#আকাশেও_অল্প_নীল #পর্বঃ২৫ #আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

0
431

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ২৫
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৭৭,
রাইমার প্রশ্ন শুনে ইফরাদ উত্তর দিলো,

“আজ নয় রাই, আগামীকাল বা ছুটির দিনে গেলে হয়না? আজ বড্ড ক্লান্ত লাগছে।”

“আমি আজকেই যাওয়ার কথা বলিনি ইফরাদ ভাই। সবকিছু মিলিয়ে আমিও বড্ড ক্লান্ত। বাসায় যাওয়া যাক এবার?”

রাইমার কথা শেষ হতেই ইফরাদ ওয়েটার ডেকে বিল মিটিয়ে দেয়। দিগন্ত দিতে চাইলো, কিন্তু ইফরাদ মানা করে নিজেই দেয়। এরপর সবাই উঠে দাড়ায়। রাইমা আর শার্লিন আগে আগে হাঁটা ধরে। পিছনে ইফরাদ আর দিগন্ত। ইফরাদের ফোনে কল আসায় সে একটু দ্রুতপদে হেঁটেই আগে আগে ক্যাফে ছেড়ে বের হয়। দিগন্ত রাইমার পাশে এসে হাঁটা ধরে। শার্লিনও নিজের ফোন নিয়ে একটু ব্যস্ত। বাসায় মেসেজ করে জানালো তারা একটু বাইরে বেরিয়েছে ভার্সিটি শেষে। ক্যাফে হতে বের হতেই দিগন্ত সুযোগ বুঝে রাইমার হাত টা চেপে ধরে। রাইমা চমকে দিগন্তের দিকে তাকায়। দিগন্ত রাইমার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলায়। চোখের ইশারায় রাইমাকে আশস্ত করে, ভরসা দেয়। রাইমা দিগন্তের চাহনীতে ভরসা খুজে পেয়ে মৃদু হাসে। অবশেষে তাদের সম্পর্ক ভরসা দেওয়ার মতো উন্নতির দ্বারে পৌঁছেছে। ইফরাদ কথা বলা শেষ করে ক্যাফের বাইরে অপেক্ষারত শার্লিন, রাইমা আর দিগন্তের কাছে আসে। সে আসতেই দিগন্ত বললো,

“চলো তোমাদের সবাইকে এক এক করে বাসায় ছেড়ে দিই!”

ইফরাদ মাথা চুলকে হালকা হেসে বললো,

“দিগন্ত ভাই, আপনি রাইকে নিয়ে বাসায় যান। আমার শার্লিনের সাথে একটু দরকার ছিলো। ওকে মা বাসায় নিয়ে যেতে বললেন। মা কল করেছিলো, শুনলেন শার্লিন সাথে আছে। বললেন নিয়ে যেতে।”

রাইমা ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে শার্লিনকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,

“যাও, হবু শাশুড়ীর আদর খেয়ে এসো। আদরের চোটে আমায় ভুলোনা যেনো!”

শার্লিন তার ঠোঁটকাটা স্বভাব বজায় রেখে বললো,

“শাশুড়ী চরম লেভেলের একটা ভুল করেছে বইনে। আমার দেবর ভাসুর কিচ্ছু নাই। নয়তো দুই বান্ধবী এক বাসায় থাকতাম।”

“তাহলে সেটা বাসা আর বাসা থাকতো না। পাগলাগারদ ফেইল করাতো।”

ইফরাদ কপালে বুড়ো আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে কথাটা বললো। দিগন্ত গলা খাকাড়ি দিয়ে বললো,

“তাহলে আমার কপালে তোমার বান্ধবী থাকতো না শালীকা। জোড়া তো উপরওয়ালা বেধে দিয়ে পাঠিয়েছেন।”

রাইমা বললো,

“হয়েছে থামো তোমরা। যাওয়া যাক, বাসায় সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।”

রাইমার কথায় সবাই গসিপ থামিয়ে দিগন্ত আর ইফরাদ মিলে এক রিকশা ঠিক করে ইফরাদ আর শার্লিনকে বিদায় জানালো ওরা। এরপর রাইমা এবং দিগন্ত, দিগন্তের গাড়িতে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাইমা দিগন্তের সাথে সামনের সীটে বসে সীট বেল্ট লাগাতেই দিগন্ত গাড়ি স্টার্ট দেওয়া রেখে রাইমার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে জিগাসা করে,

“আমি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?”

৭৮,
রাইমা দিগন্তের কথায় চকিতে তার দিকে তাকায়। দিগন্তের দৃষ্টি তার দিকে নিবন্ধ৷ চোখে তার উত্তরের অপেক্ষার আকুলিবিকুলি। রাইমা মৃদু হেসে উত্তর না দিয়ে জিগ্যেস করলো,

“আমায় জড়িয়ে ধরবেন! আপনি আপনার হবু বউকে, যাকে ক’দিন পর বিয়ে করবেন! তাকে জড়িয়ে ধরতেও অনুমতি প্রয়োজন হলো?

” অবশ্যই হলো রাই। আমি আচমকা আপনাকে ধরলে যদি আমায় ভুল ভাবেন! যে এই লোকটা এতো নির্লজ্জ যে একটা মেয়ের অনুমতি ব্যতিতই তাকে জড়িয়ে ধরেছে। বিষয়টা কেমন একটা উইয়ার্ড হয়ে যাচ্ছে না? এজন্য রেস্টুরেন্টে আপনাকে কাঁদতে দেখেও জড়িয়ে ধরার ইচ্ছে হলেও আমি ধরতে পারিনি।”

রাইমা দিগন্তের কথায় চমৎকার ভাবে একটু হাসলো। নিজের হাত বারিয়ে দিগন্তকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। দিগন্তের বুকের মাঝে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো,

“আপনার প্রতি আমার অনুভূতি গুলো দায়িত্ব বোধ থেকে নয়, একটা সুস্থ সম্পর্ক, ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসার জায়গা হতেই আসতে শুরু করেছে। ইনশা আল্লাহ একদিন সংকোচ বিহীন ভাবেই বলে দিবো ভালোবাসি।”

দিগন্ত রাইমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

“আপনি আর কাঁদবেন না রাই, অতিরিক্ত খারাপ লাগা ব্যতিত আপনি কাঁদবেন না। আমি সিনেমা, নাটকের হিরোর মতো বলতে পারবোনা, আপনাকে আমি কখনও কাঁদতে দিবোনা, এটাই আপনার শেষ কান্না! এমনটা আসলে হবার নয় বুঝলেন তো! মানুষের ভালো লাগা, মন্দ লাগা বিষয়গুলো থাকে। মানুষ অতি আনন্দেও কাঁদে, আবার অতি কষ্টেও নিজের হাসফাস লাগা অনুভূতি গুলো কান্নার মাধ্যমে ঝড়িয়ে দেয়। জীবনে চলার পথে কান্নাটুকুও জরুরী। এতে অন্তত মনের মাঝেই দ”হনের আ”গুণ প্রশমিত হয়। তবুও আমাদের হাসতে হয়, ভালো থাকতে হয়। আপনি হাসতে হয় বলে হাসবেন না, আপনি যেমন চঞ্চল চড়ুই পাখির মতো, আপনি তেমনই থাকবেন। আপনায় ঐ রুপেই মানায়, কান্নায় নয়।”

রাইমা মুগ্ধ হয়ে দিগন্তের বলা প্রতিটা কথা শুনলো। সে নিজেও ভেবে পায়না দিগন্ত এতো সহজ করে সবটা বোঝায় কি করে! যখনই সে মনে চাপা কষ্ট অনুভব করে, দিগন্ত এসে সামলিয়ে দেয়। এই নিয়ে ২য় বার। এর আগে তো সেই ইফরাদের সাথে চারবছর দেখা হওয়ার দিন তার কান্না থামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো। সেদিনের কথায় ভালোবাসা না থাকলেও জেদ ছিলো, আর আজ কিছু মিষ্টি অনুভূতি, এটা ভালোবাসা না ভালো লাগা বুঝতে পারছেনা রাইমা। নিজের চিন্তাভাবনা বাদ রেখে দিগন্তকে বললো,

“আমার না একটা কথা বিশ্বাস হয়না জানেন!”

“কি কথা?”

“এই যে একদিন ছিলো, যখন আপনাকে দেখতেই আমাদের ঝগড়া শুরু হতো! বাজে অনুভূতি, খারাপ লাগার কারণ হতাম আমরা একে অপরের। অথচ আজ ভালো লাগায় ছেয়ে যাচ্ছে সব।”

“এটা হবারই ছিলে মিস রাইমা খন্দকার। নয়তো আমি দিগন্ত আহসান আপনাকে ভালোবাসার চেষ্টা করতাম না।”

“ভালোবাসা সুন্দর মি: দিগন্ত আহসান, একটু বেশিই সুন্দর।”

“এবার তবে গাড়ি স্টার্ট দিই!”

“হুম দিন।”

কথা বলা শেষে রাইমা দিগন্তকে ছেড়ে নিজের সীটে বসে গা এলিয়ে দেয়। সে সচরাচর কান্নাটা করেনা। মাহিশাকে হারিয়ে বোধ হয় লাস্ট বার কেঁদেছিলো। এরপর ইফরাদের সাথে দেখা হওয়ার দিন। তারপর তে তার লড়াই শুরু হয় ভালো থাকার। ভালো আছি বললেই তো ভালো থাকা হয়না, মন থেকেই ভালো থাকতে হয়। এই মন থেকে ভালো থাকার লড়াই এ নেমে রাইমা কাঁদতে ভুলে বসেছে। এতোদিন পর কান্না করায় তার মাথা ব্যথা করছে একটু। এজন্য সীটে গা এলিয়ে বসলো। দিগন্ত রাইমাকে এক পলক দেখে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। রওনা দেয় নিজেদের গন্তব্যে।

৭৯,
পরদিন সকালবেলায়, রাইমা শাহনাজ বেগমকে নাস্তা বানানোয় সাহায্য করে টেবিলে সব সাজিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে রুমে আসে। রুমে এসেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠে রাইমা। বিছানায় শার্লিন এলেমেলো অবস্থায় বসা। পা দুটো ঝুলিয়ে দুহাতে ভর দিয়ে তার বিছানায় বসে আছে শার্লিন। চুলগুলো এলেমেলো, ওরনাটা কাঁধের একপাশে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চোখ দুটো কেমন ফোলাফোলা। অতিরিক্ত ঘুমালে বা কাঁদলে চোখ মুখের যা অবস্থা হয়, শার্লিনেরও তেমনই অবস্থা। রাইমা হন্তদন্ত হয়ে শার্লিনের সামনে গিয়ে হাটু মুড়ে বসে। ওর দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে রাইমার। গতোকালই কতো সুন্দর হাসিখুশি মেয়েকে ইফরাদের সাথে ওর বাসায় যেতে দিলো! আর আজই এমন অবস্থা! হয়েছে কি শার্লিনের? নিজের আগ্রহ দমন করতে না পেরে ব্যথিত চিত্তে রাইমা জিগ্যেস করে,

“বাসায় এসে আমার রুমেও এসে বসে আছিস! অথচ আমি জানি না! এটা কেমন হলো শালু? যাকে না দেখেই বুঝতে পারি, সে এসেছে৷ চজ তাকে দেখেও কেমন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সে এসেছে! কারণ না আছে সারাশব্দ না আছে মুখে হাসি। কি হয়েছে আমার শালু গোলআলুর বলতো?”

“আচ্ছা রাই আমি কি খুব বেশি ন্যাকামি করি? খুব বেশিই অবুঝপনা হয়ে থাকি? সত্যি করে বলবি কিন্তু! আমায় শান্তনা দেওয়ার জন্য নয়। আমার জানা জরুরী।”

“মানে কি এসব কথার? কে বলেছে তুই ন্যাকামি করিস! অবুঝপনা হফ থাকিস? কে বলেছে?”

“ইফরাদ বলেছে রাই। আমার কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। ও তো জানতো আমি এমন। আমার এমন ন্যাচারের জন্যই তো এট্রাক্টেড হয়ে ভালোবেসেছিলো আমায়। আজ তবে আমার এতো চঞ্চল হওয়ায় তার আপত্তি বল তো? ইফরাদের জন্য ঐ কথাটা খাটলো নাকি! পাওয়ার আগেই যতো ঢঙ, পেয়ে গেলেই বেরোয় আসল রঙ?”

“হয়েছে কি আমায় খুলে বলবি? তোর কথা আমার বুকের মাঝে ধরফর অনুভূতি ধরিয়ে দেওয়ার কারণ। ভাইয়া আর তোর সম্পর্ক ঠিক আছে তো?”

“আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি রাই, যে সময়ে মেয়েদের অকারণেই মুড সুইং হয়, এই ভালো লাগছে তো সেকেন্ডও লাগেনা ভালো লাগা খারাপ লাগায় পরিণত হতে। আমরা সেই সময়ে লাইফ নিয়ে ট্রাভেল করছি, যেই সময়ে বেশিরভাগ মানুষ ভালো না লাগা নামক অনুভূতিতে আসক্ত। এমনিতে তো লাইফের বিভিন্ন ক্রাইসিস আছেই, অনেকের আবার অকারণেই ভাতের থালা সামনে নিলে আমাদের কান্না আসে। অকারণেই ওভার থিংকিং এ আমাদের গলা দিয়ে ভাত নামেনা। সমস্যা ছোট্ট, আমরা টেনে হিচরে বড়ো করে জীবনের আনন্দ টা নষ্ট করে ফেলছে সব। সবার জীবনে আলেসেমি শব্দটা কাঠালের আঠার মতো জাপ্টে ধরেছে। ডিপ্রেশন ছাড়া মানুষ পাওয়া দুষ্কর। আমি তো পারিনি এসব ভালো না লাগা, এতো ডিপ্রেশন ফিল করতে! আমি নিজের আনন্দ ঠিক রাখার পাশাপাশি আমার প্রিয় মানুষদের হাসানোর চেষ্টা করি, সিরিয়াস মোমেন্টে ফানি কথা বলে ফেলি যেনো অপর মানুষ টা ওভার থিংকিং এ তার সুন্দর আলোচনা টা নষ্ট না করে! এগুলো কি আমার ন্যাকামি রাই?”

“কি হয়েছে একটু ক্লিয়ার করবি? আমার চিন্তা হচ্ছে। ”

রাইমা শার্লিনের কথাগুলো শুনে অস্থির চিত্তে প্রশ্ন করে। শার্লিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠে,

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়, ঘুম চোখে লিখেছি, রিচেইক দেইনি। আসসালামু আলাইকুম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here