#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব পনেরো
১৫.
তারপর বেশ কিছুদিন পর।রাফিয়া রিজু চলে গিয়েছে নিজেদের বাড়ি। সকাল বেলা নাস্তা খেতে খেতে ফায়াদ তার মোবাইল স্ক্রল করছিল। তখনই ম্যাসেজ এলো। ম্যাসেজ টায় অভিযোগের সুর,
‘আমি এখনো শাড়ি পড়ে আপনার সাথে ঘুরতে যাইনি।রিকশায় বসে ঘুরা হয় নি খোলা চুলে। এক প্যাকেট বাদাম শেয়ার করে খাওয়া হয় নি দুজনের৷ হাতে হাত ধরে হাটা হয় নি কোনো অজানায়। কবে হবে?’
পড়তে পড়তে নাস্তা শেষ করলো সে। তারপর হাত ধুয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে ফিরতি বার্তা পাঠালো,
‘ শাড়ি পড়ে ঘুরা টা কি নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে?’
উত্তর আসলো,
‘ঘুরা নিয়ম না হলেও, শাড়ি পড়ে পেমিককে ইমপ্রেস করাটা নিয়ম।’
মুচকি হাসি ফুটলো ফায়াদের মুখে। সেটাই তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করছেন ফারদিন আহমেদ। নিজের স্ত্রীর উদ্দেশ্য বললেন,
‘ঘটনা তাহলে সত্যি!’
আখি বেগম খোচা মেরে বললেন,
‘তোমার ছেলে বুঝতে হবে তো।’
ফারদিন আহমেদ এবার নজর ঘুরিয়ে স্ত্রী এর দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘খোচাতেই হবে আমাকে তাই না?’
আখি বেগম ঠেস মেরে বললেন,
‘খোচাচ্ছি না সত্যি বলছি। আমি কি ভুলে গেছি নাকি যে তুমি আমাকে ভালোবেসে কিসব পাগলামি করছো! আমার ছেলে তো তেমন কিছু এখনো করে নি।ওহ না! করেছে তো, ছোট টা!’
ফারদিন আহমেদ কপাল চাপড়ালেন।লাখে এক পিস বউ উনার!সহ্য তো করতেই হবে।
ফায়াদ রুমে পৌঁছে উত্তর দিল,
‘আচ্ছা বুঝলাম। আসো তাহলে ইমপ্রেস করো।অপেক্ষায় রইলাম।’
তারপর সে মোবাইল রেখে রেডি হয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
এদিকে অপরাজিতা ফায়াদের কথা ধরে বসে আছে। এখন তো তাকে শাড়ি পড়তে হবে। ফায়াদকে দেখাতে হবে।
শাড়ি টাড়ি নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড তার। তখন থেকে শুরু করে দিল সে রেডি হওয়া। একবার এই শাড়ি পড়ছে আরেকবার আরেকটা। এমন করে অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলল সে। আবির এসে বড় বোনের এমন এলোমেলো ঘর থেকে বলল,
‘আপু এতো শাড়ি বের করছো কেন?’
অপরাজিতা ব্যস্ততা নিয়েই হেয়ালি করে বলল,
‘তোর বউকে দিব।’
ছোট আবির বউ শুনে টমাটো এর মতো লাল হয়ে গেল। কি বুঝলো কে জানে! সে গেল মায়ের কাছে। মা কে বলতে হবে তো। রামিসা বেগম তখন পানি খাচ্ছিলেন। আবির গিয়েই লাজুক ভাবে বলল,
‘আম্মু জানো আপু আমার বউ এর জন্য শাড়ি বের করছে। ‘
ছেলের কথা শুনে রামিসার যেন গলায় পানি আটকে যাবার উপক্রম।কোনোরকম পানিটুকু খেয়ে বললেন,
‘তুই আসলেই বলদ। তোর বোন অতিরিক্ত বুদ্ধি নিয়ে ঘুরে। আর তোর মাথায় একেবারেই নাই কিছু। আজ স্কুলে যাস নাই ভালো কথা, কোনো উলটা পালটা কাজ করলে পিটাবো দেখিস!’.
বলে হাটা ধরলেন মেয়ের রুমের উদ্দেশ্যে।মেয়ে আবার কি করছে তা দেখার জন্য। রুমের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই মাথায় হাত তার। এ কী অবস্থা রুমের? সারা বিছানা শাড়ি চুড়ি দিয়ে ভরা৷
‘এগুলো কি?’
অপরাজিতা মা কে দেখেই হাসলো খুব সুন্দর করে। তারপর বলল,
‘একটা শাড়ি পছন্দ করে দাও তো আম্মু। শাড়ি পড়ে ঘুরতে যাবো আজ ফ্রেন্ড দের সাথে। অনেকদিন ছবি তুলি না শাড়ি পড়ে।’
মেয়ের কথা শুনে ভালোভাবে পরোখ করলেন মেয়ের মুখ। আসলেই ফ্রেন্ডদের সাথে যাবে কিনা তা বোঝার জন্য। সন্দেহ করে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘আসলেই ফ্রেন্ড দের সাথে?’
অপরাজিতা সুইটভাবে হেসে বলল,
‘হ্যা।তোমাকে পিকচার দেখাবো নে৷’
রামিসা আর আপত্তি করলেন না। ছেলেমেয়েদের বেধে রাখা উনার পছন্দ না৷
‘কালো টা পড়তে পারিস৷ কিন্তু বাহিরে আকাশে তো মেঘ করছে এখন কোথায় যাবি?’
অপরাজিতা কালো শাড়িটা নড়াচড়া করতে করতে বলল,
‘সেটা টেনশন করো না আম্মু।কালো শাড়িটায় সুন্দর লাগছে তো! থ্যাংকুউউ আম্মু!’
রামিসা হাসলেন মেয়ের কান্ডে। প্রথম সন্তান হওয়ার দরুন মেয়েটাকে অনেক যত্নে বড় করেছেন। এখন বিপথে না গেলেই হয়। চিন্তা হয় মেয়েটাকে নিয়ে তার।বড় হচ্ছে যে।
অপরাজিতা দুপুরের মধ্যে রেডি হয়ে গেল। কালো শাড়ি, হাত ভর্তি কালো কাচের চুড়ি। কাজল দিল, ঠোটে ডার্ক খয়েরি লিপস্টিক। মেয়েকে দেখে রামিসা মনে মনে আবেগে আপ্লুত। এতো সুন্দর মেয়েটা তার!আল্লাহ তাকে এতো সুন্দর একটা মেয়ে দিয়েছে!মনে মনে বার কয়েক বললেন, আলহামদুলিল্লাহ মাশাল্লাহ।
অপরাজিতা মায়ের কাছে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কেমন লাগছে আম্মু?’
রামিসা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘অনেক সুন্দর।কারো নজর না লাগুক।’
অপরাজিতা যখন বাসা থেকে বের হবে তখন রামিসা মেয়েকে বললেন,
‘সাবধানে থাকবি। আর আমার পছন্দ নয় এমন কিছু যেন আমি না শুনি। ‘
অপরাজিতা হাসিমুখে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো। বাসা থেকে বের হতেই রিকশা নিল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।রিকশায় বসে স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। সাবধানে থাকতে হবে।
অপরাজিতা হাসপাতালে পৌছাতেই ফায়াদ অপরাজিতা কে দেখে অবাক। সে ভাবে নি অপরাজিতা এভাবে হাজির হয়ে যাবে। ফায়াদকে অবাক হতে দেখে অপরাজিতা খিল খিল করে হেসে দিল। বলল,
‘ইমপ্রেস হয়েছেন?’
ফায়াদ কপালে আঙুল ঘেঁষে বলল,
‘ইমপ্রেসের থেকে বেশি অবাক হয়েছি। বলেছি বলে আজই আসবে? আমার তো ছুটি নেই আজ। আর বাহিরে মেঘ দেখেছো?’
অপরাজিতা বলল,
‘দেখেছি। আর আপনার আজ ছুটি নয় আমি জানি। আমি তো ইমপ্রেস করতে এসেছি।’
বলেই হেসে দিল আবার। ফায়াদের এখন লাঞ্চ টাইম চলছে। সে অপরাজিতাকে বলল একটু বসতে। তারপর বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। অপরাজিতা ঘুরে ঘুরে দেখেছে কেবিন টা। এর আগেও দেখেছে। সব ডাক্তারি জিনিসপত্র।
ফায়াদ এলো প্রায় আধাঘন্টা পর। এসে জিনিস পত্র ঘুছিয়ে রেখে অপরাজিতাকে বলল,
‘চলো।’
অপরাজিতা জিজ্ঞেস করলো,
‘কোথায়?’
ফায়াদ অপরাজিতার হাত ধরে দাড় করিয়ে বলল,
‘এতো সুন্দর করে আমাকে পটাতে আসছো, আমারো তো উচিৎ পটে গিয়ে তোমাকে ঘুড়তে নিয়ে যাওয়া তাই না?’
অপরাজিতা তাকিয়ে আছে হাতের দিকে। তার কিশোরী বয়স থেকে কল্পনা এই হাত ধরে পথ এগিয়ে চলা। ফায়াদ অপরাজিতা কে হাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরলো। তার পর হাটা শুরু করলো। পা মিলাতে হলো অপরাজিতাকেও। অপরাজিতা কে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো,
‘কোথায় যাবা?’
‘আপনার তো আজ ছুটি নেই তাহলে? ‘
‘ছুটি নিয়েছি বাকি হাফ দিনের।এখন বলো কোথায় যাবে?’
‘দূরে কোথাও।’
গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে ফায়াদ শান্তস্বরে বলল,
‘ভয় লাগে না আমার সাথে তোমার?’
অপরাজিতা সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
‘আমি আপনাকে ভালোবাসি। ভালোবাসলে ভয় লাগে না। বিশ্বাস করি আমি আপনাকে।’
মুচকি হেসে গাড়ি চালানো শুরু করলো ফায়াদ।
বেশ কিছুটা পথ অতিক্রম করার পর অপরাজিতা বলল,
‘শপিং মলে চলেন’
ফায়াদ ভ্রু কুচকে বলল,
‘আবার শপিংমল কেন? কি লাগবে?’
অপরাজিতা ঝটপট উত্তর দিল,
‘কালো শার্ট’
এবার ফায়াদ অপরাজিতার দিকে একবার তাকালো। তারপর বলল,
‘তুমি শার্ট দিয়ে কি করবা?’
‘আমার জন্য না। আপনার জন্য’
‘আমার কালো শার্ট আছে বাসায়।’
অপরাজিতা বিরক্তি নিয়ে বলল,
‘বাসায় থাকলে আমি কি করবো। এখন তো নাই। আমি কালো শাড়ি পড়ছি আপনাকেও কালো পড়তে হবে।’
বলে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। কি আর করার? গাড়ি ঘুরিয়ে শপিংমলে গিয়ে একটা কালো শার্ট কিনতে হলো তাকে। ফায়াদ যখন কালো শার্ট দেখছিল তখন আশে পাশে অপরাজিতা কাউকে খুজছিল। হঠাৎ পেয়েও গেল। তার মতো বয়সেরই একটা মেয়ে শাড়ি পড়ে এসেছে। অপরাজিতা ফায়াদকে টেনে নিয়ে গেল তার কাছে। তারপর মেয়েটাকে বলল,
‘এক্সকিউজ মি আপু? একটা কথা বলার ছিল।’
মেয়েটা অপরাজিতা দিকে তাকিয়ে বিনয়ী ভাবে বলল,
‘জি বলুন।’
অপরাজিতা ফায়াদকে দেখিয়ে বলল,
‘এই যে উনাকে দেখছেন! উনি আমার বয়ফ্রেন্ড হয়। আমাকে ডেয়ার দিয়েছে আমি নাকি কোনো অপরিচিত মেয়েকে আমার সাথে ছবি তুলাতে পারবো না।কেউ নাকি আমার সাথে ছবি তুলবে না।আপনি কি আমার সাথে একটা ছবি তুলবেন?’
ফায়াদ অপরাজিতার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো।সে কখন ডেয়ার দিল। সে এতো বিস্মিত হলো যে কি বলবে তাই খুজে পেলো না।অপরাজিতা সেদিকে পাত্তা দিল না।মেয়েটা একটু ইতস্তত বোধ করছে।হুট করে কেউ এসে ছবি তুলবে বললেই তো হলো না। অপরাজিতা বুঝতে পেরে মোবাইল বের করব নিজের ফেসবুক আইডি দেখিয়ে বলল,
‘এইটা আমার আইডি। আমি **** কোচিং সেন্টার এ পড়ি।উলটা পালটা কিছু করলে আমার বিরুদ্ধে কেস করে দিয়েন!’
অপরাজিতা এতো কিউট ভাবে বলছে যে মেয়েটা রাজি হয়ে গেল। অপরাজিতা ফায়াদকে তার ফোনটা হাতে ধরিয়ে বলল,
‘নিন ছবি তুলে দিন।’
ফায়াদ উপায় না পেয়ে বিনা বাক্যে ছবি তুলে দিল৷ অপরাজিতা মেয়েটার সাথে আরো ২ মিনিট কথা বলে বিদায় নিল। তারপর ফোন নিয়ে পিকচার টা চেক করলো।ফায়াদ অপরাজিতাকে ভালোভাবে দেখে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘এসব কি ছিল? আমি কখন ডেয়ার দিলাম?’
অপরাজিতা পিক দেখতে দেখতে বলল,
‘আম্মুকে বলেছি ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছি৷ পিক দেখাতে হবে তো?’
ফায়াদ আশ্চর্য হয়ে বলল,
‘সিরিয়াসলি?’
অপরাজিতা অবাক হওয়ায়ার ভান করে বলল,
‘এতো অবাক হওয়ার কি আছে? আমি কি বান্ধবী নিয়ে ঘুরছি নাকি?আর আমার তেমন কোনো বান্দবী নাই।যারা ছিল স্কুল লাইফে ওরা আমাকে দেখে হিংসা করতো।তাই বাদ দিয়ে দিয়েছি।’
‘তাই বলে যাকে তাকে নিয়ে ছবি তুলবে?’
‘ইয়াপ। চলেন আরেকজন এর সাথে ছবি লাগবে।’
ফায়াদ মনে মনে বলল,
‘কি সাংঘাতিক বুদ্ধি! এই মেয়ের মাথায় এগুলো আসে কোথা থেকে!’
তারপর আর কি? করলো অপরাজিতা তার মন মতো আর ফায়াদ সাথে থেকে সাপোর্ট করলো।তারপর তারা শার্ট কিনে বেরিয়ে এলো।
কালো শার্ট পড়ে আবার গাড়ি চালানো শুরু করলো ফায়াদ। গাড়িতে উঠার পর থেকে অপরাজিতা তাকিয়েই আছে ফায়াদের দিকে ।অপলক দৃষ্টিতে দেখেই যাচ্ছে সে ফায়াদকে।
অনেকটা সময় পর ফায়াদ বলল,
‘চোখ সরাও’
তাকিয়ে থেকেই অপরাজিতা আস্তে করে সুধালো,
‘হুম’
ফায়াদ তাকিয়ে দেখে অপরাজিতা আগের মতোই চেয়ে আছে। সে আবার বলল,
‘এখনো তাকিয়ে আছো কেন?’
অপরাজিতা ধীর স্বরে বলল,
‘সুন্দর জিনিস দেখবো না?’
ফায়াদের ছোট উত্তর,
‘আয়না দেখ’
অপরাজিতা ফুসে উঠে বলল,
‘নিজেকে কেন দেখবো? চুপ করে গাড়ি চালান তো’
ফায়াদ হাসলো।বোকা মেয়েটা ধরতেই পারলো না ফায়াদের কথা।বুঝতে পারলে খুশিতে নাচতো। হয়তো খানিকটা লজ্জাও পেত।
‘আজকাল তোমার সাহস বেড়ে গেসে।আমার সাথে সাথে কথা বলো এখন তুমি’
অপরাজিতাও খেয়াল করলো আসলেই তো।অপরাজিতা শাড়ির আচল পেচাতে পেচাতে উত্তর দিল,
‘কারন এখন আমি জানি আপনার আমার প্রতি অনুভূতি আছে। তাই আমার সাত খুন মাফ’
ফায়াদ গাড়ি থামালো।অপরাজিতার গোছানো চুলগুলো আরো একবার গুছিয়ে দিয়ে ঠান্ডা আওয়াজে ভীষণ আদুরে স্বরে বলল,
‘যাও করে দিলাম মাফ’
অপরাজিতা একটু লজ্জা পেল। ফায়াদ গাড়ি থেকে নেমে অপরাজিতার পাশে গিয়ে দরজা খুলে দিল৷ অপরাজিতা বের হলো। তারা যে জায়গায় এসেছে তা মূলত একটা পার্কের মতো। অনেক বড়। আশে পাশে তেমন মানুষ নেই।হয়তো ছুটির দিন নয় বলে। অপরাজিতা আশে পাশে তাকাচ্ছে। চারিদিকে গাছগাছালি আছে। অপরাজিতা হেটে গিয়ে একটা গাছের নিচে বসলো।ফায়াদকে ডাকলো।ফায়াদও গিয়ে অপরাজিতা পাশে বসলো।
‘আপনি এখানে নিয়ে আসলেন কেন?’
‘এখানে আগে আমি আর আমার ভাই আসতাম৷ ঘুরে বেড়ানোর জন্য বা পিক নিক করার জন্য দারুন একটা জায়গা।’
অপরাজিতা কপালে ভাজ ফেলে বলল,
‘আপনার ভাই আছে? ‘
‘হুম আছে’
‘ওহ’
বেশি আগ্রহ দেখালো না অপরাজিতা। অপরাজিতা ফায়াদের কাধে মাথা রাখলো।তাদের থেকে অনেক দূরে একটা কাপল দেখা যাচ্ছে। সাথে পুচকু এক বাবুও আছে যে কি না দৌড়ে দৌড়ে বাবা মায়ের সাথে খেলছে।সেদিকে তাকিয়ে হেসে দিল অপরাজিতা।
ফায়াদ জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে?’
অপরাজিতা হেসে বলল,
‘কিছু না।আপনি বললেন না তো আমাকে কেমন লাগছে?’
ফায়াদ অপরাজিতার মুখের পানে তাকিয়ে বলল,
‘বলেছি’
‘কখন?’
উত্তর দিল না ফায়াদ। অপরাজিতা অনেক কথা বলছে।ফায়াদ শুনছে তা মনোযোগ দিয়ে।এরই মধ্যে সে বেশ কয়েকটা কাপল সেলফি তুলে ফেলেছে।কোনো বাধা দিচ্ছে না ফায়াদ।
চারিদিকে বাতাস বইছে অনেক। কিছুক্ষণের মধ্যে বোধহয় বৃষ্টি নামবে। আশে পাশে কয়েকজন মানুষ যাও ছিল তারাও চলে গিয়েছে। আকাশের অবস্থা দেখে ফায়াদ উঠে দাড়ালো। অপরাজিতা কে বলল,
‘বৃষ্টি হবে চলো গাড়িতে যাই।ফেরত যেতে হবে।’
ফায়াদের বলতে দেড়ি ঝুম বৃষ্টি শুরু হতে দেড়ি নেই। অপরাজিতা খিল খিল করে হেসে দিল। ফায়াদ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইলো সে হাসিতে। চোখের পলকেই অপরাজিতা গাছের নিচ থেকে গিয়ে বৃষ্টির মাঝে দাড়ালো। ফায়াদ মানা করছে কিন্তু অপরাজিতা শুনছে না। অপরাজিতা এসে হাত ধরে ফায়াদকেও বৃষ্টিতে নামিয়ে দিল।
‘এই অসময়ে..’
শেষ করার আগের অপরাজিতা ফায়াদের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে ভীষণ আদুরে ভাবে বলল,
‘হুশশ ফিল করেন। এই মুহুর্ত আবার কবে পাবো জানি না। অসময়ের বর্ষন ধারা কে ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নিচ্ছি।’
ফায়াদ একদম চুপ হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে অন্যরকম শিহরণ বয়ে চলছে। বৃষ্টিতে ভেজা সেই মুখশ্রীতে তাকিয়ে আছে সে। অপরাজিতা ফায়াদকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে আকাশের পানে মুখ করে ঘুরছে ধীরে ধীরে।
বৃষ্টিতে পুরো ভিজে গিয়েছে দুজন।অপরাজিতার গায়ে পুরো শাড়ি লেপ্টে আছে। ভেজা শরীরে ফায়াদের কাছে অপরাজিতাকে কোনো নেশার থেকে কম লাগছে না ফায়াদের কাছে। ফায়াদ যেন অন্যরকম অনুভূতি তে ভাসছে। মন যেন নিষিদ্ধ কিছুর বায়না করছে। ধপাধপ পা ফেলে সে অপরাজিতার কাছে গেল। তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো।নিজেও গিয়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে।
অপরাজিতা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
‘এটা কি হলো? ভিজছিলাম তো।এভাবে টেনে —‘
কথা শেষ হওয়ার আগেই হাতে টান খেল অপরাজিতা।সে গিয়ে পড়লো ফায়াদের বুকে। ফায়াদ অপরাজিতার কোমরে জড়িয়ে দূরত্ব আরো খানিকটা ঘুচালো।অপরাজিতা হঠাৎ এমন হওয়ায়াতে ভয় পেলেও এখন অন্য কারনে ভয় পাচ্ছে।বুকের মধ্যে ঢোল পিটাচ্ছে তার।পুরো শরীরে কারেন্ট লেগে গেল মনে হচ্ছে। জড়তা নিয়ে বলল,
‘আ আপনি আ —‘
এবার ফায়াদ অপরাজিতার ঠোটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে ধীরস্বরে অপরাজিতার কানের কাছে বলল,
‘কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করেছিলে না?মারাত্মক লাগছে।এতোটা মারাত্মক যে আমি নিজেকে খুব কষ্টে কন্ট্রোল করে আছি।আররর’
তারপর অপরাজিতার মুখের দিকে তাকিয়ে তার ঠোটে বুড়ো আঙুল দিয়ে হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘এটা এতো চলে কেন? এটাকে আমার নিজের পদ্ধতিতে চুপ করানোর নিষিদ্ধ ইচ্ছা জাগে শুধু।ভেজা শাড়িতে আমার সামনে আছো।এতোটা বিশ্বাস করা উচিৎ নয়!বিশ্বাস রাখতে গিয়ে নিজেকে দমাতে কষ্ট হচ্ছে। নেশা লাগিয়ে বলো নেশা থেকে দূরে থাকতে!’
অপরাজিতা দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল।লজ্জায় তার মরে যেতে ইচ্ছা করছে। গাড়ির তাপমাত্রা হুট করেই যেন বেড়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে। ফায়াদ অপরাজিতা কে ছেড়ে দিল। অপরাজিতা সিটে বসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। ভুলেও ফায়াদের দিকে তাকাচ্ছে না। দারুন লজ্জা পেয়েছে সে। ফায়াদ একপলক সেদিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল।অসময়ের বেসামাল অনুভুতিতে দুজনেরই মনে বাজছে ভালোবাসার সুর।ফায়াদ পরিবেশ স্বাভাবিক করতে রেডিও অন করে দিল,
‘রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে
রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে
এই ভালোবাসাতে আমাকে ভাসাতে..’
অপরাজিতা এই গান শুনে লজ্জায় আবারো মুখ ঢেকে ফেলল।তা দেখে হেসে দিল ফায়াদ।গাড়ি চালাতে চালাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যেন নিয়ে ফেলল,
‘ লজ্জায় লাল হওয়া এই মেয়েটাকেই জীবনে লাগবে।’
(চলবে)