প্রেম_প্রেম_পায় #স্বর্ণালী_সন্ধ্যা পর্ব তেরো

0
800

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব তেরো

১৩.
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই অপরাজিতা মায়ের পিছু পিছু ঘুরছে৷ মায়ের মতিগতি বুঝার চেষ্টায় আছে। কিন্তু তার মা একেবারে স্বাভাবিক। কিছুই বলছে না।
মেয়েকে এরকম পিছু পিছু ঘুরতে দেখে রামিসা বুঝতে পেরেছেন কেন এমন করছে।কিন্তু কাজের সময় যদি এমন পিছে পিছে ঘুরে তাহলে মেজাজ খারাপ হয় না! একটা সময় ধমকে উঠলেন তিনি,

‘কি সমস্যা তোর?’

অপরাজিতা থতমত খেয়ে বলল,
‘ন না কোনো সমস্যা না। ‘

রামিসা রাগী ভাবে বললেন,
‘কি চাই তাহলে?আমার পিছে কি?’

‘ না মানে বাবা কোথায়? সকাল থেকে দেখছি না। ‘

‘তোর বাবা ভোর বেলা বের হইসে। কাজের জন্য আবারো ঢাকার বাহিরে গেছে।’

‘ওওওওও’

মেয়েকে এমন হেয়ালি করতে দেখে আবারো ধমকে উঠলেন,
‘গিয়ে টেবিলে বস! পিছে পিছে ঘুরবি না।’

অপরাজিতা ঢোক গিলে টেবিলে বসলো।একটু পর সে বের হবে কোচিং এর জন্য। এডমিশন এক্সাম এর প্রিপারেশন এর জন্য ভর্তি হয়েছে। তার পরিকল্পনা হচ্ছে আগে ফায়াদের কাছে যাবে তারপর কোচিং যাবে।

নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা খাচ্ছিল ফায়াদ। তখনই রাফিয়া এসে বলল,
‘ভাইয়া তোমার ফোনে পুচকি ফুল টা কে?’

শুনে ফায়াদের কাশি উঠে গেল।তার কাশি দেখে সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলো। আখি বেগম পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘আরে হলো কি?আস্তে খা!’
পানি খেয়ে কাশি থামিয়ে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,
‘আমার ফোনে কি তোর?’

রাফিয়া অবাক হয়ে বলল,
‘তোমার ফোন তো আমি সবসময়ই চালাই। এমন তো করো নি আগে। ‘

ফায়াদ যেন আরো ফ্যাসাদে পড়ে গেল। রাফিয়া পুলিশি নজরে বলল,
‘বুঝছো ফুপি তোমার ছেলের তাড়াতাড়ি খাওয়ার কারনে খাবার গলায় আটকে নাই।পুচকি ফুলের নাম শুনে আটকে গেছে খাবার।কি ব্যাপার ভাইয়ায়া?’

সবাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বিশেষ করে তার বাবা। সে ভেবে পায় না তার বাবা তাকে এমন নাকানিচুবানি খাওয়ায় কেন। আগে ফারাজের সাথে মিলে তাকে পঁচাতো।যাক এখন পরিস্থিতি থেকে বাচা দরকার। সে মিথ্যা তো কোনো জীবনেও গুছিয়ে বলতে পারে নি। আজও পারবে না। তাই সে আশা বাদ। তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে উঠে গেল।হাসপাতালে যেতে হবে। তাড়া দেখিয়ে বেরিয়ে এলো।

সে বেরিয়ে যেতেই রাফিয়া খাবার চিবুতে চিবুতে বলল,
‘বুঝছো কিছু ফুপা?’

ফারদিন আহমেদ মাথা দুলিয়ে বললেন,
‘অনেক কিছু বুঝলাম’

রিজু তাদের কান্ড দেখে বলল,
‘বয়স তো কম হয় নি ভাইয়ার। তোমরা এমন শুরু করছো কেন? ভিলেন সাজবা নাকি?’

রাফিয়া মুখ ভেঙচি কেটে আসছে,
‘আসছে মুরোব্বি ভাষণ দিতে!’

রিজু কিছু বলতে যাবে তখন ফারদিন আহমেদ বলে উঠলো,
‘আহা রিজু! ভিলেন হবো কেন? মাত্রই তুমি বললে যে বয়স তো তার কম হয় নি তাই না? এটাই তো কথা। বয়স তো কম হয় নি।এখন বিয়ে করার বয়স তার, প্রেম করার নয়!’

রিজু কপাল চাপড়ালো। এতোক্ষণ তাদের কাহিনি চুপচাপ দেখছিল আখি বেগম ও রিজুর মা নাহিদা বেগম। আখি এবার বলে উঠলো,
‘এতো পেচাচ্ছো কেন তোমরা? প্রেম করলে করুক।প্রেম যেহেতু করবে, বিয়েও করবে। তাই না নাহিদা?’

বলে নাহিদার দিকে তাকিয়ে দেখলো নাহিদা গভীর ভাবনায় ব্যস্ত।আখি বেগম আবার ডাকলো,
‘নাহিদা?’

নাহিদা হুশে ফিরলো এবার। সে বলল,
‘আপা আমি অনেক সুন্দর একটা মেয়ে দেখছিলাম। একেবারে পুতুলের মতো। ফায়াদের সাথে খুব মানাতো।’

আখি বেগমের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছা করলো এবার। এই নিয়ে নাহিদা যে কতোবার মেয়ে দেখেছে ফায়াদের জন্য।তার কাছে সব মেয়েই পুতুলের মতো লাগে। মেয়ে মানেই তার কাছে ভালোবাসার কন্যা। যেন একেকটা মায়াবতী। নিজের মেয়েকেও নাহিদা খুব আদরে আদরে বড় করেছে।সবার আদরে মেয়েটা বাদর হয়ে গিয়েছে।

অপরাজিতা খাওয়া দাওয়া করে আগেই বাসা থেক্র বের হচ্ছে৷ যেহেতু তার পরিকল্পনা আগে অন্যজায়গায় যাওয়া। সে যখন জুতো পড়ছিল তখন রামিসা জিজ্ঞেস করলেন,

‘তুই এতো তাড়াতাড়ি বের হচ্ছিস কেন?’

অপরাজিতা জুতা পড়া শেষ করে মাকে বলল,
‘শুনো মা একটা গল্প বলি। আমাদের এলাকায় আমার মতো একটা মেয়ে ছিল। তার মা যখন তাকে জিজ্ঞেস করতো যে কোথায় যাচ্ছিস তখন কি হতো জানো?’

রামিসা কপালে ভাজ ফেলে বললেন,
‘কি হতো?’

‘এটা হতো।’

বলেই অপরাজিতাকে দরজা খুলে দৌড়ে বাহিরে চলে গেল। রামিসা মেয়ের কান্ডে থম মেরে গেল। তার পেটে থেকে হয়েছে এই মেয়ে? এতো ফাজিল কেন? কি খেয়ে জন্ম দিয়েছেন তিনি একে? হায় আল্লাহ!আসুক আজ বাসায়!

অপরাজিতা রিকশায় বসে বসে হাসছে। মা কে আজ ভালো ভাবে বোকা বানালো। কিন্তু বাসায় গেলে তার কপালে শনি আছে সে ভালোভাবে টের পাচ্ছে এটা।
ভাবতে ভাবতেই রিকশা থামলো হাসপাতালের সামনে। সে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখলো ফায়াদ মাত্রই প্রবেশ করছিল তার কেবিনে। সে ডাকলো,
‘ডাক্তার সাহেব?’

ফায়াদ পিছে ঘুরে অপরাজিতা কে দেখে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘এখন এখানে কি?’

অপরাজিতা মনে মনে মুখ ভেঙচি কেটে বলল,
‘গুড মর্নিং ও তো জানাতে পারতেন! না এরে দিয়ে আমিষের আশা নাই’
কিন্তু মুখে বলল,
‘কথা আছে।’

‘আসো ভিতরে’

অপরাজিতা আর ফায়াদ দুজনের প্রবেশ করলো। অপরাজিতা কে চেয়ার এগিয়ে দিল বসার জন্য৷ নিজেও বসলো অপরাজিতার মুখোমুখি।

‘এবার শুরু করো’

‘কি?’

‘কথা আছে বললে যে ‘

‘ওহ হ্যা!’

তারপর অপরাজিতা সব বলল।তার মা যে বুঝতে পেরেছে তার ব্যাপারে। আর ছেলের সাথে দেখা করতে চেয়েছে সেটাও জানালো।
সব শুনে ফায়াদ কপালে আঙুল ঘেঁষে বলল,
‘প্রেম করলাম না একদিনও তার আগেই কেস খেয়ে যাচ্ছি।ওয়াও!’

তার কথা বুঝার চেষ্টা করলো অপরাজিতা।
‘মানে?’

ফায়াদ বলল,
‘মানে কিছু না। আন্টি জানে ছেলে কে?’

‘না’

‘আচ্ছা’

অপরাজিতা জানতে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘এখন কি করবেন?’

‘তোমার জেনে কাজ নেই। তুমি কাজের থেকে অকাজ বেশি করো। তোমার ক্লাস নেই আজকে? ‘

‘আছে তো ‘

‘কখন?’

‘এখন’

এবার হালকা ধমকে উঠলো ফায়াদ,
‘তো এখানে কি তোমার?’

ধমকে অপরাজিতা নিজেকে নিজে শান্তনা দিল৷ তারপর সেও ত্যাড়ামি করে বলল,
‘এখানে আমার জামাই!! আমার একটা নিরা’মিষ ডাক্তার আছে ওটার জন্য আসি। যাচ্ছি! আর আসবো না। আসি বলে ভাব বেড়ে গেছে বুঝেছি!হুহ! দেখে নিব!’

বলেই ফায়াদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে এলো অপরাজিতা। বাহিরে এসে জোরে করে শ্বাস ছাড়লো।অনেক গুলো কথা বলে ফেললো সে। ববাহ বাহ! পরের টা পরে দেখা যাবে। ভাবতে ভাবতে কোচিং সেন্টার এর উদ্দেশ্যে রওনা দিল সে।
ফায়াদ অপরাজিতার কান্ডে তাকিয়ে রইলো। তারপর বিরবির করে বলল,
‘মেয়েটার সাহস বেড়ে গেছে! একসাথে কতো কিছু বললো। আমিও দেখে নিব!’
নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সেও।

ক্লাসে এসে বসতেই অপরাজিতার বিরক্তির সীমা রইলো না। কিছু ছেলে পাশের সারি থেকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। অপরাজিতা এমনিতে মাশাল্লাহ তাই ছেলেদের তাকিয়ে থাকা টা অস্বাভাবিক নয়৷ তবে তার কাছে ব্যাপার টা মজা লাগছে না। এমনভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে যেন তাকে মুখস্ত করছে। ব্যাপার‍টা আসলেই বিরক্তিকর।
ক্লাস শেষে অপরাজিতা বের হয়ে রাস্তায় হাটছিল। তখনই একটা ছেলে এলো।
‘হাই’

অপরাজিতা আশেপাশে তাকালো। ছেলেটা অপরাজিতাকে আশে পাশে তাকাতে দেখে নিজেও তাকাচ্ছে। তারপর বলল,
‘আশে পাশে কেউ নেই। আপনাকেই বলছি।আমি আপনার সাথেই ক্লাস করেছি আজকে।’

অপরাজিতা ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
‘ওহ আচ্ছা!’

অপরাজিতাকে ভাবলেশহীন দেখে ছেলেটা কথা আগাতে পারছে না। এমনিতে সবাই বলে মেয়েরা নাকি তার জন্য পাগল। আর এই মেয়ে দেখি পাত্তাও দিচ্ছে না।সে আবার বলল,
‘আমি রবিন। আপনার নামটা?’

অপরাজিতা বুঝতে পারছে ছেলেটা তার উপর ক্রাশ নামক বাশ খেয়েছে। কিন্তু তার এই ছেলেকে মোটেও ভালো লাগছে। ক্লাসে যে ছেলেগুলো তাকিয়ে ছিল তার মধ্যে এটাও ছিল। সে রুড হতে চাচ্ছে না কিন্তু ভালো ভাবে কথা বললে তো মাথায় চড়ে বসবে।তাই এখন সে রুডভাবে ভালো ব্যবহার করবে।মেকি হেসে বলল,
‘ক্লাসে তো বলেছিলাম শুনেন নি?’

‘না আসলে খেয়াল নেই এতো মানুষ ছিল’

‘আমার এখন বলতে ইচ্ছে করছে না। বাসায় যাবো। সাইড প্লিজ!’

বলে সে সামনে এগোতে লাগলো কিন্তু রবিন আবারো তার পাশে এসে হাটতে লাগলো।অপরাজিতা এই ছেলের সাথে হাটতে চায় না। সে বিরক্ত হয়ে বলল,
‘আমার সাথে হাটেন কেন? হয় আগে হাটেন নাহয় পিছে হাটেন আজব!’

রবিন ফ্লার্ট করার মতো করে বলল,
‘তোমাকে রাগলে দারুন লাগে তো!’

অপরাজিতার এবার যেনো বিরক্তির শেষ নেই। সে এবার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করে দাতে দাত চেপে বলল,
‘আরে পাগল ছাগল আমি রাগি নাই। বিরক্ত হচ্ছি।ফ্লার্ট ও করতে পারে না।কি ভাবছেন সে আমাকে সুন্দর লাগে বললে গলে যাবো?আর এটা কোনো বলার মতো বাক্য হলো এই মুহুর্তে বলার জন্য?আমার রাগের অনেক মূল্য আছে যারে তারে দেখাই না। আর আবার যদি ক্লাসে আমার দিকে তাকায় থাকতে দেখি তাহলে চোখ এ মরি’চ দিয়ে দিব বলে দিলাম।আপনার ওই রাম ছাগল বন্ধুদেরও বলবেন আমাকে নিয়ে কানাকানি করতে না। যত্তসব!জীবনে মেয়ে দেখে নাই মনে হয়! ‘

বলে সে রিকশা ডেকে রওনা দিল বাসার উদ্দেশ্যে। রবিন এর চেহেরা দেখার মতো হয়েছে।সে জানতোই না যে অপরাজিতা ধরে ফেলেছে যে তাকে নিয়ে সে ও তার বন্ধুরা কানাকানি করছিল।সে তো আর জানে না যে অপরাজিতা তার থেকে দুই কদম চালু।

রিকশায় বসে অপরাজিতা বিরবির করছে,
‘আসছে স’স্তা মার্কা লাইন নিয়ে ফ্লার্ট করতে। রাগলে নাকি আমাকে সুন্দর লাগে! ভাবে যে একটা প্রশংসা করলেই মেয়েরা গলে যায়।এর থেকে তো আমার নিরামিষ ডাক্তারই ভালো। ফ্লার্ট করার জন্য শব্দ লাগে না উনার। আমি তো উনার চোখের দিকে তাকালেই ডুবে যাই। ইশশ!’

ফায়াদের কথা ভাবতে ভাবতে মনটা আবার ভালো হয়ে গেলো। বাতাস বইছে চারদিকে। পরে সম্ভবত বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া টা ভীষণ সুন্দর।রোদ নেই এখন।বাতাসে গাছের ডালপালা গুলো দুলছে।ঠিক তেমনি অনুভূতি গুলোও দোলা দিচ্ছে এই আবহাওয়া তে। কোনো এক সুন্দর মানবকে মনে করার মতো সুন্দর আবহাওয়া।মনে করা লাগে না, সে আপনি এসে উকি দিয়ে যায় মনের কোনে। মোবাইল টা বের করে রিকশায় বসেই ফায়াদকে একটি বার্তা লিখে দিল,
‘শুনেন! আমি কিন্তু আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি।’

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here