শেষটা_সুন্দর #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৫।

0
1397

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৫।

খাওয়া দাওয়া করে রুমে এসে মেহুল দেখল তার ফোনটা বাজছে। হাতে নিয়ে দেখল, আননোন নাম্বার। মেহুলের তখন সঙ্গে সঙ্গেই মনে হলো, এটা নিশ্চয়ই রাবীর। সে রিসিভ করল না। ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রেখে দিল।

কিছুটা সময় এভাবেই পার হয়। মেহুল তখন বিছানায় শুয়ে বই পড়ছে। সেই সময় তার রুমে রামিনা বেগম এলেন। তিনি এসে মেহুলকে ধমক দিয়ে বললেন,

‘ফোন কই তোর?’

মেহুল চমকে অবাক হয়ে বলে,

‘কেন?’

‘রাবীর কখন থেকে তোকে কল করছে, রিসিভ করছিস না কেন?’

মেহুল হতভম্ব হয়ে যায়। মানে, এই লোকটা কতটা সাংঘাতিক! ও ফোন ধরছে না বলে সে ডিরেক্ট তার মা’কে কল দিয়ে বসল! মিহাম জোরে নিশ্বাস ফেলে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নেয়। মায়ের দিকে চেয়ে নরম গলায় বলে,

‘সাইলেন্ট ছিল, তাই শুনিনি।’

‘এখন কল দে।’

‘আচ্ছা, তুমি যাও; দিচ্ছি।’

রামিনা বেগম বেরিয়ে যাওয়ার পর মেহুল বিরক্ত হয়ে বিছানায় বসল। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই ফোনটা তার আবার বেজে উঠে। মেহুলের বিরক্তের মাত্রা তখন আরো বেশি বেড়ে যায়। সে ফোনটা রিসিভ করে কানে নিয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,

‘সমস্যা কী আপনার? একটু ফোন ধরছিলাম না বলে মা’কে কল দিয়ে দিবেন? আশ্চর্য তো!’

‘মা’কে কল দিতাম না। কিন্তু, যেহেতু আপনি ইচ্ছে করে আমার কলটা রিসিভ করছিলেন না, তাই আমি বাধ্য হয়ে মা’কে কল দিয়েছি।’

‘হ্যাঁ, ভালো করেছি। আমি আপনার কল রিসিভ করব না। আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।’

‘না থাকলেও কথা বলতে হবে। কারণ, স্বামীকে সময় দেওয়া স্ত্রীর দায়িত্ব। আর আপনাকেও সেই দায়িত্ব মেনেই চলতে হবে।’

‘ওহহ তাইই? এটা বুঝি কোনো সংবিধানে লেখা আছে? যদি থেকে থাকে তাহলে আমাকে দেখান, আমিও তখন আপনার এই কথা মেনে নিব।’

‘এটা রাবীর খানের সংবিধানে লেখা। আর এই সংবিধানের নিয়ম কখনোই কেউ পাল্টাতে পারবে না।’

মেহুল বড়ো করে হাই তুলে। বলে,

‘শুনুন মি. , আপনার এসব নিয়ম কানুন নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই। আপনার নিয়ম কানুন আপনিই মানুন। আমি কারোর নিয়ম কানুন মানতে পারব না।’

রাবীর হাসে। বলে,

‘মানবেন মানবেন। যখন চারদিক থেকে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে, তখন আমার নিয়ম কানুন মানা ছাড়া আপনার আর কোনো উপায় থাকবে না।’

মেহুল ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘ভয় দেখাচ্ছেন?’

রাবীর স্মিত হাসে। বলে,

‘কেন, ভয় পাচ্ছেন?’

মেহুল কর্কশ স্বরে বলে,

‘একদমই না।’

‘হু, আমিও তাই চাই। রাবীর খানের ওয়াইফ, মিসেস মেহুল খান যেন কোনো কিছুতে ভয় না পায়। সে যেন তার মতোই সবকিছুতে অকুতোভয় হয়।’

‘হয়েছে আপনার বলা? এবার ফোন রাখুন।’

‘কালকে আপনার ক্লাস আছে?’

‘জি, আছে।’

‘সকাল ঠিক নয়টায় বাসার নিচে গাড়ি এসে অপেক্ষা করবে।’

‘গাড়ি? গাড়ি কিসের জন্য?’

‘আপনার যাতায়াতের জন্য একটা গাড়ি সবসময় এখানে থাকবে।’

মেহুল চেতে যায় কথাটা শুনে। চট করে উঠে দাঁড়ায়। নাকের পাল্লা ফুলিয়ে বলে,

‘একদম না। আমি আপনার গাড়িতে যাতায়াত করব না। আমি রিক্সায় আসা যাওয়া করব। দয়া করে এমন কিছু করবেন না।’

‘ঠিক আছে, গাড়ি ঠিক সময় পৌঁছে যাবে। আমার বিশ্বস্ত ড্রাইভার থাকবে। তাও আপনার কোনো অসুবিধা হলে পরদিন থেকে না হয় আমি নিজেই আপনাকে ড্রাইভ করে দিয়ে আসব। রাখছি তাহলে, ভালো থাকবেন।’

রাবীর কল কেটে দেয়। মেহুল ফোনটা হাতে নিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে আছে। তার কথার কোনো মূল্যই নেই? ঐ লোকটা যা বলবে তাই হবে? কেন, কেন হবে? উনি কী ভাবেন নিজেকে? নেতা হয়েছেন বলে কি সব জায়গায় নেতাগিরি করবেন? না, মোটেও মেহুল তা হতে দেবে না। মেহুল নিজের মর্জির মালিক। সে তার নিজের ইচ্ছে মতো চলবে। কারোর চাপিয়ে দেওয়া কোনোকিছু সে সহ্য করবে না, কোনোকিছু না।

_____

পরদিন সকালে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিচে নামতেই মেহুল দেখল, তাদের বাড়ির গেইটের সামনে একটা গাড়ি দাঁড়ানো। মেহুলের কপালে চওড়া ভাঁজ পড়ল তখন। সে মুখ কালো করে গাড়িটার দিকে এগিয়ে যেতেই গাড়ির ভেতর থেকে হর্নের শব্দ এল। মেহুল গাড়ির জানলায় নক করে মাথা নুইয়ে বলল,

‘শুনুন, আপনার নেতা সাহেবকে গিয়ে বলে দিন, আমি উনার গাড়ি দিয়ে কোথাও যাব না।’

তার কথাটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ির জানলাটা নেমে গেল। গাড়ির ভেতরের মানুষটাকে দেখে মেহুল চকিত হয়। বিরক্ত হয়ে বলে,

‘আপনি?’

রাবীর মৃদু হেসে বলল,

‘আপনার নেতা সাহেবের ড্রাইভার আজকে একটু বিজি, তাই নেতা সাহেব নিজেই এখানে চলে এসেছেন; তার ওয়াইফকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এবার গাড়িতে উঠে পড়ুন।’

মেহুল চোখ মুখ কুঁচকে কতক্ষণ চেয়ে থেকে গাড়ির পেছনের সিটে গিয়ে বসে। রাবীর সামনের লুকিং গ্লাস দিয়ে মেহুলের দিকে চাইলে সে ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়ে অন্যদিকে মুখ করে থাকে। রাবীর আর কিছু বলে না। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।

_____

ভার্সিটির কাছে পৌঁছাতেই মেহুল বলল,

‘এখানেই থামুন। আর ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই।’

রাবীর বলল,

‘গাড়ি আপনার ডিপার্টমেন্ট অবধি যাবে।’

মেহুল বিচলিত হয়ে বলে,

‘না, একদম না। গাড়ি এখানেই রাখুন। অত ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই।’

রাবীর তার কথা কানে নিয়েও নেয়না। সে তার মতো গাড়ি চালিয়েই যাচ্ছে। অন্যদিকে মেহুল হাঁসফাঁস করছে। ওর ডিপার্টমেন্ট অবধি গাড়ি গেলে সবাই হৈ চৈ শুরু করবে। এই লোকটাকে সবাই চিনে। ওর বন্ধুরা, বাকি ক্লাসমেটরা মজা করবে। সে এটা একদমই চায় না। মেহুল চেঁচিয়ে বলল,

‘আপনি আমার কথা শুনছেন না কেন? গাড়ি থামান। আর ভেতরে যেতে হবে না।’

মেহুলকে পাত্তা না দিয়ে গাড়ি গিয়ে তার ডিপার্টমেন্টের সামনেই থামল। রাবীর গাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই মেহুল দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে দ্রুত পায়ে হাঁটা ধরতেই রাবীর তাকে পেছন থেকে ডেকে উঠে,

‘মেহুল, দাঁড়ান।’

মেহুল জোরে নিশ্বাস ফেলে। পেছন ফিরে তাকায়। ইতিমধ্যেই আশে পাশের অনেকেই গুণগুণ শুরু করে দিয়েছে। মেয়েরা কপাল কুঁচকে একবার মেহুলকে দেখছে তো একবার রাবীরকে। সেদিন প্রোগ্রামে রাবীরকে দেখে মেয়েদের ঢং এর শেষ ছিল না। আজ তাকে ভার্সিটির একটা মেয়ের সাথে দেখে সবাই নিশ্চয়ই খুব অবাক হচ্ছে।

রাবীর মেহুলের দিকে এগিয়ে যায়। বলে,

‘ক্লাস কয়টায় শেষ হবে?’

‘দুইটায়।’

‘আচ্ছা, তখন হয়তো আমি আসতে পারব না। তবে আমার ড্রাইভার চলে আসবেন। গেইটের বাইরেই গাড়ি থাকবে। সাবধানে চলে যাবেন। এখন আসছি।’

রাবীর গাড়ির কাছে যেতেই একজন লোক এসে বলল,

‘আরে, রাবীর সাহেব না? আপনি এখানে?’

মেহুল তার স্যারকে দেখে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।

রাবীর হেসে বলল,

‘হ্যাঁ, আসলে আমার ওয়াইফ কে নামিয়ে দিতে এসেছিলাম।’

স্যার হেসে বললেন,

‘আপনার ওয়াইফ আমাদের ভার্সিটিতেই পড়েন! কোন ডিপার্টমেন্ট?’

‘কেমিস্ট্রি।’

‘তাই? নাম কী? আমিও তো এই ডিপার্টমেন্টের হেড।’

‘উনার নাম রুবাইয়াত মেহুল।’

স্যার খানিক অবাক হয়ে বলে,

‘আচ্ছা, আপনি মেহুলের হাজবেন্ড! ও তো আমাদের ডিপার্টমেন্টে গায়িকা হিসেবে পরিচিত। খুব ভালো গান করে। পড়াশোনায়ও বেশ ভালো। কিন্তু, আপনাদের বিয়ে হলো কবে?’

‘কালকেই।’

‘ওহহো, নিউলি ম্যারিড। কনগ্রেচুলেশন।’

‘থ্যাংক ইউ।’

তারপর স্যারের সাথে আর কিছুক্ষণ প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলে রাবীর বেরিয়ে যায়।

_____

মেহুল ক্লাসে গিয়ে চুপ হয়ে বসে আছে। ক্লাসের সবাই ইতিমধ্যেই তার বিয়ের ব্যাপারে অবগত। সবাই কানাঘুষা করছে। কেউ কেউ বেশ আফসোসের সুরে বলছে, ‘ইশ, মেহুলের কী ভাগ্য! কী সুন্দর একটা হাজবেন্ড পেয়েছে।’
মেহুলের কানে কথাগুলো পৌঁছালেও সে কিছু বলছে না। কিছুক্ষণ বাদে তার বেস্ট ফ্রেন্ড রিতা ক্লাসে আসে। সে এসে মেহুলের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,

‘কিরে, ভাইয়া এসে তোকে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন?’

মেহুল চোয়াল শক্ত করে তার দিকে চাইল। বলল,

‘হ্যাঁ।’

‘জানিস, তোদের দেখে সবাই একদম সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছে। নিচে তো এসব নিয়েই আলোচনা চলছে।’

‘হু, আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। তাই ঐ লোকটাকে বলেছি, এত ভেতরে আসার দরকার নেই। কিন্তু, ঐ অসভ্য লোক আমার কথা পাত্তাই দেননি। লোকটাকে ইচ্ছে করছে আমার…’

‘আরে বাবা, তুই রাগছিস কেন? তোর তো আরো খুশি হওয়ার কথা। তুই তো ভাইয়ার দৌলতে একদিনেই সেলিব্রেটি হয়ে গেছিস।’

‘না, আমি সেলিব্রেটি হতে চাই না। আমি যেমন আছি তেমনই খুশি।’

রিতা হেসে বলে,

‘না চাইলেও এখন তোকে অনেক কিছুই হতে হবে। আফটার অল, নেতার বউ বলে কথা। একটু ভাব তো নিতেই হবে, তাই না।’

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here