#আকাশেও_অল্প_নীল #পর্বঃ০৩ #আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

0
598

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ০৩
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৭,
“আরে বইন, তোর সালোয়ার উল্টো করে পড়া কেনো?”

শার্লিনদের বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে রাইমা। কলিং বেল বাজাতেই শার্লিন এসে দরজা খুলে রাইমাকে দেখেই প্রশ্নটা করে। রাইমা শার্লিন কে সরিয়ে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বলে,

“দুনিয়ার সব পা’গল আমার কপালেই জুটেছে তো এই কারণে। সালোয়ার ঠিক করে আসি। ওয়েট কর।”

রাইমা সোজা শার্লিনের রুমের ওয়াশরুমে গিয়ে সালোয়ার ঠিক করে নেয়। এরপর বাইরে আসে। শার্লিন নিজের বিছানায় বসে নখ খুঁটছে দাঁত দিয়ে। রাইমা শার্লিনের পাশে ধপ করে বসে পরে। শার্লিনকে বলে,

“এতো ইমার্জেন্সি ডাকাডাকি কি কারণে বলে ফেল। আমার কাজ আছে।”

“তোর বান্ধবী অক্কা পাবার অবস্থা আর তুই কাজের তাড়া দেখাস! তোরে কি করা উচিত?”

শার্লিন ক্ষিপ্ত হয়ে রাইমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে। রাইমা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে। সে কি করলো! যে শার্লিন তার উপর রে’গে যাচ্ছে। সে শার্লিনের হাত ধরে আদুরে গলায় বলে,

“শালু, আমার আলুর মতো কিউট বান্ধুপী! তোর কি হয়েছে ময়নাপাখি! এমন রাগ করতেছিস কি কারণে? আমায় না বললে বুঝবো কি করে কি হয়েছে?”

“একদম ফাজলামি করবিনা রাই! আমার কান্না পাচ্ছে। ”

“কি কারণে কান্না পাচ্ছে তা তো বলবি! ওয়ান মিনিট, তুই বাসায় একা তোর ব্রিটিশ ভাই, আংকেল আন্টি উনারা কোথায়?”

শার্লিনের কান্নার দমক বেড়েই চলেছে। এরমাঝে রাইমার কথা শুনে নাক টেনে বলে,

“আমার ভাই তোর কি করেছে? আমার ভাইকে ব্রিটিশ বলবিনা আগেও বলেছি তোকে?”

“কান্না থামা তোর! কি হয়েছে তা না বলে আসছে ভাইয়ের গুণগান করতে। থা’প্পড় খেতে না চাইলে চট জলদি বল। আমার সময় নেই, এক জায়গায় যাবো আমি।”

রাইমা শার্লিনকে ধমকে কথাটা বলে। তবুও শার্লিন কাঁন্না থামিয়ে বলার নাম নেই। রাইমা ফোনে টাইম দেখে। নয়টা পয়তাল্লিশ বেজে গেছে। এরমাঝে মাহাদের একটা মিসড কলের নোটিফিকেশনও দেখতে পায় রাইমা, সাথে একগাদা মেসেজ। ফোন ভাঙার পর রাতেই জিদ ধরে বাবার থেকে নতুন ফোন কিনে নিয়েছে। ফোন ছাড়া এক কদম চলাচল করাও কঠিন। শার্লিনকে পাশ কাটিয়ে রাইমা ফোন হাতে ব্যালকনিতে গিয়ে মাহাদের কাছে কল ব্যাক করে। মাহাদ কল রিসিভ করতেই রাইমা শুনতে পায়,

“তোমাদের বাসায় বসে আছি রাইমা। কোথায় তুমি?”

“ভাইয়া আমি শার্লিনদের বাসায়। একটু ১০মিনিট অপেক্ষা করুন। আমি আসছি।”

“ওকে, অপেক্ষা করছি। একটু জলদি এসো। নয়তো জানোই সে কি রকম রে’গে যায়।”

“আসতেছি ভাইয়া।”

রাইমা কথা শেষে কল কে’,টে আবারও পূর্বের স্থানে ফিরে আসে। শার্লিন চোখের পানি নাকের পানি মুছতে মুছতে একবক্স টিস্যু শেষ করে ঘরটাকে একদম ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছে। রাইমা সব দেখে শার্লিনে টেনে উঠা থেকে বসিয়ে দেয়। ওয়ার্ডড্রব থেকে নিজের ড্রেস কালারের সাথে ম্যাচ করে একটা ড্রেস বের করে। শার্লিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঝাজালো স্বরে বলে,

“৫মিনিটে রেডি হয়ে আমার সাথে বেরুবি চল। নিজে তো কিছু বলবিনা। আমাকেও ছাড়বিনা। কান্নাকাটি বাদ দিয়ে তার থেকে ভালো আমার সাথে ঘুরে আসবি।”

শার্লিন মাথা দুদিকে হেলিয়ে রাইমার কথায় সম্মতি দেয়। ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস পাল্টে চোখেমুখে পানি দিয়ে আসে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আচরে একটা হিজাব বের করে নিজে। হিজাবটা বেধে একপাশে ওরনা ঝুলিয়ে দেয়। ঠোটে হালকা লিপবাম লাগিয়ে চশমা চোখে লাগিয়ে রাইমাকে বলে,

“চল আমি রেডি।”

রাইমাও মুচকি হাসে নিজের বান্ধবীকে দেখে। এগিয়ে এসে শার্লিনের মাথায় টোকা দিয়ে বলে,

“পুরোই পাগলি একটা।”

“পাগলি বলেই তোর মতো পাগলির বান্ধবী আমি। এবার তোর দেরি হচ্ছে না? চল চল।”

দুজনেই একসাথে হেসে দেয় শার্লিনের কথা ফুরোতে। একসাথে বাসা থেকে বেরিয়ে পরে দরজায় তালা ঝুলিয়ে।

৮,
বাড্ডার একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে মাহাদ, রাইমা, শার্লিন। মাহাদ বারংবার হাত ঘড়িটায় সময় দেখছে। ভেতরে ভেতরে সে খুব অস্থির হয়ে পরেছে রাইমা বুঝতে পারে। সময়টা এগারোটার কা”টা পেরিয়েছে। মাহাদের ভালোবাসার মানুষটির আসার কথা ১০:৩০ এ। কিন্তু এখনও আসছেনা দেখে মাহাদ অস্থির হয়ে পরেছে। বেশ বুঝতে পারে রাইমা। শার্লিন বসে বসে আইসক্রিম খেয়ে চলেছে। এক বাটি আইসক্রিম শেষ করে মাহাদের উদ্দেশ্যে বলে,

“ভাইয়া আরেক বাটি আইসক্রিম কি পাওয়া যাবে? না মানে বসে বসে অনেক বোর হয়ে গেলাম তো।”

রাইমা চোখ পাকিয়ে তাকায় শার্লিনের দিকে। শার্লিন মুখটা কাচুমাচু করে বলে,

“রাগিস কেন তুই? আসার সময় ঠেলেঠুলে লেইট হলো লেইট হলো বলে বলে কানটার পোকা মে’রে নিয়ে আসলি। এখন এসে ৩০মিনিটের উপর হলো বসে আছি হুদাই। রেস্টুরেন্টে এসেছি, খাবো না কি করবো বল?”

“পেটুক কোথাকার! শুধু খাই খাই। আমাকেই খেয়ে ফেল বরঞ্চ।”

রাইমা দাঁত কটমটিয়ে তাকিয়ে কথাটা বলে। শার্লিন ফোনের লক খুলে ফোনের দিকে তাকিয়ে নেট ঘাটতে শুরু করে। তারমাঝে রাইমার কথার উত্তরে বলে,

“স্যরি আমি লে*সববিয়ান না যে মেয়ে হয়ে মেয়েকে খেতে যাবো। আমি ছেলে হলে বিষয়টা ভাবা যেতো। তুই সুন্দরই আছিস। বিয়ে করে খেয়ে ফেলতাম তোকে।”

শার্লিনের কথা শুনে রাইমার হেঁচকি উঠে যায়। মাহাদ তো মাথা নিচু করে ফোনের দিকে মনোযোগ দেয় তাড়াহুরো করে। শার্লিন রাইমার হেঁচকি উঠেছে দেখে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,

“কফি ছাড়া তো কিছুই খেলি না। হেচকি উঠে কেন তোর? বাসায় কি কিছু চু’রি করে খেয়েছিলি! আন্টি বোধ হয় এখন টের পেয়েছে। যে কারণে তোর হেঁচকি উঠেছে।”

“বইন দয়া করে অফ যা তুই। আমার কিছু হয়নি, আমি ঠিক আছি।”

এক গ্লাস পানি এক চুমুকে শেষ করে কথাটা বলে রাইমা। শার্লিন তা শুনে অভিমানের স্বরে বুকে হাত বেঁধে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,

“ভালো কথা বলতে নেই। বললেই কেউ গুরুত্ব দেয়না।”

রাইমা শার্লিনের কথা শুনে বললো,

“তোর নির্লজ্জ কথাবার্তার কি পাত্তা দেবো?”

“তোমরা দুজন একটু থামো প্লিস। আমিও এখানে আছি। একটু লজ্জা করো।”

মাহাদ দুজনের কথার মাঝে ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে কথাটা বলে। শার্লিনের এতোক্ষণে খেয়াল হয় মাহাদও এখানে আছে। সে জিহ্বায় কা”মড় দিয়ে বলে,

“স্যরি ভাইয়া। আপনি এখানে আছেন, আমি ভুলে গিয়েছিলাম।”

“মানে কি! যাকে আইসক্রিম খাওয়ানোর কথা বললি, এক নিমিষে জলজ্যান্ত একটা মানুষকে তুই ভুলে গেলি, যে সে এখানে আছে! বাহ বইন বাহ। ভুলে যাওয়ার এওয়ার্ড টা তোরেই দিতে হবে।”

রাইমা শার্লিনের কথার উত্তরে কথাটা বলে। শার্লিন বোকা বোকা হাসি দিয়ে ফের বলে,

“সত্যি এওয়ার্ড টা আমাকেই দিতে হবে। আমি আইসক্রিম খাবো এটাও ভুলে গিয়েছিলাম তোর সাথে কথা বলতে গিয়ে। ধন্যবাদ আইসক্রিমের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।”

রাইমাকে কথাটুকু বলে শার্লিন মাহাদের দিকে তাকায়। এরপর বলে,

“ভাইয়া আর এক বাটি আইসক্রিম খাওয়াবেন প্লিস!”

মাহাদ কথা বাড়ায় না। কথা বলা মানেই মানসম্মানের ফালুদা করে দিবে এই মেয়ে। ওয়েটার ডেকে শার্লিনের জন্য আইসক্রিম সহ আরও কিছু খাবারের অর্ডায় দেয়। রাইমা এতো খাবার অর্ডার করা দেখে বলে,

“এতো খাবার অর্ডার দিলেন কেনো ভাইয়া? আমরা তো এতোকিছু খেতে পারবোনা।”

“তোমার ভাবী আসতেছে রাইমা। ওন দ্যা ওয়ে, সাথে তার ভাইও আসছে। তো তার পছন্দ মতো খাবার গুলো অর্ডার করে দিলাম। আসতে আসতে ওয়েটার খাবার সার্ভ করে দিবে। সে এসে লেইট করবেনা। অল্প কিছু কথা বলেই চলে যাবে। তাই আগেভাগেই অর্ডার করলাম।”

“ওহ আচ্ছা।”

মাহাদের কথায় রাইমা ছোট্ট করে উত্তর দেয়। এরপর অপেক্ষা করে তার হবু ভাবী আসার। ১০-১৫মিনিটের মাথায় ওয়েটার সব খাবার সার্ভ করে দিয়ে যায় এক এক করে। মাহাদ রাইমা আর শার্লিনের উদ্দেশ্যে বলে,

“তোমরা যেটা পছন্দ হয় খাওয়া শুরু করো।”

রাইমা মাহাদের কথার উত্তরে বলে,

“ভাবী আসুক, একসাথে খাই!”

“তুই ভাবীর অপেক্ষা কর। আমার কান্না করে করে ক্ষিধে পেয়েছিলো, এখনও ক্ষিধে আছে। না খাইয়েই টেনে এনেছিস। আমি খেলাম, তুই বসে থাক।”

শার্লিন রাইমার কথার উত্তরে কথাটা বলে। কারোর উত্তরের অপেক্ষা না করে খেতে শুরু করে। মাহাদ হেসে ফেলে শার্লিনের কান্ড দেখে। রাইমা বিরক্তিতে ভ্রু কুচকায়। অস্থির চিত্তে বারংবার রেস্টুরেন্টের গেইটের দিকে দৃষ্টি মেলে। দুই তিন মিনিট যেতেই রেস্টুরেন্টের গেইটে কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখে মাহাদ আর রাইমা দুজনের ঠোটের কোণেই হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানুষটির পিছনে অন্য একটি মানুষকে দেখে রাইমা হাসি উবে গিয়ে চোখে মুখে বিস্ময় প্রকাশ পায়। বিরবির করে বলে,

“এই লোক এখানেও! আসার আর সময় পেলো না।”

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়। আসসালামু আলাইকুম
ফটো ক্রেডিট Fabiha Bushra Nimu

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here