#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১২
____________________
আজ প্রায় ৫ দিন হয়ে গেছে সাদু কিছুটা সুস্থ্য। তবে এই ৫ দিন সবাই অনেক চিন্তিত ছিলো।ডক্টর বলেছিলো সাদুর প্রাই ২০% পুরে গেছে।এবং তা পায়ের দিক টা পুরো।তাই সাদু হাটতে পারে নি সব কাজ অনেক কষ্টে করেছে।অবশ্য ততোটা কষ্ট হয় নি কারন নূর,আলিফা,আলিশা আর মিম ছিলো।আর এমনি প্রতিদিন খাইয়ে দিয়েছে তার দুই ভাই।আফরান আর নিবির তো বোনের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলো যখন শুনেছিলো ওর বোনের পা অনেকখানি পুরে গেছে।মনির বেশি থাকতো না সাদু’র কাছে এতে আফরান,আর নিবির সহ বাকিরাও অনেক ক্রুব্ধ হয়ে আছে।অবশ্য করাটাও স্বাভাবিক যেখানে ওরা সবাই জানে মনির সাদুকে ভালোবাসে।তাহলে সাদু’র এতো খারাপ সময়ে সে কেন আসেনি। এটা ভেবেই ওরা সবাই ভীষনভাবে রেগে আছে মনির এর উপর।
_______🕊
সাদু’র ক্যাভিনে বসে আছে আফরান,নিবির,আরিফ,মেরাজ,মিম,আলিফা।নূর আর আলিশার বলে কোন কাজ আছে তাই আসতে পারিনি।আজ একসাথে আসতে পেরেছে কারন সাদুর ঘা এই কয়দিনে অন্বল খানি শুকিয়ে গেছে।এর আগে ডক্টর একজন করে আসতে দিতে।কারন বেশি মানুষ এলে সাদুর ইন্ফেকশন হয়ে যেতে পারতো।
—“বোন আমার লক্ষি বোন এটুকু খেয়ে নেহ।” স্যুপ হাতে করে বলছে আফরান।
—“নাহ! আমি খাবো না ভাইয়া!” স্যুপের বাটি ঠেলে দিয়ে বলে সাদু।
আফরানকে সরিয়ে নিবির নিজে স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে এক চামচ স্যুপ সামনে ধরে বললো,
—” পিকু! আমার কথা না তুই শুনিস প্লিজ খেয়ে নেহ বোন আমার নাহলে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হবি কি করে?”
—“ভাইয়া তোরা জানিস আমার স্যুপ খেতে একটুও ভাল্লাগে না!”
—“প্লিজ খেয়ে নেহ! তাহলে তোকে আইস্ক্রিম খাওয়াবো!”
—“প্রমিস ভাইয়া!”
—“পাক্কা ওয়ালা প্রমিস!”
মুচকি হেসে সাদু নিবির এর হাতে স্যুপ খেতে লাগলো। আর তখনি কেভিনে প্রবেশ করে মনির।নিবির কে উদ্দেশ্য করে সে বলে,
–” নিবির উম্মিকে তাড়াতাড়ি খাওয়া ইম্পোর্টেন্ট কাজ আছে।”
আফরান এর রাগ লাগলো কওয়া নেই বলা নেই আজ ৫ দিন পর একটু ভালোভাবে দেখতে আসছে কোথায় তার বোনকে ভালোভাবে বলবে যে ‘ তুমি কেমন আছো?’ কিন্তু তা না করে সে বলে তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করাতে।আফরান রাগী ভাবে বলে,
—” তা আজ ৫ দিন পর তোর হঠাৎ কি এতো ইম্পোর্টেন্ট কাজ এর কথা মনে পড়লো যে আমার বোনের কাছে আসলি তুই?”
—“দেখ আফরান আমি জানি তুই আমার উপর রেগে আছিস!ইন্ফেক্ট নিবির আর বাকিরাও রেগে আছে। বাট একটা কারনে আমি আসতে পারিনি। ”
—“কি এমন কারন যেটা পিকু’র থেকে বেশি ইম্পোর্টেন্ট কাছে?”
—“আমি জানি উম্মির থেকে বেশি ইম্পোর্টেন্ট কিছু না।বাট বিষয়টা যদি উম্মি’র সাথে জড়িত থাকে তাহলে নিশ্চয়ই সেটা ইম্পর্টেন্ট।”
—“মানে?” সবাই অবাক মনির কি বলতে চাইছে।
—“মানে আমি এই কয়দিন তল্লাশি করেছি যে উম্মির সাথে এই দূর্ঘটনা কিভাবে ঘটলো।আসলে এটা দূর্ঘটনা না এটা জেনেশুনে উম্মির সাথে করা হয়েছে!”
নিবির অবাক হয়ে বলে,
—“মনির এইবাবে না পেচিয়ে সোজাসুজি বল।”
—“বলবো বাট তার আগে একটা কাজ কমপ্লিট করতে হবে!”
—“কি কাজ মনির?”আরিফ জিজ্ঞেস করে।
—“আফরান নিবির তোরা দুই ভাই জানিস যে আমি উম্মিকে কতো ভালোবাসি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।এবং এটা মেরাজ আর আরিফ ও জানে।”
মনির এর কথা শুনে আফরান,নিবির,আরিফ আর মেরাজ সায় জানালো মানে তারা জানে মনির পাগলের মতো ভালোবাসে সাদুকে।এদিকে সাদুর চোখ কপালে উঠে গেছে হা হয়ে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।মানে মনির ওকে ভালোবাসে কথাটা ঠিকঠাক ভাবে হজম হচ্ছে ওর।মিম আর আলিফা ওদের ও সেম অবস্থা।মিম আর আলিফা দুজন সাদু’র দুপাশে বসে পড়লো।আলিফা সাদুর কানে ফিসফিস করে বলে,
—” এএএ সাদি, সাদুরেএএ তুই যাকে ভাইয়া ডাকতি সে দেখি কতো আগে থেকে নিজেকে তোর সাইয়া ভেবে বসে আছে।”
মিম আফসোস করতে করতে বলে,
—” ইসসস! সেই কবে থেকে আমি ক্রাশ খেয়ে বসেছিলাম মনির ভাইয়ার উপর।আর সেকিনা আমাকে বাশ দিয়ে তোকে লাভ করে করে বসে আছে।”
সাদু চোখ বড় বড় করে দুজনের দিকে তাকিয়ে দিলো ধমক,
—“সাট আপপপ! ”
সাদুর ধমক শুনে ওরা সুরসুর করে অন্য সাইডে চলে গেলো।
এদিকে মনির বলছে,
—“আজ আমি মনির তোদের দুই ভাই থেকে তোদের কলিজা টুকরো বোনকে চাইছি দিবে আমায় তোর বোনকে। ”
আফরান অবাক এর শেষ পর্যায়ে,,
—“মানে কি বলতে চাইছিস! আমরা সবাই তো কতো আগে থেকেই মেনে নিয়েছি তোকে। যে তোকেই পিকুর বর বানাবো ইন্ফেক্ট আব্বু আম্মুও রাজি।শুধু পিকু’র দেশে আসার ওয়েট করছিলাম।আর দেশে তো এসেই পড়েছি আর কয়দিনের মাজে বাবা মা তোদেত এংগেজমেন্ট এর এনাউন্স করতো পিকুর বার্থডে এর দিন।”
মনির আফরান এর হাত দুটো ধরে বলে,
—“হ্যা আমি জানি! কিন্তু…”
নিবির বললো,,
—“কিন্তু কি?”
—“আজ আমি তোদের সবাইকে সাক্ষী রেখে এখনি এইমূহূর্তে উম্মিকে বিয়ে করতে চাই।”
—“কিহহহহহহহহহহহহহহহহহহ!” আলিফা আর মিম চিৎকার করে উঠে।আর এদিকে সাদু বেচারি একের পর এক ঝটকা খেয়ে ঠিক কি রিয়েকশন দিবে ভূলে গেছে।সে এখনো হা করে তাকিয়ে আছে।হচ্ছেটা কি এখানে ও তাই বুজতে পারছে না।
—“নূর, আলিশা নিয়ে এসো ওকে।”সবাই মনির এর কথা শুনে দরজার দিকে তাকালো।যা দেখলো তা দেখে ওদের সবার চোখ কপালে উঠে গেছে নূর আর আলিশা রজনী কে হাত,মুখে বেধে ধরে নিয়ে আসছে।রজনীকে দেখে মনে হচ্ছে ওকে অনেক মেরেছে কেউ।দু-গালে পাচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট।
—“একি এই রজনী আফার এই অবস্থা কেন?” আলিফা বলে উঠলো।
নূর আর আলিশা একে অপরের দিকে তাকিয়ে একটু ভাব নিয়ে বলে,,
—“দেখতে হবে না ও কার হাতে পড়েছে।”
—“মনির কি হচ্ছে আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবি প্লিজ।” আফরান হতভম্ব।
মনির বলতে শুরু করলো,,
—“, উম্মিকে যখন হস্পিটাল এ আনি আমরা তখন একটা চিন্তা আমার মাথায় আসে যে উম্মি তো গিয়েছিলো নতুন ভবনের থার্ড ফ্লোরে তাহলে ও পুরান ভবনের স্টোর রুমে কি করে গেলো? এই সন্দেহ হওয়ার পর আমি ভার্সিটি যাই গিয়ে ওখান কার সকল সিসিটিভি ফুটেজ চেক করি।রজনী নিজেকে বড্ড চালাক ভাবে বাট এটা জানে না আমি মনির আমি ঠিক ওকে ধরে ফেলবো।সেদিম সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেই আমি সব প্রমান পেয়ে যাই।নিবির আর উম্মি যখন থার্ড ফ্লোরে যাচ্ছিলো।তখন নিবির এর একটা কল আসে আর নিবির কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।আর এই সুযোগ টাই রজনীর ভাড়া করা লোক কাজে লাগায় মানে যারা সাদুকে ফোলো করছিলো।সাদুকে রুমেলে ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে পুরান ভবনের স্টোর রুমে নিয়ে যায়।তারপর এই রজনী উম্মিকে ফ্লোড়ে ফেলে পুরো স্টোর রুমে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।”
মনির এর কথা শুনে সবাই অবাকের চরম পর্যায়ে একটা মানুষ এতোটা খারাপ কি করে হতোপারে ভেবে পায় না তারা।মনির আবারো বলে,
—“আমি সবটা জানতে পেয়ে রজনীকে ধরতে চলে যাই আর আমি জানতাম রজনী কোনদিন তা স্বিকার করবে না।এইজন্য আমি নূর আর আলিশাকে ডাকি। তারপর ওরা দুজন মিলে রজনীকে ধোলাই দেওয়ার পর সবটা স্বিকার করে তবুও আমাকে সামনাসামনির থ্রেড দেয় ও না-কি উম্মিকে মেরেই তবে দম নেবে।
আলিশা ঠোট বাকিয়ে বলে,
—“আমরাও কম না-কি সাথে সাথে দুজনে দু-গালে দুটো থাপ্পর মেরে দিয়েছি।”
আলিফা আর মিম এইসব শুনে রেফে পুরো টমেটো হয়ে গেছে।তার প্রান প্রিয় বান্ধবিকে এই রজনী জানে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে শুনেই মাথায় রক্ত উঠে গেছে।আলিফা আর মিম তেড়ে গিয়ে দুজনে রজনীর চুল ধরে টানতে লাগলো ইচ্ছামতো খামচি দিতে লাগলো।বেচারি রজনী হাত পা মুখ সব বাধা তাই শুধু মুচড়ামুচড়ি করছে।
—“তোর এতো বড় সাহস তুই আমাদের বান্ধবীকে মারার চেষ্টা করেছিস আর তোকে আমরা মেরেই ফেলবো ডাইনি কোথাকার।তুই জানিস তুই কার গায়ে হাত দিয়েছিস তোর হাত আমরা কেটে ফেলবো শাকচুন্নি।” কথাগুলো বলছে আর রজনীর চুল ধরে টানছে আলিফা আর মিম।
ডক্টর রা এসে এক ধমক দিয়ে গেছে সবাইকে তাই বাধ্য হয়ে আরিফ আর মেরাজ আলিফা আর মিম কে একপ্রকার কোলে তুলে টেনে হিছড়ে ছাড়িয়েছে। এখনো রাগে ফোসফাস করছে ওরা।পারলে এক্ষুনি রজনীকে টুপ করে গিলে ফেলে।
—” কিন্তু রজনী এইসব কেন করলো মনির?” আফরান প্রশ্ন করে।
—” কারন ও না-কি আমাকে ভালোবাসে।তাই উম্মিকে আমার পথ থেকে সরিয়ে দিতে চাইছিলো।” চোয়াল শক্ত করে বলে মনির।”
—“হুয়াট!” নিবির চিল্লিয়ে বলে।
—“হ্যা! তাই এখন এই মূহুর্তে আমি উম্মিকে ওর সামনে বিয়ে করতে চাই।ও যেই কারনে আমার উম্মিকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে। আজ সেই কারন জেনে আমি ওর সামনেই উম্মিকে বিয়ে করতে চাই তোদের সবাইকে সাক্ষী রেখে।”
সাদু বেচারি কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না।যেখানে এতো সব কিছু তাকে নিয়ে ঘটে গেছে আর সে নিজেই কিছু জানে না।শুধু ঝটকার উপর ঝটকা খাচ্ছে।
চলবে,,,,,,,