তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব- ৫

0
1134

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৫

খাটের এক পাশে হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আহান,,আর জহুরি চোখ দু’টো স্থির তার সামনে কাচুমাচু মুখ করে রাখা তুরার দিকে। সে চেহারায় ভীষণ বিব্রতকর ছাপ ফেলে এলোমেলো ভাবে কাগজ গুলো গুছাচ্ছে।
তুরা পালাতে নিলে আহান ধরে তাকে কাগজ গুলো গুছানোর কাজে লাগিয়ে দিয়ে বলেছে যতক্ষণ না কাগজ গুলো ঠিকঠাক আগের মতো গুছিয়ে দিতে পারবে ততক্ষণ বেরোতে পারবে নাহ।
তুরা মনে মনে ভীষণ অসহায় অনুভব করছে, কাগজ গুলোতে কিসব ছক আঁকা আর দাগ টানা এখন সে বুঝবে কি করে কোনটা আগের কোনটা পরের। ফ্লোরে দুই পা ভেঙে বসে কাগজ গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছে আর সাজানোর চেষ্টা করছে। লোকটা ঠিক জানতো সে পারবে না তবুও ইচ্ছে করেই তাকে এই কাজটা দিলো। আসলেই জ’ল্লাদ ভীষণ জ’ল্লাদ। সে নাকি আবার ভার্সিটির লেকচারার, আল্লাহ যানে ক্লাসে স্টুডেন্টস দের উপর কোন ধরনের অ’ত্যাচার চালায়

-হয়েছে? আর কতক্ষণ লাগাবে?

আহানের ডাকে হুস ফিরে তুরার,সে এতক্ষণ মনে মনে আহানকে হাজারটা গা’লি দিতে ব্যস্ত ছিলো। কিন্তু কাগজ গুলোর তো একটাও গুছানো হয়নি। কোনো রকম সবগুলো একত্রিত করে উঠে এসে আহানের সামনে ধরে। আহান ভ্রু কুচকে কাগজ গুলো নিয়ে দেখে একটাও ঠিকঠাক সাজাতে পারেনি,বরং আরও উলটে ফেলেছে।

-এগুলো কি?

-কাগজ

মিনমিন করে উত্তর দিলো তুরা।

-সে তো আমিও দেখতে পারছি কাগজ,তোমাকে কি করতে বলেছিলাম?

এবার তুরা কোনো প্রতিউত্তর করলো নাহ। চুপচাপ মাথা নিচু করে হাতের আঙুলে ওড়না পেচিয়ে যাচ্ছে, ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো আহান। এই মেয়ে সব কথায় ই চুপ করে থাকে, আর কি কি ঝামেলা ডেকে আনবে আল্লাহ যানে।
ফট করে উঠে দাড়ালো আহান। আহানের এভাবে হুট করে দাঁড়িয়ে যাওয়া দেখে তুরা ভয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়, ভীষণ ভয় হচ্ছে তার মনে লোকটা কি তাকে বারান্দা দিয়ে ছু’ড়ে ফেলে দেবে? আহান আরেক পা এগিয়ে এলো। তুরা ভয়ে ঢক গিললো দুবার

-তোমাকে যদি আরেকবার আমার ঘর বা কোনো জিনিসের আসে পাশেও দেখি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে নাহ

শান্ত কণ্ঠে আহানের হু’মকি শুনে তুরা চোখ দু’টো গোলগোল করে চেয়ে রইলো, আহান খানিক থেমে আবারও বললো

-মনে থাকবে?

তুরা ঘনঘন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। আহান কাগজ গুলো নিয়ে ঠিক করতে করতে ব্যস্ত স্বরে বললো

-এখন যেতে পারো

তুরা তাও ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে, যেনো এ দুনিয়ায় আর নেই। আহান এদিকে ফিরে দেখে তুরা কাগজ গুলোর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে নড়চড় বাদেই৷

-কি হলো, এখানেই থেকে যাওয়ার ইচ্ছে আছে তোমার?

গমগমে ধম’কের সুর শুনে তুরা সম্ভিত পেতেই এক ছুটে বেরিয়ে যায় দরজা দিয়ে, একেবারে ঘরের ভেতর গিয়েই থামে।

-আচ্ছা পাগল মেয়ে তো! এ থাকলে দুইদিনে আমি পাগল হয়ে যাবো

বলেই দম ছেড়ে আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো আহান।
আর এদিকে তুরা ঘরে এসে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে,একটুর জন্য বেচে গেছে বাবা! লোকটা আস্ত জ’ল্লাদ

-কিরে তুরা,গেলি তো ভাইকে কফি দিতে এভাবে দৌড়ে এলি যেনো ভূতে তাড়া করেছে

বিছানা গোছাতে গোছাতে বললো রাইমা

-ভূত না রাক্ষস রাক্ষস,, তোমাদের বাড়িতে একটা রাক্ষস আছে যে যখন তখন আমায় ধরে চুড়মুড় বানিয়ে ফেলবে

বলেই ওয়াসরুমের দিকে গেলো তুরা, রাইমা তুরার যাওয়ার পানে চেয়ে মুচকি হেসে আবারও কাজে ব্যস্ত হলো।

সকাল বেলা বেশ উৎফুল্ল মনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে তুরা, হালকা মিষ্টি কালারের একটা চুড়িদার পরেছে, লাল সাদা রঙের মিশ্রনের ওড়না টা গলায় পেচিয়ে একপাশে ঝুলিয়ে নিলো। আজ তার ভার্সিটির প্রথম দিন। সেই ছোট বেলার মতো আনন্দ হচ্ছে তুরার,প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিন ও এমনই প্রফুল্ল লেগেছিলো তুরার। ভাবতেই কেমন মনটা আনন্দে নেচে উঠছে,,আনন্দে আত্মহারা হয়ে দুবার লাফিয়ে নেচে উঠলো তুরা

-এভাবে বাঁদরের মতো লাফাচ্ছো কেনো?

পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে ঘুরে দাঁড়ালো, সামনে দাঁড়ানো সুট পরা লোকটাকে দেখে শুকনো ঢক গিললো তুরা,এই লোকটা এই ঘরেও হাজির হয়েছে? আচ্ছা ব’জ্জাত তো। এখন কি এর জন্য আনন্দ ও প্রকাশ করা যাবে নাহ? দরজায় দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুজে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আহান। তুরাকে আবারও সং এর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেজাজ বিগড়ে এলো আহানের।
মেয়েটাকে যাই বলা হোক না কেনো টিপটিপ করে তাকিয়ে,, থাকে মাথায় কি সমস্যা আছে কোনো? এই মুহূর্তে ভীষণ রাগ হলো আহানের, কিন্ত রাগ করার সময় নেই সে তো এসেছিলো দরকারের একটা বই নিতে,,শিক্ষক হওয়ার দরুন তার অনেক বই পড়া হয়। ওর নিজের ঘরের বুকসেল্ফ এ সব বই আটে না বলে রাইমার ঘরের টাতেও কতগুলো বই রাখা। ছোট বেলায় আহান আর রাইমা যখন একসাথে থাকতো যখন ইনসাফ মাহবুব এই ঘরে এ্যাডযাস্টেড বুকসেল্ফ টা বানিয়ে দিয়েছিলো।
তুরাকে ওভাবে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহান চুপচাপ ঘরে ঢুকে এসে বুকসেল্ফ থেকে একটা বই বের করে নিলো। তুরার দিকে এক নজর তাকিয়েই বললো

-সকাল বেলা করে এমন বাঁদর সেজে লাফাচ্ছো কেনো?

আহানের এমন কথায় চোখ মুখ কুচকে নিলো তুরা,ইচ্ছে করছে লোকটার মাথা ফা’টিয়ে দিতে,আজ প্রথম দিন ভার্সিটি যাবে বলে একটু কাজল আর হালকা লিপস্টিক দিয়েছিলো, আর লোকটা তাকে বাঁদর বলছে,সে নিজে যে একটা হনুমান সেই খেয়াল আছে? কোনো উত্তর না দিয়েই মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো তুরা। এই ব’জ্জাত লোকটার সাথে কথা বলার কোনো মানেই হয়না।
আহান ও আর অপেক্ষা না করে চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আহান যেতেই তুরা হাফ ছেড়ে বাচলো এই লোকটা কোন দেশের হনুমান ভেবে পাই নাহ। আস্ত বনমানুষ!

আরও কিছুক্ষণ ব্যাগ গুছিয়ে নিচে নেমে এলো তুরা, ইনসাফ মাহবুব ডাইনিং টেবিলে বসে খবরের কাগজ পড়ছে, রাইমা রান্নাঘরে রুবি খাতুনের সাথে সাহায্য করছে, তুরা চুপচাপ গিয়ে ইনসাফ মাহবুব এর বাম পাশে বসে। তুরাকে দেখেই ইনসাফ প্রজ্জ্বলিত হয়ে বলেন

-বাহ তুই তো একবারে রেডি হয়েই নেমেছিস। আচ্ছা এখন শিগগির নাস্তা করে নে

তুরা সামান্য হেসে মাথা নাড়ায়, রান্নাঘর থেকে রাইমা আর রুবি খাতুন খাবার নিয়ে এনে সামনে রাখলেন, রাইমাও পাশে বসে খাওয়া শুরু করলো একসাথে। রুবি খাতুন গেছেন আমেনার ঘরে খাবার নিয়ে, সকালের খাবার টা তিনি ঘরে বসেই খান। খাওয়ার মাঝে ইনসাফ মাহবুবের ফোন বেজে উঠলো, ফোনে কথা শেষ করে আহানের দিকে চেয়ে বললেন

-আহান, তুরাকে তুমি সাথে করে নিয়ে যাও

এতক্ষণ চুপচাপ নাস্তা করছিলো আহান কোনোদিকে না চেয়েই,বাবার কথায় খাওয়া থামিয়ে বললো

-হোয়াট? আমি কেনো?

-হ্যাঁ তুমিই নিয়ে যাবে, আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরে গেছে আমি এখন চাইলেও যেতে পারবে নাহ। আর তোমার সাথে গেলে ক্ষতি কি গন্তব্য তো এক ই

বাবার কথায় কপালের ভাজ আরও গাঢ় করে আহান প্রশ্ন করলো

-একই মানে?

-একই মানে তুরাকে তোমার ভার্সিটিতেই ভর্তি করিয়েছি আমি, ওটাই ওর জন্য বেস্ট হবে। হাসবেন্ড এর দ্বায়িত্ব না হয় নাই নিলে সামান্য ভার্সিটিতে নিয়ে যাওয়া টুকুও কি তোমার দ্বারা হবে নাহ? আমি রীতিমতো হতাশ হচ্ছি তোমার এহেন দ্বায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখে

বাবার কথায় কোনো রকম উত্তর না করে মুখ শক্ত করে বসে রইলো আহান। মেয়েটা এখন তার ভার্সিটিতেও হাজির হবে, কোত্থাও গিয়ে শান্তি পাবে না তো সে এই মেয়েটার জন্য। ইনসাফ মাহবুব আবারও বললো

-তুমিই ওকে নিয়ে যাবে,আর এ নিয়ে আমি কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি নাহ

বলেই উঠে গেলেন ইনসাফ মাহবুব, আহান বাবার যাওয়ার পানে চেয়ে চোয়াল শক্ত করে তার সামনেই বসা তুরার দিকে তাকালো। তুরা এতক্ষণ হা করে তাদের কথায় শুনছিলো,সে কি না এখন থেকে ওই জ’ল্লাদ টার ভার্সিটিতে পড়বে? কোথাও কি মুক্তি পাবে না এই হনুমান টার জল্লা’দপনা থেকে। তুরার ভাবনার মাঝেই আহানের এমন চাহনি দেখে ফট করে দৃষ্টি নামিয়ে নিয়ে মুখে রুটি পুরে দিলো। তাকানোই যাবে নাহ লোকটার দিকে!
আহান খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো

-দুই মিনিটের মধ্যে যদি না বেরোই তাইলে আমি রেখেই চলে যাবো, ওকে বলে দে আপি

বলেই সাইড টেবিলে রাখা ব্যাগটা হাতে নিয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেলো। তুরা খাওয়া থামিয়ে চেয়ে রইলো যাওয়ার পানে,সে তো ভাবতেই পারেনি লোকটা তাকে নিবে নিজের সাথে।

-হা করে থাকিস নাহ,শিগগির যা নাইলে সত্যিই চলে যাবে

রাইমার কথা শুনে তুরা পানি খেয়েই উঠে দৌড় ধরে আহানের পিছু পিছু। গাড়িটা গ্যারাজ থেকে বের করে দাড় করালো গেইটের সামনে। তুরা দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়েই পেছনের দরজা খুলতে গেলে আহান বলে উঠলো

-আ’ম নট ইউর ড্রাইভার,চুপচাপ সামনে এসে বসো উইদাউট অ্যানি ওয়ার্ডস

এমন রাম ধ’মক শুনে তুরাও বাধ্য মেয়ের মতো সামনে এসে বসলো। সে কখন কথা বললো এই লোকের সাথে আজব! তুরা বসতেই হাই স্পীডে গাড়িটা ছুটিয়ে নিলো আহান। বাতাসের দাপটে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আঁচড়ে পরছে তুরার চোখে মুখে, ভীষণ ভাল্লাগছে এমন খোলা বাতাস। যেনো কতদিন পর মুক্ত বাতাসের ঘ্রাণ পেলো। না তো চাচীর জন্য সে তো বাড়ি থেকেও বেরোতে পারেনি কতদিন তার নিজেরও হিসাব নেই। পঁচিশ মিনিটের মাথায় গাড়িটা এসে থামলো ভার্সিটি গেইটের সামনে

-কোন ডিপার্টমেন্ট?

আহানের প্রশ্নে বাইরের দিক থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় তুরা
-হু?

-মন কোথায় থাকে,কোন ডিপার্টমেন্ট তোমার?

-ম্যাথম্যাটিকস

-এটাই বাকি ছিলো

বিড়বিড়িয়ে বললো আহান,

-কিছু বললেন?

-নাহ, সোজা ঢুকেই বাম পাশের বিল্ডিং টার দোতালায়

বলতেই তুরাও ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে গাড়ির দরজা খুলতে গেলে আহান আবারও বললো

-একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, ভার্সিটিতে তোমার আর আমার এই ইউসলেজ বিয়েরটার ব্যপারে যেনো কেও না যানে, আই রিপিট কেও নাহ! মাইন্ড ইট?

বিনিময়ে তুরা মলিন হাসলো। কিঞ্চিৎ ঘাড় নাড়িয়ে বেরিয়ে আসলো গাড়ি থেকে, সে নিজেও চাই না এই নামমাত্র বিয়েটার ব্যপারে কেও যানুক। যার কোনো বাস্তবিক অর্থই নেই। সে যে পড়াশোনা কর‍তে পারছে এই অনেক। আপাতত আর কিছুই চাইনা সে। সাত পাচ ভাবতে ভাবতেই ভেতরে ঢুকলো তুরা। আহানের কথা মতো বাম দিকের বিল্ডিংয়ের দিকে যেতে লাগলো। সিড়ি বেয়ে উঠতে নিলেই হুট করে কারো সাথে বেশ জোরে ধাক্কা লেগে পরতে নিলেই পাশের দেওয়াল ধরে সামলে নিলো নিজেকে।

-এইই সরি সরি সরি

বলেই হাত থেকে পরে যাওয়া বই গুলো তুলতে লাগলো মেয়েটি। তুরা কিছুক্ষণ আগাগোড়া পরখ করলো মেয়েটাকে। কালো রঙের জিন্সের সাথে হালকা সবুজ একটা কুর্তা পরে আছে, এলোমেলো ফুলগুলোর ঝুঁটি করে রাখা। তুরার সাথে ধাক্কা লাগিয়ে বই গুলো ছিটিয়ে পরেছে। তুরাও ঝুঁকে এক এক করে বইগুলো তুলে মেয়েটির হাতে দিলো। বিনিময়ে প্রগাঢ় হেসে মেয়েটি বললো

-সো নাইচ অফ ইউ ডিয়ার।

-ইটস ওকে।

বলে তুরাও হেসে প্রত্যুত্তর করলো।

-ফার্স্ট ইয়ার?

মেয়েটির প্রশ্নে তুরা সম্মতি সূচক মাথা নাড়লে মেয়েটি গাল প্রসারিত করে হাত বাড়িয়ে বললো

-হেই সেইম। আমি ফারিহা,ইউ?

-তুরা,তাকওয়াতুল তুরা

তুরাও হাত বাড়িয়ে দিলো।

-বাহ, ইউনিক নেইম, নাইস

-থ্যাংকস

-কোম ডিপার্টমেন্ট?

-ম্যাথম্যাটিকস

তুরার কথায় যেনো মেয়েটি আরও খুশি হলো।
-বাহ,আমিও। ভালোই হলো তোমাকে পেয়ে, না তো আমার একা একাই ক্লাসে যেতে হতো।

তুরাও সৌজন্যমূলক কথা বলে এগিয়ে গেলো ক্লাসের দিকে ফারিহার সাথেই। ক্লাসে গিয়ে বসতেই কিছুক্ষণ পরে একটা ছেলে ঠিক তাদের বেঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক ঘুরে তাকিয়ে ওদের কাছে এসে বললো

-হাই আমি সাদমান

-তুমি স্যাডম্যান না হ্যাপিম্যান তা দিয়ে আমাদের কি

ফারিহার কথায় বকা বনে গেলো গোল ফ্রেমের চশমা পরা লম্বা চিকন গড়নের ছেলেটি। চশমা টা নাক থেকে উপরর তুলে আবারও হেসে বললো

-স্যাডম্যান হ্যাপিম্যান কোনো টাই নাহ, ইটস সাদমান। ইউ ক্যান কল মি সাদ

-সে তুমি সাদ হও আর টিন তাতে আমাদের কিছুই নাহ, কি বলতে চাও সেটা বলে কেটে পরো।

-আসলে আমি আজকেই ফার্স্ট এসেছি। আশেপাশে কোনো সিট ও ফাঁকা নেই। তোমাদের আপত্তি না আমার সাথে সিট শেয়ার করবে প্লিজ।

সাদমানের কথায় ফারিহা কিছুক্ষণ আগা গোড়া পরখ করে নিলো। ফারিহার এমন নজরে ছেলেটা বেশ বিব্রত বোধ করলেও পরে ফারিহা কি একটা ভেবে আমার দিকে সরে এসে এক কোণায় যায়গা করে দিলো। সাদমান ধন্যবাদ জানিয়ে পাশে বসতেই ফারিহা আমার কাছে এসে বললো

-ওকে বসতে দিয়েছি বলে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো ডিয়ার?

-না না আমার কেনো আপত্তি থাকবে

-হ্যাঁ আমিতো জানি তুমি লক্ষী মেয়ে

বলেই তুরার গাল টেনে দিলো। তুরা হাসলো ফারিহার এমন পাগলামি দেখে,মেয়েটা যে ভীষণ চঞ্চল তা এইটুকু সময়েই বুঝে গেছে তুরা,

-এখন কার লেকচার জানো তোমরা?

পাশ থেকে সাদমানের প্রশ্নে কিছুটা ভেবে ফারিহা বললো

-হ্যাঁ জানি, ম্যাথম্যাটিকস ডিপার্ট্মেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড ইরফান স্যারের ক্লাস। আজই আমাদের ফার্স্ট ক্লাস নিবেন উনি। আমার কাজিন এই ভার্সিটির ই থার্ড ইয়ার। ওর থেকেই শুনলাম। শুনেছি স্যার নাকি তুখোড় হ্যান্ডসাম দোস্ত

বলেই তুরাকে একটা খোঁ’চা লাগিয়ে দিলো। ফারিহার এমন কান্ডে হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নেওয়ার ক্লাসে আগেই আগমন ঘটলো ইন করা সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরিহিত সুদর্শন লোকটির, যাকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গেলো। তুরাও সবার সাথেই দাঁড়িয়েছে। ফারিহা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ই তুরার কানের কাছে এসে বললো

-হায়ে,স্যার তো আসলেই আস্ত চকলেট বান্ধবী, আই আম ক্রাশড!

ফারিহার কথা শুনেও কোনো হেলদোল হলো নাহ তুরার,সে হা করে চেয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার স্যার নামক লোকটার দিকে। হাত উচিয়ে ইশারা করে সবাইকে বসতে বলেই ডায়াসে এসে দাড়ালো।

-আমি আহান,ইরফান মাহবুব আহান। ম্যাথমেটিকস ডিপার্ট্মেন্টের সাব হেড প্রফেসর৷ আজ তোমাদের সাথে আমার প্রথম ক্লাস। এবং আজ থেকে নিয়মিত আমিই তোমাদের ক্লাস নেবো,আশা করছি সকলে গুড ম্যানারস আর মোডস্টি বজায় রেখে কো-ওপারেট করবে

তুরা এখনো হা হয়ে আছে। শেষে কি না এই জ’ল্লাদ টার ক্লাস তার রোজ করতে হবে! এই ছিলো কপালে! তুরা তুই শেষ, এই বনমানুষ তোর লাইফ টা এবার অ্যামাজন বানিয়ে ছাড়বে
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here