লাভ গেম -Part 27+28

0
321

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
২৭+২৮
ঘুটঘুটে অন্ধকারে এলোমেলো কালো চুলগুলো উড়ছে। চুলগুলো ভীষণ অবাধ্য হয়ে মুখের উপর খেলা করছে। গালের উপর সুরসুরি লাগায় আধো আধো করে চোখ মেলে রুশা। মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে আবারও চোখ বন্ধ করল। বন্ধ চোখদুটো খুব দ্রুত খুলল। তারপর মাথা ঘুরিয়ে আশেপাশে দেখছে। এটা তো ওর আর আদ্রিশের ঘর। কিন্তু ও তো হাসপাতালে ছিল। তারপর মনে পড়ল বাচ্চার কথা। রুশার নিজেকে হালকা নয় বরং আগের চেয়েও ভারী মনে হচ্ছে। অজান্তেই হাত চলে গেল পেটের উপর। রুশা ধীরে ধীরে উঠে বসে। পেটে হাত দিয়ে চাপা শব্দে কাঁদছে। বিরবির করে বলছে,
“আর কত আঁচড় আসবে আমার বেবির উপর। পুরো দুনিয়া কেন ওর পেছনে পড়ে আছে? বেবি ভয় পেও না। তোমার মা আছে। কিছু হতে দেবে না তোমার।”
রুশা ডান হাতে গাল মুছল।
আদ্রিশ দরজা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে ছিল। রুশার কথা শুনে আর ওকে ঠিক দেখে চলে গেল। রুশা দরজার দিকে তাকাল। মনে হচ্ছে কেউ ছিল ওখানে। রুশার মনে বারবার প্রশ্ন
জাগছে এখানে কে নিয়ে এল? আদ্রিশ নিয়ে এসেছে?
রুশা ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামতেই কথা ঘরে এলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“কেমন আছো আপু?”
“ভালো। আমি এখানে কি করে এলাম জানো কিছু?”
“হ্যা, আদ্রিশ ভাই আর সেজান ভাই নিয়ে এসেছেন।”
রুশার মনে প্রশ্ন জাগছে যদি বাঁচাবেই তাহলে এত ভাব দেখালো কেন।
কয়েক ঘন্টা আগের কথা। সেজান আদ্রিশের ডেক্সে যায় হন্তদন্ত হয়ে। ওকে অস্থির দেখে আদ্রিশ কাজ রেখে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“সেজান, কী হয়েছে? তোমাকে এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন?”
“ভাই, ভাবী কল করেছিল। এর আগে কথা কল করে বলেছিল ভাবী বিপদে আছেন। রকি ওকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে। আর কিছুক্ষণ আগে ভাবী কল করে সাহায্য চাইছিলেন।”
“সেজান, তোমাকে কতবার বলেছি ওর কথা আমাকে বলবে না।”
“ভাই, আমার পুরো কথা শুনুন। ভাবিকে রকি হাসপাতালে নিয়ে গেছে বাচ্চা মেরে ফেলার জন্য। নিজের বাচ্চা কেউ কী করে মারতে পারে?”
“হতে পারে এটা রুশা আর রকির নতুন কোনো চাল।”
“কী চাল হবে? নিজের বাচ্চা মেরে ফেলবে? নিজের বাচ্চা কেউ মেরে ফেলতে পারে? ভাবিকে রকি অজ্ঞান করে তুলে নিয়ে গেছে। হতে পারে ভাবি সত্যি বলছে। হয়তো বাচ্চাটা আপনার।”
আদ্রিশ সেজানের কথা শুনে চমকে চেয়ে রইল। সেজান মোবাইল বের করে রুশাকে কল করল। কল বেজে যাচ্ছে রিসিভ হচ্ছে না। তারপর দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
“কোথায় যাচ্ছ সেজান?”
“হাসপাতালে। কল রিসিভ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ভাবি বিপদে আছে। আমি এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারব না। যদি পরে জানতে পারি বাচ্চাটা আপনার ছিল, আমার ভাতিজি অথবা ভাতিজা ছিল নিজেকে মাফ করতে পারব না।”
“সেজান, এভাবে যেও না। হতে পারে ওরা কোন জাল সাজিয়েছে।”
“তাই তো একা যাচ্ছি। ওদের জাল সাজানোর হলে আপনার জন্য সাজাবে, আমার জন্য না। তাই আপনাকে রেখে যাচ্ছি। আমি গিয়ে দেখি ঘটনা কি।”
“তোমাকে আমি একা যেতে দেব না সেজান। আমিও যাব।”
“না ভাই, আপনি থাকুন। আমি যাচ্ছি। রকি যদি সত্যিই এমন কিছু করে তবে ওকে আপনার সামনে নিয়ে আসব৷ আর ভাবির কোনো ক্ষতি হতে দেব না কথা দিচ্ছি।”
আদ্রিশ যখন প্রথম শুনে রুশা বিপদে আছে তখন থেকেই ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে পড়ছিল। কিন্তু অভিমান এসে ভর করে কিন্তু এখন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না।
“সেজান, আমি বলেছি যাব ব্যস যাব।”
আদ্রিশ আর সেজান দুজনেই হাসপাতালে যায়। ওরা রুশার বলা ঠিকানায় পৌঁছে গিয়েও রুশাকে পায়নি। তারপর ওখানকার একজনকে জোর করার পর জানতে পারে ওকে অপারেশন থ্রিয়েটারে নিয়ে গেছে।
অপারেশন রুমের দরজার সামনে গিয়ে রুশাকে বেহুশ পায়। আর একজন ডাক্তার আরেকজন ডাক্তারের সাথে তর্ক করছে।
“এমন পাপ করতে পারব না। আমি ডাক্তার খুনি নই।”
অন্যজন বলছে,
“কাজটা না করলে আপনার সাথে সাথে আমিও মরব। একটা বাচ্চাই তো। কত বাচ্চা মরে যায়। কিছু হবে না স্যার।”
আদ্রিশের আর সহ্য হলো না। ভেতরে ঢুকে ওই ডাক্তারের নাক বরাবর ঘুষি মেরে বলল,
“আমার বাচ্চাকে মারবি? আদ্রিশ আফসানের বাচ্চাকে?”
ডাক্তারের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে আর পাশের ডাক্তার ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আদ্রিশ তাকে প্রশ্ন করল,
“আমার স্ত্রী ঠিক আছে?”
“জি স্যার। উনি একদম ঠিক আছে। আমি অপারেশন হতে দেইনি।”
“এর এনাম পাবেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। রকি কোথায় বলতে পারেন?”
“জি, উনি ওয়েটিং রুমে বসে আছেন।”
আদ্রিশ সেজানকে ইশারা করল।
রকি আদ্রিশের সামনে হাঁটু গেড়ে হাসপাতালের ছাদে বসে আছে। আদ্রিশ ওর চারপাশে ঘুরে বলল,
“নিজের বাচ্চাকে মেরে ফেলছিস কেন?”
“আমার বাচ্চা, আমি মেরে ফেলব যা খুশি করব কাউকে কৈফিয়ত দেব না।”
আদ্রিশ সেজানের দিকে তাকাল। সেজান পেছনে থেকে সজোরে লাথি মেরে বলল,
“সত্যি করে বল নয়তো ভাই আজ তোকে ছাদ থেকে ফেলে আত্মহত্যা কেস সাজিয়ে দেবে।”
“বললাম তো! আর কী বলব?”
আদ্রিশ রিভলবার বের করে ওর মাথায় ঠেকিয়ে বলল,
“তুই ভালো কথার মানুষ না। সত্যি করে বল আমার বাচ্চাকে মারতে চেয়েছিলি কেন?”
রকি রাগে গর্জে উঠে বলল,
“বেশ করেছি। রুশাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি। এই বাচ্চার জন্য আমাকে এত অবহেলা করে তাই বাচ্চাটাকেই সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। তারপর আর কোনো বাঁধা থাকত না। রুশা আমার কাছে চলে আসত।”
“রুশা তো তোকে ভালোবাসে, তাহলে কেন যাবে না তোর কাছে? আর তুই তো রুশাকে ভালোবাসিস তবে কেন ওর বাচ্চা আপন করতে পারিস নি?”
“ভালো তো আমি বেসেছি বোকার মতো। রুশা আমাকে কখনো ভালোই বাসেনি। ওর জন্য কত কী করেছি, কত ভাবে সাহায্য করেছি কিন্তু ও তোকে ভালোবেসে ফেলল। তোর বাচ্চার মা হয়ে গেল। ও না চাইলে তুই ওর ছায়াও স্পর্শ করতে পারতি না। মুখে যাই বলুক, আমি সব জানি ও তোকে এখনো ভালোবাসে। তোকে ভালোবাসে, তোর বাচ্চা ওর পেটে তাহলে আমার কী হবে? তাই নিজেরটা নিজেই বুঝে নিতে চেয়েছি।”
আদ্রিশ ওকে আরেকটা লাথি মেরে উল্টো ঘুরে সিড়ি দিয়ে নেমে চলে গেল। ও রুশার কাছে যাচ্ছে আর ভাবছে,
“রুশাকে এতদিন ভুল বুঝে এসেছি? রুশার সাথে রকির কোনো সম্পর্ক নেই। রুশা শুধু আমাকে ভালোবেসেছে। ও আমার বাচ্চার মা।”
রুশা কথার কাছ থেকে সব ঘটনা শুনে সেজানের প্রতি কৃতজ্ঞতা বেড়ে যায়। চোখ ভরে আসে পানিতে।
মাঝরাতে ঘরে হালকা আলো জ্বলছে। রুশার ঘুম আসছে না। বালিশে মাথা রেখে চুপ করে শুয়ে আছে। ওই ঘটনাটা মনে পড়লেই অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়৷ বুক ধুকপুক করতে থাকে। একজন মা যতই সাহসী, শক্তিশালী হোক না কেন, তার সন্তানের জন্য সে সবচেয়ে দূর্বল মানুষ। দরজা খোলার শব্দে রুশা রুশা চোখ মেলে। কান দুটো খাড়া করে রাখল। চোখদুটো ছোট ছোট করে বন্ধ করে রাখল। চেনা পারফিউমের ঘ্রাণ আর অববয় দেখে মনে হচ্ছে এটা আদ্রিশ। রুশা যত অন্ধকারেই হোক আদ্রিশকে চিনতে ভুল করবে না। রুশা চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে থাকল। আদ্রিশ ধীরে ধীরে ওর পাশে গিয়ে বসে কপালে ঠোঁট ছুয়ালো। হাত দিয়ে ওর গালে স্লাইড করছে। রুশার সারা শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। এতদিন পরে এই মানুষটার ছোয়ায় বারবার চমকে উঠছে। রুশা খপ করে আদ্রিশের হাত ধরে ফেলল। আদ্রিশ চমকালো না, হতবিহ্বলও হলো না। ও জানে রুশার ঘুম পাতলা। এতক্ষণ ধরে গালে হাত দিয়ে স্লাইড করছে জেগে যাওয়ারই কথা। রুশার মায়াবী মুখটা অন্ধকারে আরো মায়াবী লাগছে। হঠাৎ লোভ জেগে উঠে। আদ্রিশ ওর পাশে আধশোয়া হয়ে ওর গলায় ঘাড়ে ভালোবাসার স্পর্শ দিচ্ছে৷ রুশা অভিমানে ওকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আদ্রিশ মানতে নারাজ। ও রুশার ঠোঁটে ঠোঁট ডোবাল। রুশা প্রথমে ধাক্কালেও পরে আর ওকে অগ্রাহ্য করতে পারল না। আদ্রিশ ওর ঠোঁট ছেড়ে পেটে ঠোঁট ছুয়ালো। এতগুলো দিন পরে এই প্রথম বাচ্চাকে ছুতে পারল বলে অনুভূতি হলো। আদ্রিশ পেটের কাছ থেকে সরে এসে বলল,
“সরি। সরি ফর কিস।”
রুশা ওর কথা শুনে অবাক হলো। ভেবেছিল ওকে ভুল বোঝার জন্য সরি বলছে। কিন্তু না কিস করার জন্য সরি বলছে। রাগে, ক্ষোভে রুশা আদ্রিশকে ধাক্কা মেরে বিছানা থেকে নিচে ফেলে দিল।
তারপর দাঁত খিচিয়ে বলল, “অমানুষ!”
আদ্রিশ মেঝেতে বসে বিছানায় হাত রেখে বলল,
“আমি অমানুষ! আজকে ওই রকির হাত থেকে কে তোমাকে বাঁচালো?”
“আমাকে বাঁচিয়েছো? বাঁচিয়েছো নিজের সন্তানকে। তোমার লজ্জা নেই? কোন মুখে এতকিছুর পরে আমার সামনে এসেছো? আমাদের স্পর্শ করছো? ওহ, আমি তো ভুলে গেছি তুমি তো জেন্টেলম্যান নও। অসভ্য লোক। নিজের বাচ্চাকে অস্বীকার করে স্ত্রীকে তাড়িয়ে দেয়। একবার ভাবে না মেয়েটা কোথাও যাবে এই অবস্থায়। কতবার বলেছি রকির সাথে জাস্ট বিয়ের কথা হয়েছিল আর কিছু নেই ওর সাথে। তবুও অবিশ্বাস করলে। এখান থেকে চলে যাও নয়তো খারাপ কিছু হয়ে যাবে।”
রুশা ছোট টেবিল ঘড়িটা আদ্রিশকে ছুড়ে মারল।
আদ্রিশ ঘড়িটা হাতে নিয়ে বলল,
“আর ইউ ক্রেজি?”
“হ্যা, আমি পাগল হয়ে গেছি। আমার মাথায় খুন চেপে আছে। চলে যাও নয়তো খুন করে ফেলব।”
রুশা টেবিলের উপরে থেকে ফ্রেম হাতে নিল। আদ্রিশ বুঝতে পারছে রুশা ভীষণ ক্ষেপে গেছে। এসবের চক্করে না নিজের ক্ষতি করে ফেলে তাই চলে যাওয়াই বেটার। আদ্রিশ চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। তারপর আবারও রুশার দিকে তাকাল। রুশা রাগে ফোঁসফোঁস করছে। আদ্রিশ ওকে আর না রাগিয়ে ঘর থেকে চলে গেল।
সকাল বেলায় রুশা ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল। কথা টেবিলে খাবার দিচ্ছে। রুশা সোফায় বসে কথাকে ডাকল। কথা ওর সামনে এসে হাসি মুখে বলল,
“জি আপু, নাস্তা দেব।”
“উহু, এখানে এসে বস।”
রুশা নিজের পাশের খালি জায়গায় হাত রেখে ওর দিকে তাকাল। কথা গিয়ে বসে পড়ল।
“কথা, এসব কাজের জন্য এখানে অনেক লোক আছে। তুমি এসব কাজ করছো দেখতে আমার ভালো লাগছে না। তুমি মেহমান আমাদের। আমার সাথে থাকবে, গল্প করবে সেটাই যথেষ্ট।”
কথা হেসে বলল,
“আমার এসব কাজ করতে ভালো লাগে।”
“বেশ! সেজান ভাইকে দেখেছো?”
“হ্যা, উনার ঘরে কফি দিয়ে এসেছি। উনি তখন গোসল করে বের হয়েছে। বলল রেডি হয়ে আসছে। নাস্তা যেন রেডি থাকে। কি এক মিটিং আছে। তাই নাস্তা রেডি করছি।”
কথার মাঝে কেমন অদ্ভুত কিছু দেখতে পাচ্ছে রুশা। লজ্জা মাখানো , মিষ্টি হাসির এই মুখটা যেন কিছু বলছে।
“ভালোবাসো সেজান ভাইকে?”
রুশার আচমকা প্রশ্নে কথা হতবাক। রুশার চোখে চোখ মেলাতে পারছে না। বুক দুরুদুরু করছে। কেমন লজ্জা পাচ্ছে।
“বলো।”
কথা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে মাথা নিচু করে নিচুস্বরে বলল, “হ্যা।”
“আর সেজান ভাইয়া?”
কথা আবারও নিচুস্বরে বলল,
“একবার বলেছিল ভালোবাসার কথা। তারপর আর তেমন ভাবে উনার সাথে কথা হয়নি।”
রুশা মুচকি হাসল। কথাকে ওর খুব পছন্দ। শান্ত শিষ্ট মেয়েটার আচরণ ওকে বরাবরই মুগ্ধ করত। ওকে নিজের ছোট বোন মনে করে এসেছে। আর সেজানও ভালো ছেলে। দুজনে ভালো থাকবে বলে রুশার বিশ্বাস।
রুশা সেজানকে তরি ঘটি করে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখল। রুশা ওকে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। রুশা আগের চেয়ে মুটিয়ে গেছে। চেহারায় অন্যরকম একটা আভা ফুটে উঠেছে। সেজানের সামনে গিয়ে বলল,
“সেজান ভাই!”
সেজান ওকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল।
“জি ভাবি কিছু বলবেন?”
রুশা মাথা নিচু করে হাতজোড় করে চোখের পানি ছেয়ে দিয়ে বলল,
“আপনার জন্য আমার বাচ্চাটা বেঁচে গেল। আমি আজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। কি ভেবে কেন করেছেন সেটা জানার প্রয়োজন নেই আমার। আমি শুধু এটুকুই জানি আল্লাহ আপনাকে আমার সন্তানের জন্য ফেরেস্তার মতো পাঠিয়েছে।”
সেজান রুশার হাতজোড় করা হাতগুলো খুলে বলল,
“ভাবি কি করছেন? এটা আমার দায়িত্ব ছিল। আমি আপনাকে ভাবি বলে ডাকলেও প্রথম থেকেই বোন ভেবে এসেছি। বোনকে কি করে বিপদে একা ছেড়ে দেই? আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি।”
রুশা অবাক হয়ে সেজানের দিকে তাকাল। সেজান যেন ওর সাজ্জাদ ভাইয়ের কপি। সাজ্জাদ যেভাবে ওকে আগলে রাখত সেভাবেই আগলে রাখছে। ওর চোখ আবারও জলে ভরে এল।
পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য বলল,
“রকির কি খবর?”
সেজান রুশার দিকে চেয়ে ওর ভাব বোঝার চেষ্টা করে বলল,
“আমাদের কাছেই আছে।”
আদ্রিশ টাই টানতে টানতে নিচে নামছে। সিড়ি থেকেই বলল,
“সেজান তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নেও।”
সেজান নাস্তা করার জন্য চলে গেল। রুশা একবার আদ্রিশের দিকে তাকাল। আদ্রিশ ওর দিকে চেয়ে ছিল। চোখে চোখ পড়তেই মুখ ফিরিয়ে নিল। তারপর ডাইনিং টেবিলের কাছে গেল। রুশা গিয়ে সোফায় আগের জায়গায় বসে পড়ল। তারপর কথাকে বলল,
“আমার নাস্তা এখানে দিতে বলে তুমি নাস্তা করে নেও।”
“আমি নিয়ে আসছি আপু।”
কথা নাস্তা আনার বাহানায় সেজানকে বারবার দেখছে৷
চলবে…..!
#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
২৮.
আদ্রিশ বসার ঘরে সোফায় বসে আছে। দু পা আরাম করে টেবিলের উপরে রেখেছে। হাতে মোবাইল, পাশেই কোর্টটা রাখা। রুশা ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করছে কিছু বলার জন্য কিন্তু পারছে না। কয়েকবার ঘুরে চলে এসেছে। সবটাই আদ্রিশের চোখে পড়েছে কিন্তু না দেখার ভান করে আছে। রুশা আদ্রিশের সামনে দাঁড়িয়ে উশখুশ করছে। আদ্রিশ আড়চোখে একবার চোখ সরিয়ে নিল। তারপর নিজের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
রুশা বিরক্ত হলো ওর আচরণে।
“এত ভাব নেওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার সাথে প্রেমালাপ করতে আসিনি যে পাত্তা দিচ্ছো না টাইপ ভাব দেখাবে।”
আদ্রিশ রুশার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। রুশা ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে বিরক্তি।
আদ্রিশ পা নামিয়ে তাচ্ছিল্য করে বলল,
“তো আমি কী সাহায্য করতে পারি? কী প্রয়োজন পড়ল আমাকে?”
রুশা দু’হাতের ভাজ খুলে আদ্রিশের দিকে চেয়ে বলল,
“আমি সেজান ভাইয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি।”
আদ্রিশের ব্যাপারটা ঠিক হজম হলো না। রুশা এসেছে সেজানের ব্যাপারে কথা বলতে। সেজানের ব্যাপারে হলে সেজান নিজেই আসবে। রুশাকে কেন পাঠাবে? ওদের মধ্যে লজ্জা, সংকোচের সম্পর্কও না।
তাই অনেকটা বিস্ময় নিয়ে বলল,
“সেজান!”
“হ্যা। সেজান ভাইকে নিয়ে।”
“সেজানের আবার কী হয়েছে?”
“না, কিছু হয়নি। আসলে আমি উনার ব্যাপারে কিছু বলতে এসেছি।”
“সেজান, তোমাকে পাঠিয়েছে? ওর কিছু বলার থাকলে সরাসরি আমাকে বলবে। তোমাকে কেন পাঠাবে?”
“আমি কোথায় বললাম সেজান ভাই পাঠিয়েছে? আমি নিজে এসেছি উনার ব্যাপারে কথা বলতে। আসলে আমি সেজান ভাইয়ের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি।”
আদ্রিশ ওর কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেল।
“কী? বিয়ে? সেজান বিয়ে করবে?”
“বিয়ে করালে অবশ্যই করবে। তুমি বড় ভাই। এটা তোমার দায়িত্ব।”
আদ্রিশ বসে পড়ল। তারপর আবার ভাবতে লাগল। কিছুক্ষণ ভেবে গম্ভীরমুখে বলল,
“আমি চাই না সেজান বিয়ে করুক।”
“কিন্তু কেন? তোমার কী সমস্যা?”
“অবশ্যই সমস্যা আছে। ও আমার ছোট ভাই। আমি ওর লাইফে আঁচ আসতে দেব না। আমি চাই না ও কষ্ট পাক। নারী মানেই প্রতারক। তুমি আমার বিশ্বাস নিয়ে যেভাবে খেলেছো, আমার জীবন যেভাবে ছাড় খার করে দিয়েছো ওর লাইফে আমি এমন কাউকে এলাও করব না। কারো হাতে ওর জীবন তুলে দেব না।”
“আমার আর তোমার বিষয়টা আলাদা। এর সাথে সেজান ভাইকে কেন জড়াচ্ছো?”
“তোমাকে এ নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি ওর বিয়ে দিচ্ছি না ব্যস!”
“কিন্তু তারও একটা চাওয়া পাওয়া আছে। তারও কাউকে প্রয়োজন।”
“সেটা যেদিন সেজান এসে বলবে সেদিন ভেবে দেখব। এ নিয়ে আর একটা কথা শুনতে চাই না। অন্তত তোমার মুখ থেকে।”
আদ্রিশ সোফায় থাকা কোর্ট আর মোবাইল হাতে নিয়ে চলে গেল। রুশা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। সেজান কবে বলবে আর কবে ওদের বিয়ে হবে৷ কথাকে কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। কথার ঘরের দিকে পা বাড়ালেই সেজানকে দেখতে পেল। সেজান সামনাসামনি পড়ে গিয়ে ইতস্তত করছে।
আমতা আমতা করে বলল,
“ভাইকে এসব কী বলছিলেন? কেন বলছিলেন?”
“আপনার আর কথার জন্য। কথাকে তো ভালোবাসেন।”
সেজান জোরপূর্বক হেসে বলল,
“আমি এখুনি বিয়ে করতে চাই না। আর তাছাড়া কথা শান্ত শিষ্ট খুব ভালো একটা মেয়ে। ওকে কারো না ভালো লাগার কারণ নেই। কিন্তু ব্যাপারটা আপনি যেমন ভাবছেন তেমন নয়। জাস্ট একটা ভালোলাগা ছিল কিন্তু ভালোবাসি তা নয়। ওসব কিছু না।”
রুশা সেজানের দিকে তাকাল। ও দৃষ্টি লুকাচ্ছে। রুশার বুঝতে বাকি নেই আদ্রিশের বিপক্ষে ও যাবে না৷ রুশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“হয়তো আমারই বুঝতে ভুল হয়েছে। কথাকে আমি ছোট বোনের মতো মনে করি। ওর দায়িত্ব নিয়েছি। ওকে ভালো ঘর, ভালো বর দেব। আর সে দায়িত্ব আমি পালন করব। বাবা-মা নেই বলে সবাই ঠঁকিয়ে যাবে তা কি হয়? ওর জন্য আমি ছেলে দেখেছি। আপনি যখন চাইছেন না তাহলে সে ছেলের সাথে কথা বলব।”
সেজানের ভেতরটা ছিড়ে যাচ্ছে রুশার কথা শুনে। টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে সাজানো ভালোবাসা। তবুও জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে৷ আদ্রিশের বিরুদ্ধে কিছুতেই যাবে না। জীবন দিয়ে দিতে পারবে আর এ তো জীবনের সামান্য অংশ ভালোবাসা।
“জি ভাবি, যা ভালো মনে করেন।”
সেজান নিজের ঘরে চলে গেল। রুশা সেজানের আচরণে অবাকের পাশাপাশি বিরক্ত। কি করে কথাকে ফেস করবে। মেয়েটা কত আশা নিয়ে বসে আছে। রুশার কথাকে ফেস করতেই হবে। তাই কথার ঘরের দিকে পা বাড়াল।
.
কথা বসে বসে চোখের পানি মুছছে। রুশা ওর মুখোমুখি অসহায় ফেস করে বসে আছে। কাঁদতে নিষেধও করেনি। কারণ কথা আগে হোক পরে হোক কাঁদবে যেহেতু সেজান অস্বীকার করেছে নিজের ভালোবাসা। তাই চাইছিল ওর সামনেই কাঁদুক। কথা চোখের পানি মুছে জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিজেকে সামলে বলল,
“আপু, আমিই ভুল ছিলাম। ভুল ভেবে এত এত স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেজান ভাইয়ের কী দোষ। আমার মতো এতিম মেয়েকে বিয়ে করা যায় না, ভালোবসাও যায় না। আমি ভুলে গিয়েছিলাম। উনার জন্য কি মেয়ের অভাব বলো। আমিই বোকা।”
রুশা ওর অবস্থা বুঝে বলল,
“কথা এভাবে বলছো কেন? কখনো নিজের অবস্থা নিয়ে আফসোস করবে না। নিজেকে ছোট মনে করবে না। তোমার শিক্ষা, মনুষ্যত্বই তোমার পরিচয়। নিজেকে কখনো ছোট মনে করবে না। আমি তোমার জন্য ভালো ছেলে খুঁজব৷ সে তোমাকে খুব ভালো রাখবে, ভালো বাসবে।”
কথা শুকনো হেসে বলল,
“এসব বাদ দেও৷ আমি কষ্ট পাচ্ছি না। যে আমাকে ভালোবাসে না তার জন্য কেন কষ্ট পাব? আমি আর কষ্ট পাব না। সব ভুলে যাব। তুমি খামোখা এ নিয়ে চিন্তা করো না। চলো আমরা বেবি নিয়ে কথা বলি। জানো আপু তোমাকে এখন মুরুব্বী মুরুব্বী লাগে। হি হি হি।”
রুশাও ওর কথা শুনে হেসে ফেলল। ও আগের চেয়ে অনেক মুটিয়ে গেছে। শরীর, মুখ সব ফুলে গেছে। নিজের চেহারার তেমন যত্ন নেয় না। সব মিলিয়ে কিউটনেস চলে গেছে।
.
কয়েকদিন পর।
রুশাকে আদ্রিশ নিচে শিফট করে দিয়েছে। ভারী শরীর নিয়ে সিড়ি বেয়ে নামতে উঠতে সমস্যা হয়। কোন দূর্ঘটনা ঘটে যায় তাই ওকে নিচে শিফট করে দিয়েছে। ওর যত্নের কোনো ত্রুটি রাখে না কিন্তু পরোক্ষভাবে। নিজেকে আড়ালে রেখেই ওর দেখাশোনা করে। কথাকে ওর রুমে থাকতে বলেছে যাতে রাতের বেলায় কোনো সমস্যা হলে জানতে পারে। কথা রুশাকে ধরে ধরে ডাইনিং টেবিলের কাছে নিয়ে গেল। রুশা একাই সব করতে পারে কিন্তু কথা নাছোড়বান্দা। ওর সাথে সাথে হাঁটতে হবে। কথা চেয়ার টেনে রুশাকে বসতে দেয়। বসানোর পরে ওর চোখ যায় বসার ঘরের সোফার দিকে। সেজান সেখানে স্থির দৃষ্টিতে বসে আছে। কথার দিক থেকে চোখ ফেরাচ্ছে না। কথা চোখ সরিয়ে এমন ভান করে যেন ওকে দেখেই নি। নরমাল বিহেভ করছে। কিচেন থেকে খাবার এনে রুশাকে দিচ্ছে৷ তারপর রুশার পাশে বসে নিজেও খাচ্ছে। এক বারের জন্যও সেজানের দিকে তাকাচ্ছে না। বিষয়টা সেজানকে গভীর ভাবে পীড়া দিচ্ছে। কথা রুশার হাসে হেসে হেসে কথা বলছে আর খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে উঠে আবার ঘরে গিয়ে রুশার মেডিসিন এনে রুশাকে খাইয়ে দিচ্ছে। সেজান আর সহ্য করতে পারছে না। ও কথাকে ইগনোর করতে পারছে না কিন্তু কথা স্বাভাবিকভাবেই ইগনোর করে যাচ্ছে। যে কথা ওকে দেখলেই হাসি মুখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করত,
কেমন আছেন? কিছু খাবেন? কফি করে দেই? আজ সে নির্বাক শুধুমাত্র ওর সাথে। ওকে কত সহজভাবে ইগনোর করে যাচ্ছে। সেজান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। চুপচাপ বাইরে চলে গেল। আদ্রিশের জন্য গাড়িতে গিয়ে অপেক্ষা করছে। কথা আড়চোখে ওর যাওয়া দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল যা কারো চোখে পড়েনি।
~বিকেল বেলা~
কথার সাথে রুশা বাগানে হাঁটছে আর গল্প করছে। আদ্রিশ দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওকে দেখছে। হুট করে রুশা যেন বদলে গেল। প্রায় বছর খানেক আগে যখন ওকে দেখেছিল লম্বা, পাতলা, অবুঝ ধরনের একটা মেয়েকে দেখেছিল। যাকে টোকা দিলেই যেন ভেঙে পড়বে এমন ছিল। আজ তার মধ্যে কত পরিবর্তন। একদম ম্যাচিউর একটা মেয়ে। কয়েকমাস আগেও লাফিয়ে, ঝাঁপিয়ে বেড়িয়েছে। শত্রুর সাথে লড়াই করেছে। এখন সে গুটিগুটি পায়ে হাঁটে। আদ্রিশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। ওর ইচ্ছে করছে রুশার হাত ধরে ওর মতো গুটিগুটি পায়ে বাগানে হাঁটতে আর রাজ্যের গল্প করতে। কিন্তু অভিমান ওকে বাঁধা দিচ্ছে।
রাতের বেলায় রুশা ডাইনিংয়ে বসে বসে ছুরি দিয়ে আপেল কাটছে। কিছু ভালো লাগছে না। তাই অযথাই আপেল কাটছে। আদ্রিশের জন্য মন কেমন কেমন করছে। না পারছে সব ভুলে ওকে কাছে টানতে আর না পারছে এতটা দূরত্ব সহ্য করতে। আদ্রিশ সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর রুশাকে আড়চোখে দেখছে। আদ্রিশ চাইলে ঘরে বসেও খেতে পারত এখানে মূলত রুশার জন্য বসে আছে। রুশা আড়চোখে আদ্রিশকে দেখছে। আদ্রিশ কি সত্যিই ওকে আর ভালোবাসে না? সত্যিই কি বাচ্চা হওয়ার পর ওকে তাড়িয়ে দিবে? আদ্রিশ কি জোর করে ওর সন্তান ওর কাছ থেকে কেড়ে নিবে? রুশার মাথায় এসব চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ করে ছুরি ওর আঙুলে লেগে যায়। কিছুটা কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। রুশা আকস্মিক দূর্ঘটনায় কিছুটা জোরে শব্দ করে উঠে। আঙুল চেপে ধরে। আদ্রিশ কফির মগ ফেলে দৌঁড়ে আসে। কফি আর মগের ভাঙা অংশ মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আদ্রিশ দৌঁড়ে এসে ওর আঙুল চেপে ধরে। তারপর চেঁচিয়ে সার্ভেন্টদের ডাকে।
রুশাকে ধমক দিয়ে বলল,
“তোমাকে এসব কে করতে বলেছে? একদিন নিষেধ করিনি? আমার বাড়িতে কাজের মানুষের অভাব পড়েছে?”
রুশা ওর ধমক খেয়ে থমথমে মুখ করে রেখেছে। সার্ভেন্টরা ভয়ে যবথব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আদ্রিশ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“সবাই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে বাড়িতে চলে যান৷ রুশাকে যদি কাজ করতে হয় তবে আপনাদের কী প্রয়োজন?”
রুশা ওর কথা শুনে বলল,
“আদ্রিশ, উনাদের কী দোষ? আমার ভালো লাগছিল না তাই কাটছিলাম।”
“তুমি চুপ থাকো। দেখো কত রক্ত বের হচ্ছে। কেন এমন করো রুশা? এমনিতেই তোমার শরীর দূর্বল। একটা বাচ্চা বহন করছো। একটু তো খেয়াল রাখো। সব সময় এত জেদ কেন করো?”
আদ্রিশ সার্ভেন্টদের দিকে চেয়ে ধমকে বলল,
“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার মুখ দেখছেন কেন? ফার্স্ট এইড বক্স আনুন। ডাক্তার খবর দিন।”
রুশা অবাক হয়ে বলল,
“সামান্য একটু কেটেছে। ডাক্তার কী প্রয়োজন?”
আদ্রিশ চিন্তিত হয়ে বলল,
“এত রক্ত বের হচ্ছে যদি শরীর আরো দূর্বল হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাও, ব্যথা পাও। তখন আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে। বলা তো যায় না। ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া ভালো।”
একজন ফার্স্ট এইড বক্স এনে দিলে আদ্রিশ নিজ হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল। রুশা অবাক হয়ে চেয়ে আছে আদ্রিশের দিকে। ওর জন্য কত চিন্তা। মনে হচ্ছে সেই আদ্রিশ যে ওর আগে ব্যথা পায়। কোথাও না কোথাও আদ্রিশের মনে ওর জন্য নিগুঢ় ভালোবাসা আছে। সেটা শুধু প্রকাশ করতে চায় না। ব্যান্ডেজ করে আদ্রিশ রুশাকে ঘরে নিয়ে গেল। ধীরে ধীরে ওকে বিছানায় বসিয়ে দিল।
তখনই রুশা ‘উউহ’ শব্দ করে পেটে হাত দিল। চোখে পানি ছলছল করছে। আদ্রিশ বিচলিত হয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“কী হয়েছে রুশা, শরীর খারাপ লাগছে?”
রুশা ছলছল চোখে হাসি মুখ করে কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। নিজেকে একটু শান্ত করে বলল,
“কিক মেরেছে। পেটে ফুটবল খেলছে। স্থির থাকার মতো বাচ্চা ও না।”
আদ্রিশ ওর কথা শুনে হেসে ফেলল। তারপর বিরবির করে বলল,
“মা, কম কিসে? দেখতে হবে না।”
রুশা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল,
“তুমি কম কিসে? তুমি তো বেশ শান্ত, ভদ্র একটা মানুষ। হুহ! তোমার মতো হয়েছে। একদম তোমার মতো হয়েছে।”
দুজন বাচ্চা কার মতো হয়েছে তা নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here