একটা বরফের খন্ডের উপর দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তনিমার একটু নড়াচড়াতেই সে মাগুর গুলোর খাদ্যে পরিনত হয়ে যাবে। যেখানে ৫ মিনিট বরফের উপর থাকা পসিবল না সেখানে প্রায় ৩০ মিনিট থেকে দাঁড়িয়ে আছে তনিমা। অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করবে তার উপায় ও নাই তনিমার। কারণ তনিমার মুখ বেধে রাখা হয়েছে অনেক আগেই।
রাকিব জানে তনিমার ফোন এখন তুর্জের কাছে থাকবে। তাই তনিমার হোয়াটসঅ্যাপে সারা এবং তুর্জের বাবা কে বন্দী অবস্থা রেখে তোলা ছবি সেন্ট করে।
তারপর টেক্সট করে,,,
আমি তনিমা কে হারালে হয়তো ছয় মাস সময় লাগবে ভুলতে কিন্তু তুই তোর প্রাণ প্রিয় কচি টুকটুকে বউয়ের সাথে তোর বাবাকে হারালে কতদিন লাগবে ভুলতে তা ভেবে জানাস।
তুর্জ সাথে সাথে কল দিয়ে বলে,,
কুত্তার বাচ্চা একবার বল তুই কোথায় আছিস,, কসম আল্লাহর জীবন্ত পুতে দিবো তোকে।
লাফায়া লায়াফা তোর এমন লাফালাফি ভিষণ আনন্দ দিচ্ছে আমাকে।
তুর্জের বাবাকে একটা খুটির সাথে বেধে রেখে সারাকে একটা বড় ঘরে নিয়ে আসে। সামনে কাচের তৈরি সেন্টার টেবিলের উপর একটা খেলনা সাইকেল রাখা আর পাশে অ্যাসট্রেতে বেশ কিছু সিগারেট এর গোড়ার অংশ। দুজন লোক সারাকে সোফায় বেধে রেখে যেতে লাগে ঠিক তখনই রাকিব বলে,,
উউহুউক,, হাত খোলা থাকবে,, এই হাতে অনেক জোর,, যে হাতে আমাকে থাপ্পড় মেরেছে সেই হাতে আমাকে আদর করবে এখন। হাত খুলে দিয়ে তোমরা বাইরে অপেক্ষা করো।
সারা সারাক্ষণ মুভি দেখে দেখে কোন সিচুয়েশনে কি করতে হয় সব মুখস্থ করে ফেলেছে। সারাকে দক্ষিণ মুখো করে বসিয়ে রাকিব সারা ডান পাশের সোফায় পুর্ব মুখো হয়ে বসে, সারার মুখের সামনে সেন্টার টেবিলের উপর নিজের পা রেখে বলে,,
জানো,, আমার প্রিয় খেলা কাবাডি,, কারণ কি জানো??কারণ এই খেলায় একে অন্যকে চাপাচাপি বা ধরাধরি বেশি। নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে অন্য জন কে ধরে,, আজ আমার আর তোমার মাঝে এই কাবাডি খেলা হবে।
আর জানেন,, আমার একটা প্রিয় খেলা আছে,, তা হলো কানামাছি,, ভিষণ ভালো লাগে কাউকে কানা বানিয়ে চারিদিকে মাছির মতো ভনভন করে ঘুরাতে,,
উউফ্ কলিজা ছুয়ে গেলো,, কিহ কথা বলো তুমি,, যেমন হাতে জোর তেমন মুখে ও,,
হ্যাঁ বুদ্ধিতেও,,,,
তখনই তুর্জ আবারও ফোন করে রাকিবকে। রাকিব সারার ফেসে আঙুল দিয়ে স্পর্শ করছে আর তুর্জকে বর্ননা দিচ্ছে কখন কোথায় স্পর্শ করছে। সারা রাকিবের এই অন্যমনস্ক হওয়ার সুযোগ নিয়ে,, তার মুখের সামনে টেবিলের উপর রাখা রাকিবের পায়ের সু দুটোর ফিতা এক সাথে বেধে দেয়। রাকিব বুঝতেও পারে নি, সারার হাত খোলা রেখে কি বড় ভুল টাই না করেছে। কথা বলার এক ফাঁকে রাকিব যে-ই না দাড়াতে যাবে এমনি জুতাতে প্যাঁচ বেধে কাচের টেবিলের উপরে উপুড় হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। রাকিবের হাত থেকে ফোন সামান্য কিছু দূরে গিয়ে পড়ে। মুহুর্তেই টেবিল ভেঙে অনেক গুলো কাচের টুকরো এদিকে সেদিকে চলে যায়। শিহাবের চোখে মুখে ও কাচ ঢুকে গেছে। হাতের সামনে থেকে একটা বড় কাচের টুকরো নিয়ে সারা এলোপাতাড়ি আঁচড় বসিয়ে দেয় রাকিবের পিঠে এবং হাতে পাজড়ে। মোট কথা সারার হাতের সামনে রাকিবের শরীরের যে অংশ এসেছে সেখানেই সারা আঘাত করেছে।
যেহেতু রাকিবের স্টাফ রা জানে, কি উদ্দেশ্যে তাদের রুম থেকে বের হতে বলা হয়েছে তাই তারা রুমের ভিতরের একটু আট্টু ফার্নিচার ভাঙার শব্দ পেয়েও ভিতরে আসে নি। সারার চোখ মুখ সহ সমস্ত শরীরে রক্তাক্ত হয়ে গেছে। পাশেই পড়ে থাকা ফোনে তুর্জ এখনো রাকিবের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছে। তুর্জ ফোনে ব’লেই চলছে,,
সারা হ্যালো সারা,, কি হয়েছে, বলো,, সারা কোথায় তুমি সেটা বলো, সারা শুনতে পাচ্ছো আমাকে,,,
তুর্জের কথার দিকে সারার মন ছিলো না। সে এক নিশ্বাসে এই কালপিট কে ধ্বংস করতে উঠে পরে লেগেছিল। অবশেষে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার জন্য সেন্সলেস হয়ে যায় রাকিব। তারপর রাকিবের চিৎকার একদম থেমে যাওয়ার পরে সারা বুঝতে পারছে কেউ এখনো ফোন থেকে তাকে ডাকছে বারবার। সারা নিজের বাঁধন গুলো খুলে সামনের ফোন হাতে নেয় এবং ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। জানালা গুলো আগে থেকেই বন্ধ ছিলো।এই বন্ধ ঘরে একটা লাশের সাথে সারা একা, ভিষণ ভয় করছে এখন তার। নিশ্বাস গুলো প্রতি সেকেন্ডে 2 বার উঠানামা করছে।
তারপর বড় করে দুটো নিশ্বাস নিয়ে তুর্জকে বলে,,,
খুব তো বলেন আমি ছোট,, আসুন দেখে যান এই পুচকে মেয়ে রাকিব কে খুন করেছে।
কি যা-তা বলছো, লোকেশন বলো??
আমি কি জানি নাকি, যে আমি এখন কোথায় আছি। আমি বর্তমানে একটা ঘরের মধ্যে বন্দী আছি, কিন্তু এই ঘরটা কোথায় তা জানি না।
জানালা দিয়ে দেখো আশেপাশে কিছু দেখতে পাও নাকি??
আপনি শুধু বড়ই হয়েছেন, মাথায় কোন বুদ্ধি নেই। মুভিতে দেখেন না,, হিরো রা কিভাবে মোবাইল নেটওয়ার্ক ট্র‍্যাক করে হিরোইন দের খুঁজে বের করে।
ওহ্ হ্যাঁ,, টেনশনে মাথায় ছিলো না। আমি ১০ মিনিটের মধ্যে আসছি।
হুম আপনি না আশা পর্যন্ত আমি এই রুম থেকে বের হবো না। কারণ রুমের বাইরে অনেক গুলো মানুষ, আমি একা এতো জনের সাথে পারবো না। এইবার বাসায় গিয়ে মার্সালাট শিখবো হুহ্।
আচ্ছা হয়েছে,, এমন পরিস্থিতিতেও উনার বাচ্চামি কমে নি।
তুর্জ সাথে সাথে তার স্পেশাল টিম কে ইনফ্রম করে আর সারার ফোন নেটওয়ার্ক অনুযায়ী বিল্ডিংয়ে তুর্জের ফুল-টিম নিয়ে আসে। মাত্র ৪/৫ জন লোক কে সায়েস্তা করতে তুর্জ একাই যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু তুর্জের ধারণা ছিলো এখানে রাকিবের অনেক দলবল থাকবে।
তুর্জ বিল্ডিংয়ে আসার পরে থেকে সারার নাম্বারে কল দিচ্ছে কিন্তু সারা ফোন পিক করছে না। ভয়ে তুর্জের হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আবারও কোন কিছু হল না তো? তুর্জ প্রতিটি রুমের সামনে এসে ফোন দিচ্ছে,, হঠাৎ একটা রুমের ভিতর থেকে রিংটোন শোনা যাচ্ছে। কিন্তু রুম ভিতর থেকে লক। তুর্জ দরজায় কড়া নেড়ে বারবার সারা সারা বলে ডাকতে থাকে,,,
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here