#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_০৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
স্রুতি অন্য দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে স্মৃতিকে নিয়ে উপরের দিকে যাচ্ছিল। তখনই অভ্র স্মৃতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–তোমার বোনের কি হয়েছে? এভাবে আহত হলো কিভাবে? অভ্রের কথায় বিরক্ত হলো স্রুতি। বিরক্তি মাখা মুখ করে গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিল,
–কলেজ থেকে ফেরার সময় এক্সিডেন্ট করেছে। কথা গুলো বলেই ওপরের দিকে যাবে। তখনই অভ্রের বাবা আসে। অভ্রের বাবা স্রুতিকে দেখে, আহত দৃষ্টিতে স্রুতির দিকে দৃষ্টিপাত করে রেখেছে। স্রুতির কাছে এসে, নরম কণ্ঠে বলে উঠলো,
–আমার জানা মতে তুমি এই বিয়েতে অনেক খুশি ছিলে? হঠাৎ কি এমন হলো? যে তুমি এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে? আমাদের থেকে কোন ভুল হয়েছে মা? আমাদের কোনো কিছু তোমার খারাপ লাগলে বলো। আমরা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো। রহমান শেখের কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল স্রুতি। নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে, কঠিন গলায় বলল,
–সেটা আপনি আপনার ছেলেকে জিগ্যেস করুন আংকেল। কেনো আমি বিয়েটা ভেঙে দিতে বলেছি? আপনার ছেলে অভ্র এখনো তার প্রাক্তনকে ভালোবাসে। তার প্রাক্তনের জন্য তার ভালোবাসা এতটুকুও কমে নাই। সে আমাকে আপনাদের কথা ভেবে বিয়ে করবে। সে আমাকে ভালোবাসতে পারবে না। বিয়ের পরে শুধু স্বামীর দায়িত্ব পালন করবে। এখন আপনিই বলুন আমি জেনেশুনে এমন একটা ছেলেকে কিভাবে বিয়ে করি? আমার জায়গায় আপনার মেয়ে থাকলে, আপনি কি বলতেন এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করতে? স্মৃতির কথায় স্তব্ধ হয়ে গেল রহমান শেখ। সে এমন কিছুই ধারণা করেছিল। অভ্রের দিকে রক্তিম চোখে তাকালো রহমান শেখ। ছেলেকে এখনই মাটিতে পুঁ*তে* ফেলতে ইচ্ছে করছে। এতটুকু কথা আড়াল রাখা যেত না। রহমান শেখ অভ্রের জন্য শ্রুতির চোখে একরাশ ভালোবাসা দেখেছে। সেই মেয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। এটা মানতেই কষ্ট হচ্ছিল। স্রুতি কোনো কথা না বলে, স্মৃতিকে নিয়ে বাসায় চলে গেল। স্রুতিরা চলে যেতেই রহমান শেখ গর্জন করে উঠলো,
–বাহ আমাদের ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলে? আমি দিন দিন তোমার আচরণে অবাক হয়ে যাচ্ছি। তোমার কাছে তোমার ভালো থাকাটাই সব? বাবা-মায়ের ইচ্ছের কোনো মূল্য তোমার কাছে নেই। তুমি তোমার জেদ নিয়ে পড়ে আছ। যে তোমাকে কখনো ভালোই বাসেনি। তুমি তার জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছো। আসলে তুমি ইচ্ছে করেই নিজের জীবন শেষ করছো। তুমি যদি মায়রাকে এতই ভালোবাসতে তাহলে, মায়রা অন্য কারো সাথে সংসার করছে। এটা তুমি নিশ্চিন্তে বসে বসে দেখতে পারতে না। তোমার ভেতরে কোনো খারাপ লাগা কাজ করছে না। ভালোবাসা না পাওয়ার আগুনে তুমি দগ্ধ হয়ে যাচ্ছো না। একটা কথা ভেবে দেখো? তুমি সত্যিই কি মায়রাকে ভালোবাসো নাকি তোমার জেদ টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের কষ্ট দিচ্ছো। মায়রা তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। তোমার মতো ছেলেকে নাকি কেউ বিয়ে করবে না। তুমি নাকি প্রেমিক হওয়ার যোগ্যতা রাখো। স্বামী হবার কোনো যোগ্যতা তোমার নেই। এখন দেখছি। মায়রা সত্যি কথা বলেছে। আমার কথা বিশ্বাস করবে না। তোমার ফোনে ভিডিও দিচ্ছি। দেখো তোমাকে নিয়ে মায়রা ও তার বান্ধবীরা কি হাসি-তামাশা করছে। আসলেই তুমি একটা জোকার। তুমি কোনো কিছু হবার যোগ্য হয়ে উঠতে পারোনি। আমার আরাভ তোমার থেকে শতগুণে ভালো। যেদিন স্রুতিকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারবে। সেদিন আমার সামনে এসে দাঁড়াবে। এর আগে তোমার মুখ যেন আমাকে দেখতে না হয়। কথা গুলো বলেই দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করল।
অজানা কারণে অভ্রের বুকটা হাহাকারে ভরে গেল। সত্যি কি এটা তার জেদ ভালোবাসা নয়। তবে কি তার জেদের জন্য তার বাবা-মা এত কষ্ট পাচ্ছে? এখন সে কি করবে। ফোনের ভিডিও দেখে অভ্র আরেক দফা অবাক হলো৷ মায়রা তাকে নিয়ে এত হাসি-তামাশা করছে। তার বিশ্বাস ছিল। মায়রা তাকে ভালোবাসে না। কিন্তু সন্মান করে। আজকে নিজের চক্ষুদ্বয় জোড়াকে বিশ্বাস করতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। একটা মানুষ এতটা স্বার্থপর হতে পারে কি করে? সে যদি আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারে। তাহলে আমিও একটা সুন্দর জীবন ডিজার্ভ করি। তবে কি আব্বুর কথাই সত্যি। আজকে আমি অভ্র কথা দিলাম। আমারও একটা সুন্দর সংসার হবে। আমার কখনো ভালোবাসার অভাব হবে না। একদিন আমার ভালোবাসা দেখে তুমিও আফসোস করবে মায়রা। সেদিন আমিও হাসবো। আর যে আমার ভালোবাসা পাবার অধিকার রাখে। তাকেই আমি ভালোবাসবো। নিজেকে প্রচুর পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু আমাকে সাহায্য করবে কে? আজকে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে অভ্ররে। আর ভাবতে পারলো না৷ আবার বাসার মধ্যে চলে গেল।
বাসার মধ্যে প্রবেশ করতেই বাসার সবার মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হলো। ভয়ার্ত মুখশ্রী করে স্মৃতির দিকে এগিয়ে আসছে। সবাই স্মৃতিকে ঘিরে ধরেছে। স্মৃতির মস্তিষ্কের ব্যথাটা ভিষণ করে জানান দিচ্ছে। স্মৃতি সবাইকে সবকিছু বলে নিজের কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো। নিজের কক্ষে প্রবেশ করে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসে পড়লো। বিছানায় অযত্নে পড়ে থাকা মুঠোফোনটা হাতে তুলে নিল। ব্যাগ থেকে শিউলি আন্টির নাম্বার বের করে ফোন দিল। বাসায় আসার সময় স্মৃতি শিউলি আন্টির নাম্বার চেয়ে নিয়েছিল। স্মৃতির ভাবনার মাঝে ওপার থেকে শিউলি আন্টির কণ্ঠ স্বর ভেসে এলো। স্মৃতি সালাম দিয়ে বলল,
–আন্টি বাসায় চলে এসেছি। এখন একটু ভালো লাগছে। আমার পেছনে আরাভ স্যার মোট কত টাকা খরচ করেছেন? এটা আমাকে বললে, আমার অনেক উপকার হত। স্মৃতির কথায় শিউলি আন্টি কোনো ভনিতা করল না। সোজাসাপটা উত্তর দিল,
–আমরা তোমার তিনটা টেস্ট করিয়েছি। আর এক মাসের ঔষধ দিয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে চার হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তোমার রিপোর্ট গুলো কালকে পেয়ে যাবে।
–ধন্যবাদ আন্টি। অনেক উপকার করলেন। এখন থেকে কোনো সমস্যা হলে, আপনার কাছে চলে যাব। স্মৃতির কথায় শিউলি আন্টি হালকা হাসলো। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিল। স্মৃতি ফোনটা রেখে ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিদ্রা দেশে পাড়ি জমালো।
এর মাঝে কেটে গেল চারটি দিন। স্মৃতি এখন মোটামুটি সুস্থ হয়েছে। কাল থেকে কলেজ যাবে। আজকে শুক্রবার তাই বাসায় রয়েছে। স্মৃতির হঠাৎ করে মনে হলো আরাভের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। বই রেখে নিচে আসলো। স্মৃতিকে দেখে স্মৃতির আম্মু মুনিয়া বেগম বলল,
–তোর কিছু লাগবে? নিচে আসতে গেলি কেনো? আমাকে ডাক দিতে পারতি? আমি তোর রুমে যেতাম। মায়ের কথায় সহজ সরল উত্তর দিল স্মৃতি,
–আম্মু আরাভ স্যারদের বাসায় যাচ্ছি। স্যার আমার জন্য চার হাজার টাকা খরচ করেছে। সেগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে না। সেগুলোই দিতে যাচ্ছি। এতদিন অসুস্থ ছিলাম। তাই যেতে পারিনি। স্মৃতির কথা শুনে বিস্ময় নয়নে মুনিয়া বেগম স্মৃতির দিকে তাকিয়ে আছে। আশ্চর্য কন্ঠে বলে উঠলো,
–অভ্রের ভাই আরাভের কথা বলছো?
–জি আম্মু। উনি আমাদের কলেজে স্যার।
–আরাভ যে তোমাদের কলেজে স্যার! এই কথা আগে জানাওনি যে?
–আগে কিভাবে জানাবো আম্মু? স্যার তো সপ্তাহ খানিক হলো আমাদের কলেজে জয়েন করেছে। স্মৃতির কথা শুনে মুনিয়া বেগমের মুখে আঁধার ঘনিয়ে এলো। মুখটা গম্ভীর করে বলল,
–তাড়াতাড়ি যাও। বেশি সময় ওদের বাসায় থাকবে না। টাকা দিয়ে চলে আসবে। কথা গুলো বলেই নিজ কাজে মনযোগ দিলেন। স্মৃতি এক মুহুর্ত বিলম্ব করল না দ্রুত পায়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।
দরজায় কলিং বেল বেজে উঠতেই আরাভের বোন আকাশী এসে দরজা খুলে দিল। স্মৃতিকে দেখে হাসোজ্জল মুখ করে বলল,
–তুমি ভেতরে এসো। স্মৃতি ভদ্রতা বজায় রেখে বাসার মধ্যে প্রবেশ করল। সবার সামনে কুশল বিনিময় করে, আরাভের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। আরাভ বিছানায় বসে বই পড়ছিল। এমন সময় স্মৃতি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
–স্যার আসবো? অসময়ে স্মৃতিকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল আরাভ। পড়নে তার হাফপ্যান্ট আর কালো রঙের টি-শার্ট। চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল,
–এসো। অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথে স্মৃতি বিলম্ব করল না। ধীর পায়ে আরাভের সামনে গেল। হাতের টাকাটা আরাভের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
–স্যার আপনার টাকাটা। আমি আগেই দিয়ে দিতাম। অসুস্থ ছিলাম। তাই আসতে পারি নাই। আপনি কিছু মনে করবেন না। স্মৃতির কথায় আরাভ চোয়াল শক্ত করে স্মৃতির দিকে দৃষ্টিপাত করল। চোখে মুখে গম্ভীর্য ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল,
–বিছানায় রেখে যাও। কথা টা বলেই ওয়াশরুমে চলে গেল। স্মৃতি ভ্রু কুঁচকে আরাভের দিকে নজর দিল। মনে মনে প্রচুর বিরক্ত হলো সে। কি কিপ্টা স্যার রে বাবা। ভদ্রতার খাতিরে একটা বার বললও না। দেওয়া লাগবে না থাক। স্যার হয়ে ছাত্রীর জন্য এতটুকু টাকা খরচ করাতে পারি। সেজন্য টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। উনি বললেই কি আমি উনার টাকা নিয়ে নিতাম। কিছুক্ষণ একা একা শব্দ ব্যয় করে বাসায় চলে গেল স্মৃতি।
চলবে…..