পঞ্চভুজ তারা – Part 30

0
280

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ৩০
সবাই চলে যাওয়ার পর মনির সাদু’র পাশে বসে খানিক তাকিয়ে রইলো ওর দিকে।চোখের পলক ফেলতেও যেন ভূলে গেছে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সাদু’র দিক।তারপর হঠাৎ করেই সাদু’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।সাদু’র ও কি হলো কে জানে?সেও মনিরকে ধরে হু হু করে কান্না করে দিলো।খানিক বাদে মনির সরে এসে সাদু’র দুগালে হাত রেখে কপালের সাথে কপাল ঠেকালো। তারপর ধীর কন্ঠে বললো,
-” কেঁদো না উম্মিপাখি!আর আ’ম আ’ম সরি হ্যা অনেকগুলো সরি আমি তোমাকে দেখে রাখতে পারি নি।আমাকে ক্ষমা…”
বাকিটা বলার আগেই সাদু নিজের হাত দিয়ে মনিরের মুখ চেপে ধরলো।
-” আপনি কেন আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন? যা হবার তা হয়েছে এটাই হওয়ার ছিলো। আপনি বললেও তা আটকাতে পারতেন নাহ।সো নিজেকে দোষারাপ বন্ধ করুন।”
-” আই লাভ ইউ উম্মি পাখি।”
মনিরের ভালোবাসার এই বাক্যগুলো শুনে সাদু’র মন ভালোলাগার চরম শীর্ষে চলে গেলো।কিছু বললো নাহ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মনিরকে।মনির ও সাদু’কে আকড়ে ধরে ধীর হাতে সাদু’র ঘাড় থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিলো।তারপর সাদু’র ঘাড়ে আস্তে আস্তে ভালোবাসার পরশ দিতে লাগলে।আর সাদু খামছে ধরলো মনিরের হাত।ওর শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেছে, হার্ট জোড়ে বিট করছে।কাপা কাপা শরীর নিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় মনির থেকে।তারপর নিভু চোখে তাকায় মনিরের দিক।মনির নেশাভরা চোখে তাকিয়ে ওর দিকে।সাদু আসতে করে ওর চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো।আর মনির বুজে গেছে তার ছোট্ট বউটা এখন তার আদর চাইছে।তাই সে আর দেরি না করে ঠোঁটের স্পর্শ দিতে লাগলো ওর প্রিয়তমার ঠোঁটে। মনির উন্মাদের মতো প্রিয়তমার ঠোঁটের স্বাদ নিচ্ছে।সাদুও সুখের চরম সীমানায় পৌছে গেছে।এ সুখে যে ও মরে যেতেও রাজী।দুহাতে মনিরের পিঠের দিক খামছে ধরলো।মনির সামান্যে ব্যাথা পেলেও কিছু বললো নাহ,প্রিয়তমার দেওয়া ব্যাথাতেও যে এতো সুখ তা আগে জানতো নাহ মনির।ঠোঁট ছেড়ে সাদু’র গলায় মুখ ডুবায় মনির।মনিরের ঠোঁট সাদু’র গলায় ঝড় বইয়ে দিচ্ছে।আর সেই ঝড়ে সাদু নেতিয়ে। খানিক বাদে সরে এসে মনির সুয়ে পড়ে তারপর সাদুকে হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এসে বুকের মাঝে আকড়ে ধরে।সাদু’র মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
-” কবে যে তুমি বউ হয়ে আমার ঘড়ে আসবে? আর কবে যে তোমাকে মন ভরে আদর করবো?তুমি জানো তোমাকে এতো কাছে পেয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করা কতো কঠিন।”
-” তাহলে কন্ট্রোল করতে বলেছে কে? আমি তো আপনার বিবাহিতা স্ত্রী তাহলে কিসের এতো জড়তা আপনার?”
-” যেদিন তোমাকে পুরো সমাজের সামনে দিয়ে বউ করে আমার ঘরে নিয়ে যাবো সেদিন তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিবো।তোমাকে নিজের অস্তীত্বের মাজে জড়িয়ে নিবো।”
-” এতো ভালো কেন আপনি?”
-” তোমাকে ভালোবাসি তাই!”
-” আমিও ভালোবাসি!”
-” হ্যা আমি জানি!”
তারপর সাদু মনিরের বুকে সুয়ে থেকেই ঘুমের রাজ্যে ডুব দিলো।খানিক বাদে মনিরও ঘুমিয়ে গেলো।
____________
আজ কেউ আর বাড়িতে যাইনি সবাই সাদু’দের বাড়িতেই আছে।আলিশা,মিম আলিফা আর নূর যখন ঘুমানোর জন্যে বিছানা করতে ব্যস্ত তখন হঠাৎ কোথাথেকে ঝড়ের বেগে আফরান এসে নূরকে কোলে উঠিয়ে নিলো।আর চলে যেতে লাগলো।এদিকে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।তারপর মিম,আলিফা,আলিশা শব্দ করে হেসে দিলো।এদিকে নূর খানিক অবাক হয়ে রইলো তারপর যেই বুজতে পারলো কি হয়েছে পরক্ষনে চেঁচিয়ে উঠলো।
-” আরে কি করছেন টা কি আপনি?এইভাবে সবার সামনে কোলে নেওয়ার মানে টা কি?”
আফরান বিরক্ত হয়ে দিলো এক ধমক,
-” সাট-আপ চিল্লাচ্ছো কেন?”
তারপর নূরকে ডায়নিং টেবিলে এনে বসিয়ে দিয়ে একগাদা খাবার সামনে এনে ধমকের স্বরে বলে,
-” এই খাবারগুলো সব শেষ করবে।তারপর মেডিসিন নিবে।”
নূর আমতা আমতা করে বললো,
-” এতোগুলো খাবার আমি কিভাবে খাবো?”
-” তা আমি কি জানি?সারাদিন কিছু খাওনি কেন?”
-” ওই আর আর কি…!”
-” মাইগ্রেন এর ব্যাথা উঠেছে কাউকে বলেছো।ব্যাথার জন্যে কিছু খাওনি। এইভাবে চললে কি ব্যাথা কমে যাবে?এখন এইগুলো খেয়ে মেডিসিন নিয়ে তারপর ঘুমাবে।”
নূর কাঁদোকাঁদো চেহারা বানিয়ে আফরানের দিকে তাকাতেই আফরান ফট করে একলোকমা ভাত নূরের মুখে পুরে দিলো আর চোখের ইশারায় খেতে বললো।নূর আর কি বলবে জানে এখন আর কিছু বলে লাভ নেই।তাই চুপচাপ সব খেয়ে নিলো।তারপর আফরান নূরকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে আবার কোলে তুলে রুমে দিয়ে আসলো আর বললো জলদি ঘুমিয়ে যেতে।তারপর ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে মাথায় খানিক হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলো।নূর আফরানের যাওয়ার পানে খানিক তাকিয়ে মুচকি হেসে ঘুমিয়ে পড়লো।
_________
নিবির আলিশাকে জোড় করে টেনে ছাদে নিয়ে এসেছে আসলে আফরান যাওয়ার খানিক বাদেই আরিফ এসে আলিফাকে নিয়ে যায় তারপর নিবির ও আলিশাকে নিতে চাইলে আলিশা বলে ওর ঘুম পাচ্ছে তাই নিবির বাধ্য হয়ে ওকে জোড় করে টেনে নিয়ে আসে।
-” আপনি আমাকে এইভাবে গরুর মতো টেনে এখানে নিয়ে আসলেন কেন?” রাগে চোখ ছোট ছোট করে বললো আলিশা।
-” কেন প্রেম করতে মেরাজ ও ফোনে জুইয়ের সাথে করছে, আরিফ ও করছে, আফরান ও করছে,ইনফেক্ট মনির ও করছে তো আমি বাদ যাবো কেন?”
-” ছিহ! আপনার লজ্জা করে না নিজের ভাই বোনদের নিয়ে এসব বলতে? ”
-” লজ্জা কেন করবে?”
-” তা কেন করবে আমি তো আগেই জানতাম আপনি যে নির্লজ্জ।”
বলেই রাগে ফোসতে ফোসতে চলে যেতে নিলেই নিবির একটানে আলিশাকে নিজের কাছে টেনে এনে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো আলিশা কিছু বলার ও সুযোগ পেলো না।খানিক বাদে আলিশাও তাল মেলাতে লাগলো নিবিরের সাথে।থাক না কিছু মিষ্টি সময় ভালোবাসার মানুষদের মাজে।
_______
-” তোমাকে যে কবে বিয়ে করবো আমার আলু!”
আলিফার কোলে মাথা দিয়ে সুয়ে থেকে বললো আরিফ।
-” জানেন আমরা প্লান করেছি আমরা ৫ বান্ধবী একসাথে বিয়ে করবো!” খুশিতে গদ গদ হয়ে বললো আলিফা।
-” তাই! তাহলে তো আমার জন্যেই ভালো হবে!”
-” তা কিভাবে আপনার জন্যে ভালো হবে?”
-” দেখো যদি আমাদের আলাদা আলাদা বিয়ে হয় তো দেখা যাবে পুরো ক্যালেংকেরি হয়ে যাবে।সাদু,নূর,আলিশা, মিম যেই হারে দুষ্টু আর সাথে আছে মনির,আফরান,মেরাজ আর নিবির আমার বাসর রাতের ১২ টা বেজে যাবে।তাই যদি আমাদের সবার একসাথে বিয়ে হয় তো যার যার বাসর ঘরে সে সে ব্যস্ত থাকবে তাহলে ডিস্টার্ব করার মানুষ ওই কেউ থাকবে নাহ।” বিশ্বজয়ী হাসি দিয়ে বললো আরিফ।
এদিকে একটা ছেলে কিভাবে এতোটা নির্লজ্জ হলে এইসব চিন্তা করতে পারে।তা আরিফকে না দেখলে আলিফা জানতো নাহ।লজ্জায় তার নাক-মুখ লাল হয়ে গিয়েছে আবার রাগ ও লাগছে।আলিফা চোখ রাঙিয়ে তাকায় আরিফ এর দিকে।তা দেখে আরিফ একটা ইনোসেন্ট হাসি দিয়ে বলে,
-” কি গো বউ এমন করে মুখ ফুলাও কেন? নাম তো আলু দেখতেও আলু’র মতো লাগে।”
আলিফা লজ্জাকে এক উষ্টা মেরে সাইডে ফেলে রাগে গজগজরাতে আরিফকে ধুমধাম কয়েকটা কিল ঘুশি দিয়ে দিলো।তারপর চড়া গলায় বলে,
-” আপনি এতোটা বেহায়া কেন অসভ্য ছেলে! আমি যে একটা মেয়ে তা কি আপনি ভূলে যান কিসব লেইমহীন কথাবার্তা বলেন আপনি হ্যা?”
-” মারো কেন গো বউ লাগে তো! আর নিজের সুবিধা সবাই খুজে বুজলে!”
-” নাহ আপনি না বললে তো আমি জানতামি না।” দাঁতেদাত চেপে বললো আলিফা।
-” দেখছো আমি কতো ভালো!”
-” হ্যা আপনি অসভ্য,নির্লজ্জ,বেহায়া লোক একটা।”
আরিফ এইবার আলিফাকে একটানে নিজের কাছে এনে দুষ্টু হেসে বলে,
-” তাই আমি অসভ্য,বেহায়া,নির্লজ্জ লোক। তাহলে তো কিছু অসভ্যতা করতে হয় এখন তোমার সাথে যেহেতু এতো গুলো সম্মানীয় ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছো।”
এদিকে আরিফের এইসব কথা শুনে লজ্জায় শরীর রি রি করে উঠে আলিফা’র। নিজেকে আরিফের বাহু ডোর থেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।কিন্তু তার আগেই আরিফের যা নেওয়ার তা নিয়ে নিয়েছে।ছুটাছুটি করে আরিফের কাছ থেকে ছাড়া না পেয়ে সেও আরিফের মাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।ঠোঁটে ঠোঁটে ভালোবাসা আদান প্রদানের মাজে।
________
সবাই যেহেতু ব্যস্ত নিজেদের পার্টনার নিয়ে, আর বড়রা ঘুমিয়ে গিয়েছে।তাই মিম লিভিংরুমের সোফায় বসে সজিবের সাথে কথা বলছে।তানিমের ব্যাপারে অনেক দুঃখ প্রকাশ করছে সজীব।মিম ওকে শান্তনা দিচ্ছে যে যা হয়েছে তাতে ওর কোন দোশ ছিলো নাহ।
-” আমি অনেক দুঃখীত রে আমি জানতাম না তানিম এতোটা খারাপ হবে!”
-” ইট্স ওকে আমি তোকে বলছি তো যা হয়েছে তাতে তোর কোন দোশ নেই।আর এখানে কেউ তোকে ব্লেইম দিচ্ছে নাহ।তুই শুধু টেন্সন নিচ্ছিস।”
-” হুম বুজতে পারছি আমি কিন্তু নিজের ভীতরে কেমন যেন একটা গিল্টিফিল হচ্ছে। ”
-” আচ্ছা এসব বাদ দে তো ভালো লাগছে নাহ।আর একাবার এইসব বিষয়ে কথা বললে তোর সাথে কথা নাই।”
-” আচ্ছা আর বলবো নাহ হ্যাপি।”
-” হ্যা হ্যাপি।এইবার বল তো বিয়ে কবে করবি আমি সেই কবে থেকে তোর বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছি।”
-” তাহলে তুই নিজেই তো আমার বউ হয়ে যেতে পারিস।” দুষ্টুমি করে বলে সজিব।
-” ইসস আমার বয়েই গেছে।” বলেই হাসিতে ফেটে পড়লো মিম।
এদিকে মেরাজ ও জুইয়ের সাথে কথা বলছিলো দুতলায় করিডোরে দারিয়ে।মিম কে এইভাবে কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে রইলো খানিক।এদিকে ফোনের অপাশ থেকে জুই হ্যালো হ্যালো করছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই।
-” হ্যালো মেরাজ আই থিংক তোমার ঘুম পাচ্ছে সো গুড নাইট।”
মেরাজ আনমনেই ‘হুম’ বলতে ফোন কেটে দেয় জুঁই।এদিকে কথা শেষ করে রুমের যাওয়ার জন্যে সিড়ি দিয়ে উঠে করিডোর দিয়ে যাওয়ার জন্যে হাটছিলো মিম।হঠাৎ হাটার মাজে ওর সামনে এসে দাঁড়ায় মেরাজ।শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-” কার সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলছিলে?”
-” আমার যার সাথে মন চায় তার সাথে কথা বলবো আপনার কি?নাউ সাইড মি প্লিজ!” ভাবলেশহীন কথাটা বলে মেরাজের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো মিম।
এদিকে মেরাজ রাগে চোখ মুখ লাল করে তাকিয়ে রইলো মিমের যাওয়ার পানে।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here