তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব- ১১

0
1120

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ১১

ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই কি মনে করে আবারও ঘরে ফিরে এলেই আহান দেখলো তুরা এখনও ফ্লোরে বসেই মুখ ফুলিয়ে হাত ডলছে

-ফ্লোরে কি আঠা লাগানো আছে?

এক হাত দিয়ে কনুই ডলতে ডলতে আহানের দিকে তাকালো তুরা, ওর কথার আগামাথা না বুঝেই বললো

-মানে?

-মানে বোঝার মতো ঘিলু তোমার মাথায় নেই

পাঞ্জাবীর উপরের বোতাম গুলো এক হাতে খুলতে খুলতে বললো আহান।

-এক তো আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন তার উপর উঠতেও সাহায্য করলেন নাহ,এখন আবার আমায় ই কথা শুনাচ্ছেন

তুরার এমন কথায় আহান ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো তুরার দিকে, কিন্তু তুরার সেদিকে নজর না দিয়ে আবারও হড়বড়িয়ে বলতে শুরু করলো

-আপনি বরই নিষ্ঠুর বিবেকহীন একজন মানুষ, আপনার মনে মায়া দয়া বলতে কিছুই নেই, নিজেই ফেলে দিলেন কই উঠতে সাহায্য করবেন তা না করে খোঁচা মারা কথা বলছেন, ফ্লোরে আঠা লাগানো আছে কি না এ আবার কেমন প্রশ্ন?

আহান প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে একবার তাকালো তুরার দিকে,,মেয়েটাকে কিছু প্রশ্ন করলে মুখ থেকে একটা শব্দ বের করে নাহ,কিন্তু যখন বলে তখন থামে নাহ,যা একেবারেই ভিত্তিহীন, অপ্রয়োজনীয়। তাই তুরার দিকে কান চোখ কোনো টাই না দিয়ে পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো সব খুলে গা থেকে পাঞ্জাবী টাও খুলে ফেললো।
তুরা সেদিকে না তাকিয়ে আবারও মুখ বাকিয়ে বললো

-কি হলো কথা বলছেন না কেনো?

আহান পাঞ্জাবীর নিচে পরা সাদা পাতলা গেঞ্জি টাও খুলে শার্ট টা হাতে নিতেই তুরার এহেন কথায় ওর দিকে তাকালো, এখানো ফ্লোরে বসেই পকপক করে যাচ্ছে মেয়েটা, ভ্রু কুচকে খানিক তাকিয়ে রইলো তুরার দিকে। হাতের শার্ট টা খাটের উপর রেখে এগিয়ে গেলো তুরার দিকে, ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলেই তুরা হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকালো। হুট করে শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো তুরার। এইভাবে খালি গায়ে আহান এসে ওর এতটা কাছে বসবে ও এমনটা আশাও করেনি। চোখ দু’টো বড় বড় করে চেয়ে থাকলে আহান তুরার দিকে হাত বাড়ালেই ভয়ে পিছিয়ে গেলো তুরা।
এই লোকের ভাবসাব কিছুই বুঝছে না তুরা, এমন কেনো করছে লোকটা!
তুরাকে ভয়ে পিছিতে যেতে দেখে আহান মৃদু হেসে এগিয়ে এলো ওর দিকে, মুখের উপর থেকে চুলের গোছা কানের পিছে গুঁজে দিলো । চোখে চোখ রেখে বললো

-এতো উল্টাপাল্টা বকো কিভাবে বলো তোহ? একটু শান্ত ভাবে থাকতে পারো নাহ?

তুরা হা করে চেয়ে আছে, কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে নাহ, এই লোকটা কে? এ সেই জল্লাদ লোকটা হতেই পারেনা,এত শান্ত ভাবে কি করে কথা বলছে? রসগোল্লার মতো চোখ করে পিটপিট করে তাকিয়ে রইলো তুরা, আহানের চোখে কোনো বিরক্তির ছাপ নেই হাসিমুখেই চেয়ে আছে তুরার দিকে। তুরা শুকনো ঢক গিলে বললো

-আ আপনি ঠিক আছেন তো?

-হ্যাঁ একদম, আমার আবার কি হবে

স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলো আহান। তুরার এবার নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে, কথায় কথায় হম্বিতম্বি করা লোকটার এমন সুলভ স্বভাব কিছুতেই হজম হচ্ছে না ওর।

-আপনি ঠিক আছেন তো? ভূতে টুতে ধরলো না তো আপনায়? এতো ভালো করে কথা কিভাবে…

পুরোটা বলার আগেই আহান তুরা মুখ চেপে ধরলো, তুরা চোখ বড় করে কিছু বলার আগেই ওকে টেনে তুললো আহান। তুরা আহানের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলেই আহান আরও শক্ত করে চেপে ধরে ওর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে ধমকে বললো

-চুপ,একদম চুপ! বাইরে ফুপি দাঁড়িয়ে আছে, একটু গন্ডগোল করেছো তো আজ তোমার খবর আছে

আহানের কথা শুনেই ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালেই দেখতে পেলো দরজার পর্দার আড়ালে মিনু ফুফুর শাড়ির একটা অংশ দেখা যাচ্ছে। তুরা নিজেকে সামলে চুপ করেই দাঁড়িয়ে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফুফু সরে যেতেই আহান তুরাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো।
তখন দরজার বাইরে দিকে নজর যেতেই ফুফুকে লক্ষ্য করেছিলো আহান। ফুফুকে তার হাড়ে হাড়ে চেনা, তাদের উপর যে জহুরি নজর ফেলেছে সেটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে আহান। আর ফুফু সত্যটা জানলে বাড়ি শুদ্ধ লোক নিয়েই ঝামেলা শুরু করবে,যা আহান একেবারেই চাইনাহ।
চুপচাপ সরে গিয়ে খাটের উপর থেকে হালকা ল্যাভেন্ডার রঙের শার্ট টা তুলে নিয়ে গায়ে জড়ালো। তুরা এক কোণে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, ভীষণ লজ্জা লাগছে তার, এক তো লোকটা খালি গায়ে তার উপর এভাবে কাছে এসে…ভাবতেই তুরার গাল নাকের পাটা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো, ভীষণ অপ্রিতিকর পরিস্থিতিতে পরলো সে।

-এভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো তুমি?

গমগমে গলার স্বর শুনে তুরার লজ্জা এক মুহূর্তেই উবে গেলো। লোকটা আচ্ছা ব’জ্জাত তোহ! সবসময় এমন ধমকা ধমকি করাই লাগে
চোখে মুখে বিরক্তি নিয়েই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো তুরা

-তোমার ভাবাভাবি শেষ হলে সরে দাঁড়াও, স্টুপিড!

তুরা সরে দাঁড়ালেই আহান বেড সাইড টেবিল থেকে ঘড়িটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো, তুরা চুপচাপ তাকিয়েই রইলো, এই লোকটা এমন কেনো, তুরা তার জীবনে এমন রসকষহীন কাঠখোট্টা লোক দেখেনি!

-আহ,বউ তোমার হাতের বেশ গুণ আছে, আমার মাথার ব্যাথা একেবারে উড়ে গেছে যেনো। দোয়া করে দেই, স্বামীর আদর সোহাগে ভরে থাকো

মিনু কথায় প্রথমে খুশি হলেও শেষের কথায় মুখটা একেবারে ফেটে যাওয়া বেলুনের মতো চুপসে গেলো তুরার। সন্ধ্যা বেলায় মিনু ফুফু তুরাকে ডেকে বসার ঘরে নিয়ে যায়, হাতে এক বাটি তেল ধরিয়ে তার মাথায় মালিশ করে দিতে বলে, বিকের থেকেই তার মাথাটা ধরেছিলো৷ তখন তুরাকে এই জন্যেই ডাকতে গিয়ে আহানের সাথে দেখে ফেরত এসেছিলো। আহান বেরোতেই তুরাকে ডেকে নিয়ে আসে।
তুরার মুখটা এমন চুপসানো দেখে মিনু ফুফু বলে

-কি ব্যাপার বউ, আমার দোয়া পছন্দ হলো না বুঝি?

তুরা কোনো রকম হেসে বলে

-আরে না না, তেমন কিছু না

-এদিকে আসো তো, বসো আমার পাশে

তুরা গিয়ে বসলো মিনুর পাশে, মিনু তুরার মুখে হাত দিয়ে বললো

-দেখি, মুখটা এমন চুপসে গেলো কেনো বউ,, আমার বাবু কি তোমায় আদর সোহাগ করে না?

মিনুর কথায় তুরা লজ্জার ঘাড় আরও নামিয়ে নিলো। ভীষণ অপ্রস্তুত লাগছে তার, এসব কি বলছেন ফুফু,আদর…আর ভাবতে পারলো নাহ তুরা, ওই ব’জ্জাত লোকটার কথা মনে পরলেই শুধু ধমকানির কথায় মাথায় আসে,

-শোনো বউ, তোমরা আজকালকার মেয়েরা শুধু পড়াশোনা আর নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকো। এমনটা করলে কিন্তু মোটেও হবে নাহ, তুমি সময় দিলে কাছে কাছে থাকলে তবেই তো প্রেম আরও গভীর হবে

তুরা চোখ দু’টো ছানাবড়া করে চেয়ে রইলো, ইয়া মা’বুদ এসব কি শুনতে হচ্ছে তাকে, ফুফুকে কি করে বুঝাবে

-ম মানে ফুফু আম্মা, আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন নাহ

-তুমি চুপ করো, তেমন না তো কি, সবসময়ই তো দেখি এদিক ওদিক থাকো। হয় রাইমার সাথে গল্প করো নাহ তো ঘুরঘুর করে বেড়াও, এসব কিন্তু মোটেও ভালো কথা নয়।

-তাহলে কি করবো ফুফু আম্মা?

মিনুর কথার প্রেক্ষিতে বোকা বোকা মুখ করে জিজ্ঞাসা করলো তুরা

-কাছে কাছে থাকবে বাবুর, ও বাসায় থাকলে যেনো তোমায় এদিক ওদিক ঘুরঘুর করতে না দেখি। তোমাদের বিয়েটাও তো হটকারিতায় হয়েছে, ভালোবাসা বাড়াতে তো কাছে কাছে থাকতে হবে, ওর কি দরকার, কখন কি লাগবে এসব খেয়াল করবে বুঝেছো মেয়ে?

ফুফুর এমন ভারি ভারি কথার কোনো মাথামুণ্ডুও বুঝলো না তুরা, চুপচাপ মাথা নাড়ালো।

-কি ব্যাপার! ফুফুকে পেয়ে তো আমায় ভুলেই গেছিস তুরা, সেই সন্ধ্যা থেকে তোকে পাওয়াই যাচ্ছে নাহ।

রাইমা নেমে এসে ফুফুর পাশে বসে বললো কথাগুলো।

-আর এই যে তুমি, সবসময়ই ভাইয়ের বউকে নিজের সাথে ধরে বেঁধে রাখলে হবে? ওদের ও তো একে অপরকে সময় দেওয়া উচিত

মিনুর কথায় রাইমা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তুরার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে আপাতত বিব্রতবোধ নিয়ে শাড়ির আঁচলে আঙুল পেচাচ্ছে। বেশ অবুঝের মতো করে বললো

-ম মানে?

-ও বাবা, মানে আবার কি? এই যে এই মেয়েটা তো সারাদিন ই তোমার সাথেই ঘুরঘুর করে, আমার বাবুর দেখাশোনা করবে কে, স্বামী স্ত্রী এর মতো তো কোনো ভাবসাব ও দেখলাম নাহ

ফুফুর কথা শুনে রাইমা কি বলবে ভেবে পাইনা। ফুফু তো আর জানে নাহ তার গুণধর ভাই বিয়ে টাকেই মানে নাহ আবার ভাবসাব!

-না মানে সেরকম কিছুই না ফুফু আসলে তুরা তো আমার ছোট বোন ই। আর আমারও গল্প করার লোক নেই এবাড়িতে। তাই আমার সাথেই..

-তা বলে ননদিনীর সাথে থাকলেই হবে,, আর তোমার ও তো খবর পাইনা কিছু। সেই
তোমার বিমানের ও তো খোঁজ নেই, বিলেত গিয়ে কি পালিয়েছে?

ফুফুর কথা শুনে এবার রাইমার মুখেও লাজের আভাস দেখা গেলো। মাথা টা নিচু করে আলতো স্বরে বললো

-বিমান না ফুফু ইমান

-হ্যাঁ হ্যাঁ তাই। সেই কবে শুনলাম আংটি পরিয়ে রাখলো। বছর তো কয়েক পেরিয়ে গেলো সে আসবে কবে আর বিয়া শাদি কবে করবে

-এইতো আর কয়েক দিন আপা, আপনাকে বলবো বলবো করে বলাই হয়নি। ইমানের বাবা ফোন করেছিলো। তারা এই মাসের শেষের দিকেই আসতে চাই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে

চায়ের ট্রে টা টি-টেবিলের উপর রেখে বললো রুবি খাতুন। নিজেও বসলেন সামনের চেয়ার টাতে। হাস্যজ্বল চেহারাই আবারও বললেন

-ইমান এ মাসের মধ্যেই ফিরবে দেশে, ওরা আর দেরি করতে চাইনা। বিয়েটা খুব জলদিই সেরে ফেলতে চাই।

-বাহ, খুব ভালো কথা। সময় ও তো কম হলো নাহ। বছর দুয়েক আগেই তো আংটি বদল হলো। এবার বিয়েটাও হওয়া উচিত। ছোট ভাইয়ের বউ এসে গেলো অথচ এখনো বড় বোনের বিয়ে হলো না এটাও তো ভালো দেখায় নাহ

বলেই রুবি খাতুনের সাথে আরও সাত পাচ নিয়ে কথা বার্তা শুরু করলো মিনু। বিষয় হলো রাইমার বিয়ে। রাইমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তারই পছন্দের ছেলের সাথে। ভার্সিটি থেকেই তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো, পড়াশোনা শেষে বাড়িতে জানিয়ে তাদের আংটি বদল করিয়ে রাখলেও ইমান তার পড়াশোনার খাতিরে আপাতদৃষ্টিতে ইংল্যান্ডের প্রবাসী।
দিদুন আর মা বেশ কয়েকবার এ নিয়ে গল্প করেছিলো তুরার কাছে।
তুরা ওখানে আর অপেক্ষা না করে একটা চায়ের কাপ হাতে তুলে গেলো নিচতলার একদম বা পাশের ঘরটাতে। দিদুনের পায়ের ব্যাথার জন্য সে ঘরেই আছে তার জন্যেই চা নিয়ে গেলো।

~

রাতের খাওয়া দাওয়া,আর বাকি সব পর্ব চুকিয়ে ঘরে এলো তুরা। রাত খুব বেশি নয়, সাড়ে এগারোটা প্রায়। ঘরে ঢুকেই দেখলো আহান বিছানায় পা টান করে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে চেয়ে আছে।
লোকটা বাড়ি ফিরেছে রাত নয়টাতে, এসে খাবার ও খাইনি বাইরে থেকে নাকি খেয়ে এসেছে। বিকেলের পর থেকে তুরার সাথে আর আহানের কোনো রকম কথাও হয়নি । দরজা খোলার শব্দে একবার আড়চোখে চেয়ে আবারও নিজ কাজে মন দিলো আহান।
তুরা নিঃশব্দে এগিয়ে গিয়ে আহানের পাশে কফির মগটা রেখে সোফার পাশে রাখা নিজের ব্যাগটা থেকে একটা জামা বের করে ওয়াসরুমের ভেতরে ঢুকলো। দুপুর থেকে শাড়ি পরে আছে, আর সামলানো সম্ভব নয়, গলায় হাতে সোনার জিনিস গুলো পরায় সারা শরীরে কেমন চুলকানি ধরেছে। এসব পরার অভ্যাস মোটেও নেই ওর। শাড়িটা পালটে একেবারে শাওয়ার নিয়েই বেরোলো তুরা। শাড়িটা বারান্দায় মেলে ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে লাগলো।
পুরোটা সময় আহান চোখ বাকিয়ে চেয়ে রইলো তুরার দিকে। এই মেয়ের ভাবসাব কেমন ঠেকছে তার কাছে, এভাবে নিজে থেকে কফি এনে দিলো৷ ঘরে এসে কোনো কান্ড না ঘটিয়ে চুপচাপ নিজের কাজ করে যাচ্ছে?
ল্যাপটপে তাকিয়েই ভাবতে ভাবতে কফিতে শেষ চুমুক টা দিলো আহান। এই মুহূর্তে এই জিনিসটার ভীষণ দরকার ছিলো তার। ভার্সিটির বেশ কয়েকটি অনলাইন প্রজেক্ট তৈরি করার দায়ভার এসেছে তার উপর। তার সাথে এবার ফার্স্ট ইয়ারের সকলের রেজিস্ট্রেশন চেক এর সব কাজের ও সকল দ্বায়িত্ব তার ঘাড়ে এসেছে। ল্যাপটপের সাটার নামিয়ে কাপটা পাশে রেখেই চোখ দু’টো বার কয়েক ঝাপটালো। ঘাড় টাও কেমন টনটন করছে,, কোল থেকে সব নামিয়ে রেখে ঘাড় টা এদিক ওদিক ঘুড়াতেই বাম পাশেই চোখ আটকে গেলো আহানের, হুট করেই কেমন ধক করে উঠলো ভেতরটা!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক পাশে ঘাড় কাত করে চুল ঝাড়ছে তুরা, ক্রীম কালারের একটা পাতলা ফিনফিনে সালোয়ার কামিজ তার পরনে, গোসল করে আসায় ভেজা চুলের পানিতে পিঠ থেকে কোমর অবদি ভেজা। আর সেই ভেজা জামা পিঠে একদম আষ্টেপৃষ্টে লেপ্টে আছে, যাতে মেয়েলি সুডৌল কোমরের ভাজ একেবারে স্পষ্ট দৃশ্যমান,
ধপ করে চোখ সরিয়ে নিলো আহান। মমন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে ছিলো সে,,পুরুষালী নজরে তুরার শরীরের আগাগোড়া না চাইতেও পরখ করেছে সে। নিজেকেই কেমন বেহায়া মনে হচ্ছে এবার, এভাবে তাকানো মোটেও ঠিক হয়নি।
তুরা চুপচাপ খাটে এসে একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরলো। আহান আরেকবার আড়চোখে চেয়ে নিলো তুরার দিকে, মেয়েটাকে আজকে কেমন অন্যরকম লাগছে। প্রথম দিনে আহানের দেখা অল্পবয়সী বাচ্চা মেয়েকে ছাড়িয়ে ইদানীং যুবতী তুরাকে নজরে আসে তার। আহান চুপচাপ বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।
এই বিয়েটা সে মানে নাহ, হুট করে হওয়া এমন বিয়েটার কোনো মানে নেই তার কাছে। তাই সম্পর্কের মায়াজালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলার আগেই ছাড়িয়ে নিতে চাই। নাহ,আর সময় নেওয়া যাবে না, একটা সিদ্ধান্তে আসা খুব দ্রুতই দরকার। আহান চাইনা তার জন্য কোনো মেয়ে আশা ধরে বসে থাক ঘর বাধার, সবার ই নিজস্ব জীবন আছে,ভালো ভাবে বাচার অধিকার আছে। এভাবে মিথ্যা সম্পর্কে জড়িয়ে রেখে সে কারো জীবন থমকে রাখতে চাইনাহ।
বিভিন্ন চিন্তাধারায় মত্ত্ব হয়ে সিগারেটে টান ধরলো আহান, নিকোটিনের ধোঁয়া টানা তার নিত্যদিনের অভ্যাস নয়,তবে কিছু সময় একান্তই বিভোর থাকতে এর চেয়ে ভালো সঙ্গী আর কিছু আছে বলে মনে হয়না আহানের।
হঠাৎ মেয়েলি স্বরের ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজে ধ্যান ভাংলো আহানের, আওয়াজ টা তারই ঘর থেকে আসছে না? হাতের জলন্ত সিগারেট টা ফেলে ঘরে আসতেই দেখলো বিছানায় গোল হয়ে বসে আছে তুরা, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদার দাপটে বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

হীডিংঃ জানি একটু দেরিই হয়ে যাচ্ছে পর্ব দিতে, সময় স্বল্পতার কারণে এমন বিলম্বিত হওয়াই আমি সত্যিই দুঃখিত, আপনারা রাগ করবেন নাহ তো?

হ্যাপি রিডিং 🌼

Humu_♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here