তুমি_আমি_দুজনে #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান পর্ব- ৫১

0
1002

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৫১

তুরা ঢুলু ঢুলু পায়ে ঘরে ঢুকলেই আহান পেছন থেকে ধপ করে দরজাটা বন্ধ করে দিল। হকচকিয়ে তাকালো তুরা, আহান চোখ দু’টো ছোট করে নিচের ঠোঁট টা কামড়ে রেখে ভীষণ কড়া চাহনিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তুরা বিব্রত হলো খানিক, বেটা রেগে আছে? কিন্তু কেনো? ও তো আজ একটাও অকাজ করেনি!
আহানকে এগিয়ে এসে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তুরা ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো।
মিনিট পাঁচেক বাদে ফ্রেশ হয়ে বেরলে দেখল আহান খাটে আধশোয়া হয়ে সেই বইটা নাড়াচাড়া করছে। তুরা চুল বেঁধে খাটের উপর উঠে বসলো,আহান তাকাচ্ছেও না ওর দিকে। নিজের মতো বই খুলে পায়ের উপর পা তুলে নাচাচ্ছে।
তুরার মনোক্ষুণ্ণ হলো খানিক, একটা বার ও তাকাচ্ছে না তা বলে? রাইমার সামনেও কেমন ধমকা ধমকি করলো। পরক্ষণেই ভাবলো তাতে কি ভালই তো হয়েছে, তুরা তো নিজেই পালিয়ে বেরাচ্ছিল আহানের থেকে।
কিন্তু তাও এবার তুরার একেবারেই ভাল্লাগছে না। আহান কেনো তাকাচ্ছেনা ওর দিকে? কেনো কথা বলছে না,কেনো জড়িয়ে ধরছে না!
মন খারাপ হলেও প্রকাশ করলো না,ওপাশ করে শুয়ে পরলো চুপচাপ, কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও ঘুম এলো না,একবার ঘুম ভেঙে যাওয়ায় কিছুতেও আর ঘুম আসতে চাইছে নাহ।
শুয়ে থেকে খানিক ছটফট করে উঠে বসলো তুরা, আড়চোখে তাকালো এখনো বই নিয়ে স্থির বসে থাকা আহানের পানে।
রাগ অভিমানে মিশ্রিত বুদ অনুভূতি হলো। কথা বলার প্রবল ইচ্ছে হলেও এক প্রকার জড়তা কাজ করছে। বারবার সন্ধ্যায় ওই মহিলার বলা কথা গুলো মনে পরছে,তবে সত্যিই কি বাচ্চা না দিলে আহানও তাকে ভালোবাসবে না? এখনই তো কেমন গোমড়ামুখে বসে আছে। আর কিছুদিন গেলে তো তাকাবেও নাহ! অহেতুক চিন্তায় মাথা জড়ো হলো তুরার,আড়চোখে তাকাচ্ছে বারবার আহানের দিকে

-এভাবে চোরের মতো তাকাচ্ছ কেনো

বইয়ে চোখ রেখেই বলল আহান,তুরা চমকালো কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ না করে ধিমি স্বরে বলল

-ঘুমাচ্ছেন না কেনো?

-তাতে তোমার কি, তুমি চুপচাপ ঘুমাও

কাঠ কাঠ গলায় বলল আহান,তুরার মন আচমকা খারাপ হয়ে গেলো আহানের এরূপ বাচনভঙ্গি দেখে। ঠোঁট গুঁজে রইলো। আবারও একইভাবে বলল

-কি হয়েছে আপনার,এমন কেনো করছেন?

আহান তবুও তাকালো নাহ,বইয়ে মুখ গুঁজে রেখে পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বলল

-আমার কি হয়েছে তাতে কি কারো যায় আসে, আপুর সাথে থাকো গিয়ে

তুরা ছলছল নয়নে তাকালো। আহান এভাবে কেনো কথা বলছে,একটু না হয় থেকেছিলো রাইমার সাথে। তীব্র মন খারাপ ঠেলে তবুও ধরা গলায় বলল

-আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন,আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন আপনি?

বলেই ঠোঁট ভেঙে বসে রইল। আহান বইটা ভাঁজ করে তাকালো তুরার দিকে,বেচারি মুখ ঠোঁট ফুলিয়ে বসে আসে,চোখ দুটো পানিতে টইটম্বুর যেনো একটি টোকা দিলেই গড়িয়ে পরার অপেক্ষায়। আহান ফোস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো, এই মেয়ে পাগলী!
হাত বাড়িয়ে তুরার কোমর চেপে এক টান দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলো, বৃদ্ধাঙ্গুলি ওর থুতনিতে রেখে আলতো ঘষে দিয়ে বলল

-এত বোকা কেনো তুমি? কিছু বোঝো না?

তুরা প্রত্যুত্তর করলো না,নিঃশব্দে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। আহান থুতনিতে চাপ গাঢ় করে বলল

-আরেকদিন যদি দেখেছি আমাকে ছেড়ে অন্য ঘরে শুয়েছ তাহলে আজ তো শুধু চিমটি দিয়েছি এবার ঠ্যাং খোরা করে দেব

তুরার চোয়াল আলগা হয়ে গেলো, চমকিত দৃষ্টিতে ছিটকে সরে গেলো। কড়া চোখে তাকিয়ে আহানের দিকে আঙ্গুল উচিয়ে চিকন কণ্ঠে মৃদু চেঁচিয়ে বলল

-এই আপনি! আপনি আমাকে চিমটি দিয়েছিলেন তাই তো? কত্ত বড় খারাপ হইলে মানুষ এ ধরনের কাজ করতে হবে ভাবা যায়!
আমাকে চিমটি দিয়ে আবার আপুর সামনে আমাকেই আবল তাবল বললেন। খুব তো? আপনি আসলেই একজন ব’জ্জাত মানুষ

একদমে হড়বড়িয়ে বলল তুরা, আহান জবাব দিলো না,স্থির বসে রইলো বিছানার হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে। স্থবির চাহনিতে তাকিয়ে শুধু তুরার কথা গুলোই শুনছে। প্রত্যুত্তর না পেলেও তুরা আবার বলল

-কি হলো এখন চুপ করে আছেন কেনো। আপনার মতো জাঁদরেল আমি দুটি দেখিনি,আপনি সবসময় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন, ঘুমটা তো ভেঙে দিয়েছেন ই আবার পেটটাও ফুটো করে দিয়েছেন ইস এখনো ব্যথা করছে আমার

বলেই ব্যথাতুর মুখশ্রীতে তাকিয়ে পেটে হাত বুলালো।আহান চাপা হাসি দিলো,তবুও জবাব করলো নাহ। স্তিমিত হয়ে খানিক অবলোকন করলো তুরার অস্থিরচিত্ত। জোরে সোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল

-ঝগড়া করো নাহ। কাছে আসো, জড়িয়ে ধরো দুটো চুমু দাও তো!

হুট করেই একরাশ অস্থিরতা জেঁকে ধরলো তুরাকে, লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। নড়াচড়া করলো না একচুল ঠাঁই বসে রইলো। স্থিততার সঙ্গে কথার খেই ও হারিয়ে ফেলেছে। আহান তুরার বাহু ধরে টেনে আনলো,সচকিত নয়নে তাকালো তুরা। আহান তুরার মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করে কপালের চুল কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলল

-আমার বলা দুটো শব্দেই তো মিইয়ে যাও,আবার ঝগড়া করতে আসার সাহস কিভাবে হয়

তুরা আর তাকিয়ে থাকতে পারলো নাহ,শ্বাস প্রশ্বাসের নিনাদে অতিষ্ঠ বোধ করলো, সরে আসতে গেলে আহান এক হাত কোমরে আরেক হাত ঘাড়ের পেছনে রেখে পেচিয়ে ধরলো।

-আমার বউ,আমি চিমটি দেব,কামড় দেব, আদর দেব যা খুশি করবো তোমার কি হুহ!

কথার সাথে খুব তীব্র ভাবে তুরা অনুভব করলো আহানের গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের নিনাদ,উত্তপ্ত গরম শ্বাসে বুক ভারি হলো তারও,ঘন হয়ে আসলো প্রশ্বাস। আহান মুখ এগিয়ে আনলো, তুরার গালের সাথে গাল ঘষা দিয়ে মোহাগ্রস্থ গলায় বলল

-সারাদিন পালিয়ে বেড়াও,এখন একটা চুমু দাও তো,বড় করে

তুরার দম বন্ধ হয়ে এলো, এলোথেলো অনুভূতিতে ঝিলিক দিয়ে উঠছে সমস্ত কায়া! খামচে ধরলো আহানের পরনের শার্ট। ঘাড় মৃদু কাত করে তুরার গালে অধর ছোঁয়ালো আহান। কয়েকপল স্থির হলো নরম গালে আহানের পুরু স্পর্শের স্থায়িত্ব।
ঘাড়ের পেছনে হাত রেখে শুইয়ে দিলো তুরাকে। ওর ভরে আসা চোখে অনিমেষ চেয়ে বলল

-দাও না রে একটা চুমু

মুদে আসলো চোখ,খিঁচিয়ে ধরলো নয়ন। আহানের শব্দ বাক্য নেশার মতই লাগছে৷ ঘাড় উচালো সামান্য কম্পিত অধরযুগল এগিয়ে উষ্ণ ঠোঁটের কাঁপা স্পর্শে ছুঁয়ে দিলো আহানের থুতনি, তুরার এহেন হৃদয়স্পর্শী ছোট্ট চুম্বনে বেসামাল হলো আহান,,
এক ঝটকায় অবস্থান ঘুরিয়ে তুরার ছোট শরীর টা রাখলো নিজ বুকের উপর, তুরা সরে আসতে গেলে ঘাড়ের পেছনে হাত সন্তপর্ণে রেখে টেনে নিলো নিকটে, পুরু ঠোঁটের মাঝে আবদ্ধ করলো তুরার পাতলা কম্পিত অধর যুগল, হৃদবক্ষে টাইফুন তুললো তুরার, আহানের উথাল-পাতাল চুম্বনে শ্রান্ত হয়ে গেলো নরম দেহ।
নরম আবেশে ছুঁয়ে দিতে লাগলো তার ওষ্ঠদ্বয়। হাতের স্পর্শ পিঠ থেকে নামতে নামতে কোমর পর্যন্ত গেলো, নরম দেহে আরও চাপ দিয়ে মিশিয়ে নিলো নিজের ভেতর, অবাধ্য স্পর্শের বিচরণ ছড়িয়ে গেলো সারা শরীরে।
বদনে ঝিলিক দিয়ে উঠলো তুরার সমগ্র দুনিয়াটা। মিশে যেতে লাগলো,হারিয়ে যেতে লাগলো স্বামী নামক মানুষটির সর্বত্র ভালোবাসায়,অন্য এক দুনিয়ায়

••••

হালকা কমলা বর্ণের আকাশে তুলার ন্যায় মেঘের বিচরণ, সূর্যের অস্তিত্ব সারা ধরণীতে ছড়িয়ে দিতে মত্ত। প্রস্ফুটিত ফুলের মতো স্নিগ্ধ সকাল। একজোড়া চড়ুই দাঁড়ানো গাছটার ডালে বসে ঝিমুচ্ছে। ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে দোতালা বাড়িটার সামনে দাঁড়ালো। সিড়ি বেয়ে উঠে দরজায় বেল চাপতেই মিনিট খানেকের মধ্যে খুলে গেলো।

-আরে সাদমান আজ সকাল বেলায় চলে এলে যে?

-জি আন্টি,আসলে পরীক্ষা শেষ তো তাই ভাবলাম এই কয়দিন ঝুমঝুমকে সকালে পড়িয়ে যাই, যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে

রিমঝিম কে ঝুমঝুম বলায় বিব্রত হলো নাহ রিমঝিমের মা অনিতা, এই কয়দিনে এটুকু ভালই বুঝতে পেরেছে যে সাদমানের রিমঝিম নামটা মনে রাখা হয়তো বেশিই কষ্টসাধ্য, বারবারই ঝুমঝুম বলে ফেলে।

-আরে না না,কোনো আপত্তি নেই। বরং আরও ভালো, পরে পরে ঘুমাই বেলা ভরে তুমি রোজ এসো এই সময়ে বাবা

বলেই দরজা থেকে সরে সাদমানকে জায়গা করে দিলো। সাদমান ঢুকতে ঢুকতে অনিতা আবারও বলল

-তুমি বসো,আমি এক্ষুনি ওকে ডেকে পাঠাচ্ছি

সাদমান ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে পড়ার ঘরে টেবিলে গিয়ে বসলো। কৌতুহলী দৃষ্টি কিছু একটার খোঁজে নজর বুলালো সারা বাড়িতে,তবুও ক্ষান্ত হলো না যেনো।
চুপচাপ টেবিলে বসে রিমঝিমের নোটবুক দেখতে লাগলো

-সাদমান ওয়াহিদ, রাইট?

ভরাট বয়স্ক পুরুষালি ব্যক্তির কণ্ঠস্বরে চমকিত নয়নে ঘুরে তাকালো, উপস্থিত ব্যক্তিকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো,

-বসুন বসুন স্যার। দাঁড়াতে হবে নাহ

বলেই এগিয়ে আসলো হালকা কমলা রঙের ফতুয়া আর সাদা প্যান্ট পরিহিত হাট্টাকাট্টা গড়নের লোকটি। ইনি ফারিহার বাবা,বেশ কয়েকবার দেখলেও সামনা-সামনি কথা হয়নি সাদমানের। ফিরোজ ইসলাম এগিয়ে এসে সামনের চেয়ার টাতে বসতে বসতে বলল

-আপনার আপত্তি না থাকলে কিছুক্ষণ গল্প করি আপনার সাথে? আপনার স্টুডেন্ট আসলেই চলে যাব,সিউর

সাদমান অপ্রতিভ হলো,তবুও সৌজন্য হেসে,ঘাড় নাড়িয়ে বলল

-না না আপত্তি নেই বসুন নাহ। আর আমাকে তুমি করেই বলবেন,আপনি আমার গুরুজন

ভদ্রলোক মাথা নাচিয়ে হাসলো। বেশ গুরুগম্ভীর ভঙ্গিমা লোকটির কথাবার্তায়, সকলের সাথে খুব কম কথা বলেই সাদমান জানে,আজ হঠাৎ তার সাথে কথা বলার কারণটা ঠিক বোধগম্য গলো নাহ।

-তো, মিস্টার সাদমান ওয়াহিদ। বাড়িতে কে কে আছে?

-মা আর সাত বছর বয়সী ছোট বোন

-বাহ বেশ বেশ৷ তোমার মা কে আমার সালাম জানাতে ভুলো না কিন্তু

সাদমান হাসলো শুধু, আবারও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। এক মাঝে অনিতা বেগম এসে দুজনকে চা দিয়ে গেলো।
ফিরোজ ইসলাম একের পর এক নানান প্রশ্ন করছে সাদমানকে আর সাদমান উত্তর দিচ্ছে, ভেতর ভেতর জড়তা কাজ করলেও তা অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট নাহ। বেশ মিনিট দশেক কথা বলার পর রিমঝিম এলো ঢুলতে ঢুলতে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে জোর করেই তার ঘুম ভাঙানো হয়েছে, রিমঝিম এলেই ফিরোজ ইসলাম উঠে দাঁড়ালেন

-আচ্ছা আমি তাহলে আসি,তোমার অনেকটা সময় নিয়ে ফেললাম

সাদমান হেসে ভদ্রতা মূলক কথা বলে রিমঝিমকে পড়ানো শুরু করলো। পড়ানোর মাঝে হঠাৎ করে জিজ্ঞাসা করলো

-তোমাদের বাড়িতে কি গেস্ট এসেছে কোনো? মানে কোনো কাজিন?

কলম থামিয়ে তাকালো রিমঝিম, ঘুমের দরুন চোখ দু’টো এখনো ফোলা, আলসে স্বরে বলল

-হ্যাঁ, ওই ফারিহা আপুর মামাতো ভাই, চিটাগং থাকে

বলে আবারও লিখা শুরু করলো, সাদমান খানিক চুপ থেকে আবারও বলল

-ওহ,তোমার আপু কোথায়?ও কি কাল কোথাও গেছিলো?

-আপু তো ঘুমাচ্ছে, কাল কোথায় গেছিলো কিনা জানি নাহ,তবে বাড়ি ফিরেছিলো বিকেলে

বলেই ফট করে সাদমানকে জিজ্ঞাসা করলো

-কিন্তু আপনি এসব জিজ্ঞাসা করছেন যে? আপনার বান্ধবীর সাথে কি আপনার কথা হয়না?

সাদমান ভড়কালো,তবে তা দমিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল

-না কিছু না,তুমি ম্যাথ করো

-আপনি কি এখন থেকে রোজ এত সকালেই পড়াতে আসবেন স্যার?

ভীষণ আলস্যের ভঙ্গিমায় জিজ্ঞাসা করলো রিমঝিম, সাদমান ঘাড় উপর নিচ করে সম্মতি দিলো। রিমঝিমের মুখাবয়ব ভীষণ অসন্তষ্ট দেখালো,এত সকাল করে উঠে পড়তে বসার চেয়ে জঘন্যতম বিড়ম্বনা আর দুটো নেই বলে তার ধারণা।

•••

দুপুর বেলা করে খাওয়া শেষে ড্রয়িং রুমেই বসে সকলে, শুধু শুধু নয়,ইনসাফ মাহবুব ডেকেছে,কিছু দরকারী কথা বলবেন বলে। আহান ঘরে বসে ভার্সিটির পরীক্ষার খাতা গুলো দেখছিলো,এত ব্যস্ততার মাঝে ডাকায় তিনি বেশ বিরক্ত তার মুখাবয়ব দেখেই স্পষ্ট। সিঙ্গেল সোফায় বসে চুপচাপ পায়ের উপর পা তুলে নাচাচ্ছে। তুরা আর রাইমা সোফাতে বসে ফুসুরফাসুর গল্প শুরু করেছে

-মিনু ফোন দিয়েছিল আজ সকালে,তোমরা এ ব্যাপারে কিছু জানো মা?

ইনসাফ মাহবুব এর কথায় সচকিত হলো আমেনা খাতুন, পান খাওয়া অবস্থায় ই বললেন

-কই না তো, কিছু বলেছে?

বার কয়েক মাথা নাড়ালো ইনসাফ। এক হাতে হেলান দিয়ে বসে বলল

-সকালেই ফোন করেছিলো ও, ফুয়াদ মানে ওর বড় ছেলের বিয়ে। মাস দুয়েক আগেই ফিরেছে বিদেশ থেকে। হুট করেই বিয়ের আয়োজন করেছে। সকালে মিনু ফোন দিয়েছিল সকলকে কালকেই রওয়ানা দিতে বলেছে

-কালকে,খাগড়াছড়ি তো অনেক দূরের পথ হুট করেই?

রুবি খাতুন প্রশ্ন করলে ইনসাফ বলল

-হ্যাঁ তা তো বুঝেছি। কিন্তু মিনুকে তো চেনোই। বারবার বলেছে,তোমাদের ও ফোন দিবে বলল ব্যস্ততার জন্য সময় করে উঠতে পারেনি। কিছুদিন আগেই এসে ঘুরে গেলো ও,যতই দূর হোক বড় বোন তো। না গেলে তো কষ্ট পাবে।

-তোমরা কি কালই যাচ্ছ তাহলে বাবা?

আহানের প্রশ্নে তুরা মুখ ফিরে তাকালো,ওর চোখে মুখে কেমন বিরক্তি। ইনসাফ মাহবুব বলল

-আমরা না,তুমিও যাচ্ছ। ওরা বারবার করে বলে দিয়েছে তুরা আর তোমাকে যাওয়ার কথা

-আমার ভার্সিটি এক্সামের খাতা গুলো এখনো দেখা হয়নি। ছুটিও বেশিদিন নেই। এর মাঝে বিয়েতে গেলে আমার কাজ গুলো কে করবে?

এতক্ষন চুপচাপ শুনলেও রুবির মুখ থেকে খাগড়াছড়ির নাম শুনে তুরার চোখ বড় হয়ে গেলো, আহানকে আর বলতে না দিয়েই ও লাফিয়ে বলল

-খাগড়াছড়ি? বিয়ে খাগড়াছড়িতে হবে?

-হ্যাঁ মিনু ফুফুর বাড়িই তো খাগড়াছড়িতে

রাইমার কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে উঠলো তুরা, ব্যকুল হয়ে বলল

-বাবা আমি যাব,আমার কত শখ খাগড়াছড়ি ঘুরতে যাওয়া কক্ষনও যাইনি আমি চলো না চলো না কালই যাই

তুরার উচ্ছ্বসিত হওয়া দেখে হাসলো সকলে। ইনসাফ আহানকে উদ্দেশ্য করে বলল

-দেখ তুরাও যেতে চাই। এ সুযোগে ঘোরাঘুরি ও হবে, বিয়ের পর থেকে কোথাও ই তো যাইনি ও।এ নিয়ে আর কোনো না শুনব না আমি

বলেই উঠে দাঁড়ালো। ফোন বের করে কথা বলতে বলতে ঘরে গেলে,অন্যরাও উঠে দাঁড়ালো, অনিচ্ছা সত্ত্বেও আহানকেও মানতে হলো।
চোখ মুখ কুচকে আছে। তবে তুরার আর কি। ও তো আনন্দে রীতিমতো নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#Humu_♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here