#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব-১৭
-কি বলছেন স্বামী,এখানে জ্বিন ভূত আছে?
বলেই তড়িঘড়ি করে আহানের কাছে সরে এলো তুরা,গোল গোল চোখ এদিক ওদিক চেয়ে বলল
-আপনার ঘরে জ্বিন ভূত থাকে আপনি আমাকে আগে কেন বলেননি
আহান বিরক্তিতে চ জাতীয় শব্দ করে বলল -যেখানে স্বয়ং তোমার মত একটা পেত্নী থাকে সেখানে ভূত কি করে আসবে
তুরা এবার চোখ ছোট করে আহানের দিকে তাকালো ব’জ্জাত লোকটা যে তাকে হেনস্থা করছে তা বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে সে
-নিন আপনার শরবত
বলেই আানের সামনে শরবতের গ্লাসটা ধরল আহান আড়চোখে চেয়ে গ্লাসটা হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে বলল
-উদ্ধার করেছ আমাকে
তুরা একটা মুখ ভেংচি দিয়েই গটগট করে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে, এর সামনে থেকে অপদস্ত হওয়ার কোনো মানেই হয়না
সময়টা রাত দশ টা পেরিয়েছে,বসার ঘরে সকলে বসে আছে। রুবি খাবারগুলো টেবিলে এনে একে একে সাজাচ্ছে, রাইমা ফিরেছে সন্ধ্যার পর মিনু ফুপু আর ইনসাফ সবাই সোফাতে বসেই কথোপকথন করছে আর চুমকি রুবিকে হাতে হাতে সাহায্য করছে
আজ সবাই সবার আলোচনা বিষয়বস্তু হলো রাইমার বিয়ে যে ব্যাপারে কথা বলতেই বাবা সবাইকে ডেকেছে। ইনসাফ গলা খাকারি দিয়ে বলল
-মানের বাসা থেকে ওর বাবা ফোন করেছিল। খুব শীঘ্রই নাকি ফিরবে ইমান, তাই ওরা আর দেরি করতে চায় না যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাজটা শেষ করতে চাই। ইমানের দাদীর শরীরটাও নাকি ইদানিং ভালো যায় না সে মৃত্যুর আগে ইমানের বিয়ে দেখে যেতে চাই তাই তারা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ের কাজ শুরু করার প্রস্তাব জানিয়েছে
উপস্থিত সকলেই চুপচাপ শুনছে ইনসাফের কথা,দিদুন চোখের চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে বলল
-এত বেশ ভালো কথা, অনেকদিনই তো হল এখন ওদের বিয়েটাও হওয়া উচিত
মিনু ফুফুও বেশ প্রফুল্ল চিত্তে বলল
-এ তো অনেক ভালো কথা, আমিতো রুবিকে বলেই ছিলাম মেয়ের বিয়ের কথা।
বলে আবারও বলল
-তাহলে উনারা বিয়ের দিন তারিখের কথা কিছু বলেছে ভাই?
ইনসাফ মিনুর দিকে ফিরে বলল
– হ্যাঁ ওরা বলল ওরা কালকে আসতে চায় এখানে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে। আমিও বলেছি আমাদের পক্ষ থেকে কোন আপত্তি নেই,
বলে দিদুনের দিকে তাকিয়ে বলল
-মা তোমার কোন সমস্যা নেই তো?
দিদুন বার কয়েক ঘার নাড়িয়ে বলল
-সমস্যা কেন হবে মাশাআল্লাহ আমার দিদি ভাইয়ের বিয়ে হবে সে তো অনেক ভালো কথা
রুবি টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে বলল
-তা ওরা কাল কখন আসবে সে বিষয়ে কিছু বলেছেন?
-হ্যাঁ, ওরা কাল দুপুরেই আসবে
-তাহলে তো অনেক কাজ আন্টি। ও বাড়ি থেকে অনেক মেহমান আইবো অনেক রান্নাবান্না ও করতে হইব
চুমকির কথায় রুবিও বেশ ব্যাস্ত হয়ে পরলো এ নিয়ে। মেয়ের বিয়ের ব্যাপার কোনো খামতি রাখা চলবে না।
সবার এতক্ষণে কথোপকথনে নীরব শ্রোতা তুরা আর রাইমা। তুরা মনে মনে বেশ খুশি হয়ে শুনলেও রাইমার মুখে লজ্জার ভীষণ ছাপ। সারা মুখ জুড়ে একটা আনন্দের রেখা ছুঁয়ে আছে তুরা পাশ থেকে রাইমাকে একটা খোঁচা দিতেই রাইমা কপট রাগ দেখিয়ে তুরার দিকে তাকালেও তুরার মুখভঙ্গি দেখে ফিক করে হেসে ফেলল। তবে আহান এত কিছুর মাঝেও নিচে নামেনি সে এখনো উপরে তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত, মাঝে একবার তুরা তাকে ডাকতে গেলেও তাকে ধমক দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই তোর আর যায়নি। লোকটা ভারী ব’জ্জাত। সব সময় হম্বিতম্বি করে আজব লোক একটা।
সকলে নানান আলোচনার সাথে খাওয়া-দাওয়া শেষ ঘরে গেল, সবাই বেশ উৎফুল্ল চিত্তে আছে, রাইমার বিয়ে বছর দুয়েক আগে ঠিক থাকলেও এবার কবুল বলার পালা। ইনসাফ মাহবুব এর একমাত্র মেয়ে বলে কথা বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই যে সবকিছু হবে সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
খাওয়া শেষে রুবির সাথে সবকিছু গুছিয়ে রেখে তুরা একটু দেরিতেই ঘরে গেল, হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ নিয়ে। ঘরে ঢুকে আশপাশ তাকিয়ে কোথাও আহানকে দেখতে পেলো না। কফিটা টেবিলে রেখে এগিয়ে গিয়ে দেখলো আহান বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে, তার দিকে পিঠ করে থাকায় তুরাকে দেখতে পাইনি। তুরা নিঃশব্দে ওখান থেকে এসে ওয়াসরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে কফির কাপটা না দেখে বুঝলো মহাশয় এসে নিয়ে গেছেন তার কফি। তাই আর কোনো কথা না বলে বিছানা গুছিয়ে শুতে নিলো। শুয়ে বেশ কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও ঘুম এলো না তুরার৷ আহান এখনো ফেরেনি ঘরে। তুরার এবার বেশ ভয় ভয় লাগলো,, ছোট থেকেই ভীষণ ভীতু স্বভাবের মেয়ে তুরা,একা কখনোই ঘুমাতে পারেনা। তার উপর বারান্দায় আহানের ও কোন সাড়াশব্দ নেই। উঠে বসে পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করল,কিন্তু বারান্দার লাইট টাও নেভানো, এই লোকটা এত অন্ধকার করে রাখে কেনো সবকিছু তুরা বুঝে না। আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে এগিয়ে গেল বারান্দার দিকে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে মানুষের চিহ্নমাত্র দেখা যাচ্ছে নাহ। ঘরের লাইট টাও নেভানো। অন্ধকারে হাতরে এগিয়ে গেলো তুরা হুট করেই তুরার ভীষণ ভয় হতে লাগলো এখানেই তো ছিল লোকটা কই গেল?
-আ আপনি কোথায়?
আমতাআমতা করে বলে আরেকটু এগিয়ে গেলো তুরা,কোনো উত্তর ও আসছে নাহ দেখে তুরার এই মুহূর্তে সব ভয় জুড়ে বসলো। অন্ধকারে কোন দিকে হাঁটছে বুঝতে না পেরে এলোমেলো পা ফেলে এগিয়ে গেলো। হঠাৎ নিজের কাধের উপর গরম নিঃশ্বাসের আছড়ে পরা অনুভূত হলো তুরার। প্রথমে মনের ভুল ভাবলেও গরম উত্তপ্ত নিঃশ্বাসের প্রগাঢ়তা ক্রমেই গাঢ় হলো। যেনো সুচের মতো ঢুকে যাচ্ছে ঘারে কাধে। ভয়ে শুকনো ঢক গিললো তুরা, এই গরমেও সারা শরীরে হীম হাওয়া বয়ে গেলো, পদক্ষেপ দুকদম পেছাতেই শক্ত কিছুর সাথে পিঠ ঠেকলেই তুরা ঘাবড়ে চেঁচিয়ে উঠতে নিলে কেও পেছন থেকে মুখটা চেপে ধরলো,,তুরা হাত পা এলোপাতাড়ি ছুড়াছুড়ি করলে, কানের কাছে এসে কেও হিসহিসিয়ে বলল
-হুসস,একদম চেঁচামেচি করবে না। এত রাতে এখানে কেনো এসেছ
আহানের কণ্ঠস্বর শুনে যেনো তুরার জানে পানি ফিরলো। প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলো সে। আহানের হাত সামান্য আলগা হতেই তুরা পেছন ফিরে ঝাপটে ধরলো আহানকে। এমন আকস্মিক জড়িয়ে ধরায় আহান কোনো রকম প্রতিক্রিয়া না করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। থেকে থেকে কেঁপে উঠছে তুরা, বেশ ভয় পেয়েছে বুঝতে পেরে আলতো ভাবে হাত রাখলো তুরার পিঠে
-ভয় পেয়েছ?
নরম কণ্ঠে শুধালো আহান। তুরা ভাঙা ভাঙা গলায় বলল
-আমি আপনাকে কতবার ডাকলাম। আপনি কেন উত্তর দেননি আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম
বলেই দু’হাতের আচড় আরও গাঢ় করে বসিয়ে দিল আহানের পিঠে,আহান চোখ জোড়া বন্ধ করে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে নিঃশ্বাস টেনে নিলো। মেয়েটার এভাবে হুটহাট জড়িয়ে ধরা ইদানীং আহানের ভেতরটাকে নাড়িয়ে দেয়। শক্ত পুরুষালি মনের খোলস টা নরম হাতের স্পর্শে যেন চুড়চুড় হয়ে যায়। মেয়েটা কি বোঝে না এভাবে হুটহাট জড়িয়ে ধরতে নেই,ছুঁয়ে দিতে নেই! নিজের ভেতরে আঁছড়ে পরা সকল প্রবল উচ্ছ্বাসকে দমিয়ে কণ্ঠের খাদ আরও নামিয়ে বলল
-চলো ঘরে যাই
তুরা তাও ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো উত্তরহীনা। প্রত্যুত্তর না পেয়ে আহান ঘাড় টা নামিয়ে ধীর কণ্ঠে বলল
-এই মেয়ে বারান্দা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেব কিন্তু,ঘরে চলো!
আহানের নরম কণ্ঠের ধমক যেনো নিতান্তই অদ্ভুত ঠেকলো তুরার নিকট, এভাবে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে ও আবার কেও ধমক দেয় বুঝি? নিকষ অন্ধকারেও মুখ উচিয়ে বলল
-আপনি সবসময় কেনো বকাবকি করেন, আমায় তো চাচীও এত বকা দেয়নি
বাচ্চা বাচ্চা গলায় তুরার কথা শুনে,আহান নিঃশব্দে হাসলো। যে হাসির শব্দ হয়না। রাতের শান্ত পরিবেশে আহানের নিঃশব্দের হাসিটাও যেনো এক রূপ ঝংকার তুললো। তুরাকে বুক থেকে সরিয়ে হাত ধরে ঘরে এনে বলল
-শুয়ে পরো,রাত হয়েছে
-আপনি ঘুমাবেন না?
আহানের কথার সাথে সাথেই বলল তুরা, আহান খানিক থমকে তুরার দিকে চেয়ে কিছু একটা ভেবে ছোট করে হু বলেই ওয়াসরুমের দিকে গেলো। তুরা আহানের যাওয়ার পানে চেয়ে আবারও খাটে এসে শুয়ে পরল। বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরলো আহান। তুরা ওপাশে মুখ করে শুয়ে আছে, ওর কোনো নড়চড় না দেখে নিঃশব্দে এসে শুয়ে পরল পাশে, ডিম লাইটের মৃদু আলোতে তুরার ছোট্ট মুখ খানা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আহান খানিকটা সময় নিয়ে চেয়ে রইলো তুরার ঘুমন্ত চেহারার দিকে। ইদানীং নিজেকে কেমন খাপছাড়া লাগে তার, সাজানো গোছানো গম্ভীর স্বভাব টাও যেনো চূড়ান্ত বেইমানি করে, না চাইতেও হাজারো বেনামি চিন্তাভাবনা ঘিরে ধরে থাকে, যার সবটাই এই মেয়েটাকে কেন্দ্র করে। ফট করে মুখ ফিরিয়ে অন্যপাশে ঘুরলো আহান। সে কোনো ভুল করতে চাইনা। এই অহেতুক চিন্তাভাবনা গুলোকে পশ্রয় না দেওয়াটাই উত্তম। পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করার মিনিট খানেক বাদে একটা ছোট হাতের খামচি আঁকড়ে ধরল তার পিঠ। ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরলে দেখল তুরা ঘুমের ঘোরেই আরও সরে এসেছে আহানের দিকে। এক হাত দিয়ে খামচে ধরে আছে আহানের টি-শার্ট। আস্তে ধীরে হাত ধরে সরানোর চেষ্টা করলেও তুরা ছাড়লো না বরং আরও কাছে সরে এলো। মেয়েটাকে আহান যতই দূরে সরাতে চাই ততই কাছে চলে আসছে, এই যে আহানের পিঠে মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে আছে, আহান ইচ্ছে করলেও সরাতে পারছে না। কেমন একটা ঘোর লাগা কাজ করলো। এদিকে ঘুরে তুরাকে এক হাতে আগলে নিয়েই চোখ বুজলো।
বেশ কিছুক্ষণ সময় পেরোলে আহানের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসতেই চোখ খুললো তুরা। ঘাড় টা সামান্য তুলে তাকালো মৃদু টিমটিমে আলোতে আহানের মায়া ভরা মুখ খানার দিকে। ইচ্ছে করেই ঘুমের ভান ধরে সরে এসেছে সে, ইদানীং এই গম্ভীর স্বভাবের লোকটাকে তার ভীষণ অন্যরকম লাগে, নাম না জানা হরেক রঙে রাঙা অনুভূতি গুলো এই লোকটার নামেই ডানা ঝাপটাচ্ছে। আহানকে জড়িয়ে ধরে অদ্ভুত শান্তি লাগা কাজ করে তুরার মনে। নিজেকে সুরক্ষিত লাগে বুকটার মাঝে।
চিকন আঙ্গুলের হাত টা আহানের খোঁচা খোঁচা দাড়ি আবৃত গালটাতে রেখে আলতো স্পর্শে ছুঁয়ে দিয়ে আবারও আহানের বুকে মাথা রাখলো। হোক না একটু ছলনা করে, বা ঘুমের ঘোরে তাতে যদি হৃদয়ে প্রশান্তি জুড়ানো স্পর্শ পাওয়ার সৌভাগ্য মিলে তাতে ক্ষতি কি!
~~
উষ্ণ মৌসুমে সকালের হাল্কা ঠান্ডা বাতাসে পর্দার উড়াউড়ি আর পাখিদের কিচিরমিচির কলধ্বনিতে ঘুম হালকা হয়ে এলো আহানের। চোখ খুলে তাকাতেই রোদের নরম আলোতে চোখ মুখ কুচকে এলো। ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে দেওয়ার ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো নয়টা বেজে পনেরো মিনিট। বেশ বেলা করে ঘুমিয়েছে সে। ভার্সিটি থাকলে এত বেলা করে উঠা হয়না। রাইমার শ্বশুরবাড়ি থেকে মেহমান আসার খবরটা তাকে কালই দিয়েছে বাবা,এ ব্যাপারে আলোচনা করে সে ভার্সিটির অফিসিয়াল সাইটে মেইল করে আজকে অনুপস্থিত থাকার ব্যাপার টা জানিয়েছে৷ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ঘর টা ফাঁকা।তুরা নেই,পাশেই বেড সাইড টেবিলে কফির মগটা রাখা। আহানকে বিরক্ত করার মতো সকল কাজ মেয়েটা করলেও তার সাথে আরেকটা কাজ ও অনেক ভালো মতো করে,,আহানের সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে রাখা থেকে শুরু করে তার টাইম টু টাইম কফিটাও তুরাই দেয়, যার কারণে ইদানীং নিজের কিছুই করা লাগে না আহানের। ফ্রেশ হয়ে এসে কফিটা হাতে নিয়ে কাপে চুমুক দিয়ে বারান্দায় গেলো।
এক হাতে দড়ি নিয়ে আবারও কালকের মতো লাফাচ্ছে তুরা, উদ্দেশ্য তার দোলনা বানানো, ব্যস অনেক হয়েছে, খাম্বা গাছটা পেয়েছে কি আজ তুরা দোলনা বেধেই ছাড়বে, দড়িটা গুছিয়ে হাতে নিয়ে ওড়না পেচালো কোমরে, দুই হাত দিয়ে গাছটা আঁকড়ে ধরে উপরে উঠতে লাগল।
এতক্ষণ বেশ কৌতূহলী দৃষ্টিতে চেয়ে তুরার কাজকর্ম দেখছিল আহান,এবার তুরাকে গাছে উঠতে দেখেই ভ্রু কুচকে এলো,কফির মগটা রেখে নিচে নেমে এলো। আহানকে এভাবে নেমে বাইরের দিকে যেতে দেখে আমেনা খাতুন বলেন
-এভাবে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছো দাদুভাই
-বাড়িতে একটা বাঁদর এনে রেখেছ,ওইটার বাঁদরামি থামাতেই যাচ্ছি।
বলে না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেলো।
তুরা অনেক্ষণ ধরে চেষ্টা করে গাছের সবচেয়ে নিচু ডালটাই উঠতে পেরেছে, ব্যস এবার দড়িটা বাধতে পারলেই তার কাজ শেষ। গাছের মোটা ডালটাতে দড়িটা বাধা হলেই তুরা আনন্দে খিলখিল করে ওঠে, এবার সে মহা আনন্দে দোলনা চড়তে পারবে। কিন্তু তুরার এ আনন্দ বেশিক্ষণ ধরলো নাহ। নিচে তাকাতেই যেন মাথাটা চক্কর দিল। দোলনা বাধার জন্য হইহই করে গাছে তো উঠে গেল,এখন নামবে কি করে, নিচে তাকালেও তো মাথা ঘুরছে। এখান থেকে পরলে নিশ্চিত ঠ্যাং দুটো ভাংবে। দু একবার পা নামিয়ে নামার প্রচেষ্টা করলেও ব্যার্থ হলো। তুরার বেশ কান্না পাচ্ছে, নামবে কি করে এখন!
-কি হলো, বাঁদরের মতো লাফঝাপ করে উঠে তো গেলে এখন নামো!
চিরচেনা পুরুষালি গলার আওয়াজে তুরা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো আহান একদম তার সামনের আমগাছটাতে হেলান দিয়ে দু হাত বুকে গুজে দাঁড়িয়ে। আহানকে দেখে তুরার চোখে মুখে আতংক ছড়িয়ে গেল,এক তো গাছ থেকে নামতে পারছে না আর নামলেও এই ব’জ্জাতটা যে কি করবে যে ভেবেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
Humu_♥