#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ১৪
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৪০,
“তুমি কি রকম জানি স্বার্থপর হয়ে গিয়েছো বাবা।”
রাইমার প্রশ্ন শেষেই মেসবাহর কণ্ঠস্বর শুনে দরজার দিকে তাকায় রাইমা এবং শাহীন সাহেব। মেসবাহ দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছে। শাহীন সাহেব ছেলেকে দেখে বললেন,
“তুমি? কি সব বলছো মেসবাহ?”
মেসবাহ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
“মেয়ের ভালোবাসা একটা লেইম এক্সকিউজে মানছো না। তোমার৷ মেয়ের ভালোবাসার থেকে বড়ো তোমার ইগো, তোমার সম্মান বড়। ছেলে হয়ে এমন কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি, মাফ করো আমাকে। আল্লাহর সৃষ্ট এই রঙ তামাশার দুনিয়ায় তোমার আমার হায়াত কতোদিন আমরা জানিনা। হয়তো তোমার আগেই দেখা গেলো আমাদের রব আমাদের নিয়ে গেলেন! কিন্তু আমরা একটা ধারণা রাখি, যাদের বয়স হয়েছে তারা আগে মা”রা যাবেন। তোমার মেয়ে একজনকে ভালোবাসে বাবা। সাহস করে বলেওছে। সে পরিবার আর ভালোবাসা দুজনকে নিয়েই থাকতে চায়। আর তুমি কি করছো মানতে নারাজ হয়ে অন্য একটা মেয়ের উপর জোড় করে শর্ত জুড়ে দিচ্ছো রাজী হওয়ার নাম করে৷ তোমার হায়াত কতোদিন এটা তো তুমি আমি কেউ জানিনা৷ নারী জাতী, পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে হয়তো নিজের ভালোবাসা টুকু বিসর্জন দিয়ে বেইমান উপাধীটা অনায়সে হজম করে নিতে পারবে! কিন্তু ঐ যে একটা ছেলের জীবনের সাথে জড়িয়ে দিবে, সেই ছেলেকে সময়ের সাথে মানিয়ে নিলেও দিনশেষে একটা করে দীর্ঘশ্বাসের সাথে নিজের কষ্টগুলোও হজম করার চেষ্টা করবে। সফলও হয় হজম করতে! কিন্তু তুমি সেই নারীর পিতা হয়ে তার দীর্ঘশ্বাসের কারণ হবে? তোমরা কিছু কিছু বাবা-রা মনে করো এটা করলে সন্তানের ভালো হবে! একবারও এটা চিন্তা করো না এতে সন্তানের ভালো লাগবে কিনা! কিছু কিছু সময় আসে বাবা, যেই সময়টায় সন্তানের কথা, ইচ্ছেকেও মূল্যায়ন করতে হয়। জোড় করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিও না। অনুরোধ রইলো। আমি রাইকে বিয়ে করবো না। আমি শার্লিন আর রাইয়ের মাঝে পার্থক্য করিনি কখনও৷ তুমি বলতে রাই তোমার বড় মেয়ে, আমিও সেই কথা মেনে ভুল নজরে কখনও দেখিনি। তাই রাইকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না বাবা। পাত্রপক্ষ এসে বসে আছে। সেজন্য আমি ডাকতে এসে তোমার শর্তের কথা কানে পরায় আমি থেমে গিয়েছিলাম। আর পাত্রপক্ষকে আমিই বিয়েতে না করে দিবো। একজন বড় ভাই হিসেবে আমি আমার বোনের পাশেই থাকবো। তোমার পরে আমারই দায়িত্ব হবে ওকে আগলে রাখার। আমার বাবা যখন ভুল করছে, তখন সেই দায়িত্ব একটু আগেই না হয় নিলাম। শার্লিন যদি ভুল মানুষকে চয়েজ করতো, আমি মানতাম না। কিন্তু একজন সঠিক মানুষকেই বেছে নিয়েছে ও, নিজের জন্য। তো আমি ওর পাশেই দাড়ালাম। তোমার যদি আপত্তি থাকে, আমরা দুই ভাইবোন বাসা ছেড়ে চলে যেতেও রাজী আছি।”
মেসবাহ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। রাইমা কৃতঙ্গতার দৃষ্টিতে তাকায় মেসবাহর দিকে৷ এই লোকটা গম্ভীর, যতোটা পারতো তাকে এড়িয়ে চলতো। শার্লিনকেও শাসন করতো বলে রাইমা কমই সহ্য করতে পারতো তাকে। অথচ সে আজ কতো বড় একটা বি”পদ থেকে বাঁচিয়ে দিলো। বিয়ে বন্ধন টা এক দুদিনের নয়। সারাজীবনের। মেসবাহর মতো সে-ও তো মেসবাহকে ভাই বলেই মানতো! তাকে বিয়ে করতে হবে! তারমাঝে তার মা-ও বিয়ের জন্য পাত্র ঠিক করেছে। এখন কি করে গিয়ে মা-কে বলতো সে অন্য কাউকে বিয়ে করবে! এটা ভেবেই রাইমার গায়ে কা”টা দিচ্ছিলো। রাইমা আনমনে এটাই ভাবছিলো এতোক্ষণ। পরে মনে হলো আরফান ডাকতে এসেছে। সে ছুট লাগায় বাইরের দিকে। ড্রইং রুমে এসে সোফায় বসা পাত্রপক্ষের দিকে এক নজর তাকিয়ে শার্লিনের রুমে যায়। আরফান শার্লিনের কাছেই বসেছিলো। শার্লিন রাইমাকে দেখেই উঠে দাড়ায়। ব্যস্ত হয়ে জিগাসা করে,
“বাবা কি বললো! বিয়ে দিবেনা বলেছে তো?”
“আংকেল কি করবে জানিনা, তবে মেসবাহ ভাই তোর বিয়েটা ভাঙবে। চিন্তা করিস না। আমি বাসায় যাচ্ছি। রাতে কল করবো, তখন সব বলবো।”
রাইমা উত্তর দিলো। এরপর আরফানের হাতটা খপ করে ধরে বললো,
“বাবা বাসায় জরুরী ভাবে ডেকেছেন। কেন ডেকেছেন জানিনা, লাগার কথা দুমিনিট। সেখানে আধঘন্টা লাগিয়ে দিলাম। চিন্তা করিস না, বিয়েটা হচ্ছেনা। আরফান চল।”
শার্লিন আটকায় না রাইমাকে। সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বসে বিছানায়। এতোক্ষণ চিন্তায় পাগ’ল পা’গল লাগছিলো নিজেকে৷ রাইমা যখন একবার বলেছে বিয়েটা হবেনা। তারমানে হবেই না। শার্লিন খুশিতে ইফরাদের কাছে ফোন দেয়।
৪১,
রাইমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছে দিগন্ত। আসার কথা ১০মিনিটে। সেখানে প্রায় ৪০মিনিট হয়ে আসলো৷ এজন্য এই মেয়ের প্রতি তার বিরক্ত বোধ হয়। কোনো টাইম সেন্স বা কমন সেন্স টুকু নেই। অস”ভ্য শব্দটার সাথে মেয়েটাকে সভ্য ভাবেই মানিয়ে নিয়েছে। রাইমার আসতে এতো দেরি দেখে শাহনাজ বেগম উঠে কিচেনে চলে গিয়েছেন রান্না করবেন বলে। উনার জিদ দেরি যখন হয়েইছে, তো খাওয়া দাওয়া করিয়ে তবে ছাড়বেন। স্নেহা উনার হাতে হাতে সাহায্য করতে জিদ ধরে সেও কিচেনে চলে গিয়েছে। আজাদ সাহেব নিজের রুমে চলে গিয়েছেন। মাহাদ আর দিগন্তই ড্রইং রুমে বসে আছে। মাহাদ বোর হয়ে ফোন ঘাটতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। দিগন্ত বসে বসে রাগে ফুসছে, নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। একটা মেয়ে এতোটা সেন্সহীন কি করে হয়! মানা যায় বান্ধবীকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে, তাকে তো আর দেখতে আসেনি। ওখানে এতো করছেটা কি! ভেবে পেলোনা দিগন্ত। অধৈর্য হয়ে মাহাদকে লক্ষ্য করে বললো,
“মাহাদ ভাই! আপনার অ’সভ্য বোনটা ওখানে গিয়ে কি নিজেই পাত্রপক্ষের সামনে বসে পরেছে। এখনও আসছেনা যে!”
মাহাদ ফোন থেকে চোখ তুলে দিগন্তের দিকে তাকালো। অবাক নয়নে জিগাসা করলো,
“আমার বোনটাকে কি আগে থেকে চিনতে নাকি শালা বাবু? সভ্য না অ’সভ্য কি করে বুঝলে না চিনলে?”
“চেনা অচেনার ইতিহাস না হয় আপনার বোনের থেকেই জেনে নিয়েন। আপাতত দয়া করে কল করবেন একটা! কোন জায়গায় বসে কার মাথা নষ্ট করছে একটু শুনুন তো।”
“আমি কার মাথা নষ্ট করতে যাবো? সবার মাথার কি আপনার মতো তারছিড়া? যে সামান্য কিছুতেই পাগ’ল হয়ে যাবে?”
রাইমার কণ্ঠে কথাটা শুনে চোখ ঘুরিয়ে বাসার দরজার দিকে তাকায় মাহাদ আর দিগন্ত। রাইমা চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। বাসার দরজা একটু চাপিয়ে দেওয়া ছিলো। সেজন্য ঢুকতে কলিং বেল বাজাতে হয়নি। বাসায় ঢুকেই দিগন্তের মুখে কথাটা শুনে বুঝতে পারে কথাটা তাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে লোকটা। যেহেতু মাহাদের আর ভাইবোন নেই। তাই বোন বলতে তো তাকেই বুঝিয়েছে। এই বুঝে রাইমা কথাটা বললো। দিগন্ত রাইমাকে দেখেই কপালে তর্জনী আঙুল দিয়ে ঘষতে ঘষতে বিরবির করে বললো,
“এসে গেছেন মহারানী। এখন তার ভাষণে ভালো মানুষের মাথারও তাড় সব ছিড়ে যাবে। এরপরও নিজেকে কি করে যে সুস্থ দাবী করেন উনি। মাথায় ঢুকেনা।”
“কি বিরবির করছেন আপনি?”
দিগন্তকে বিরবির করতে দেখে প্রশ্ন করে রাইমা। মাহাদ দুজনের ঝগড়া হবে এমন আভাস বুঝতে পেরে দুজনের মাঝখানে ফোড়ন কে”টে বলে,
“রাই বোন আমার! আমি তোমার ভাইও এখানে আছি। আমায় একটু পাত্তা দাও।”
রাইমা সোফায় বসতে বসতে বলে,
“দিলাম পাত্তা। বাবা তবে তোমরা এসেছো বলেই এতো জরুরী তলব করলো?”
“জ্বি আপা।”
“আপনি আমার বড়, আমাকে আপা বলে আমায় কি আপনার বড় প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন মাহাদ ভাই?”
“না বোন আমার! তুমি আমার বড় হলে কি যে হতো আমার! কল্পনা করাও কঠিন। ছোটো থেকেই যে বাঁদর নাচ নাচাও। বড় হলে না জানি কি করতে!”
“এই লোক এখানে! তারমানে স্নেহা ভাবীও এসেছে। ভাবী কোথায় মাহাদ ভাই?”
দিগন্ত চুপচাপ দুই ভাইবোনের আলোচনা শুনছিলো৷ রাইমার মুখে এই লোক শব্দটা শুনে সে বললো,
“এই লোক! এটা কেমন শব্দ! কথাগুলো কি আর একটু সম্মান দিয়ে বলা যায়না? যেমন ইনি এখানে! এভাবেও তো বলা যায়।”
“আপনার ইগোতে লেগেছে শব্দটা? আমারও লাগে, যখন আপনি অকারণে আমায় অস”ভ্য বলেন।”
রাইমা মুখ ভেঙচিয়ে উত্তর দিলো৷ তখনই স্নেহা কিচেন থেকে ড্রইং রুমে আসে। রাইমা তাকে দেখে লাফ দিয়ে দাড়ায়। স্নেহাকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে আহ্লাদ করে বলে,
“সূর্য আজ কোনদিকে উঠেছিলো? চাঁদ আজ আমার বাসায়! খুশি হয়ে গেলাম ভাবী।”
“পাগলি মেয়ে একটা৷ অকারণে আসেনি তোমার চাঁদ। দরকার আছে বলেই এসেছে।”
মাহাদ পিছন থেকে কথাটা বললো। দিগন্ত বসে বসে রাইমার কান্ড দেখছে। রাইমা স্নেহাকে ছাড়িয়ে থুতুনিতে আঙুল রেখে বলে,
“কি এতো জরুরী দরকার! যে চাঁদ বিয়ের আগেই খালা শাশুড়ীর বাড়িতে হাজির!”
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়। বাপরে কাল একটু প্যাঁচ লিখেছিলাম, সবাই কতো রাগ🤧। আজ খুশি তো! রিচেইক করিনি, ভুলগুলো ক্ষমা করবেন৷ আসসালামু আলাইকুম