#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৪
” বলো মা কবুল। ”
বয়স্ক কাজি সাহেবের কণ্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই ক্রন্দনরত দুয়া দিশেহারা বোধ করতে লাগলো। মায়াবী আঁখি যুগল অশ্রুসিক্ত। লালাভ আভা ফুটে উঠেছে নাকের ডগায়। নরম-কোমল বাম হাতটি পিiষে যাচ্ছে ডান হাতের ঘর্ষণে। দুয়া ভেজা আঁখি পল্লব ঝাপটে সম্মুখে তাকালো। পরিবারের সদস্যরা দাঁড়িয়ে। থমথমে মুখশ্রী সাজ্জাদ সাহেবের। বাবার মুখখানা দেখে দুয়া আরো আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো। সাজ্জাদ সাহেব কিয়ৎক্ষণ নিষ্পলক চাহনিতে তাকিয়ে রইলেন মেয়ের পানে। অতঃপর চোখের পলকের ইশারায় আদরের কন্যাকে অনুমতি প্রদান করলেন। কাজি পুনরায় তাগাদা দিলো,
” বলো মা কবুল! ”
নেত্রপল্লব বন্ধ হয়ে গেল মেয়েটির। কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা অশ্রু কণা। মনে মনে স্রষ্টার নাম নিয়ে মেয়েটি মৃদু স্বরে বললো,
” কবুল! ”
” আবারো বলো মা। ”
” কবুল। কবুল। ”
” আলহামদুলিল্লাহ্! ”
আল্লাহ্’র কালাম সাক্ষী রেখে তিন কবুল বলে একে অপরের সনে চিরজীবনের তরে জড়িয়ে গেল আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ এবং জাহিরাহ্ দুয়া! সাক্ষী রইলো দুই পরিবারের সদস্যরা। সাজ্জাদ সাহেব কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলেন। তাহমিদা শাড়ির আঁচলে নোনাজল মুছে এগিয়ে এলো মেয়ের পানে।
দুয়া’র পড়নে ডিপ রেড লং টপস এবং প্লাজো পাজামা। ওড়নার অন্তরালে আবৃত দীঘল কালো কেশ। র’ক্তিমায় আচ্ছাদিত মুখশ্রী। নোনাজল লেপ্টে দু কপোলে। তাহমিদা মেয়ের পাশে বসলেন। মায়ের সান্নিধ্য পেয়ে আবেগাপ্লুত মেয়েটি মায়ের বুকে মুখ লুকালো। কাঁদতে লাগলো অবিরাম। তাহমিদা স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিতে লাগলেন মেয়ের মাথায়। তূর্ণ এতক্ষণ বহু সংযম করে বসে ছিল। আর সম্ভব হলো না। মোবাইল হাতে নিয়ে বড় বড় কদম ফেলে সেথা হতে প্রস্থান করলো। এত লোকের ভিড়ে একজনের চেহারায় প্রকাশ পেল স্পষ্ট ক্ষো’ভ!
•
ঘড়ির কাঁটা তখন এগারোর ঘরে। গত রাত থেকে সকলে এ বাড়িতে অবস্থান করছে। এবার বিদায় লগ্ন। কিন্তু পূর্বের ন্যায় এবারের বিদায় লগ্ন নয়। তাহমিদা দিশেহারা বোধ করছেন। বুঝতে পারছেন না কি করে সামলাবেন মেয়েকে। সোফায় বসে আদুরে কন্যা যে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদে চলেছে সেই কখন থেকে। বিবাহকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর ব্রেকফাস্ট অবধি করেনি।
” দুয়া! মা! কাঁদে না। এই তো আমি। ”
” যাবা না। আ আম্মু। যাবা না। ”
অস্পষ্ট স্বরে বলে চলেছে মেয়েটা। তাহমিদা দুঃখ ভারাক্রান্ত নয়নে তাকালেন বড় বোনের দিকে। চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে তাসলিমা এসে বসলেন দুয়া’র অপর পাশে। দুই মায়ের মধ্যিখানে দুয়া। তাসলিমা ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে মুখখানি ফিরিয়ে নিলেন। দুঃখবোধ করলেন মেয়েটার অশ্রু ভেজা মুখ দেখে। আদুরে হাতে দু কপোলের অশ্রুবিন্দু মুছে নিলেন। কোমল কন্ঠে বললেন,
” কাঁদে না মা। তোকে কাঁদতে দেখে আমাদের বুঝি খারাপ লাগছে না? এত কাঁদছিস কেন? তোকে তো একদিন না একদিন আমার বাড়িতে আসতেই হতো। নাহয় কয়টা দিন আগেই চলে এলি। তাই বলে এভাবে নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদতে হবে? ”
” খালামণি! ”
আদুরে কণ্ঠে লাই পেয়ে মেয়েটা আরো কেঁদে উঠলো। গত রাতের সে-ই অনাকাঙ্ক্ষিত বি’শ্রী মুহুর্ত যে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ছাড়ছে না পিছু। সেসব মনে পড়তেই অক্ষিকোল বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু অশ্রু। এসময় লিভিং রুমে উপস্থিত হলো তূর্ণ মহাশয়! এত কান্নাকাটি দেখে বিগড়ে যাওয়া মেজাজ বুঝি আরো বিগড়ে গেল। ধমকে উঠলো তৎক্ষণাৎ।
” এত কান্নাকাটি কিসের? এটা কি বিয়েবাড়ি নাকি কুলখানির অনুষ্ঠান? ”
তড়িৎ চমকালো উপস্থিত সকলে! দুয়া ভীত চোখে একটিবার তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। তাসলিমা গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন,
” এসব কি ধরনের কথাবার্তা তূর্ণ? ঠিকভাবে কথা বলো। ”
” আমি ঠিকভাবেই বলছি আম্মু। বরং তোমার আদরের প্রিয় ভাগ্নি কেঁদেকেটে আমাদের দামী সোফা নষ্ট করে ফেলছে। ওকে কাঁদতে নিষেধ করো। ভাল্লাগছে না এসব। ”
” বিয়ে হয়েছে শ্বশুরবাড়িতে। বাবার বাড়ির লোকেরা চলে যাচ্ছে। মেয়েটা কাঁদবে না? ”
” কাঁদতে হলে বাপের বাড়ি গিয়ে কাঁদতে বলো। আমাদের সুখী পরিবারে কান্নাকাটি নিষেধ। ”
এতবড় চাপাবাজি শুনে দুয়া কান্না ভুলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল তার সদ্য বিবাহিত স্বামীর পানে! এসব কি শুনছে সে!
” ভাইয়া! আমাদের বাড়িতে কান্না নিষেধ? কাব ছে? আমি তো জানতাম না। ”
তৃষা ফোঁড়ন কেটে বলতেই তূর্ণ গরম চোখে তাকালো বোনের দিকে। ত্যা ড়া জবাব দিলো,
” আজ! এই মুহূর্ত থেকে। ”
দুয়া’র নাক রাগে ফুলে ফেঁপে উঠলো। ভাইয়ের এক্সট্রা চাপাবাজি শুনে ভেংচি কাটলো তৃষা। তাসলিমা নব পুত্রবধূর চোখের পানি মুছে ললাটে চুমু এঁকে দিলেন। ছোট বোনকে আশ্বস্ত করতে বললেন,
” তাহমিদা! মন খারাপ করিস না। মেয়েকে দূরে কোথাও পাঠাসনি তো। মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে সে। তা-ও আবার বড় বোনের কাছে। চিন্তা কিসের? শুধু শুধু চিন্তা করবি না তো। ”
তূর্ণ মাঝখানে বাঁধা দিয়ে বললো,
” শাশুড়ি মা’কে অহেতুক চিন্তার পাশাপাশি মেয়েকে অশ্রু বিসর্জন দিতেও নিষেধ করতে বলো। আমার বাড়িতে ন্যা কা নোনাজল চলবে না কিন্তু। ”
দুয়া দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। দু পাশে দুই মা যে। পরে ঠিক এসবের জবাব দেবে। হুঁ।
.
বিদায়ের পালা। বাবার বুকে লেপ্টে রয়েছে মেয়েটা। মলিন মুখশ্রী। সাজ্জাদ সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু এঁকে দিলেন। অতঃপর বড় বড় কদম ফেলে বেরিয়ে গেলেন বাড়ি হতে। দুয়া ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল সেদিকে। মেয়েদের জীবনে এই বিদায় মুহুর্ত এতটা বেদনাদায়ক কেন! কেন তুফানি ঝড় ওঠে হৃদমাঝে!
•
নিজ কক্ষে গালে হাত দিয়ে বসে তৃষা। ধ্যান মগ্ন মেয়েটা। ভেবে চলেছে কত কি! সকালের দৃশ্যটা এখনো স্পষ্ট রূপে চোখের পর্দায় ভাসছে।
___
তিন কবুল বলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো তূর্ণ এবং দুয়া। পরিবারের সদস্যদের ভিড়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে জাবির। থমথমে মুখশ্রী। র’ক্তলাল আঁখি যুগল। বারবার শুকনো ঢোক গিলছে সে। দৃষ্টি নিবদ্ধ নবদম্পতির পানে। অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভেতর। কি করে এই যাতনা মিটাবে সে? বুকের মধ্যিখানে যে অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে! ক্লান্তিতে নুইয়ে পড়ছে তনুমন। জাবির যখন যন্ত্রণায় কাতর তখনই তার পাশে এসে দাঁড়ালো এক মানবী। ফিসফিসিয়ে শুধালো,
” ভালোবাসেন? ”
হকচকিয়ে গেল জাবির! কোনোমতে নিজেকে ধাতস্থ করে বাম পাশে তাকালো। দেখলো কৌতুহলী এক মায়াবী মুখশ্রী। তৃষা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে।
” কি হলো? বলুন। আপনি কি দুয়াকে ভালোবাসেন? ”
যাতনায় ক্লিষ্ট মানুষটি এক শব্দে প্রতিবাক্য করলো,
” না। ”
” তাহলে? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? চোখমুখ কেমন লাল হয়ে গেছে। আপনি কি অসুস্থ বোধ করছেন? ”
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে তৃষা। অসময়ে এত প্রশ্ন! বিরক্তিতে ছেয়ে যাচ্ছে অন্তঃপুর। তাই তো জাবির গম্ভীর স্বরে বললো,
” প্লিজ লিভ মি অ্যালোন। ভালো লাগছে না আমার। ”
মনমতো উত্তর না পেয়ে তৃষা এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে গেল।
” আচ্ছা গত রাতে আপনি কো… ”
আর বলা হলো না মেয়েটির। ওকে থামিয়ে দিলো বিরক্তিকর এক শব্দ,
” ননসেন্স। ”
এক শব্দে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করে সেথা হতে সরে গেল জাবির। তার যাওয়ার পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তৃষা।
___
তৃষা গালে হাত দিয়ে ভাবনার সমাধান পেয়ে গেল।
” হুঁ। বুঝতে পারছি। উনি ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছেন। এতটাই ব্যাকা হয়ে গেছেন যে মাথার সার্ভার ডাউন। তাই তো আমার মতো কিউট মেয়েকে ননসেন্স বললেন। ইয়াহ। ”
নিজেকে ননসেন্স বলায় ভালো লাগলো না মেয়েটার। ভেংচি কেটে উঠে দাঁড়ালো সে। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
” ব্যাটার চোখে নির্ঘাত ছানি পড়ছে। তাই তো ভুলভাল দেখে। আলিয়া ভাটের জায়গায় দেখতে পাচ্ছে আউলা কেশী ভূত। হুহ্! ”
•
দুয়া’র দু পাশে দাঁড়িয়ে দুই ননদিনী। নিশি এবং তৃষা। দু’জনে দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে নতুন ভাবিকে নিয়ে ভাইয়ের রুমে এলো। তৃষা ভাব নিয়ে বাম পা দিয়ে ঠেলে বদ্ধ দ্বার উন্মুক্ত করলো। চেনা রুমে প্রবেশ করতে অচেনা এক অস্বস্তি। মিইয়ে গেল দুয়া। দু হাত অনবরত কচলাতে লাগলো। দৃষ্টি অবনত। তৃষা দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
” হি হি চিল। এখন রাত নয় দিন। আমার ভাই আবার দিনের বেলায় ভদ্রলোক। হা’মলা চালায় না। সো রিল্যাক্স বেবি। ”
কর্ণদ্বয় যেন উত্তপ্ত হয়ে উঠলো দুয়া’র। নাক ছিটকে বললো,
” ছিঃ! কিসব বলছিস! আমি কি তূর্ণ ভাইয়ার ভদ্রতা – অভদ্রতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছি? ”
নিশি হেসে উঠলো। বললো,
” ভাবিজি আর কত ভাইয়া ডাকবেন? এবার তো অভ্যাস পরিবর্তন করুন। ”
তৃষা দু হাত দু’দিকে ছড়িয়ে মনপ্রাণ ঢেলে বাতাসের সুভাস নিলো।
” আহা! জীবনটা কি সুন্দর! ভাইয়া যখন সাইয়্যা! আহা! কি লজ্জা! ”
লজ্জার ভাব ধরে দু হাতে মুখ লুকালো তৃষা। দুয়া বি শ্রী একটা গালি দিতে গিয়েও গিলে নিলো। সশব্দে হেসে উঠলো নিশি।
” হয়েছে হয়েছে এখন চল। নইলে চাচি দেখলে ধাওয়া দেবে। ”
” হাঁ চলো চলো। ”
ব্যস্ত পায়ে দুয়া’র দু হাত ধরে কক্ষে প্রবেশ করলো দুই বোন। শিরশির করে উঠলো মেয়েটির সারা কায়া। অজানা এক অনুভূতিতে আবিষ্ট হলো তনুমন। পায়ের তলে সুড়সুড়ি অনুভূত হচ্ছে বুঝি। কেঁপে কেঁপে উঠছে কায়া। শুকনো ঢোক গিলে নিলো বার কয়েক। অজান্তেই চোখ বুলালো চেনা রুমে আরো একবার।
কক্ষের মাঝ বরাবর দেয়াল ঘেঁষে মাস্টার বেড। শুভ্র চাদর বিছানো সেথায়। বালিশের কভার এবং কুশন দুটোও শুভ্র রঙা। বেডের দুই পাশে বেড সাইড টেবিল। বেডের সম্মুখ ঘেঁষে শুভ্র রঙা টাফটেড বেঞ্চ। কক্ষের ডান পাশের দেয়ালের দু প্রান্তে বড় বড় দুইটি জানালা। পর্দা সরিয়ে মধ্যখানে ফাঁকা। সেথা হতে আলো প্রবেশ করছে কক্ষে। ডান পাশের দেয়ালের মাঝ বরাবর প্রশস্ত দু’টো সিঙ্গেল সোফা। মধ্যখানে গোলাকার কালো রঙা টি টেবিল। বেডের বিপরীত দিকে কক্ষের দরজা। দরজার ডান পাশে বড় ওয়াল স্মার্ট টিভি। বাম পাশে ওয়াশরুম। বাম দিকের দেয়াল ঘেঁষে ড্রেসিং টেবিল এবং সামান্য ব্যবধানে কাবার্ড। কক্ষের দেয়াল পুরোটাই শুভ্র রঙা। আসবাব অবধি শুভ্র রঙে রঙিন। দুয়া বিড়বিড় করে আওড়ালো,
” ব্যাটার পা থেকে মাথা অবধি সব সাদা। রুমটার দশাও তাই। ধবধবে সাদা। ”
•
একাকী কক্ষে টাফটেড বেঞ্চে বসে ছিল দুয়া। মলিন মুখখানি। তখনই মোবাইল স্ক্রল করতে করতে প্রবেশ করলো তূর্ণ। এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেল নববধূকে দেখে! সে যে এখন বিবাহিত, চিরকুমার ক্লাব থেকে বহিষ্কৃত ভুলেই গিয়েছিল! এখন বউকে দেখেই মনে পড়লো বুঝি! বড় শ্বাস ফেলে তূর্ণ বললো,
” কি রে কান্নাকাটি শেষ? বন্যা বানানো আরো বাকি আছে কি? ”
হঠাৎ কারোর কণ্ঠে হকচকিয়ে গেল দুয়া! ভাবনা থেকে বেরিয়ে সম্মুখে তাকালো। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো তূর্ণ’তে। পড়নে নীলাভ টি শার্ট এবং ট্রাউজার। টিশার্টের কলার উঁচু করে রাখা। লালচে চুলগুলো হালকা এলোমেলো। জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে। চোখে চোখ পড়তেই দুয়া দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। তূর্ণ মোবাইল হাতে বসলো সিঙ্গেল সোফার একটিতে। দেহ এলিয়ে দিয়ে আয়েশ করে বসলো। বললো,
” এত কান্নাকাটি কিসের সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আবিয়াত্তা থেকে বিয়াত্তা হয়ে গেছিস বলে দুঃখ হচ্ছে? নাকি বফ আছে? ”
বফ! এতবড় কথা!
” বফ! কিসের বফ! আমার কোনো বফ নেই। ”
” তাহলে বিশাল, তিয়াশ কি লেডি? নারী? ”
হকচকিয়ে গেল দুয়া!
” তুমি কিসের মধ্যে কি বলছো? ওরা আমার বন্ধু। তুমি কিন্তু বফ অন্য অর্থে ইউজ করেছো। ”
তূর্ণ খুশি খুশি তাকালো ওর দিকে।
” আরে বাহ্! বিয়ে হতে না হতেই এত উন্নতি? বর কোন কথা কোন অর্থে বলছে শুনেই বুঝে যাচ্ছিস? ”
হতবাক মেয়েটার কর্ণ কুহরে তখন ভেসে ভেসে আসছে ‘ বর ‘…! হাঁ বর। তার তিন কবুল বলে বিয়ে করা বর! সর্বদা কাজিন জানা মানুষটি এখন ওর বর! হৃদয়ের অন্তঃস্থলে কোথাও বুঝি মৃদু তরঙ্গ বয়ে গেল!
” কি রে! বর বলতেই মধুচন্দ্রিমা অবধি চলে গেলি নাকি? তা কোথায় গেলি? মালদ্বীপ না সুইজারল্যান্ড? ”
দুয়া আজ অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে! তূর্ণ ভাইয়ার এ কি নয়া রূপ দেখছে সে! মানুষটা সেই তখন থেকে লাগামহীন বলেই চলেছে! মানে কি?
” তুমি এসব কি বলছো? ছিঃ! কিসের মধুচন্দ্রিমা! আমি কোথাও যাইনি। ”
দুয়া’র প্রতিবাদী স্বর শুনে তূর্ণ অধর কা’মড়ে হাসলো।
” আচ্ছা! বরের কাছেই বসে আদর সোহাগে বিজি ছিলে? ”
” ছিঃ! ”
দু হাতে দুই কান চেপে ধরে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালো দুয়া। কক্ষ ত্যাগ করতে করতে বলে গেল,
” তুমি একটা বেশরম, অ*শ্লীল লোক! ছিঃ! ”
দুয়া কক্ষ হতে প্রস্থান করতেই সশব্দে হেসে উঠলো তূর্ণ। আজ বড্ড খুশি খুশি লাগছে! কারণে অকারণে মন গেয়ে উঠছে,
‘ আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে ‘
•
নীরবতায় আচ্ছাদিত কফিশপ। প্রায় জনশূন্য বলা চলে। মুখোমুখি বসে দু মানব। ধোঁয়া ওঠা কফির মগ টেবিলে। একে অপরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দু’জনে। ভিন্ন ভিন্ন চাহনি তাদের।
” আমি আবারো জিজ্ঞেস করছি ওই ক্যাঁচালে আপনার হাত ছিল কি না? ”
” আমি আগেও বলেছি। আবারো বলছি। আমি কিছুই জানি না। ”
” আচ্ছা? কিছু না জেনেও আপনার টাইমিং বড্ড পারফেক্ট হয়ে গেল না? ”
” না। আমার দরকার ছিল। তাই গিয়েছিলাম। কোনো টাইমিং নেই এখানে। ”
কফির মগে চুমুক দিলো এক মানব। মাথা নাড়িয়ে বললো,
” প্লানড্ টাইমিং না হলেই ভালো। নইলে আমার টাইমিং কিন্তু আবার ধরাবাঁধা নয়। যেকোনো সময় যেকোনো কিছুই হয়ে যেতে পারে। সো বি কেয়ারফুল। ”
বিপরীতে থাকা মানব বক্র হাসলো। মলিন সে হাসি। কফি পান করে উঠে দাঁড়ালো প্রথম মানব। মেনু কার্ডের মধ্যে বিল পরিশোধ করে সাথে টিপস্ও দিলো। অতঃপর চোখের ইশারায় বিদায় জানিয়ে পা বাড়ালো বহির্গমন পথের দিকে। স্লাইডিং ডোর পেরিয়ে প্রস্থান করলো সে। রয়ে গেল এক দুঃখ ভারাক্রান্ত মানব।
চলবে.
[ আসসালামু আলাইকুম। কেমন লাগলো ধামাকা? গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি কিন্তু। বিয়ে সম্পর্কিত ঘটনাটা আপাতত লুকায়িত। যথাসময়ে ক্লিয়ার করা হবে। আশা করি বুদ্ধিমান পাঠকরা বুঝতে পারবেন। ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য। ]