তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব- ১২

0
1085

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ১২

-তুরা! কি হয়েছে কাদঁছো কেনো?

আহান ছুটে গিয়ে তুরার পাশে বসে বলে, তুরা রীতিমতো ছটফট করছে,আহান হাত বাড়িয়ে বেড সাইড ল্যাম্প টা জেলে দিলো। লাইটের আলোতে তুরার ভেজা ভেজা চোখ মুখ প্রথমে কুচকে নিলেও আহানকে দেখে আবারও কেঁদে বলে

-আ আমার বাবা,,আমার বাবা

আহান আরেকটু এগিয়ে যায় তুরার দিকে ওর হাত ধরে বললো

-কি হয়েছে তুরা, আমায় বলো কি হয়েছে, কোথায় তোমার বাবা

-আ আমার বাবা চলে গেলো,আমার বাবা আমায় ফেলে চলে গেলো, ওরা আমার বাবাকে নিয়ে গেলো,, আমাকে আমার বাবার কাছে নিয়ে চলুন নাহ,আমার বাবা ছাড়া তো আমার কেও নেই,

আহান বুঝতে পারলো তুরা ওর বাবাকে নিয়ে নিশ্চয় কোনো স্বপ্ন দেখেছে,,তুরাকে শান্ত করতে ওর হাত ধরে বললো

-তুরা, শোনো তোমার বাবাকে কেও নিয়ে যাচ্ছে নাহ, তুমি শান্ত হও

আহানের কোনো কথায় তুরার কানে যাচ্ছে নাহ, ও পাগলের মতো এদিক ওদিক ঘুরে বিরবির করছে, হুট করে আহানের টি-শার্ট দু’হাতে খামচে ধরলো

-আ আমাকে আমার বাবার কাছে নিয়ে চলুন নাহ,, দিয়ে আসুন না আমায় বাবার কাছে। বাবা ছাড়া আমার কেও নেই, আমি আর আপনাকে বিরক্ত করবো নাহ, আর কখনও আসবো না আপনার সামনে,আমাকে আমার বাবার কাছে দিয়ে আসুন, আমার খুব কষ্ট হয় বাবাকে ছাড়া, আমার বাবার মতো কেও নেই, চাচী আমায় খুব মারে, চাচাও পছন্দ করে না। আমি চলে যাবো, আমি বাবার কাছে যাবো, আমি আপনার পায়ে পরি আমায় নিয়ে চলুন,দয়া করুন আমার উপর

বলেই হাউমাউ করে কেঁদে যাচ্ছে,,আহানের কোনো কথায় তুরাকে শান্ত করতে পারছে নাহ। আচানক ই আহানের বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা শুরু হলো। মেয়েটার এমন বিধ্বস্ত চেহারা তার বক্ষস্থানে চড়াঘাত করছে,, এতটুকু মেয়ে মা বাবা হারিয়েছে,তার উপর চাচা চাচীর ব্যবহারেও এমন নির্মমতা?
আহানের ভীষণ কষ্ট হলো তুরার এহেন অবস্থা দেখে,,দুঃস্বপ্ন আর পেছনের কথা মনে পরে তুরার প্যানিক অ্যা’টাক এসেছে এটা আহান বুঝতে পারলো, ওকে এখন শান্ত করার দরকার, মেয়েটা যে কিছুতেই থামছে নাহ।
আহান কোনো দিক না পেয়ে তুরাকে ঝাপটে ধরে শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরলো। তুরাও কান্নার দাপটে ভাবান্তরহীন হয়ে আহানের পিঠ দু’হাতে খামচে ধরে আহানের বুকে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কাদঁতে থাকে। আহান কোনো রূপ বাক্য ব্যয় না করে পরম আবেশে তুরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
এমন আকস্মিকতায় আর উন্মাদনার প্রখরতায় আহানের এই ছোট্ট আদর যেনো এক পশলা বৃষ্টির ন্যায় ঠান্ডা করে দিলো তুরাকে। দু’হাতে আরও ঝাপটে খামচে ধরে মিশে গেলো আহানের বুকের মাঝে।
বেশ কয়েক মিনিট অতিবাহিত হলে তুরার কান্না দমে,, কান্না থেমে গেলেও খানিক বাদে বাদেই কেঁপে কেঁপে উঠছে তুরা, আহান আস্তে ধীরে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, তুরার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘাড় কাত করে দেখলো তুরা ওর বুকের আবারও দু চোখ বুজে ঘুমিয়ে গেছে। ওকে আলতো ভাবে সরিয়ে দিতে নিলেই তুরা ঘুমের ঘোরেই ঝাপটে ধরলো আহানকে। উপায়ন্তর না পেয়ে আহান ওভাবেই ধরে রাখলো ।
আস্তে আস্তে তুরা ঘুমে আরও বিভোর হয়ে গেলো,,এক হাত এগিয়ে ল্যাম্প টা বন্ধ করে দিলো আহান,
ঘড়ির কাঁটায় একটা বেজে সাত মিনিট। আহান তুরাকে আর সরালো ও নাহ। কেনো জানি একদম ইচ্ছে করছে না মেয়েটাকে সরাতে, কেমন বাচ্চার মতো গুটিয়ে মিশে আছে আহানের বুকে, বুকের এক পাশ টা চোখের পানি নাকের পানিতে ভিজিয়ে ফেলেছে, অদ্ভুত ভাবে অত্যন্ত শুচিবাই স্বভাবের হওয়া সত্ত্বেও আহানের কোনো অসস্থি হলো নাহ। মেয়েটাকে আগলে রাখতেই তার ভাল্লাগছে।
নিস্তব্ধ পরিবেশে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর ঘড়ির কাটার খটখট শব্দ ছাড়াও আরেকটা শব্দ খুব তীক্ষ্ণ ভাবে বিধছে আহানের কানে,,তুরা আহানের বুকের ভেতরই মুখ গুঁজে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে, যার শব্দ স্পষ্ট চড়াঘাত দিচ্ছে আহানের কর্ণকুহরে। ঘুমের ঘোরেই তুরা আহানের বুকে বাচ্চাদের মতো মুখ ঘষে দিলো। তড়িৎ গতিতে আহানের সারা বদনে যেনো তরঙ্গ খেলে গেলো, হৃদযন্ত্রের ছন্দময় ক্রীয়া টাও যেনো বিগড়ে গেলো, এলোমেলো অনুভূতির জোয়ারের আছড়ে পরার শব্দ স্পষ্ট আহানের ভেতর তোলপাড় তুলছে,,তুরা ঘুমে বুদ থাকলেও আহান তো পুরোপুরি জাগ্রত,সজ্ঞানে। পুরুষালি মনের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের প্রচন্ড বেগের আন্দোলন আহানকে প্রচুর অস্থির করে তুলছে। তবুও তুরার দু’হাতের ঝাপটে ধরা হাত টুকু আলগা করলো নাহ। ঘুমন্ত তুরার মুখটা অদ্ভুত নিষ্পাপ লাগছে আহানের কাছে,যেনো হুট করেই ভীষণ স্নিগ্ধতা ঢেলে পরলো মেয়েটির মুখ জুড়ে

★★★

সকালের রোদ চোখে মুখে উপচে পরতেই ঘুমন্ত অবস্থায় ই চোখ মুখ কুচকে এলো। বিরক্তিতে পাশ ফিরে শুতেই বিন্দু বিন্দু জলকণা ছিটকে পরলো তুরার চোখে মুখে, প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলতেই তুরার চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।
পরপর তিনবার পলক ঝাপটে আবারও তাকালো,,নাহ স্বপ্ন না ঠিক ই দেখছে সে, তুরার ঠিক সামনেই আহান ওর দিকে পিঠ করে কিছু একটা খুঁজছে, উপরে কালো রঙের শার্ট পরা থাকলেও নিচে একটা তোয়ালে ছাড়া কিছুই নেই,,পুরুষালি লোমশ পা পানিতে ভেজা, চুলের আগা থেকেও পানি টপকে পরছে,সারা গায়ের বিন্দু বিন্দু পানিকণা জমে আছে।
সদ্য গোসল করে বেরিয়েছে আহান,,এদিক ওদিক ঘুরে কিছু একটা খুঁজছে আর এক হাত দিয়ে চুলের পানি ঝাড়ছে,,, তুরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো হা করে চেয়ে আছে আহানের দিকে, সারা গাল জুড়ে লাল টুকটুকে আভা ছড়িয়ে গেলেও অপলক চেয়ে রইলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে চুল আচড়ানোর সময় একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তুরার দিকে তাকিয়ে আবারও তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া সরিয়ে নিজ কাজে মনোযোগ দিলো আহান,,কিছুক্ষণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবারও আলমারির সামনে গিয়ে তোলপাড় শুরু করলো।
তুরার ভ্রু কুচকে এলো এবার । সমস্যা কি এই লোকের? সকাল বেলা করে এমন তান্ডব শুরু করলো কেনো,,আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো সারা ঘরে জামা কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে,তার ব্যাগের দিকে চোখ যেতেই দেখলো ব্যাগের ভেতরের জামা গুলোও লণ্ডভণ্ড করে এদিক ওদিক ফেলেছে।
এবার তুরার বেশ মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, সমস্যা কি এই লোকের, কালকেও তার জামা গুলোর যা তা করে ছিটিয়েছে,এবার তো আলমারিতেও রাখেনি তাও এভাবে ছিটিয়ে রাখার কোনো মানে হয়!
আহানের দিকে ফিরে তুরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহান ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়,যার ফলে দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।

-কি সমস্যা?

হাত দুটো কোমরে রেখে এক ভ্রু উচিয়ে প্রশ্ন করলো আহান

-আপনার সমস্যা কি?

তুরা উলটে প্রশ্ন করতেই আহান মুখের বিরক্তির ছাপ আরও গাঢ় করে বললো

-সকাল বেলা উঠেই চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো আমায়,,আবার আমায় ই বলছো কি সমস্যা?

আহানের কথায় তুরার চোখে মুখে ভীষণ বিরক্ত আর অবাকের রেশ পরে। সে কখন চোখ দিয়ে গিললো আজব! এই লোকটার মাথায় সমস্যা আছে নাকি?

-এক তো সকাল বেলা উঠেই ঘরের অবস্থা গোয়ালঘর বানিয়েছেন, আবার বলছেন আমি চোখ দিয়ে গিলছি তাও আবার আপনার মতো জল্লাদকে?

শেষের কথাটা খানিক বিড়বিড়িয়েই বললো তুরা, আহান সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে বললো

-আমার ঘর আমি গোয়ালঘর বানাই আর আস্তাবল তোমার কি তাতে?

-তা ঠিক৷ আপনি গোয়ালে থাকেন আর আস্তাবলে তাতে আমার কি, আপনি আমার জামা কাপড় কেনো ছিটিয়েছেন

আহান আবারও আলমারিতে হাত দিয়ে ব্যস্ত স্বরে বললো

-একে তো আমার ব্ল্যাক প্যান্ট টা খুঁজে পাচ্ছিনা, তার উপর তোমার এসব পকপকানি শুনিয়ে আমার মাথা খারাপ করবা না একদম, তুমি এসে থেকেই আমার ঘরে একটা জিনিস ও ঠিকঠাক পাওয়া যায়না

-তো আপনার প্যান্ট খুঁজে পাচ্ছেন না তাতে আমার কি, আমার ব্যাগ কেনো ঘেটেছেন আপনি?

তুরার কথায় আহান ঘাড় ঘুরিয়ে বললো

-কারণ তোমাকে দিয়ে একদম বিশ্বাস নেই, তোমার ব্যাগেও ঢুকিয়ে রাখতে পারো।

আহানের এমন যুক্তিহীন কথা শুনে তুরার কপালের ভাজ আরও গাঢ় হলো। পাগল নাকি লোকটা? সে কেনো ওই হনুমান টার প্যান্ট নিতে যাবে। সে কি করবে প্যান্ট দিয়ে

-আজব তোহ! আপনার মাথার কয়টা তার কাটা আছে বলুন তো, আমি কেনো আপনার প্যান্ট নিবো। আমি কি প্যান্ট পরি?

আহান তুরার কথায় কান না দিয়ে আলমারি থেকে একটা কালো প্যান্ট বের করলো। এটাই তো কালো প্যান্ট! তাইলে এতক্ষণ কেনো শুধু শুধু তাকে এতগুলো কথা শোনালো? এক আঙুল উচিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুরার চোখ ডান পাশে পরে থাকা তার ব্যাগটার দিকে যেতেই মুখে লাগাম পরে যায়। ঝড়ের বেগে উঠে গিয়ে ব্যাগের কাছে গিয়ে নিচে পরে থাকা জিনিসটা তুলে নিলো ।
তুরাকে এভাবে ছুটে যেতে দেখে আহান ভ্রু কুচকে তাকায় ওর দিকে। তুরা আপাতত দু হাত পেছনে রেখে ফিক্সড একটা লুক দিয়ে চেয়ে আছে আহানের দিকে। এ পর্যায়ে আহানের বেশ সন্দেহ হলো! এই মেয়েকে দিয়ে এক চুল পরিমাণ বিশ্বাস নেই ওর। হাতের প্যান্ট টা খাটের উপর ফেলে এগিয়ে এসে বললো

-কি লুকাচ্ছো তুমি?

তুরা থতমত খেয়ে গেলো আহানের কথা শুনে, হতবুদ্ধির মতো ঘনঘন ঘাড় নাড়িয়ে বললো

-ক কই, কিছু না তো!

-তাহলে পেছনে হাত দিয়ে কি লুকাচ্ছো,দেখি?

-নাহ, আমিতো কিছুই লুকাচ্ছি নাহ, আর আপনার প্যান্ট তো পেয়েছেন, আমি নিশ্চয় আপনার প্যান্ট নেইনি

-এটা সেই প্যান্ট নয় যেটা আমি খুঁজছি। তুমি নিশ্চিত সেটাই লুকিয়ে রেখেছো, কই দেখি?

তুরা এবার তিন কদম পিছিয়ে গেলো, এ কোন গ্যাড়াকলে ফাঁসলো সে,এবার এই লোকটাকে কি করে বোঝাবে সে! আহান তুরার দিকে দু কদম এগিয়ে এসে বললো

-হাত সামনে আনো, কি লুকিয়ে রেখেছো তুমি?

তুরা ভয়ে আরও পিছিয়ে গেলো,পিছাতে পিছাতে একদম দেওয়ালের সাথে মিশে গেলো। আহান একদম তুরার কাছ ঘেঁষে এসে দাঁড়ালো।

-লাস্ট বারের মতো বলছি, কি লুকাচ্ছো দেখাও

-কিছুই লুকাচ্ছিনা,আপনি সরে যান

-দেখাবে না?

-না!

ভয়ে মিনমিনিয়ে বললো তুরা, আহান এবার এক টান দিয়ে তুরাকে সরিয়ে এনে ওর হাত এনে সামনে ধরতেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো, তুরা লজ্জায় ঘাড় নামিয়ে রেখেছে, আহান একবার তুরার দিকে তাকাচ্ছে একবার তুরার হাতের দিকে।
খপ করে হাতটা ছেড়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো, তুরা লজ্জায় বিহ্বলিত হয়ে এক চুল নড়াচড়ার করার শক্তি হারিয়েছে। যেটার ভয় পাচ্ছিলো সেটাই হলো।
জামা কাপড়ের সাথে তার ব্যাবহার্য অতি গোপনীয় জিনিসটাও ব্যাগের বাইরে পরে ছিলো। লাল রঙের ফিতা টা দেখেই সে ছুটে এসে সেটাই লুকাতে চেয়েছিলো। কিন্ত এই ব’জ্জাত লোকটা দেখেই ফেললো। লজ্জায় তুরার মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে, শেষে কি না এই দিন টাও তার দেখতে হলো! আহান বিছানার উপর থেকে প্যান্ট টা নিয়ে গটগট করে ওয়াসরুমের ভেতরে ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো । তুরা কিছুক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে সেও বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। ব্যস অনেক হয়েছে! কিছুতেই আসবে না আর এইরকম হনুমান টার ঘরে,আস্তা বেশরম লোকটা,,ছি ছি ছি!! লজ্জায় তুরার নাক কান সব কাটা যাচ্ছে।।

______

ভার্সিটির সামনে এসে রিকশা টা দাড়াতেই তুরা নেমে ভাড়া টা দিয়ে এক হাতে ব্যাগ টা ধরে এগিয়ে আসলো। তখন ও ঘর থেকে বেরোনোর পর সোজা রাইমার ঘরে এসে গোসল করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরেছে, আজ সে একাই যাবে ভার্সিটিতে। ইমপর্ট্যান্ট ক্লাসের দোহাই দিয়ে নাস্তা না করেই বেরিয়ে পরেছে তুরা, কারণ সে ওই ব’জ্জাত লোকটার সামনে কিছুতেই পরতে চাইনা।
বাবা আজ সকাল সকাল অফিস যাওয়ার দরুন গাড়িতেও আসতে হয়নি তার। তাই নিশ্চিন্ত হয়ে ভার্সিটির ভেতরে পা রাখলো। খানিক এগিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নির্দিষ্ট ক্লাসে ঢুকতেই নজরে আসলো কাঙ্ক্ষিত চেহারা দুটো। ঠোঁট প্রসারিত করে সামান্য হেসেই এগিয়ে গেলো তুরা।
ফারিহা আর সাদমান একসাথেই বসে আছে, এই কয়দিনে তিনজনে বেশ ভাব জমেছে, সাদমান পড়াশোনায় একটু বেশিই সিরিয়াস, তিনজনে তুলনামূলক সেই বেশি ভালো, ফারিহা সবসময় চিল মুডে থাকা মানুষ, আর তুরা মাঝামাঝি পর্যায়ে। এখনো সাদমান বইয়েই মুখ গুজে আছে, আর স্বভাব সুলভ ফারিহা নানারকম উদ্ভট কথা বলে তাকে বিরক্ত করছে। তুরা যেতেই ওকে দেখে ফারিহা বললো

-আরে ডিয়ার, তোমারই তো অপেক্ষা করছি, এসো এসো বস

তুরা হাস্যজ্বল চেহারা নিয়ে বসলো ফারিহার পাশে, সাদমান তুরাকে দেখে বই থেকে মুখ তুলে হাই বললো। তুরাই হেসে হ্যালো বললো।

-আজ এত তাড়াতাড়িই চলে আসলে যে?

ফারিহার কথা শুনে তুরা চুপ করেই থাকলো, সে যে কেনো আগে এসেছে সে ব্যাপার টা তো আর মুখে বলার মতো নাহ, তুরা নিরুত্তর থাকা অবস্থায় ই সাদমান বললো

-আহান স্যারের দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট করেছো তুরা?

-অল্প কিছু, পুরোটা শেষ হয়নি এখনো

সাদমান নাকের ডগায় এসে পরা চশমা টা এক আঙ্গুলের সাহায্য তুলে আবারও বললো

-কালকেই তো সাবমিট করতে হবে, কখন করবে তুমি?

তুরাকে উত্তর না দিতে দিতে পাশ থেকে ফারিহা বললো

-আরে থাম ভাই তোরা, কি অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে পরেছিস, আমিতো এখনো শুরুই করিনি

ফারিহার এমন কেয়ারলেস কথায় সাদমান প্রয়োজনের বেশি অবাক হয়ে বললো

-হ্যাহ? এখনো করোনি? স্যারকে কি সাবমিট করবে তাইলে?

-আজ রাতের মধ্যে করে ফেলবো ইয়ার

দায়সারা ভাব টা বজায় রেখেই বললো ফারিহা। তুরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ক্লাসে আগমন ঘটলো দ্যা মোস্ট ওয়ান্টেড চার্মিং লেকচারার ফর অল,,,ইরফান মাহমুদ আহান। সবাই দাঁড়িয়ে গুড মর্নিং জানালে তুরাও চুপচাপ উঠে দাড়ালো,, মুখ তুলে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো আহানের সাথে তুরার, তৎক্ষনাৎ চোখ নামিয়ে নিলো, ইশ! কি লজ্জা,,এত লজ্জায় এর আগে কখনও পরেনি তুরা। আহান এক পলক চেয়ে অন্যদিকে মন না দিয়ে ক্লাস নেওয়া শুরু করলো।
পুরো এক ঘন্টা দশ মিনিট পর ক্লাসের ঘন্টা বাজলো, আহান সবাইকে বিদায় জানিয়ে বেরোতেই তুরা হাফ ছেড়ে বাচলো। ক্লাস চলাকালীন না চাইতেও বার কয়েক চোখাচোখি হয়েছিলো আহানের সাথে, লোকটার চেহারা দেখলেও তুরার এখন পাতালে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
এরপর আরও দুটো ক্লাস করে ব্রেক টাইম আসতেই ফারিহা আর তুরা নেমে এলো ক্লাস থেকে৷ সাদমান গেছে ডিপার্টমেন্ট হেড মানে আহানের কাছে তার স্টাডি রিলেটেড কিছু প্রশ্ন নিয়ে, ফারিহার ক্ষুধা লাগায় সে নিচে নেমে এসেছে তুরাকে নিয়ে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে,,তুরাকে খাবার আনতে দিয়ে ফারিহা গিয়ে বসলো ক্যাম্পাস ফিল্ডে। তুরা ক্যান্টিন থেকে স্যান্ডউইচ জুস, আর সসের প্যাকেট নিয়ে বেরোতে নিলেই আচানক কারো সাথে ধাক্কা লাগায় হাতের ট্রে ফসকে গিয়ে পরলো আগন্তুকের গায়ে,,ঘটনার আকস্মিকতায় তুরা হতবাক হয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো সাদা শুভ্র শার্টের একদম মাঝ বরাবর বুকের বড় একটা জায়গা জুড়ে সস লেগে ভীষণ ভাজে ভাবে দাগ হয়ে গেছে। ভীষণ অপ্রস্তুত আর আতংকিত চেহারায় মাথাটা সামান্য উচু করে তাকাতেই চক্ষুগোচর হলো একদম অনাকাঙ্ক্ষিত শ্যামরাঙা মুখ খানা।
তুরা হতবাক হয়ে মিনমিনিয়ে বললো

-মাহিদ স্যার!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here