লাভ গেম -Part 25+26

0
213

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
২৫+২৬
আদ্রিশ রুশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,
“রকির সাথে তোমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল?”
রুশা বুঝতে পারছে না এসব কেন জিজ্ঞেস করছে। রুশা থমথমে মুখে বলল,
“হ্যা, বড় ভাইয়া চেয়েছিল।”
আদ্রিশ তাচ্ছিল্য করে বলল,
“এই জন্যই ওর আমাকে মারার এত তাড়া ছিল।”
রুশা চুপ করে আছে।
আদ্রিশ তারপর রুশার চুল টেনে ধরে বলল,
“তোর তো দ্বিগুণ শাস্তি হওয়া উচিত। একজনকে ঠকিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করেছিস। তোকে যে কি করতে ইচ্ছে করছে কি বলব। তোর মতো মেয়েরা নিজের স্বার্থের জন্য অনেক নিচে নামতে পারে। একজন পুরুষ রেখে অন্য পুরুষকে বিয়ে করতে পারে। মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করতে পারে, শরীর বিলিয়ে কাবু করে রাখতে পারে। ছিহ! তোর স্থান আমি তোকে বুঝিয়ে দিতাম। বেঁচে গেলি শুধু বাচ্চার জন্য।”
রুশা নিজেকে ছাড়িয়ে চারদিকে তাকাল। মাথা জ্বলে যাচ্ছে। আশেপাশের সার্ভেন্টরা চেয়ে আছে। ভয়ে ওরা দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে আড়ালে চলে গেল। আদ্রিশ সেটা বুঝতে পেরে বলল,
“সবাই জানুক তুই কতটা নিচ, কি তোর চরিত্র।”
রুশা রেগে গিয়ে বলল,
“কি চরিত্র আমার হ্যা? রকি শান ভাইয়ার বন্ধু। বড় ভাইয়া ওকে আমার জন্য পছন্দ করেছিল। বলেছিল দেশে ফেরার পর যেন রকির সাথে মিট করি। যদি ওকে আমার ভালো লাগে তবেই কথা আগাবে। আমার কথাই ফাইনাল কথা হবে। কিন্তু দেশে ফেরার পর পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। ওর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার সময় কিংবা প্রয়োজন কোনটাই ছিল না। ও নিজে থেকে এসেছিল। তখন আমি আমার পরিস্থিতি জানিয়েছি। বিয়ে আমার দ্বারা সম্ভব না তাও জানিয়েছি। কিন্তু ও বন্ধুদের হাত বাড়িয়ে দেয়। আমাকে সাহায্য করবে জানায়। জাস্ট এটুকুই।”
আদ্রিশের কেন জানি খুব খারাপ লাগছে। রুশাকে ঘৃণা করার পরেও ওর কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে।
“একজন ছেলে আর মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না।”
“সেটা তোমার মতো নিচ মনের মানুষের চিন্তাভাবনা।”
“আমি তো নিচই। উঁচু মানের হচ্ছে রকি। বাচ্চাটা হয়ে যাক তারপর তুই চলে যাস ওই রকির সাথে।”
“আমি চলে যাব তবে একা না বাচ্চা নিয়েই যাব। একটা খুনিকে আমার বাচ্চার দায়িত্ব দেব না। আমি প্রতারক হতে পারি কিন্তু খুনি নয়। নিজেকে বাঁচাতে, পরিস্থিতির কারণে কাউকে আঘাত করেছি, গুরুতর আঘাত করেছি কিন্তু মারি নি। তোমার মতো পশু নই আমি। শখের বশে, আনন্দ পেতে কাউকে মারি না।”
“হ্যা আমি খুনি। আমি খুন করি। বেশ করেছি। যারা আমার ক্ষতি করবে, আমার জিনিসে লোভ করবে, আমাকে ধোঁকা দিবে আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েই যাব। আর ওদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড।”
রুশা ছলছল নয়নে প্রশ্ন করল,
“আমার ভাই কি করেছিল?”
আদ্রিশ এক প্রকার বিরক্তি নিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“আর কতবার বলব আমি ওদের মারিনি। আমি সাজ্জাদ চৌধুরীকে কেন মারব? উনি আমার বিজনেস পার্টনার ছিল। খুবই ভালো মনের মানুষ ছিল। সততার সঙ্গে ব্যবসায় করেছেন। উনার সাথে আমার কি নিয়ে ঝামেলা হবে? কার এক্সিডেন্টে মারা গেছেন। আমি কেন উনাকে কেউ মারতে পারে না। আমি এত মানুষ মেরেছি কখনো অস্বীকার করিনি তবে কেন উনার ব্যাপার নিয়ে মিথ্যা বলব? আমার কিসের ভয়? আমি তোমাকে, তোমার ভাই, তোমার প্রেমিক কাউকে ভয় পাই না। আর এমনও নয় তোমার সাথে আমার সুসম্পর্ক যে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়ে মিথ্যা বলব। তাহলে কেন? এতকিছুর পরেও যদি মনে হয় আমি মেরেছি তবে তাই ভেবে খুশি থাকো। বিরক্তিকর!”
আদ্রিশ ওর মোবাইল এক প্রকার ছুড়ে টেবিলের উপরে রেখে চলে গেল।
রুশা কিছুই বুঝতে পারছে না। আদ্রিশ কি সত্যি বলছে না মিথ্যা। আদ্রিশ পুরো ব্যবসায় নিজের আয়ত্তে নেওয়ার জন্য ওর ভাইকে সরিয়েছে। সেদিন তো একজনকে মাত্র পঞ্চাশ লক্ষ টাকার জন্য মেরে ফেলতে বলল। মাত্র পঞ্চাশ লক্ষ টাকার জন্য যে এত নিচে নামতে পারে সে সব পারে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ের একচ্ছত্র আধিপত্যের জন্য সব পারে৷
অপরদিকে রকি পাগল হয়ে যাচ্ছে রুশা আদ্রিশের কাছে আছে জানার পর। ওর সহ্য হচ্ছে না। অপরদিকে রুশা চিন্তায় পড়ে গেছে বাচ্চাকে নিয়ে। কোনো ভাবে যদি লন্ডন চলে যেতে পারত তাহলে চিন্তা থাকত না। আদ্রিশের আচরণ বলছে বাচ্চা জন্মের পর আদ্রিশ বাচ্চা রেখে ওকে মেরেই দেবে। ওর প্রতি আদ্রিশের অনেক ক্ষোভ, রাগ যা আদ্রিশ বাচ্চার কথা ভেবে দমিয়ে রেখেছে।এসব চিন্তাভাবনার মধ্যেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। রকি অনেকবার কল করেছে রুশাকে। কিন্তু রুশা রিসিভ করে নি।
.
রুশার নাম্বারে একদিন একটা কল আসে। কল কেটে ও চিন্তিত হয়ে বসে থাকে। তারপর আদ্রিশকে কল করে। আদ্রিশ কল রিসিভ করছে না। রুশা অস্থিরতা নিয়ে বারবার ওর নাম্বারে কল করে। কিন্তু ও কল রিসিভ করছে না। রুশা তারপর সেজানের নাম্বারে কল করে। সেজান একবার কল বাজতেই কল রিসিভ করে।
“সেজান ভাই! আদ্রিশ কোথায়?”
“ভাই তো বাড়িতে যাচ্ছেন।”
”একা?”
“হ্যা। কেন? কোনো সমস্যা?”
“হ্যা, শান ভাইয়া আমার উপর রেগে আছেন। এখন তিনিই প্রতিশোধ নিতে চাইছেন। আদ্রিশকে বাঁচান প্লিজ। ওর পিছু নিয়েছে ওরা।”
সেজানের বুক ধুক করে উঠল। তাড়াতাড়ি কল কেটে দিল। রুশা হ্যালো হ্যালো করছে। কি করবে বুঝতে না পেরে রুশা পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। সাথে রিভলবার নিয়ে গেল। প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। রুশা একটা ট্যাক্সি নিয়ে অফিসের রাস্তার দিকে যায়। কারণ ও জানে কোথায় এটাক করার পরিকল্পনা করেছে। রুশা সে জায়গায় পৌছে গেলেও কিছুই পেল না। দিনের বেলায় যেমন এই জায়গাটা শান্ত থাকে ঠিক তেমনই শান্ত।
আদ্রিশ অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে একটা গাড়ি ওদের ফলো করছে। আদ্রিশ গাড়ি থামাতে বলল ড্রাইভারকে। গাড়ি থামিয়ে চুপ করে রইল। ওই গাড়িটাও থেমে গেল। আদ্রিশের বুঝতে বাকি নেই ওরা আসলেই ওকে ফলো করছে। কিছু একটা হতে চলেছে। আদ্রিশ রিভলবার প্রস্তুত করে নিল। সাথে দুজন বডিগার্ড। ওরাও প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে। গাড়িটা অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিশ বুঝতে পারছে না ওরা কি চাইছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করতেই সেজানের নাম্বার আর রুশার নাম্বার থেকে অনেকগুলো মিসড কল দেখতে পেল। দুইজনের এক সাথে কিসের ইমারজেন্সি? সেজানের সাথে কথা বলেই বের হয়েছে আর রুশা ওকে কল কেন দেবে? ওর সাথে রুশার কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে না। আদ্রিশ প্রথমে সেজানকে কল ব্যাক করল।
সেজান কল রিসিভ করে অস্থিরতা নিয়ে বলল,
“ভাই, আপনি কোথায়? কল রিসিভ করছিলেন না কেন? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।”
“সেজান, আর ইউ ওকে?”
“ভাবি কল করেছিল। আপনি উনার কল রিসিভ করছিলেন না তাই আমাকে কল করেছিল।”
আদ্রিশের পিলে চমকে উঠে। ওর মনে হচ্ছে রুশার কোনো বিপদ হয়েছে। বিচলিত কন্ঠে বলল,
“রুশা! ওর কিছু হয়েছে?”
“ভাবি ঠিক আছেন। উনি বললেন যে শান আজ কিছু করতে চলেছে।”
আদ্রিশ পেছনে থেমে থাকা গাড়িটা দেখে বলল,
“হয়তো! কিন্তু ও বলে দিলো কেন?”
“হয়তো সাবধান করতে।”
“সেজান, এটাও রুশার একটা চাল। কিন্তু কি চাল চালছে বুঝতে পারছি না।”
সেজান বুঝতে পারছে না রুশা সত্যিই ওদের হেল্প করছে না আদ্রিশের কথামতো এটা কোনো চাল।
“ভাই আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। আমি আসছি। আমাদের লোকদের খবর দিচ্ছি।”
“আমি ওদের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু ওরা গাড়িতে বসে আছে। একবার আসুক পিষে মেরে ফেলব। অনেক নাটক করছে ভাইবোন মিলে। এক বিন্দু ছাড় দেব না এইবার।”
“ভাই, মাথা ঠান্ডা রাখুন।”
আদ্রিশের শরীর রাগে রি রি করছে। গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে গেল। রুশার ভাইয়ের লোক আর রুশা জানিয়েছে শুনে ওর রাগটা বেড়ে গেল। গাড়ি থেকে বের হয়ে ওদের গাড়ির দিকে যাচ্ছে। ওর গার্ড দু’জন ওর পেছনে। সেজান গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিল। আদ্রিশ রাগের মাথায় ভুল স্টেপ নিবে সেটা বুঝতে পারছে।
আদ্রিশ ওদের গাড়ির সামনে যেতেই হুড়মুড়িয়ে কতগুলো লোক বের হয়ে গেল। আদ্রিশের গার্ডদের উপর প্রথম হামলা হলো। আদ্রিশ রিভলবার বের করে হাতে পায়ে গুলি করেছে তিনজনের। ওরা এখন আদ্রিশের দিকে গুলি ছুড়ছে। আদ্রিশ ওদের আহত করার জন্য হাতে পায়ে গুলি করছে। ওর রিভলবারের ছয়টা বুলেট শেষ। সেজানের গাড়ি চলে এসেছে। আদ্রিশের দিকে একটা গুলি আসতেই আদ্রিশ সরে গেল। তারপর লোকটা আবার গুলি ছুড়বে সে সময় অন্যদিক থেকে একটা গুলি এসে সেই লোকটার হাতে লাগল। হাত থেকে রিভলবার পড়ে গেল। আদ্রিশ পেছনে ঘুরল, আশেপাশে দেখল। কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। সেজান এসে রিভলবার ছুড়ে দিল আদ্রিশকে। আদ্রিশ একে একে ছয়টা বুলেট ব্যবহার করে ফেলল ছয়জনের উপর। ময়দান পুরো ফাঁকা। আদ্রিশ অন্ধকারেই এদিক সেদিক কাউকে খুঁজছে। কিন্তু কাউকে পেল না। কেউ একজন আড়ালে ছিল কিন্তু সে কে?
রুশা বসার ঘরে বসে আছে। আদ্রিশ তখন বাড়িতে ঢুকল। ওর হাতে কোর্ট। চুল এলোমেলো। কলার থেকে টাই খুলতে খুলতে আসছে। গভীর ভাবে কিছু ভাবছে। রুশা উঠে দাঁড়াল। আদ্রিশ রুশাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল।
কয়েক পলক ফেলে অন্তত শীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“কে ছিল সে?”
রুশা না বুঝতে পেরে বলল,
“কে?”
“যে আমাকে বাঁচাল।”
আদ্রিশ রুশার চোখের দিকে চেয়ে আছে। এই কয়েক দিনে এই দৃষ্টিটা চিনে নিয়েছে।
রুশার দিকে এগিয়ে গেলে রুশা কয়েক পা পিছিয়ে বলল,
“আমি জানি না কে ছিল।”
আদ্রিশ আগাতে আগাতে রুশার হাত চেপে ধরে বলল,
“আমি জানি। আমি জানি সে কে ছিল।”
রুশা ঘাবড়ে যাওয়া মুখে আদ্রিশের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
আদ্রিশ চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“তুমি ছিলে। সে তুমি ছিলে। বের হয়েছিলে কেন? তোমাকে এতবার বলার পরেও কেন বের হয়েছো? আমাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রবল ইচ্ছের কারণটা আমি জানতে চাই। নাকি আবার কোনো নাটক করছো? একবার বোকা বানিয়েছো তাই বলে বারবার নয়। এর পরে যদি আবারও বের হওয়ার চেষ্টা করো ভালো হবে না। মাইন্ড ইট।”
“আমি বের হতে চাইলে আমাকে কেউ আঁটকে রাখতে পারবে না। কারো শক্তি নেই আমাকে আঁটকে রাখার।”
আদ্রিশও জানে ও চাইলে কেউ ওকে আঁটকে রাখতে পারবে না।
“রুশা, তোমার এসব কাজের জন্য যদি বাচ্চার কোনো ক্ষতি..
” বাচ্চার ক্ষতি হবে এমন কিছু আমি ভুলেও করব না। বাচ্চাটা যাতে অনাথ না হয় তাই এই চেষ্টা।”
রুশা আদ্রিশের দিকে একবার চেয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
কিছুদিন পর। রুশা বাগানে হাঁটছিল। ওর পেট আগে থেকে বেড়েছে। শরীরটা ভারী হয়ে গেছে। শুয়ে বসে থাকতে পারে না। হাঁটতে হাঁটতে বিকেলের পরিবেশ উপভোগ করছে। হঠাৎ দেয়াল টপকে রকি বাড়িতে ঢুকে যায়। ওকে দেখে রুশার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এদিক ওদিক চেয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“তুমি এখানে এসেছো কেন? আদ্রিশ জানলে আমার সাথে সাথে তুমিও বিপদে পড়বে। চলে যাও।”
“তুমি আমাকে এভাবে আসতে বাধ্য করেছো। আমার কল রিসিভ করছিলে না তাই চলে এলাম জবাব নিতে।”
“কিসের জবাব?”
“আমাকে ব্যবহার কেন করলে? তুমি না বলেছিলে আদ্রিশকে ভালোবাসো না? মিথ্যে কেন বলেছিলে?”
রুশা ওর প্রশ্নে থমকে গেল। বিমূঢ় কন্ঠে বলল,
“আমি ওকে ভালোবাসি না।”
রকি ওর হাত ধরে বলল,
“চলো আমার সঙ্গে। তুমি এখানে অযথা কেন থাকবে?”
রুশা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“চলে যাও। তোমার সাথে আমি যাব না। এখানেই থাকব আমি।”
“কেন? কেন থাকবে তুমি এখানে?”
“আমাদের বাচ্চার জন্য।”
“বাচ্চার জন্য তো? আমি নেব ওর দায়িত্ব। ওর বাবা হব। তুমি শুরু আমার হয়ে যাও। তোমার বাচ্চার আমি কোনো অযত্ন করব না। নিজের সন্তানের পরিচয়ে লালন-পালন করব।”
রুশা কটাক্ষ করে বলল,
“ওর বাবা এখনো বেঁচে আছে ওর দায়িত্ব নেবার। রকি আমার আশা ছেড়ে দেও। আমাকে আমার মতো থাকতে দেও। তুমি তোমার মতো জীবন গুছিয়ে নেও।”
রকি চেঁচিয়ে বলল,
“বিয়ে হয়েছে বলে? মানি না আমি এসব…। বিয়ে হয়েছে তো কী হয়েছে? তুমি শুধু আমার। তুমি এখন আমার সাথে এখান থেকে চলে যাবে। চলো।”
রকি ওর হাত ধরতে গিয়ে থেমে গেল। ওর দৃষ্টি রুশার পেছনের দিকে। রুশা রকির দিকে চেয়ে ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছনে ঘুরে চমকে গেল। আদ্রিশ হিংস্র দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখের দিকে চেয়ে রুশা ঝলসে যাচ্ছে।
চলবে……
#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
২৬.
আদ্রিশ রুশার সামনে এসে রকিকে একবার দেখে প্রশ্ন করল,
“কি করছো তোমরা এখানে?”
রুশা আদ্রিশকে এত সহজ আর শান্তভাবে কথা বলতে দেখে অবাক হলো। আদ্রিশ দূর থেকে ওদের কথোপকথন কিছুই শুনেনি।
রকি রুশার উত্তর দেওয়ার আগেই উত্তর দিল,
“আমি রুশাকে নিতে এসেছি।”
আদ্রিশ রুশার দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“তোমার প্রেমিক তোমাকে নিতে এসেছে। আমার অগোচরে আমার বাড়িতে এতকিছু হচ্ছে। বাহ! আমার প্রতারক স্ত্রীর প্রেমিক আসে, তাদের প্রেমালাপ চলে। পালিয়ে যাওয়ার প্লানও হয় আমার বাড়িতে। আর আমি কিছুই টের পাই না।”
রুশা ওর কথা শুনে উত্তর দিল,
“আদ্রিশ তুমি যা ভাবছো ঠিক তা নয়। রকি এর আগে কখনও এ বাড়িতে আসেনি। আজই প্রথম বার এসেছে। আর ও আমার প্রেমিক নয়।”
“ও তোমার প্রেমিক না কি সব জানি। দুশ্চরিত্রা মেয়ে, আমার বাড়িতে প্রেমিক নিয়ে এসেছিস৷ কি ভেবেছিস ওর সাথে পালিয়ে যাবি? একদম মেরে দেব দুটোকে। আমার বাচ্চা না দিয়ে এক পা নড়তে পারবি না।”
রুশা দাঁত খিচিয়ে বলল,
“আদ্রিশ! একদম আজেবাজে কথা বলবে না। মুখে যা আসছে তাই বলছো। আমি কিন্তু সহ্য করব না।”
“কি করবে তুমি হ্যা? ওর সাথে পালিয়ে যাবে?”
আদ্রিশ ওর এক গার্ডকে ডাকল। রুশা ভয় পেয়ে রকিকে বলল,
“রকি, প্লিজ চলে যাও। তাড়াতাড়ি চলে যাও এখান থেকে।”
রকি চলে যেতে যেতে বলল,
“শীঘ্রই তোমাকে মুক্ত করে নিয়ে যাব।”
রকি দেয়াল টপকে বের হয়ে গেল। আদ্রিশের ইচ্ছে নেই রকির সাথে লড়াই করার। ওকে ইচ্ছে করেই ছেড়ে দিয়েছে। আদ্রিশ রুশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে ওর হাত চেপে ধরে ঘরে নিয়ে গেল।
ঘরে গিয়ে বলল,
“তোমাদের এই নোংরামি কত দিন চলবে? আমার বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসেছো। আমি জাস্ট বিশ্বাস করতে পারছি না। কি করে যে তোমাকে সহ্য করছি।”
রুশা ওর কথায় জবাব দিচ্ছে না। দেওয়ার ইচ্ছে নেই। আদ্রিশ নিজের কথা বলেই যাবে। ওর কাছে নিজেকে সৎ প্রমাণ করার দায় পড়েনি। যা খুশি ভাবুক।
রুশার কাছে উত্তর না পেয়ে আদ্রিশের আরো রাগ হচ্ছে। রুশার নীরবতা ওর রাগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
“কথা বলছো না কেন? ডেম ইট!”
“কি বলব? কি শুনতে চাইছো? রকির সাথে আমার সম্পর্ক আছে? তুমি তো বলেই যাচ্ছো রকির সাথে আমার সম্পর্ক আছে তাহলে কেন জিজ্ঞেস করছো? আর কি জানতে চাও? হ্যাঁ, রকির সাথে আমার সম্পর্ক আছে। খুশি?”
আদ্রিশ চাইছিল রুশা বলুক ওর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু রুশা স্বীকার করে নিচ্ছে।
আদ্রিশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“বাচ্চাটা আমার তো?”
রুশা ওর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। আদ্রিশ একটা একটা কথা কি করে বলল। রুশা ওর কথা শুনে বসে পড়ল। কোনো জবাব দিচ্ছে না। ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মুখ চেপে ধরে রেখেছে। আদ্রিশ রুশাকে ভেঙে পড়তে দেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
রকি ঘর জুড়ে পাইচারি করছে আর ভাবছে রুশাকে নিজের লাইফে কি করে ব্যাক করা যায়। আদ্রিশ রুশাকে কিছুতেই ছাড়বে না। একবার আদ্রিশ যদি রুশাকে ছেড়ে দেয় তবেই রুশা ওর লাইফে ব্যাক করবে। বাধ্য হবে। কিন্তু আদ্রিশ কেন ছাড়বে ওকে এটা ভেবেই মাথা খেয়ে ফেলছে। কিছুক্ষণ ভেবে মুচকি হাসল। আদ্রিশ ওকে রুশার প্রেমিক ভাবে আর এই ভাবনাকে পুঁজি করেই রুশার লাইফে ইন করবে।
কিছুদিন পরের কথা। আদ্রিশ আর রুশার সম্পর্ক আরো খারাপ হচ্ছে। কথা বললেই ঝগড়া হয়৷ একে অপরকে নানান বিষয়ের জন্য দোষারোপ করে। আদ্রিশ অফিসে বসে কাজ করছিল। হঠাৎ একটা খাম দিয়ে যায় পিয়ন। আদ্রিশের নামে খাম এসেছে। আদ্রিশ খাম খুলে একটা কাগজ পেল। দেখে মনে হচ্ছে কোনো টেস্টের রিপোর্ট। আদ্রিশ রিপোর্ট পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। ওর চোখ মুখ বিষাদে ঢেকে গেল। ওর পুরো পৃথিবী দুলছে।
অনুভূতি শূন্য হয়ে আছে। ভেতরে ভাঙচুর হচ্ছে। আদ্রিশ দুই হাতে মুখ চেপে ধরল। ছলছলে চোখগুলো লাল হয়ে গেছে। কাগজটা হাতের মুঠোয় দুমড়ে মুচড়ে ফেলল।
রুশা বারান্দায় ব্যায়াম করছিল। কানে হেডফোন। আদ্রিশ ঘরে এসে ওকে হেঁচকা টানে ঘরে নিয়ে এল। রুশা কান থেকে হেডফোন খুলে ওর দিকে ঘাবড়ে গিয়ে চেয়ে রইল। মনে হচ্ছে আদ্রিশ কোনো কারণে বিধ্বস্ত।
“কেন এমন করলে রুশা? এর চেয়ে আমাকে মেরে ফেলতে। রোজ রোজ কেন মারছো আমাকে? এক বারে মেরে ফেলো প্লিজ। আমি আর বাঁচতে পারছি না।”
রুশা বুঝতে না পেরে বলল,
“আমি কিছু বুঝতে পারছি না। কি করেছি আমি?”
আদ্রিশ চোয়াল শক্ত করে ওর ডান বাহু চেপে ধরে বলল,
“বুঝতে পারছো না? অন্যের বাচ্চাকে আমার বাচ্চা বলছো যাতে আমার কাছে থেকে আমাকে আরো কষ্ট দিতে পারো, মন মতো প্রতিশোধ নিতে পারো।”
“অন্যের বাচ্চা!”
“আর নাটক করো না। আমি জেনে গেছি এই বাচ্চা তোমার আর রকির। এইজন্য রকি আসতো তোমার কাছে তাই না? তোমাকে নিয়ে যেতে চাইতো।”
রুশা ওর কথা শুনে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
“কি বলছো আদ্রিশ? কে বলেছে তোমাকে এসব?”
“আমি নিজের চোখে সব পেপার দেখেছি। তোমার এই বাচ্চা রকির। সব প্রমাণ দেকগে এসেছি। নিজের চোখ দুটো অন্ধ করে দিতে ইচ্ছে করছে। কেন আমাকে এভাবে মারছো? খুব মজা পাচ্ছো তুমি? শান্তি হয়েছে তোমার? বাচ্চাটা শেষ ভরসা ছিল আমার তাও নাকি আমার না।”
আদ্রিশ বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল।
“তোমাকে এসব যে বলেছে মিথ্যা বলেছে। কেউ ষড়যন্ত্র করছে। তোমার সাথে আমার ঘৃণার সম্পর্ক। আমরা একে অপরের শত্রু কিন্তু এটা সত্যি যে এই বাচ্চা তোমার আর আমার। বিশ্বাস করো আদ্রিশ। আমি মিথ্যা বলছি না। রকি আমার শুধুমাত্র ফ্রেন্ড। ওর সাথে আমার….
“শাট আপ! শাট আপ এন্ড গেট আউট।”
আদ্রিশ উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল। হঠাৎ আদ্রিশকে এভাবে রিয়েক্ট করতে দেখে রুশা কেঁপে উঠে।
“গেট আউট। নয়তো তোমাকে তোমার বাচ্চাসহ শেষ করে দেব। চলে যাও। আমি নিষ্পাপ এক বাচ্চাকে তোমার পাপের শাস্তি দিতে চাই না।”
“ঠিক আছে চলে যাব কিন্তু এই বাচ্চা তোমার আদ্রিশ। এটা অস্বীকার করো না।”
“না, এই বাচ্চা তোমার আর রকির। ওর সাথে আমার নাম জড়াবে না।”
“মিথ্যা অপবাদ নিয়ে আমি যাব না।”
রুশা শক্ত কন্ঠে বলল।
আদ্রিশ ওর দিকে লাল চোখে তাকাল।
“ভালোবেসে মাথায় তুলে ফেলেছিলাম তাই সহজেই আঘাত দিতে পেরেছো। সে সুযোগ আর পাবে না তুমি। এতদিন শুধু নিজের বাচ্চার জন্য তোমার ক্ষতি করতে পারিনি। এখন কিন্তু হাত কাপবে না রুশা।”
“শুধু বাচ্চার জন্য?”
রুশা আদ্রিশের দিকে চেয়ে আছে আকুলতা নিয়ে। আদ্রিশ রুশার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
“এতকিছুর পরেও কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আমি তোমাকে ঘৃণা করি। ঘৃণা হচ্ছে তোমাকে দেখে। চোখের সামনে দেখতে পারছি না। মনে হচ্ছে চোখগুলো অপবিত্র হয়ে যাচ্ছে।”
আদ্রিশ ওকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। রুশা আকুতি মিনতি করছে কিন্তু আদ্রিশ শুনছে না।
আদ্রিশ ওকে গেটের বাইরে রেখে বলল,
“আর কোনো দিন আমার চোখের সামনে আসবে না।”
আদ্রিশ গেট বন্ধ করে দিল। রুশা কাঁদতে কাঁদতে গেট ধাক্কাচ্ছে। বারবার বলছে আমাকে ভুল বুঝছো। কিন্তু ওর কথা শোনার জন্য কেউ নেই। আদ্রিশ নিজের ঘরে গিয়ে সব ভেঙেচুরে ফেলছে। পাগলের মতো আচরণ করছে। রুশার বড় পোর্টেটটা ভেঙে ফেলল হকি স্টিক দিয়ে। আদ্রিশ মেঝেতে বসে পড়ল। ধ্বংসস্তুপের মাঝে বসে কাঁদছে। বাচ্চাদের মতো কাঁদছে আর বলছে তোমাকে মাফ করে দিতাম রুশা। কিন্তু তুমি আমার পুরোটাই কেড়ে নিয়েছো। পারব না ক্ষমা করতে তোমাকে।
রুশা যাওয়ার জায়গা হিসেবে আশ্রমকেই ঠিক মনে করল। রকি কিছু একটা করেছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। কিন্তু এটা আদ্রিশের কাছে কি করে প্রমাণ করবে। যে করেই হোক প্রমাণ ওকে করতেই হবে। রুশা আপাতত আশ্রমে যাবে।
আশ্রমে যাওয়ার পর রকি অনেকবার রুশাকে নেওয়ার জন্য এসেছে প্রতিবারই ওর ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনে ফেরত যেতে হয়েছে। কিন্তু হাল ছাড়েনি। রুশাকে অনেক ভাবে বুঝিয়েছে। বাচ্চার দায়িত্ব নিতে চেয়েছে কিন্তু লাভ হয়নি। রুশা টুকটাক আশ্রমের কাজ করে। কথার সাথে বসে আশ্রমের কাজ করছে তখন রকি এসে হাজির। রকিকে দেখে রুশা ক্ষেপে যায়।
রকি কোনো কিছু না বলে রুশার মুখে রুমাল চেপে ধরে বলল,
“সরি!”
রকি বেহুশ রুশাকে কথার চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ও কি করবে বুঝতে পারছে না। কথা বাঁধা দিতে যায় রকি ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। কথা জানে ওদের সাথে পেরে উঠবে না তার চেয়ে সেজানকে কল করা বেটার।
রুশার জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করল। পুরো রুমে কেউ নেই। হঠাৎ রকি এসে হাসি মুখে বলল,
“বাচ্চা নিয়ে সমস্যা তো? ওকেই সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”
রুশা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, “মানে?”
“ওকে মেরে ফেলব৷ তারপর তুমি আমি এক সাথে। ছোট্ট একটা অপারেশন হবে।”
“পাগল হয়েছো তুমি? মাথা ঠিক আছে? আমি তোমাকে কেটে কুটিকুটি করব আমার বাচ্চার কোনো ক্ষতি হলে। আর আমি বাঁচব? এই মুহুর্তে অপারেশন করলে আমিও মরে যাব।”
“তোমার কিছু হবে না নিশ্চিত থাকো।”
রকি চলে গেল রুম থেকে। রুশার মাথা কাজ করছে না। কি করবে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। রকি যে পাগল হয়ে গেছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু নিজের সন্তানকে বাঁচাতে হবে। ডাক্তার রকিকে বারবার বলছে ওরা এমন কাজ করতে পারবে না। একটা ছয়মাসের বাচ্চাকে মারতে পারবে না। এতে মায়ের ক্ষতিও হবে। রকি ওদের কথা শুনছে না উল্টো ডাক্তারকে থ্রেট করছে।
রুশা পকেট থেকে মোবাইল বের করে আদ্রিশের নাম্বারে অনেকবার কল করল কিন্তু কল রিসিভ করছে না উল্টো মোবাইল অফ করে দিল। রুশা তারপর সেজানের নাম্বারে কল করল। সেজান কল রিসিভ করতেই রুশা বলল,
“আদ্রিশ কোথায়?”
“ভাই একটা মিটিংয়ে।”
“সেজান ভাই, প্লিজ হেল্প মি। রকি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে। ওকে বাঁচাও প্লিজ।”
“নিজের বাচ্চা নিজে কেন মারবে?”
“সেজান ভাই, আদ্রিশের মতো কথা বলবেন না প্লিজ। এসব রকির কারসাজি। এই বাচ্চা ওর হলে আমাকে জোর করে হাসপাতালে নিয়ে আসতো না। বাচ্চাকে ওর পথের বাঁধা মনে করত না। প্লিজ আমার বাচ্চাটাকে বাঁচান৷”
রুশা হাসপাতালের ঠিকানা দিল।
“আদ্রিশ ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া আমি কিছু করতে পারব না। সরি।”
সেজান কল কেটে দিল। রুশা অসহায় মুখ করে বসে আছে। জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকাল। অনেক উঁচু তলায় আছে ও। এত ভারী শরীর নিয়ে নামা রিক্স। ততক্ষণে দুজন নার্স এসে ওকে চেপে ধরল। রুশা ধস্তাধস্তি শুরু করে দিয়েছে ওদের সাথে। এক পর্যায়ে হেরে গেল। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেল হাতে লাগা ইঞ্জেকশনের প্রভাবে।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here