#হালাল_প্রেমের_গল্পকথন – অন্তিম পর্ব
Tahrim Muntahana
তাহুর বিয়ের একমাস চলে গেল। সময় গুলো যেন খুব তাড়াতাড়িই চলে যাচ্ছে। বহমান সময়ের এক ফোঁটাও দায় নেই কারোর জন্য অপেক্ষা করার। আজ তাহুর অত্যন্ত খুশির একটা দিন। বরের সাথে ঘুরতে যাবে! খুশির দিন না হয়ে পারে! তার জীবনে যে ঘুরাঘুরির মুহূর্ত নেই বললেই চলে। বাইক এসে থামলো ছোট খাটো এক ক্যাফেতে। নেমে পড়লো তাহু। হুট করেই টের পেল তার বাম হাত টা কারোর হাতের ভাজে। নিমিষেই পুলকিত হলো মন। নিরিবিলি এক টেবিলে দেখে বসতেই তাযিন বললো,
~ ভালো লেগেছে ক্যাফেটা?
~ অন্নেক। তবে আমি লাইব্রেরী তে যাবো, বই কিনবো কিছু। আগের গুলো পড়া শেষ।
সায় জানিয়ে ওয়েটার কে ডাক দিলো তাযিন। অর্ধাঙ্গিনীর আবদার পূরণে অর্ডার দিয়ে বললো,
~ খাবে কি করে? ভেতরে গিয়ে বসি চলো।
মানলো না তাহু। চুপ করে বসে রইলো। খাবার আসতেই বললো,
~ এক হাতে গ্লাস ধরে থাকবেন, আরেকহাতে নেকাব, আর আমি খাবো!
~ ভালো কথার মানুষ না তুই! খা!
কথাটা বলেই তাহুর কথা মতো কাজ করলো তাহু। খুশি তে তাহুর চোখ চিকচিক করে উঠলো। বরের কাঁধে মাথা রেখে বললো,
~ এটা আপনার দায়িত্ব ছিল, রাগ করলেই কি!
তাযিন হাসলো। কিছুক্ষণ ক্যাফেতে থেকে বাড়ির পথ ধরতেই বেঁকে বসলো তাহু। তার এখন শাশুড়ি কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। যেতে লাগবে দশমিনিট! তাহুর জেদের কাছে হার মেনে নিজের বাড়ির পথ ধরলো তাযিন। বাড়িতে গিয়েই যে এই মেয়ে নাটক শুরু করবে সে জানে, তার মা ও হয়েছে আহ্লাদী! দূর থেকে শশুড় বাড়ির একাংশ দেখে আনন্দে আটখানা হয়ে তাহু বলে উঠলো,
~ কি শাশুড়িবাড়ি, বলেছিলাম ন? আবার আসবো! যদিও কথা রাখতে পারিনি, পনেরো দিন পর আসতে চেয়ে পারিনি। তবে আমার দোষ নেই, পরীক্ষার দোষ। আজ এলাম পনেরো দিন না থেকে যাবো না, তুমি চিন্তা করো না!
তাহু যে তাযিন কেই কথাগুলো শোনালো ঢের বুঝলো তাযিন। চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো। সেদিকে তাহু কোনো রকম পাত্তা না দিয়েই শাশুড়িকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মিসেস ফাহিমা’র মনে হচ্ছে খুশিতে বাড়ি মাথায় তুলতে। মেয়েটা এলে পুরো বাড়ি রমরমা থাকে, কি যে শান্তি লাগে। অতি প্রিয় দুই নারীর আনন্দ দেখে তাযিন ও আর কিছু বললো না, নিজের ঘরে চলে গেল। সময় টা তারও যে ভালো যাবে!
…
শশুড় বাড়িতে তিনটা দিন জেদ ধরে কাটালো তাহু। তাযিন কোনো ভাবেই তাকে বাবার বাড়ি পাঠাতে পারলো না। তার একমাত্র কারণ মিসেস ফাহিমা খানিক অসুস্থ। হাঁটুর ব্যাথা টা বেড়েছে। হাঁটতে কষ্ট হয়। তাহুর কথা হলো যিনি হাঁটতে পারেন না, সেখানে কাজ করবেন কি করে? যদিও কাজ ভালো তাহুও পারে না, তবে তার একটা দায়িত্ব আছে। অসুস্থ শাশুড়ি কে রেখে কি করে যাবে? রাতের রান্না চাপিয়েছিল সে, রান্না বলতে ভাত, ডিম ভাজি, আলু ভাজি, কয়েক পদের ভর্তা। তা ছাড়া আর কিছু রান্না তার আয়ত্বে নেই। হঠাৎ করেই তাযিন কে রান্না ঘরে দেখে তাহু বললো,
~ কিছু লাগবে আপনার?
~ কিছু লাগবে না, তোমাকে সাহায্য করতে এলাম।
~ একদম না, যান ঘরে যান। পুরুষ মানুষ, রান্নাঘরে কোনো কাজ নেই। আমার কোনো সাহায্য লাগবে না।
~ তোমার থেকে এমন কথা আশা করা যায় না সুনু। আমার আদেশ এটা, স্বামীর আদেশ অমান্য করবে তুমি?
তাহু তাযিনের মুখের দিকে অসহায় চোখে তাকালো। এই লোক কথা শুনছে না কেন? তাহু জানে স্বামীর আদেশ অমান্য করা পাপ। আল্লাহ যে স্বামী কে অনেক মর্যাদা দান করেছেন।
হযরত আবু হুরাইয়া (রাঃ) এর বর্ণনা; রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেন,
“আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অপর কোন ব্যক্তির সামনে সিজদা করার জন্য নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য!”
(তিরমিযী, রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ২৯১)
এরপরেও স্ত্রীলোকের আর কথা থাকতে পারে? স্বামী যদি ন্যায় সংগত কোনো কথা বলে স্ত্রীর তা শুনতে হবে, তবে ইসলামের বদন্যতায়! তাহু তবুও শুনলো না। বললো,
~ না গেল, আমি এই আদেশ ভালোর জন্য অমান্য করছি! আপনি রান্না ঘর থেকে বের হোন, আম্মার ঘরে আপনার চাচাতো দুই বোন বসে আছে, দেখলে কি বলবে?
~ কি বলবে? ওদের বলাই আমার কি এসে যায়? তুমি এখনো একেবারে শশুড়বাড়ি আসো নি যে এসব করতেই হবে। আগে মা অসুস্থ হলে বাবা আর আমিই রান্না করতাম। কথা বলিস না তো বেশী।
~ আপনি কাল সকালে সাহায্য করবেন, এখন নয়। ঘরে যান!
~ কি আশ্চর্য এমন করছো কেন? তুমি জানো না? স্ত্রীদের সাংসারিক কাজে সাহায্য করাও সুন্নত। প্রিয় নবীজি (সা.) স্ত্রীদের সাহায্য করতেন।
তাহু আর কিছু বলার খুঁজে পেল না। মুখ গম্ভীর করে কাজ করতে লাগলো।
মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৩৮০ থেকে জানা যায়, আয়েশা (রা.) বলেন,
“নবী (সা.) জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং তোমরা যেমন ঘরে কাজ করো তেমনি কাজ করতেন।”
কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে যেতেই উপস্থিত হলো তাযিনের বিবাহিত এক চাচাতো বোন। রান্না ঘরে তাযিন কে দেখে হাসলো সে, কিরকম হাসি বুঝতে পারলো না তাহু। মিষ্টি হেসে বললো,
~ আপু বসেন না? কিছু খাবেন?
মেয়েটি বসলো, তাযিন কে বললো,
~ তুই ছেলে মানুষ রান্নাঘরে কি করস?
~ কেন আপা, ছেলেদের রান্না ঘরে যেতে নেই কোন হাদীসে লেখা আছে?
মেয়েটি আর কিছু বলার সাহস পেল না, চুপ করে রইলো। তাযিন একবারো মেয়েটির দিকে চোখ তুলে তাকালো না, বরং নির্বাক চিত্তে নিজের কাজ করে গেল। তাহুও আর ঘাটালো না, ছোট বাটিতে কয়েকটা বিস্কুট মেয়েটির হাতে ধরিয়ে দিলো। মেয়েটি খেলো, পানি খেয়ে পাশের রুমে বসে থাকা তার ছোট বোন কে হাঁক ছেড়ে ডাকতেই তাহু অবাক হলো। কাছেই তো, ছোট করে ডাকলেই হতো; এত উচ্চস্বরে কথা বলছে কেন? তাযিন লক্ষ্য করলো বিষয়টা। মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~ আপা তোমাকে যে কতবার বলেছি এমন উচ্চস্বরে কথা বলবে না। কথা বলার সময় নিজের স্বর কে নত রাখতে হয়। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন,
‘সবচাইতে ঘৃণিত শব্দ হল গাধার শব্দ!’ (সূরা লুক্বমান ১৯)
…
তাহুর হুটহাট শশুড়বাড়িতে চলে আসা, না যাওয়ার জেদ করা, মারামারি, খুনসুটিময় ভালোবাসার কিছু মুহূর্ত, তাহুর বোকামো, নির্লজ্জ ভাব, তাযিনের শাসন, পড়াশোনা, পরীক্ষা, নির্লিপ্ততা সকল কিছুর সমন্বয়ে তাহু-তাযিনের জীবন থেকে কয়েকটা মাস কেটে গেল। ভালো মুহূর্ত গুলোর সময় সীমা কম হয়, তবে হয়তো এর দাগ থেকে যায় আমৃত্যু।
নিজের ঘরে শুয়ে ছিল তাহু। এমন সময় মিসেস বিথী ঘরে ঢুকলেন, হাতে তরমুজ নিয়ে। শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠলো তাহু। চটজলদি বলে উঠলো,
~ আম্মু খাবো, খাবো। তাড়াতাড়ি কাটো!
মিসেস বিথী তাহুর কথা শুনলো না, বরং তরমুজ টা ফ্রিজে রেখে বললেন,
~ এখন না, বিকেলে। ভাই-ভাবী আসবে, তাই তোমার আব্বু এগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে।
মন খারাপ করে বসে রইলো তাহু। একটু দিলে কি হতো? একটু পর আবার মিসেস বিথী কয়েক পদের ফল নিয়ে ঘরে ঢুকলেন, এবারও তাহু বললো,
~ আমি খাবো।
মিসেস বিথী তবুও শুনলেন না, ওদিকে তাহু খিদেয় মরে যাবে ভাব। তার জন্যই বলে দানার উপর রাগ করতে নেই। এখন সেই সাজা ভোগ করছে। মেয়ের মুখ দেখে হাসলেন মিসেস বিথী। বললেন,
~ কে জানি বলছিলো আজ খাবে না? লোভীর মতো খাবার দেখেই জিভে জল চলে আসলো, না?
তাহুর দৃষ্টি করুণ হয়ে আসলো। হঠাৎ করেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে বলে উঠলো,
~ তোমার মতো আম্মু সবার ঘরে হোক, আমি কেন একা সহ্য করবো? আব্বুকে আবার বিয়ে করাবো, নতুন আম্মু কে নিজের দলে টেনে তোমাকে এই বাড়ি থেকে বিতাড়িত করবো। তখন আমার দুই মা হবে!
ঠিক তখনি ঘরে উপস্থিত হলেন তারেক ইসলাম। মেয়ের কান্না দেখে ঘাবড়ে গেলেন তিনি। যদিও তিনি যানেন মেয়ে তার অযহতই একটু পর পর কাঁদে, সে হোক জেদে, রাগে বা ইচ্ছে করে। তবে তার মেয়ে দুটোর সামান্য মন খারাপ ই সে সহ্য করতে পারে না। তাহু মূলত খিদে সহ্য করতে না পেরেই কেঁদে দিয়েছে এবার, মুখ ফুটে বলবে তার একটা সম্মান আছে তো! মিসেস বিথী স্বামীর হাতে ভাতের প্লেট তুলে দিতেই তারেক ইসলাম বুঝে ফেললেন। কোনো রকম বাক্য বিনিময় না করেই তাহুর মুখের সামনে এক লোকমা ভাত তুলে ধরতেই কান্না থেমে গেল তাহুর। ঝটপট মুখে তুলে নিয়ে হেসে ফেললো। মিসেস বিথী বললেন,
~ ছোট বেলায় ও তুমি এমন ছিলে। কোথাও নিয়ে গেলে যা দেখতে তাই খেতে চাইতে, একবার তো একজন কে মিষ্টি খেতে দেখে কি বায়না, দাঁতে পোকা ছিল তবুও খাবে! শেষ মেষ রাগ করে মিষ্টির দোকানেই বসিয়ে দিয়েছিলাম তোমায়। আরেকবার তো রেকর্ড পরিবর্তন করে ফেলেছিলে,একটা বাচ্চা কে পানি খেতে দেখেও নাকি তোমার পানিও খেতে ইচ্ছে করছিল। কি রকম ছিলে একবার ভাবো।
তাহুর মাঝে লজ্জা খুঁজে পাওয়া গেলনা, বরং খানিক শব্দ করেই হেসে উঠলো সে। আর এই মেয়ের হাসি মানে থামানো কঠিন। উপস্থিত হলো তাহুর শশুড় বাড়ির লোকজন। তাহুর শাশুড়ি এসেই তাহুকে জড়িয়ে ধরলেন। তাহুও হাসি থামালো, তাযিন শুনলে এসব ক্ষেপাবে। কিন্তু মিসেস বিথী যেন আজ মেয়ের থেকে বদলা নিতেই তৎপর হয়েছেন, মেয়ে কেন বাবাকে বিয়ের করানোর কথা বলবে তাও আবার তার সামনে। আবার বললো,
~ ভাবি তোমার মনে আছে? ছোট বেলা এই মেয়ের স্বভাব কেমন ছিলো? এক দিন ভাড়াটিয়া এক মহিলা আমাকে ভয় দেখাবে বলে চিনির বয়াম হাতে ধরিয়ে দিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকতে বলেছিল। এই মেয়ে চিনির লোভে পড়ে একটা শব্দ ও করেনি, কত ডেকেছি, পরে যখন ওই ভাবিটা বললো, গিয়ে দেখি এক বমাম চিনি শেষ!
এক যুগে হেসে উঠলো সবাই, শুধু হাসতে পারলো না তাহু। বরের দিকে আড়চোখে তাকাতেই নজরে এলো তাযিনের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি। কড়া চোখে মায়ের দিকে তাকালো তাহু। মিসেস বিথীও কম যায় কেন হেসে আবার বললো,
~ এই মেয়ে দিয়ে সংসার না হলে আমাকে বলবা ভাবি। তাযু কে সংসারি এক মেয়ে দেখে আরেকটা বিয়ে করাবো। আমার দুই মেয়ের জায়গায় তিন মেয়ে হবে!
এবার যেন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে তাহু। মিসেস ফাহিমা নিজেও মজা করে বললো,
~ এটা কিন্তু ভালো হবে আপা!
~ হো ভালা তো হবেই। সাথে তোমার বর টাকেও আরেকটা বিয়ে করালে আরো ভালো হবে, বাবার দেখভালের জন্য কম বয়সী এক বউ আনবো। দুই শাশুড়ি, দুই বউ কত সুখের সংসার! এই কাজটা করলে একদম সেলিব্রিটি হয়ে যাবো, আসো আজকেই পাত্রী দেখতে যাবো।
হাসির শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা গেল না, তাহুও হাসলো। তাহুর তো মাঝে মাঝে মনে হয় এরকম দুটো পরিবার সে ডিজার্ব ই করে না। আবার ভাবে, অপাত্রে দান আল্লাহ করেন না, তার সাথে যায় বলেই এরকম দুটো পরিবারে তার জীবন জুড়ে আছে। এই সময় টাই বড় বোন কে খুব মিস করছে তাহু। সে কত ভালো ভালো খাবার খাচ্ছে, আব্বু আম্মুর আদর পাচ্ছে অথচ তামান্না? সেই হোস্টেলের অখাদ্য গুলো খেতে হচ্ছে। বোন কে ভিডিও কল দিবে বলে নিজের ঘরে চলে গেল তাহু। কিছুক্ষণ কথা বললো, ঝগড়াও হলো। এর মাঝে তাযিন কে ঘরে আসতে দেখে কেটে দিল কল। তাযিন হুট করেই জড়িয়ে ধরে বললো,
~ কি মাসনা করবো?
তাহু চমকালো? কোনো মেয়েই নিজের একান্ত ভালোবাসার মানুষের সাথে কাউকে দেখতে পারবে না। তাহু তো কথাটাই সহ্য করতে পারছে না। দুম করে এক কিল বসিয়ে দিয়ে বললো,
~ ছাড়েন আমাকে, চলেন আজই বিয়ে করাবো আপনাকে। খুব শখ না?
তাযিন হাসলো, আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তাহু আবার বললো,
~ আপনি যদি দুই বউ কেন চার বউয়ের হক ঠিকভাবে পালন করতে পারেন বিয়ে করেন। আল্লাহ’র হুকুম কে তো অমান্য করতে পারবো না, পাপ হবে আমার। যদি সব বউয়ের হক ঠিকভাবে পালন না করতে পারেন আপনাকে কিন্তু জবাবদিহিতা করতে হবে। তাই যা করবেন সাবধানে! আমার আপত্তি নেই!
শেষের কথাটা খুব করুণ শোনালো, মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দিবে। তাযিন বুঝতে পেরে আদুরে গলায় বললো,
~ আরে বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন? আমি তো এক বউয়ের হক ই ঠিকমতো পালন করতে পারি না, সেখানে চার বউ। বাবাহ! আমার দ্বারা হবে না। আর আমি আমার এই বউটাকেই খুব ভালোবাসি। আর কাউকে লাগবে না। আর আমি তোমার কে হয় বলোতো? আমাকে পাপ থেকে আটকানো তোমার অধিকারের মধ্যে পড়ে!
তাহুর মন ভালো হলো। তবে কিছু বললো না, হুট করে বললো,
~ তাযিন আমার কাজিন জামাই!
বলেই হাসলো, হাসলো তাযিন ও। সেও খানিক চুপ থেকে বললো,
~ সুনু আমার কাজিন বধূ! যাকে আমি আল্লাহ’র জন্য ভালোবাসি!
একপলক বরের মুখটা দেখে নিয়ে তাহুও বললো,
~ আমিও আপনাকে আল্লাহ’র জন্য ভালোবাসি!
….
পরিশিষ্টঃ গল্পটা এই পর্যন্ত হলেও কিন্তু তাহু-তাযিনের জীবন এই পর্যন্ত নয়। তাদের জীবন আল্লাহ’র রহমতে সময়ের পরিক্রমায় নতুন ছন্দে, নতুন আনন্দে কাটছে, কাটবে। হালাল সম্পর্ক গুলোতে আল্লাহ রহমত থাকে, যা দাম্পত্য জীবন কে করে দেয় শান্তিময়, সুখী! স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতার উপর প্রতিষ্ঠিত দাম্পত্য জীবন। মহান আল্লাহ তাআলা ভালোবাসা ও সুখ-শান্তিময় এ বন্ধনের কথা তুলে ধরেছেন কুরআনের অনেক আয়াতে। তুলে ধরেছেন হালাল সম্পর্ক গুলোর মধুরতা। নবীজী (সাঃ) এর জীবনী সকলের আদর্শ। যিনি ছিলেন উত্তম স্বামী, যাকে স্ত্রী গণ নিজের থেকে বেশী ভালোবাসতেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ। আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (সুরা রূম : আয়াত ২০-২১)
হাদীস দ্বারা স্পষ্ট যে মুসলিম উম্মাহ’র জন্য আল্লাহ তায়ালা সঙ্গিনীকে আগেই সৃষ্টি করেছেন, এবং হালাল করে দিয়েছেন। অথচ আমরা হালাল সম্পর্কের গুরুত্ব না বুঝে হারামের পেছনে ছুটে বেড়ায়, স্বামীর আমানত কে খেয়ানত করি, যিনা’য় লিপ্ত হয়ে আল্লাহ’র হুকুম কে অস্বীকার করি। হারাম সম্পর্ক আপনাকে সাময়িক আনন্দ দিলেও আপনার জীবনে এর প্রভাব পড়বে গভীর ভাবে। শান্তিময় সুখী জীবন কাটানোর ক্ষেত্রে হালালের বিকল্প নেই। যার এক দৃষ্টান্ত #হালাল_প্রেমের_গল্পকথনের বাস্তবিক দুই চরিত্র তাহু-তাযিন। যারা একে অপরকে আল্লাহ’র জন্য ভালোবেসেছে।
“স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ভালোবাসা যদি আল্লাহর জন্য হয় আবার ঘৃণা করাও যদি তার জন্য হয় তবে তারা আরশের ছায়ায় স্থান পাওয়া ৭ শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হবে।” সুতরাং দাম্পত্য জীবনে দ্বীনদারী, ইবাদত-বন্দেগি, সততা, নৈতিকতা, সচ্চরিত্র, সদাচার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভালোবাসা এবং ঘৃণা হবে আল্লাহর জন্য।
যারা হারামে লিপ্ত হয়ে যিনা’র শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করছে না তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন,
“কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের যিনা। অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার যিনা। অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের যিনা। ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা। খারাপ কথা শোনা কানের যিনা। আর যিনার কল্পণা করা ও আকাংখা করা মনের যিনা। অতঃপর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়।”
(সহীহ আল-বুখারী, মিশকাত:৮৬, সহীহ আল-মুসলিম:২৬৫৭, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন-নাসায়ী)
আল্লাহ তাআ’লা যিনাকে হারাম ঘোষণা করে বলেছেন, “তোমরা যিনার কাছেও যাবে না। কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং খারাপ কাজ।”
—[সুরা বনী-ইসরাঈল : ৩২]
ফিরে আসুন হারাম থেকে, হালালের স্বাদ অত্যন্ত মিষ্ট হয়। নিজেকে পরিবর্তন করুন আল্লাহ’র জন্য। হারাম কে ত্যাগ করে হালাল কে আকড়ে ধরুন আল্লাহ’র জন্য। সর্বোপরি হালাল জীবন সঙ্গী/সঙ্গীনী কে ভালোবাসুন আল্লাহ’র জন্য। পরিবর্তন হোক আল্লাহ’র জন্য!
সমাপ্ত