তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_১৫

0
781

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৫

নিশুতি রাত। সিঙ্গেল সোফায় বসে রয়েছে দুয়া। অস্থিরতা বিরাজমান রন্ধ্রে রন্ধ্রে। একবার সোফায় দেহ এলিয়ে বসছে তো আরেকবার সোজা হয়ে বসছে। কখনোবা দাঁত দিয়ে নখ কা’মড়ানোর মতো বাজে অভ্যাসও চর্চা করছে। গলদেশ শুকিয়ে কাঠ। তড়িৎ উঠে দাঁড়ালো মেয়েটা। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল বেড সাইড টেবিলের কাছে। বিছানার কোণে বসে ডান হাতে গ্লাস এবং বাঁ হাতে জগ নিলো। পানিতে পূর্ণ করলো গ্লাসটি। অতঃপর জগ পূর্বের স্থানে রেখে ঢকঢক করে পানি পান করলো। শুকনো গলা অবশেষে সিক্ত হলো। ডান হাতে ওড়নার একাংশে সিক্ত মুখ মুছে গ্লাসটি রেখে দিলো। এখনো ধুকপুক ধুকপুক করছে অন্তঃপুরে। কি হবে এবার! মেয়েটার ভয়ডর কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতেই আগমন হলো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ডান পাশে তাকালো দুয়া। দেখতে পেল তূর্ণ আসছে। কাঁদো কাঁদো হয়ে এলো মেয়েটার মুখশ্রী। শুকনো ঢোক গিলে উঠে দাঁড়ালো। তূর্ণ মোবাইল স্ক্রল করতে করতে আসছিল। একবার চোখ তুলে অর্ধাঙ্গিনীর পানে তাকালো। মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বসলো সিঙ্গেল সোফার একটিতে। মোবাইলে মগ্ন মানুষটিকে দেখে দুয়া স্বল্প সময়ের জন্য হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। পুনরায় বসলো বিছানায়।‌ নীরবে অতিবাহিত হলো কিছু সময়। হাতে থাকা মোবাইলটি গোলাকার টি টেবিলের ওপর রেখে উঠে দাঁড়ালো তূর্ণ। তা লক্ষ্য করে খানিকটা ঘাবড়ে গেল দুয়া। এবার? তবে ঘাবড়ে যাওয়ার মতো কিছু হলো না। তূর্ণ পা বাড়ালো ওয়াশ রুমের দিকে। উঠে দাঁড়ালো দুয়া। দৃষ্টি একবার বিছানায় তো আরেকবার সোফা। কখনোবা টাফটেড বেঞ্চে। উঁহু উঁহু! হবে না। তবে কি? দুয়া মনে মনে অসন্তোষ প্রকাশ করলো একটা ডিভান কিংবা বড় সোফা কেন নেই। হুয়াই! খট করে দরজা উন্মুক্ত হবার শব্দ হলো। পিছু ঘুরে তাকালো মেয়েটা। তূর্ণ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। তোয়ালে দিয়ে হাতমুখ মুছতে মুছতে বের হয়েছে। দুয়া একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। কিন্তু তূর্ণ তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করলো।

” কি ব্যাপার? এখনো শুয়ে পড়িসনি কেন? ”

থতমত খেল মেয়েটা। মেকি হেসে আমতা আমতা করতে লাগলো। যা দেখে তূর্ণ’র ভ্রূ যুগল কুঁচকে গেল। তবে কিছু বললো না। তোয়ালে যথাস্থানে রেখে রুমের দ্বার আঁটকে দিলো। এতেই মেয়েটার পরাণপাখি ফুরুৎ! উড় গায়া! তোতলাতে তোতলাতে বললো,

” দ্ দরজা আঁটকালে কেন? ”

পিছু ঘুরে তাকালো তূর্ণ। মৃদু বিস্ময় প্রকাশ করে বললো,

” ঘুমানোর আগে দরজা আটকাবো না! সিঙ্গেল অবস্থাতেই সবসময় দরজা আটকে ঘুমাতাম। এখন তো মিঙ্গেল। বউ আছে। দরজা জানালা সব আটকে ঘুমাতে হবে। ”

নাকমুখ কুঁচকে ফেলল দুয়া। ক্ষীণ স্বরে বললো,

” ঘুমাবো কোথায়? ”

” হুঁ? কি বললি? ”

” জিজ্ঞেস করলাম ঘুমাবো কোথায়? ”

তূর্ণ হাঁটতে হাঁটতে বেডের কাছে এলো। বসলো বিছানার বাম পাশে।

” ওহ্ তার মানে আমি ভুল শুনিনি? তুই আসলেই ভারতীয় সিরিয়াল মার্কা প্রশ্ন করেছিস? ”

অবাক হলো দুয়া!

” কিহ্! এখানে ভারতীয় সিরিয়াল এলো কোথা থেকে?”

” কোথা থেকে আবার? তোর প্রশ্ন থেকে। ভারতীয় ইনা, মিনা, ডিকাদের মতো রাতদুপুরে প্রশ্ন করছিস ‘কোথায় ঘুমাবো?’ কেন রে এত বড় বিছানা চোখে পড়ছে না? অন্ধ হয়ে গেছিস! ”

” তুমি আমাকে অন্ধ বললে? আমাকে কোন দিক দিয়ে অন্ধ লাগে? উল্টো অন্ধ তো তুমি। চশমা কে পড়ে? আমি না তুমি? ”

মেয়েটার কন্ঠে মৃদু ঝাঁঝ! বক্র হাসলো তূর্ণ।

” বেগমসাহেবা! ভদ্র ভাবে কথা বলুন। রাতটা কিন্তু আমার সাথেই কাটাতে হবে। আমি কিন্তু টুরু ভদ্রলোক।‌ দেখা গেল রাতদুপুরেই প্রমাণ দেয়া শুরু করলাম অন্ধ কি না! ”

টেনে টেনে শেষোক্ত কথাটা বললো তূর্ণ। যা শুনে ঘাবড়ে গেল দুয়া। দু হাতে টপসের অংশবিশেষ খামচে ধরলো। জোরে জোরে শ্বাস ফেলে ক্ষীণ স্বরে বললো,

” ব্ বাজে কথা বলবে না। ”

দাঁত কেলিয়ে হাসলো তূর্ণ। মাথা নাড়িয়ে বললো,

” আচ্ছা। এবার ঘুমাতে আসুন। নাকি ঘোড়ার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্লিপিং স্লিপিং? হুঁ? ”

দুয়া দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে গিয়েও বললো না। বড় বড় কদম ফেলে বিছানার ধারে অগ্রসর হলো। এসে দাঁড়ালো ডান পাশে। একবার বিছানা তো আরেকবার বরের দিকে তাকাচ্ছে। তূর্ণ বিছানায় শুয়ে দেহে ব্ল্যাংকেট জড়াতে জড়াতে বললো,

” মাঝখানে ভারত পাকিস্তান বর্ডারের আশা করে থাকলে ভুলে যা। আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণর রুমে কোনো সীমান্ত, ভেদাভেদ নেই। আছে শুধু সমতা, একাত্মতা। বুঝেছিস? ”

দুয়া মাথা নাড়লো অর্থাৎ সে বুঝেছে। অথচ বোকা মেয়েটা বুঝতেও পারলো না তার সদ্য বিবাহিত অর্ধাঙ্গ সমতা, একাত্মতা বলতে আসলে কি বুঝিয়েছে। না বুঝেই সে সম্মতি পোষণ করলো!

” গুড! এবার লাইটস অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে আয়। শুয়ে পড়। ”

ভদ্র মেয়ের মতো দুয়া কক্ষের আলো নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালালো। এসে বসলো তূর্ণ’র পাশে। নিঃশব্দে শয্যা গ্রহণ করলো। স্বামীর থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। তূর্ণ তা লক্ষ্য করে কিছু বললো না। চুপচাপ আঁখি পল্লব বন্ধ করে নিলো। চোখেমুখে তৃপ্তির আভা!
.

তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব কেটে গেল। কর্ণ কুহরে পৌঁছাচ্ছে কিছু অদ্ভুত ধ্বনি। আস্তে ধীরে আঁখি পল্লব মেলে তাকালো তূর্ণ। নিজের বাম পাশে তাকিয়ে অতঃপর তাকালো ডান পাশে। দুয়া ওদিক ফিরে শুয়ে। পৃষ্ঠদেশ ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত হচ্ছে! তবে কি মেয়েটা! কাঁদছে! তড়িৎ দেহ হতে ব্ল্যাংকেট সরিয়ে স্বল্প উঠে বসলো তূর্ণ। অর্ধাঙ্গীর পানে মৃদু ঝুঁকে বসতেই স্পষ্ট হলো সবটা। দুয়া কাঁদছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। সে ক্রন্দন ধ্বনি কর্ণ কুহরে পৌঁছাতেই মানুষটির হৃদয়ের অন্তঃস্থলে ভূকম্পন হলো। হৃৎপিণ্ড লাফিয়ে চলেছে ধড়াস ধড়াস। স্বেদজল উপস্থিত ললাটে। তূর্ণ ওকে ডাকতে গিয়েও ডাকলো না। কি ভেবে যেন বেডের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসলো। ডান হাতটি আলতো ভঙ্গিতে রাখলো অর্ধাঙ্গিনীর মাথায়। ক্রন্দনরত ললনা হঠাৎ কারোর স্পর্শ টের পেয়ে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে গেল। স্বল্প সময়ের মধ্যেই সে ঘাবড়ে যাওয়া ভাব লাঘব হলো। চুপটি করে শুয়ে রইলো মেয়েটা। কিছু বললো না। শুধু অনুভব করে গেল পুরুষালি স্পর্শটুকু। আদুরে হাতটি তখন ওর মাথায় ঘুরে চলেছে। কেশের ভাঁজে ভাঁজে ছুঁয়ে যাচ্ছে আঙ্গুল। মাথার চামড়ায় পুরুষালি স্পর্শ অনুভূত হতেই শিরশির করে উঠছে কায়া। সে স্পর্শে নেই কোনো কামুক ভাব। আছে শুধু একরাশ ভরসা। পাশে থাকার আশ্বাস। আলতো ছোঁয়ায় মেয়েটির ক্রন্দন কখন থেমে গেল টেরও পেলো না। আরাম পেয়ে আস্তে ধীরে মুদিত হলো নেত্রপল্লব। ঘুমিয়ে পড়লো একসময়। ঘন নিঃশ্বাসের ধ্বনি কর্ণ গহ্বরে পৌঁছালে হাতটি থেমে গেল। দুয়া’র পানে মৃদু ঝুঁকে গেল মানুষটি। স্বচক্ষে দেখে নিলো ঘুমন্ত অর্ধাঙ্গীকে। মলিন হাসলো তূর্ণ। নিভৃতে আরেকটু ঝুঁকে গেল। প্রিয়তমাকে প্রথম হালাল স্পর্শ করলো। ছোট্ট এক চুমু অঙ্কন করে দিলো ললাটের কার্নিশে। মৃদু স্বরে আওড়ালো,

” প্রথম হালাল স্পর্শ দিলাম তোমায়
হোক না তা তোমার অজান্তে
একদিন এই ছোঁয়াটুকু তুমি সাদরে মেখে নিবে সর্বাঙ্গে
অপেক্ষা সেদিন সে প্রহরের। ”

দিবাকরের আলোয় আলোকিত ধরনী। তাহমিদা শাড়ির আঁচলে ভেজা হাত মুছতে মুছতে ডেকে চলেছেন কন্যাকে। ব্যস্ত পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে চলেছেন,

” দুয়া! অ্যাই দুয়া! ঘুম থেকে উঠেছো? দুয়া? ”

সাড়া নেই কারোর। ওনার কণ্ঠনালী হতে ‘ চ ‘ সূচক শব্দ নির্গত হলো। কক্ষের বদ্ধ দ্বার খুলে তাহমিদা প্রবেশ করলেন কক্ষে। বিছানায় দৃষ্টি না ফেলে এগিয়ে গেলেন জানালার ধারে। জানালা হতে পর্দা সরাতে সরাতে ডেকে চলেছেন,

” দুয়া! উঠে পড়ো। ভার্সিটি যাবে না? দুয়া! ”

পর্দা দু পাশে বিভক্ত করে জানালা খুলে ফেললেন উনি। অতঃপর তাকালেন পেছনে। এক মুহুর্তের জন্য ওনার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো! শূন্য বিছানায় দৃষ্টি আবদ্ধ রইলো কয়েক পল! বাস্তবতা বোধগম্য হতেই নেত্রকোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা অশ্রু। বিছানা শূন্য! দুয়া নেই। সে তো নতুন নীড়ে। শ্বশুরবাড়িতে। ধীরপায়ে বিছানার ধারে অগ্রসর হলেন তাহমিদা। বসলেন বিছানার এক পাশে। আলতো করে ছুঁয়ে দিলেন বালিশ। এখানে মাথা রেখেই তো মেয়েটা ঘুমাতো। প্রতিদিন সকালে উনি ডাকতেন। তবেই মেয়ের ঘুম ভাঙ্গতো। অ্যালার্মে কাজ হতোই না। মেয়ের নাকি মায়ের কণ্ঠ না শুনলে নিদ্রা ভঙ্গ হয় না। মায়ের কণ্ঠ শুনবে, মা মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দেবে। তবেই ঘুম ভেঙ্গে যাবে। তাহমিদা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো বিন্দু বিন্দু অশ্রু। আজ তো মেয়েটা তার কণ্ঠ শুনতে পেল না। মা আদুরে হাত বুলিয়ে দিলো না। কেমন কাটছে মেয়েটার সকাল? সে ঠিক আছে তো? চিন্তিত হলো মাতৃ হৃদয়! পরক্ষণেই ভাবলেন মেয়ে আল্লাহ্’র রহমতে নিশ্চয়ই ভালো আছে। সে যে যোগ্য স্থানে রয়েছে। সেখানে আদর-যত্নের কখনো খামতি হবে না। বড় আপা মায়ের মতো আগলে রাখবে তার মেয়েটাকে। তবুও মা তো মা ই হয়। মায়ের স্থান দখল করা কি সহজ?

‘ ছায়াবিথী ‘ এর ডাইনিং রুম। পরিবারের সদস্যরা প্রায় সবাই উপস্থিত। বাকি শুধু দু’জন।

” ওরা দু’জন কোথায়? ঘুম থেকে ওঠেনি? ”

তাসলিমা স্বামীর পানে তাকালো। প্লেটে খাবার সার্ভ করতে করতে জবাব দিলো,

” উঠেছে। আসছে‌। ”

বলতে না বলতেই হাজির নবদম্পতি। সকলের চাহনি ওদের দিকে নিবদ্ধ। তা লক্ষ্য করে কিঞ্চিৎ অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো মেয়েটি। চেনা মানুষগুলো আজ নতুন এক সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা। অন্যরকম অনুভূতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তূর্ণ চোখের ইশারায় ওকে সাথে আসতে বললো। দু’জনে এলো টেবিলের কাছে। তূর্ণ বসতে বসতে সকলের উদ্দেশ্যে বললো,

” আসসালামু আলাইকুম। গুড মর্নিং এভ্রিওয়ান। ”

তাসলিমা মুচকি হেসে বললেন,

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। গুড মর্নিং। ”

” গুড মর্নিং ভাইয়া! ”

একসাথে উইশ করলো দুই বোন। তৃষা এবং নিশি। বিনিময়ে তূর্ণ মুচকি হাসলো। দুয়া সকলের পানে একবার তাকিয়ে তূর্ণ এবং তৃষার মধ্যবর্তী শূন্য চেয়ারে বসলো। নিজাম সাহেব মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে পুত্রবধূকে জিজ্ঞেস করলেন,

” কি মা? কেমন আছো? নতুন পরিবেশে অস্বস্তি হচ্ছে না তো? অবশ্য এটা তো তোমার চেনা ঘর ই। শুধু সম্পর্কের সমীকরণ একটু বদলে গেছে। ”

” হুঁ। ভাইয়া এখন সাইয়্যা। ”

তৃষার বিড়বিড় করে বলা কথাটা শুনে নিশি মুখ টিপে হাসতে লাগলো। আর দুয়া? লজ্জা মিশ্রিত রাগী দৃষ্টিতে বাম পাশে তাকালো। তা লক্ষ্য করে তৃষা ভয় পাওয়ার ভান করে ফিক করে হেসে উঠলো। তাসলিমা মেয়েকে বলে উঠলেন,

” সকাল সকাল দাঁত বের করে হাসছিস কেন? ”

” এমনিই আম্মু। ভয় পাইছি তো তাই। ”

তূর্ণ সবজি খিচুড়ি মুখে পুরে বললো,

” ভয় পেলে মানুষ হাসে? তোর মতো অটিস্টিক দ্বারাই সম্ভব। ”

তেঁতে উঠলো তৃষা।

” কিহ্! আমি অটিস্টিক! আব্বু আম্মু। তোমরা শুনলে ভাইয়া কি বললো? ”

” হুঁ শুনলাম। ”

বাবার নির্লিপ্ত জবাবে তৃষা ভাবিকে পার করে ভাইয়ের দিকে তাকালো। রাগত স্বরে বললো,

” আমি অটিস্টিক না। তুমি অটিস্টিক। বুইড়া অটিস্টিক। ”

” আচ্ছা। ”

তূর্ণর জবাবে তৃষা তো রাগে গজগজ করছে। কিন্তু দুয়া? বহু কষ্টে হাসি দমিয়ে রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। পারছে না অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে। লাইক সিরিয়াসলি! বুইড়া অটিস্টিক! দুয়া যখন হাসি চেপে রাখতে ব্যস্ত তখনই কর্ণ কুহরে পৌঁছালো গম্ভীর স্বর,

” এই যে? বুইড়া অটিস্টিকের বউ! বুড়ি অটিস্টিক। বেশি হাইসেন না। দাঁত খসে পড়বে। ”

দুয়া কটমট চোখে ডান পাশে তাকালো। কিন্তু মহাশয় ওর চাহনি লক্ষ্য করলে তো! সে তো একমনে খিচুড়ি খেয়ে চলেছে। যেন এছাড়া আর কোনো কর্ম নেই। হুহ্! দুয়া রাগটা চেপে গেল। খাবার খাওয়ার দোয়া পড়ে খেতে শুরু করলো। তাসলিমা সকলকে খাবার সার্ভ করে মায়ের পাশে চেয়ারে বসলো। খেতে ব্যস্ত সকলে।

অপ্রাপ্তি! অপ্রাপ্তি! জীবনে প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তির খাতা আজ ভরপুর। সর্বদা কেন সে-ই হেরে যাবে? কেন অপূর্ণ রইবে তার সকল ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা? যখনই কিছু চেয়েছে, পেয়েছে। পেতে পেতে এক অদম্য জেদ চেপে বসলো। সে ভাবতে লাগলো তার সকল ইচ্ছা পূরণ হবে। অপূর্ণ রইবে না কিছুই। কিন্তু আজ? সেই বোকামি মনে করে হাসি পায়। তাচ্ছিল্যের হাসি। একটা মানুষ যখন চাওয়ার সাথে সাথেই সব পেয়ে যায় তার ভেতর এক ভিন্ন আত্মবিশ্বাস থাকে। কিন্তু সেই মানুষটি ই যখন একসময় হেরে যেতে থাকে। অপূর্ণ রয়ে যায় তার ইচ্ছেরা। তখন জেদ চেপে বসে। সবকিছু অসহ্য লাগে। মানতে নারাজ ব্যর্থতা। বরাবরের মতো আজও হেরে গেল সে। ব্যর্থতা জড়িয়ে ধরলো আষ্টেপৃষ্ঠে। কি করে এই ব্যর্থতা, যাতনা সইবে সে? জানা নেই। জানা নেই। আছে শুধু একরাশ ক্ষোভ এবং যন্ত্রণা!

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দুয়া। দু হাত ধরে রাখা রেলিং। কোমর অবধি রেলিং। বাকিটা উন্মুক্ত। হিমেল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে কায়া। অনাবৃত কেশ নৃত্যরত হাওয়ার পরশে। মেয়েটা যখন স্রষ্টার পরিকল্পনা, জীবন নিয়ে চিন্তায় মগ্ন তখন কর্ণ কুহরে পৌঁছালো রিংটোন। তার ফোন বেজে চলেছে। ভাবনায় ছেদ পড়লো। রেলিং হতে দু হাত সরিয়ে নিলো দুয়া। বেলকনির দ্বার পেরিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো। শূন্য বিছানার এক পাশে মোবাইলটি রাখা। সেদিকে অগ্রসর হলো দুয়া। হাতে মোবাইল তুলে নিলো। লক্ষ্য করলো বাসা থেকে কল এসেছে। অভিমানিনী তার সমস্ত অভিমান ভুলে তৎক্ষণাৎ কল রিসিভ করলো।

” হ্যালো আসসালামু আলাইকুম! আম্মু কেমন আছো? আব্বু কেমন আছে? তোমরা সবাই ভালো আছো তো?”

চমকালো মেয়েটি! ফোনের ওপাশে মায়ের বদলে অন্য একজন। যাকে সে আশাও করেনি। সত্যিই সে ফোন করেছে!

চলবে.

[ আসসালামু আলাইকুম পাঠক বন্ধুরা। গতকাল গল্প আপলোড করার কথা ছিল। কিন্তু ওয়াই-ফাই প্রবলেম এর জন্য আপলোড করতে পারিনি। আপনাদের অপেক্ষায় রাখার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here