শেষটা_সুন্দর #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৪।

0
1444

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪।

মেহুল দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখল,ভদ্রলোক খাটের এক কোণে বসে খুব মনোযোগের সহিত ফোন চাপছেন। দেখে মনে হচ্ছে যেন এটা তারই রুম। বিন্দুমাত্র সংকোচ নেই। মেহুল প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে লোকটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে রুমে প্রবেশ করল। তারপর আস্তে আস্তে বিছানার অপর পাশে গিয়ে বসল। রাবীর তার উপস্থিতি টের পেয়েও চুপচাপ নিজের কাজ করতে যাচ্ছে। মেহুলও চুপচাপ বসে আছে। মাঝে মধ্যে আড় চোখে রাবীরকে দেখছে। আর সাথে বিরক্তও হচ্ছে। খানিক বাদেই রাবীরের ফোনটা বেজে উঠে। সে কলটা রিসিভ করে। কে কল দিয়েছে মেহুল জানে না। রাবীর কাকে যেন বলছে, ‘রাতেই মিটিং রাখো, আমি কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসছি।’ রাবীর চলে যাবে, কথাটা শুনে যেন মেহুলের প্রচন্ড খুশী লাগল। সে লাফিয়ে উঠে বলল,

‘আপনি চলে যাচ্ছেন?’

রাবীর ফোন রেখে তার দিকে ঘুরে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,

‘কেন, চলে গেলে খুব খুশি হবেন?’

মেহুল হেসে বলল,

‘অবশ্যই, খুব খুশি হব।’

রাবীর তা শুনে মুচকি হাসে। তার এই হাসির অর্থ মেহুল বুঝতে পারে না। রাবীর উঠে দাঁড়ায়। বলে,

‘চলে যাচ্ছি। তবে প্রত্যেক সপ্তাহের শুক্রবারে আমি আসব। আর একটা কথা, আপনার সব খরচ আজ থেকে আমিই দিব। আপনার সেমিস্টার ফি থেকে শুরু করে এভ্রিথিউং। প্রতি সপ্তাহে এসে হাতখরচ দিয়ে যাব। পরে যখন যা লাগবে আমাকে কল করে বললেই চলবে। বিকাশে দিয়ে দিব। আর কোনো প্রয়োজন হলেই আমাকে কল দিবেন। যেকোনো সমস্যায় আমি আপনার পাশে আছি। তাই কোনো ইতস্তত বোধ করবেন না। আর একটা কথা, আপনি সবকিছু সুন্দর স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে না পারলেও আমি মেনে নিয়েছি। আপনি আমার স্ত্রী, আমার সম্মান। আর তাই আশা করছি, আমার সেই সম্মান আপনার কাছে হেফাজতে থাকবে। ভালো থাকবেন।’

রাবীরের এসব কথা মেহুলের একদম পছন্দ হয়নি। রাবীর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়ি পরছিল। মেহুল গিয়ে তার পেছনে দাঁড়িয়ে বলে,

‘শুনুন, আমার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমার বাবা আছেন। আপনাকে আমার প্রয়োজন নেই। আমার সব খরচ আমার বাবাই দিবেন। আপনার কাছ থেকে আমি টাকা নিব না।’

রাবীর আয়নার মাঝ দিয়েই মেহুলের দিকে তাকায়। মেহুল রাবীরের দিকে চাইতেই মনে হলো যেন লোকটার মেজাজ আর ঠান্ডা নেই। চোখ মুখ কেমন যেন শক্ত হয়ে উঠেছে। মেহুল মনে মনে খুশি হচ্ছে। লোকটা এখন চিৎকার দিয়ে তার সাথে কথা বললেই বাড়ির সবাই সেটা শুনবে। মেহুলও তো এটাই চাই। তবে মেহুলের এক বুক আশা হতাশায় পরিণত হলো, যখন রাবীর তার দিকে ঘুরে নরম সুরে বলল,

‘মিসেস মেহুল খান, আমি এক কথার মানুষ। একবার যেটা বলি, সেটাই করি। আমি যখন বলেছি, আজ থেকে আপনার সমস্ত দায়িত্ব আমার; তার মানে আমার। এখন তাতে আপনার মত থাকুক বা না থাকুক এতে আমার কিছু যায় আসে না।’

মেহুল রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কর্কশ স্বরে বলে,

‘আপনি প্রচন্ড খারাপ একটা লোক। আমার সাথে আপনি জুলুম করছেন। আচ্ছা, আপনি নেতা হলেন কী করে বলুন তো? নির্ঘাত সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও জোর করেই ভোট আদায় করেছেন? নাহলে আপনার মতো লোককে কে ভোট দিত।’

মেহুলের কথা রাবীরের অপছন্দ হলেও সে তেমন কিছু বলল না। মেহুলকে পাশ কাটিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে সেখানে একটা খাম রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মেহুল গিয়ে খামটা খুলে দেখল, সেখানে অনেকগুলো টাকা। সে দ্রুত বাইরে বেরুল। রাবীরকে গিয়ে দেখল তার মা বাবার রুমে। তাদের সাথে কথা শেষ করে রাবীর মেইন দরজার কাছে যায়। মেহুলও যায় তার পেছন পেছন। তার উদ্দেশ্য এই টাকাগুলো তাকে ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু তার চাচি আর তার মাও সেখানে চলে আসেন বিধেয় মেহুল আর তেমনটা করতে পারে না। টাকার খামটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও খামটা আর দিতে পারে না। রাবীর চলে যায়। মেহুলও আর উপায়ান্তর না পেয়ে দরজা আটকে তার রুমে ফিরে যায়। টাকাগুলো আলমারিতে তুলে রাখে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, এখান থেকে সে এক টাকাও খরচ করবে না।

_____

‘স্যার, লোকটা তো এখনও দোকানের ফাইলটা দেয়নি। কী করব?’

‘উনাকে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসো।’

‘উনি তো আসতে চাইছেন না।’

‘আসতে চাইছেন না তো, তুলে নিয়ে আসো। তোমাদেরকে রেখেছি কী করার জন্য? যাও তাড়াতাড়ি।’

ছেলেটা মাথা হেলিয়ে দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। রাবীর তখন তার সামনে বসে থাকা বৃদ্ধ লোকটির দিকে চেয়ে বলল,

‘আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, চাচা। আপনার দোকান আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিব।’

_____

চায়ের কাপ নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে মেহুল। একটা চুমুক দিয়ে তার বান্ধবী রিতুকে কল দেয়। রিতু কল রিসিভ করে হেসে হেসে বলে,

‘কিরে বান্ধবী, বাসর কেমন কাটালি?’

মেহুল দাঁত খিঁচে বলল,

‘অনেক রোমান্টিক ভাবে কাটিয়েছি। ভিডিও বানিয়েছি, পাঠাবো?’

রিতা হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ে। বলে,

‘সিরিয়াসলি! তুই তোর বাসরের ভিডিও বানিয়েছিস? এক কাজ কর, আমাদের গ্রুপে পাঠিয়ে দে। সবাই একসাথে বসে বসে দেখি।’

‘শোন রিতা, তোকে না আমি তোদের পাঁচতলা বিল্ডিং এর উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিব। তারপর হাত পা ভেঙে বাড়িতে পড়ে থাকবি। এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই। তোর সাথে কথা বলে এখন আরো বিরক্ত লাগছে।’

‘কেন রে, এমন একটা হ্যান্ডসাম বর পেয়েও খুশি না তুই? ঐরকম একটা ছেলে যদি আমাদের ভাগ্যে থাকত, আমরা তো তাহলে খুশিতে পাগলই হয়ে যেতাম।’

‘তাহলেই তুই উনাকে নিয়ে যা। বিয়ে করে ফেল। আমার কোনো আপত্তি নেই।’

‘যাহ, কী বলিস! উনি আমার দুলাভাই। আমি দুলাভাইয়ের দিকে এমন নজর দিই না।’

‘আচ্ছা, তুই আমাকে আগে বলিসনি কেন, উনি আরিয়ান খান রাবীর? আমি তো উনাকে দেখে অবাক। উনার সাথে আমার বিয়ে হবে, সেটা আমি ভাবতেও পারিনি।’

‘ভাগ্য। এমন ছেলেকে বর হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমি তো সবাইকে বলেছি। সবাই শুনে কী যে খুশি হয়েছে জানিস না তুই। আর মিম আছে না, ওর তো আবার ক্রাশ ছিল ভাইয়া। ও শুনে একটু মন খারাপ করেছে। ঢং করে বলেছে, উনার কি আমাকে চোখে পড়ল না? ঐদিন অনুষ্ঠানে তো আমিও খুব সুন্দর করে সেজে গিয়েছিলাম।’

মেহুল তখন চিন্তিত সুরে জিজ্ঞেস করল,

‘তোর কি মনে হয়, উনি সেদিন আমাকে অনুষ্ঠানে দেখেই পছন্দ করেছিলেন?’

‘কেন, ভাইয়া কি কিছু বলেননি?’

‘না, উনি আমাকে কিছু বলেননি।’

‘আমার তো তাই মনে হয়। হয়তো সেদিন অনুষ্ঠানে তোকে দেখেই উনি তোর প্রেমে পড়ে যান, তাই তোর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান।’

‘কিন্তু, সেদিন তো আমি খুব একটা মাঠে থাকিনি। উনি আমাকে দেখল কখন? আর মা বাবা তো বললেন, ছেলেকে নাকি উনারা আগে থেকেই চিনেন। বাবার পরিচিত।’

‘এক কাজ কর, তুই ভাইয়াকে জিজ্ঞেস কর। উনিই তোকে সব বলতে পারবে।’

‘উঁহু, উনার সাথে আমি কথা বলতে পারব না।’

‘কেন? বিয়ের প্রথম রাতেই ঝগড়া করে কথা বন্ধ করে দিয়েছিস নাকি?’

‘ঐ লোকটাকে আমার একদমই পছন্দ না। সবসময় ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলেন। আমার উনার কথা শুনলেই রাগ হয়।’

‘হু, এখন তো এসবই বলবি। একদিন দেখবি, এই লোকের সাথেই এক মিনিট কথা বলার জন্য কত অস্থির অস্থির লাগে।’

‘আল্লাহ করুক, এই দিন জীবনেও না আসুক।’

_____

মধ্যবয়স্ক লোকটা কিছু টাকার বান্ডেল রাবীরের সামনে রেখে বললেন,

‘লাগলে আরো দিব। খালি আমার দোকানের উপর থেকে হাত সরিয়ে ফেলেন।’

রাবীর বাঁকা হেসে বলে,

‘দোকান আপনার না। যার দোকান তাকে ফিরিয়ে দিন।’

লোকটা শব্দ করে হেসে বলল,

‘দোকান আমার। আমি এই দোকান কাউকে দিব না। কত টাকা দিলে মুখ বন্ধ হবে সেটা বলুন।’

রাবীর উঠে দাঁড়ায়। শান্ত চোখে কিছুক্ষণ লোকটার দিকে চেয়ে থাকে। তারপর হুট করে সে পেছনের পকেট থেকে একটা বন্দুক বের করে লোকটার মাথায় ঠেকিয়ে বলে,

‘আজীবনের জন্য যদি নিজের মুখ বন্ধ করতে না চান, তাহলে এক্ষুণি এই পেপারগুলোতে সাইন করুন।’

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here