#খেলাঘর_২
আবরার ধীর কন্ঠে বলল,
—আয়নার তো ঘুম থেকে উঠতে এত দেরি হওয়ার কথা না
আসগর সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল,
—সেটাই ভাবছি,আমার মেয়ে দুটো হয়েছে আমার চেয়েও জেদী কিছু বলা যায় না
—কই কায়নাতও কি জেদ করে নাকি
আসগর সাহেব একটু হেসে বললেন,
—তোমাকে প্রহরের কথা বলেছিলাম না?
—যে ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার
—হ্যা, ছেলেটা খুব ভালো পরিবারও বেশ গোছানো, আমি কায়নাতের কাছে গেলাম ছবিটা হাতে নিয়ে কেবল বললাম ছেলেটা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে, এত ভালো রেজাল্ট যে সাথে সাথেই চাকরি পেয়ে গেছে ওর নাম, ব্যাস আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,যে ছেলের নাম বলার আগে তুমি তার ক্যারিয়ার আমার কাছে মেলে ধরছ তার নাম তোমার মুখে আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না তুমি না করে দাও বিয়েটা আমি করছি না,অদ্ভুত! আমিও বলে দিয়েছি এর সাথেই বিয়ে হবে তোমার
—জোর করা টা কি ঠিক হবে?
—দেখো আবরার আমি জানি এই কথা তুমি কেন বলছো,তুমি একজন ডাক্তার তুমি তো জানোই সবাই যত যাই বলুক খুব বেশিদিন আমি এই পৃথিবীতে থাকতে পারব না,জলের মত টাকা খরচ করছি, ক্যামো নিচ্ছি কিন্তু আমি জানি আমি সুস্থ হবো না।তুমি কি কায়নাতের সাথে একটু কথা বলবে? তোমার কথা ও কিছুতেই ফেলবে না।
—আচ্ছা,আমি কথা বলব
ভার্সিটি তে যাবে বলে কায়নাত আজ সকাল সকাল নাশতার জন্যে নিচে নামতেই দেখলো আবরার ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে বাবার সাথে বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে,কায়নাত আবরার কে দেখে খুশি হয়ে গেলো,আবরারের কায়নাতের দিকে চোখ পড়তেই হেসে বলল,
—কেমন আছো?
কায়নাতের মনটাই ভালো হয়ে গেলো
—এতক্ষণ ছিলাম না এখন খুবই ভালো আছি দুলাভাই, আজকে আমার মিডটার্ম আছে বুঝলেন,এদিকে সেভাবে কিছুই পড়া হয়নি এই যে আপনাকে দেখলাম এবার শুরু বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলেই হাইয়েস্ট মার্ক পেয়ে যাবো,
কায়নাতের কথা শুনে তিনজনই হেসে ফেললো,ওর বাবা আসগর সাহেব একটু গুরুগম্ভীর হয়ে বলল,
—পড়ালেখায় তুমি যথেষ্টই ভালো কায়নাত এবার একটু সংসার করার চিন্তা করো,তোমার বিয়েটা হলে আমি একটু চিন্তা মুক্ত হই
—বিয়ে হয়ে গেলেই কি তুমি খুশি বাবা? সংসার হোক না হোক বিয়ে হয়ে গেলেই হলো?
আয়না নিচে নামতে নামতে ভাবলেশহীন মুখে বলতে লাগলো,আবরার ভালো করে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়নার মুখটা অনেক ফ্যাকাশে লাগছে,
—খেতে এসো, সবাই আমি অফিস যাবো আজ উঠতে এমনিই একটু দেরি হয়ে গেলো,
আসগর সাহেব আয়নার সামনে তেমন কোনো কথা বলতে পারেন না তিনি উঠে চলে গেলেন খাবার টেবিলে।আবরার উঠে দাড়তেই কায়নাত ফিসফিস করে বলল,
—আপনার সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে দুলাভাই
—প্রহরের কথা?
কায়নাত বিস্মিত হয়ে বলল,
—আপনি কি করে জানলেন!
—আমি ক্লিনিক থেকে ফিরছিলাম দেখি তুমি কারো একটা গাড়িতে উঠছো বাবার কাছে ছেলেটার বায়োডাটা দেখেছিলাম
—তার মানে আপনি সব জানেন
—কিছুটা….তোমার আপা ধমক দেওয়ার আগে চলে এসো
—হ্যা হ্যা চলুন!
সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে আয়না বসলো কিন্তু কিছুই খেতে পারলো না আবরার খেয়াল করে বলল,
—তুমি অসুস্থ তাই না?
আয়না আবরারের দিকে না তাকিয়েই বলল,
—সামান্য জ্বর তাছাড়া কিছু না
কায়নাত মুখের মধ্যে বাটার লাগানো পাউরুটির শেষটুকু পুরোটা পুরে দিয়ে বললো
—কাল রাতের বৃষ্টি যতক্ষণ পড়েছে আপা ততক্ষণ ভিজেছে জ্বর আসাটাই তো স্বাভাবিক।
আয়না খাওয়া শেষ করে উঠে দাড়ালো ব্যাগ কাধে নিয়ে,আসগর সাহেব করুণ চোখে আবরারের দিকে তাকালেন, আবারার খাওয়া শেষ করে বলল,
—অফিস যাচ্ছো আয়না?
—হ্যা তাছাড়া তো আমার যাওয়ার জায়গা থাকার কথা নয়
—চলো আমি ক্লিনিক যাচ্ছি তোমায় নামিয়ে দেবো
আয়না কথা বাড়ালো না অযথা কথার পিঠে কথা বাড়াতে ওর এখনবার ভালো লাগে না, আবরার পানি গ্লাস নামিয়ে রেখে বলল,
—কায়নাতের ভার্সিটি কখন?
—ঘন্টাখানেক পর
—তাহলে আমি আজ আসি ফোনে তোমার সাথে কথা হবে,
—ঠিকাছে দুলাভাই,
আবারার আর আয়না দুজনেই চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে, আয়না নিরবতা ভেঙে বলল,
—আমি কিন্তু আপনাকে বলেছিলাম ডিভোর্স নিয়ে নিতে কেন শুধু শুধু নিজের জীবন নষ্ট করছেন আমি বুঝতে পারছি না
আবরার স্বভাবসুলভ শান্ত কণ্ঠে বলল,
—এতো বুঝে শুনে হবে কি বলো? এই যে তুমি এতো কিছু বোঝো তুমি কি ভাবো তোমার জীবন টা খুব সুন্দর।
আয়না কড়া চোখে আবরারের দিকে তাকালো
—গাড়ি থামিয়ে দিন আমি নেমে যাবো
আবরার গাড়ি থামালো আয়না ভাবে নি যে বলার সাথেই আবরার গাড়ি থামিয়ে ফেলবে আয়নাকে নামতে না দেখে আবরার নিজে গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে দিয়ে বললো,
—তুমি যা বলেছো আমি সব সময় তাই করেছি ভবিষ্যতেও তুমি যা বলবে তাই হবে,শুধু বাবা বেচে থাকতে আমি ডিভোর্স টা তোমাকে দিতে পারব না আমি তার জন্যে খুবই দুঃখিত।
আয়না চুপ করে রইলো,আবরার একটা রিক্সা ঠিক করে দরজার কাছে এসে বলল,
—নেমে এসো,
আয়না পরাজিত সৈনিকের মতো গাড়ি থেকে নেমে রিক্সায় উঠলো,আয়না কখনো চায় না এই মানুষ টাকে কষ্ট দিতে আয়না জানে লোকটা খুব ভালো মানুষ তাও দিয়ে ফেলে, কেন আয়না তা নিজেও জানে না।
আয়না জানে আবরার ওকে নামিয়ে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু ও সরাসরি হসপিটাল যাবে না ও ঠিক রিক্সার পেছন পেছন আসবে যতক্ষণ আয়না অফিসে না ঢুকবে যতক্ষণ আয়নাকে দেখা যাবে ততক্ষণ সে তাকিয়ে থাকবে আর এ নজর চোরের মত লুকিয়ে দেখা না দায়িত্ব কর্তব্যের অধিকার নিয়ে তাকিয়ে থাকা নজর।
চলবে….
সামিয়া খান মায়া