গোধূলি_আলোয়_সাঁঝের_ছোঁয়া [২] 🍂হুমাইরা হুর🍂

0
388

#গোধূলি_আলোয়_সাঁঝের_ছোঁয়া [২]
🍂হুমাইরা হুর🍂

হবু স্বামী এমন ভয়ানয় মৃ’ত্যু দেখে শিউরে উঠলো গোধূলি। কি নিঃশংস ভাবে খু’ন করা হয়েছে মানুষটাকে।দেহটাকে দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে তার।এই মানুষ টার সাথে তার আজ বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। রাতের রাত না ঘুমিয়ে পার করেছে এই মানুষটার জন্য সে।সারা রাত জেগে কতই নাা গল্প করেছে তারা।টুনাটুনির সংসার সাজিয়েছে দুজনে মিলে।কতই খুশি ছিলো মানুষটা আজ।দীর্ঘ পাঁচ বছরের অবশান ঘটতে চলেছিলো আজকে।এই মানুষটার জন্য এতদিন হয়তো বেঁচে ছিলো গোধূলি।ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে তাকে এই ব্যক্তিই সাহায্য করছিলো।কিন্তু মানুষটার করুণ মৃ’ত্যু যেনো সে কোনো মতেই মানতে পারছে না।আবার সবচেয়ে বড় কষ্ট এই যে মানুষটার মৃ’ত্যুর জন্য তাকে দায়ী করা হচ্ছে। এমনকি এই মানুষ টার খু’নের’ জন্যই তাকে এখানে আনা হয়েছে।এতক্ষণ তাকে কি জন্য এখানে আনা হয়েছে তা জানা থাকলেও কাকে খু’নের দায়ে তাকে এখানে আনা হয়েছে সেটা সে জানত না গোধূলি।

সাঁঝ যখন তাকে নিয়ে যখন লা’শের কাছে আসলো।তখন লা’শের খাটিয়ায় সূর্যের ক্ষত বিক্ষত দেহ দেখে ধপ করে বসে পড়ল মেঝেতে। আজ যেনো চোখের জল ও তার সাথে বেইমানি করছে। চোখ থেকে এক বিন্দু জল নিচে গড়ায়নি। কথায় আছে না অতি শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়? গোধূলিও ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটেছে। আজ যেনো সে পাথর হয়ে গিয়েছে।

………………..

সূর্য অস্ত যাওয়ার পুর্বমুহুর্তের সন্ধিক্ষনেই জন্ম হয়েছিলো গৌধূলির। পড়ন্ত বিকেলের উপচে পড়া আমেজে আতাউর রহমান প্রকৃতি অবস্থার সাথে মিলিয়ে মেয়ের নাম রেখেছিলেন গোধূলি। যেদিন গোধূলির জন্ম হয় সেদিন সারা সকাল বৃষ্টির ছন্দে বিলীন ছিলো।অবশেষে বৃষ্টির পাঠ কাটিয়ে আকাশে ঝলমলে সূর্য উকি দিলো।সেদিন আতাউর রহমান সারা হাসপাতালে মিষ্টি বিলি করেছিলেন। প্রচন্ড আদর যত্নে তিনি গোধূলিকে বড় করেছিলেন।কিন্তু গৌধূলির বয়স ছয় ছিলো তখন গোধূলি ছাঁদ থেকে পড়ে গিয়েছিলো। সেই থেকে গোধূলি র’ক্ত সহ্য করতে পারে না।

———–

গোধূলি কে এভাবে বিক্ষিপ্তভাবে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে সাঁঝের প্রচন্ড রাগ উঠলো।কেননা তার প্রিয় মানুষগুলোর মৃত্যুর জন্যও গোধূলি দায়ী। সাঁজ তার রাগ কোনো মতো সংযত করে গোধূলির কাছে গিয়ে তার বামহাতে টেনে দাড়া করলো।গোধূলি যেনো কোনো হুসে ছিলো না।সাঁঝের এহেন কান্ডে চমকে উঠলো গোধূলি।সাঁঝ গোধূলির দুই বাহু চেপে ধরলে চিৎকার করে বলে উঠলো,

‘কি ক্ষতি করেছিলো ওরা তোর। আমার কাছ থেকে কেনো কেড়ে নিলি ওকে? কেনো খুন করলি এত নিশংস ভাবে সূর্যকে? আরে সূর্য তো তোকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসত? কেনো মারলি ওকে?

একের পর এক প্রশ্ন করতেই লাগল সাঁঝ গোধূলি কে। গোধূলি যেনো কোনো কথায় বলতে পারছিলো না।গোধূলির নিশ্চুপতা যে সাঁঝের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছিল। চিৎকার করে আবারো বলে উঠলো ,

‘তুই খু’নী গোধূলি। খু’নী তুই।তুই আমার আলোকে মে’রে ফেলেছিস।আমাকে একা করে দিয়েছিস তোরা সবাই ।আমি তোকে ঘৃণা করি। ঘৃণা করি। এতই ঘৃণা করি যে তোকে নিজ হাতে মে’রে ফেললেও আমার আফসোস থাকবে না।’

সাঁঝে এরুপ কথা শুনে গোধূলি অনেক কষ্ট পেলো।’তুই খু’নী’ কথাটা যেনো বার বার তার কানের ভিতরে বাজছে। এমনতেই সে র’ক্ত সহ্য করতে পারে না তার উপর সাঁঝের তাকে ঘৃণা করা ব্যাপারটা সে কিছুতেই যেনো মেনে নিতে পারছে না।হটাৎ করে থরথর করে কাঁপতে শুরু করল সে।এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে নিলে সাঁঝ তাকে ধরে ফেলল।

————

জনশূন্য রাস্তায় এক গভীর জলাশয় এর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাঁঝ।নিজের জীবনের অংক মিলাতে সে ব্যাস্ত। এক দমকা হাওয়া এসে যেনো নিমিষেই তার জীবনটাকে তছনছ করে দিয়ে চলে গিয়েছিলো। গোধূলির সাথে তার দেখে হয়েছিলো বিদেশের মাটিতে। তখন সে জানত না গোধূলি নামক মেয়েটা তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে।

সাঁঝের ছোটবেলা থেকে অনেক ইচ্ছে ছিলো বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার।সেই লক্ষ নিয়ে নিজেকে তৈরি করছিলো সে।কিন্তু মেডিকেল পরিক্ষায় পরপর দুবার পরিক্ষা দিয়েও দেশে পড়ার সুযোগ পায়নি সাঁঝ। প্রবল ইচ্ছা থাকার কারনে সে বিদেশে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায়। সাঁঝের বাবা মা রাজি না থাকলেও ছেলের জিদের কাছে হার মানতে হয় তাদের। এমন না যে তাদের কিছুই নেই।সাঁঝের বাবা সরকারি কলেজের অধ্যাপক।তিনি চেয়েছিলেন সাঁঝও তার মত অধ্যাপক হোক।কিন্তু ছেলের ভালোর কথা ভেবে তিনি সাঁঝকে বিদেশে পড়ার অনুমতি দেন। সেখানেই তার সাক্ষাৎ হয় গোধুলির আর আলোর সাথে।

ফোনের রিংটোন শুনে অতীত থেকে বেরিয়ে আসল সাঁঝ। নিজের আর আলোর কাটানো সময় গুলো মনে পরে গেলো তার। ফোন রিসিভ করেতেই শুনতে পেলো,

‘স্যার ম্যাম এর জ্ঞান ফিরেছে । জলদি আসুন তিনি পাগলামি করছেন,আমরা কোনোভাবেই তাকে শান্ত করতে পারছি না।’

ফোন পেয়ে সাঁঝ তাড়াহুড়ো করো রওনা হলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।যতদ্রুত সম্ভব তাকে তো সেখানে পোছাতেই হবে।

————-

হাসপাতালে বেডের উপর বসে আছে গোধূলি। কিচ্ছুক্ষন আগেই তার জ্ঞান ফিরেছে।কেবিনের বাইরেই পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। তাই জ্ঞান ফিরলেও কাউকে ডাকতে ইচ্ছা হয়নি তার।সারা রুমে নিরবতা বিরাজ করছে।পরনে তার সেই বিয়ের শাড়িটা এখনো। ফ্রেশ হতে হবে,সারাদিন না খাওয়ার ফলে নিজেকে বড্ড দূর্বল লাগছে তার।’আচ্ছা বাবা কি খেয়েছে? সে তো গোধূলিকে ছাড়া খেতে বসে না? এতক্ষণ বাবার চিন্তা না থাকলেও এখন বড্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে গোধূলির। ওই ঘটনার পরে বাবাকে সে দেখেনি। এতক্ষণে তো এখানে চলে আসার কথা। তাহলে তার বাবা কই?

নিজের মাথায় এক বোঝা চিন্তা নিয়ে উঠে দাড়ালো গোধূলি। ওয়াসরুমে যেয়ে আয়নার দিকে তাকালো সে।কি বিদঘুটে লাগছে যে তাকে।কি সুন্দর করে সাজিয়ে ছিলো সকালে ঐ আপুগুলো। আপন খেয়ালে বিরবির করল গোধূলি। হটাৎ মনে পড়ল যার জন্য সেজেছিলো সেই তো এই দুনিয়ায় নেই।ভেবেই মনটা আবারও ভারী হয়ে উঠল তার।সূর্যের কত ইচ্ছা ছিলো তাকে বউ সাজে দেখবে।তাইতো সকালে ঝুঁকি নিয়ে সূর্যের সাথে দেখা করেছিলো সে। কিন্তু কে জানত এটাই হবে তাদের শেষ দেখা।হাতের মেহেদী দিকে তাকালো সে।এখন s শব্দ টা ফুটে রয়েছে,যা সূর্য নিজ হাতে লিখে দিয়েছিলো তার হাতে।ভেবে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল গোধূলি।মনে মনে আওড়ালো,
‘পেয়েও পেলাম না তাহাকে’
মুখটা কোনমতে ধুয়ে ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে আসল সে।বাইরে এসেই যা দেখল,

পরের পর্ব

https://m.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/625158102539299/
চলবে?
(আসসালামু আলাইকুম।আপনাদের রেসপন্স দেখে আমি আশাহত।আপনাদের রেসপন্সে আমার উৎসাহ বাড়ে।তাই অনুরোধ রইল রেসপন্স করার। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here