প্রেম_প্রেম_পায় #স্বর্ণালী_সন্ধ্যা পর্ব চৌদ্দ

0
813

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব চৌদ্দ

১৪.
ভীষণ ব্যস্ততায় কাটলো আজ ফায়াদের দিন৷ বাসায় ফিরতে তার রাতের দশটা বেজে গেল। অবশ্য দেড়িতে ফিরে লাভ হয়েছে তার। রাফিয়া এখন ঘুমে। তার বাবাও রুমে আরাম করছিল তাই সকালের ব্যাপারটা নিয়ে কেউ খোচাতে পারে নি। তবে সে যখন খাবার খাচ্ছিল তখন আখি বেগম খাবার বেড়ে দিতে দিতে বললেন,
‘আমি কিন্তু তোর পুচকি ফুল দেখতে ভীষণ আগ্রহী।’

ফায়াদ একপলক মায়ের পানে তাকিয়ে আবার খাবারে মনোযোগ দিল। খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘দেখবে খুব জলদিই’

রুমে যেতেই ফায়াদ ফোনের রিংটোন শুনলো। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
‘তুই নাকি তলে তলে টেম্পো চালাচ্ছিস?’

ফায়াদ বলল,
‘খবর এতোদূর চলে গেছে তাহলে’

ফারাজ হাসতে হাসতে বলল,
‘আসবে না? আমার স্পাই রেখে এসেছি তো।তুই টেম্পো কেন চালাচ্ছিস? তাও লুকিয়ে।তুই চালাবি ট্রাক!’

ফায়াদ বিরক্ত হয়ে বলল,
‘শাট আপ ফারাজ! কি উল্টাপাল্টা কথা!’

ফারাজ হাসছে। তারপর হাসি থামিয়ে বলল,
‘আচ্ছা যা বললাম না। ভাবি কে দেখাবি না?’

‘দেশে আয়’

ফারাজ আসবো বলে অন্যান্য কথায় চলে গেল। বেশ খানিকটা সময় কথা বলল দুই ভাই একে অপরের সাথে।
ফারাজের সাথে কথা বলা শেষ করে ফারাজ যখন মোবাইল রাখতে যাবে তখন তার নজর গেল নোটিফিকেশন এর দিকে।
ম্যাসেজ টা পড়তেই শীতল এক বাতাস বয়ে গেলো মন জুড়ে।এযেনো আলাদা এক অনুভূতি। মিষ্টি এক অনুভূতি। কেউ একজন খুব যত্ন করে তাকে ভালোবাসে তা জানার অনুভূতি।
ফোন থেকে পুচকি ফুল নামের নম্বর টা বের করে কল লাগালো।

অপরাজিতা মাত্রই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিল ফায়াদকে কল করবে বলে৷ এখন তো আর ঘরে বসে কথা বলতে পারবে না। মায়ের নেওটা গিয়ে মাকে জানাবে।মাত্রই ঘুমিয়েছে কথা বললে জেগে যায় যদি!
বারান্দায় দাড়াতেই ফায়াদের কল দেখলো৷ দেখে সে অবাক হলো সাথে খুশিও হলো।ফোন রিসিভ করেই বলল,
‘কি ব্যাপার আজকাল একটু বেশিই মনে পড়ে বুঝি আমাকে?’

ফায়াদ তার কথা শুনেই হেসে দিল নিশব্দে।
‘মনে করা উচিৎ নয় বুঝি?’

অপরাজিতা খুশি খুশি হয়ে বলল,
‘আবার জিজ্ঞাসা করতে হয় নাকি!’

‘কি করছো?’

‘এইতো প্রেম ডাক্তারের সাথে প্রেম করি।’

ফায়াদ এবার স্বভাবসুলভ গম্ভির কন্ঠে বলল,
‘শুরু হয়ে গিয়েছে তোমার!’

অপরাজিতা লাজুক স্বরে বলার চেষ্টা করলো,
‘ভুল কিছু বললাম নাকি! আপনিই বলেন আপনি কি আমার প্রেম পুরুষ নয়?’

ফায়াদ অপরাজিতার কথা শুনতে শুনতে বেডে আধশোয়া হয়ে বসলো।অপরাজিতার লাজুক ভঙ্গিতে কথার চেষ্টা শুনে হাসতে হাসতে বলল,
‘লজ্জা পাওয়ার বৃথা চেষ্টা। আমি জানি তোমার এখন মোটেও লজ্জা লাগছে না’

‘ইশ এভাবে বলবেন না তো। লজ্জা পেতে চাচ্ছি আমি। নয়া নয়া প্রেম বলে কথা!’

‘তাই নাকি?’

‘হুম হুম’

ফায়াদ ধীর স্বরে ফিসফিস করে বলল,
‘লজ্জা পেতে চাইলে আমি হেল্প করতে পারি।’

এবার অপরাজিতা সত্যিই লজ্জা পেল বলার ধরনে। ফায়াদ তো তেমন কিছু বলেও নি কিন্তু তার লজ্জা লাগছে। মন যে এখন কতো কিছু ভাবছে তাকে নিয়ে। মনকে ইচ্ছেমতো বকে দিল অপরাজিতা। তারপর ফায়াদের উদ্দেশ্যে বলল,
‘আ আপ আপনাকে হেল্প করতে হবে না।’

ফায়াদ এবার জোড়ে হেসে দিল,
‘কিছু তো বলি নি। তুমি কি বুঝলা?’

অপরাজিতা এবার ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। তার মাথায় ফায়াদকে নিয়ে অনেক কিছু ভাসছে। তার ইচ্ছে করছে ফায়াদের কাছে যেতে। টাইট করে জড়িয়ে ধরতে। চুল গুলো ছুয়ে দিতে। কিন্তু এসব তো এই ডাক্তার সাহেবকে এখন জানালে সে ভাববে অপরাজিতা বড্ড বেসামাল মেয়ে।
তাই অপরাজিতা অন্যকিছু বলতে চাইলো,
‘আ আমি আমি,,,,, ধ্যাত!!’

কি বলবে ভেবেই পেল না। ফোনটাই কেটে দিল সে। ফোন কাটতেই ফায়াদ হাসতে হাসতে শুয়ে পড়লো।লজ্জাবতী মেয়েটাকে দেখা দরকার ছিল। লাজুক ফুল!

——————-
ফারাজ আজকাল ভীষণ অন্যমনস্ক। কি যেন ভাবে সে।
অফিস টাইম শেষ হতেই ফায়াদ নীতি কে বলল,
‘চলুন নীতি আজ আমি পৌঁছে দিব আপনাকে।’

নীতি নিশব্দে এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে৷ ফারাজ প্রায়ই নীতিকে ড্রপ করে দেয় বাসায়। এটা আর নতুন কিছু নয়। গাড়ি চলছে ধীর গতিতে। কোনো তাড়াহুড়ো যেন নেই। নীতি পাশে তাকিয়ে একপলক দেখলো ফারাজকে। ফারাজ খেয়াল করে বলল,
‘কি হয়েছে?’

‘হয়েছে তো আপনার স্যার’

ফারাজ কপালে ভাজ ফেলে বলল,
‘আমার কি হবে?’

নীতি সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
‘কিছুদিন থেকে কিছু ভাবছেন। নতুন কোনো বিজনেস আইডিয়া নাকি?’

উত্তরের অপেক্ষা করছে নীতি।ফারাজ কিছুক্ষন চুপ রইলো।তারপর বলল,
‘আমি বাংলাদেশ ফিরতে চাচ্ছি। মা বাবা ভাই কে ভীষণ মনে পড়ে। যে নেই সে তো আর আসবে না। মা আজকাল ফোন করলেই কান্না করে। কিন্তু আমার কষ্ট হবে ভেবে ফিরতেও বলে না। আমি মাকে আর কষ্ট দিতে চাই না। জীবনকে আরো একবার আগের মতো উপভোগ করতে চাই। আরেকবার নিজেকে সুযোগ দিতে চাই ভালো থাকার পরিবারের সাথে।’

শুনে নীতি বলল,
‘বাহ ভালো ডিসিশন স্যার। পরিবারের কাছে যাবেন শুনে খুশি হলাম’

খুশি মনে বললেও নীতির মনের মধ্যে কোথাও এক সুক্ষ্ম ব্যথা টের পেলো সে। এই ব্যথা কিসের? একাকিত্ব এর?সেও তো একা এই দুনিয়ায়। আছে বলতে এক ফারাজই আছে যে নীতির খেয়াল রাখে এই ভীনদেশে। নীতিকে এক্সিডেন্ট থেকে সুস্থ হওয়ার পর ফারাজ যখন জানলো যে নীতির এখানে মা বাবা ছাড়া কেউ নেই। সে ই নিল নীতির দায়িত্ব। নীতিকে নিজের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে রেখে দিল৷ বিজনেস সম্পর্কে অনেক কিছু শিখালো।ধীরে ধীরে নীতি হয়ে উঠলো ফারাজের বন্ধুর মতো। কিন্তু সেটা হলো সবচেয়ে ইনোসেন্ট বন্ধুত্ব যেখানে দুজনেই দুজনকে আপনি সম্বোধন করে।ব্যাপার টা কিউট আসলে।
সারা রাস্তা কেউ আর কোনো কথা বলল না। নীতির এপার্টমেন্টের সামনে থামলো গাড়ি। নীতি বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে। ফারাজও বের হলো৷ নীতি বিদায় জানিয়ে পা বাড়াতেই ফারাজ পিছু ডাকলো,
‘মিস নীতি!’

নীতি পিছে তাকালো।ফারাজ এগিয়ে এলো। কিছু একটা বলতে চাচ্ছে সে৷নীতি অপেক্ষা করছে শুনার জন্য। তারপর ফারাজ বলেই ফেলল,
‘আমি একা বাংলাদেশ ফিরবো না। ‘

নীতি ভ্রু কুচকে তাকালো। সে এই কথার মানে খুজছে৷ ফারাজ বলল,
‘আমি চাই আপনি আমার সাথে চলুন।’

নীতি বিস্মিত হলো।সে যাবে মানে? সে কেন যাবে বাংলাদেশ। তার তো কাজ নেই। ফারাজ নীতির বিস্মিত মুখ দেখে বলল,
‘দেখুন আমি এখানে আপনাকে একা ফেলে যাবো না। আপনি আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট হওয়ার সাথে একজন ভালো বন্ধুও যে কিনা আমার খেয়াল রাখতেন।আমি জানি আমার কোনো অধিকার নেই আপনাকে জোর করার তবুও আমি করবো। কারন আমি আপনাকে একা একা এই শহরে ফেলে যেতে পারি না। আপনি আমার সাথে যাবেন আমার বাসায়। আমার পরিবার আপনার ভালো লাগবে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। ‘

নীতি মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারাজ বলল,
‘No more words. বাসায় যান।ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেন বাকি কথা কাল হবে। বাই।’

বলে সে নীতিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে উঠে গেল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নীতিকে হাতের ইশারায় বিদায় জানিয়ে চলে গেল৷ মেইন কথা হচ্ছে সে নীতিকে না বলার সুযোগই দিবে না।

নীতি অবাক হয়ে তার চলে যাওয়া দেখলো। তাকে কিছু বলার সুযোগও দিল না৷ নীতি খেয়াল করে দেখলো তার মনে এতোক্ষণ যে সুক্ষ্ম ব্যাথাটা ছিল তা আর নেই। তার জায়গায় মিষ্টি এক অনুভূতি ছেয়ে গেছে মন জুড়ে। হেসে দিয়ে পা বাড়ালো বাসার ভিতরে৷

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here