স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_০৫

0
564

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_০৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

হসপিটালের মালিকের সামনে বসে আছে আরাভ। গম্ভীর মুখ করে রাশেদ খানের দিকে দৃষ্টিপাত করে রেখেছে। আরাভকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, রাশেদ খান হাসোজ্জল মুখ করে বলল,

–কোনো সমস্যা হয়েছে আরাভ? তুমি এখানে রাগান্বিত হয়ে বসে আছো কেনো? কোনো সমস্যা হলে, তুমি আমাকে জানাতে পারো। আমি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবো। রাশেদ খানের কথা শুনে, আরাভ রাগান্বিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

–আপনাদের এখানে মানুষকে কেনো নিয়ে আসা হয়?

–মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়। হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছো কেনো? আমাদের কোনো নার্স বা ডক্টর তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে?

–আপনাদের এখানের ডক্টর দায়িত্ব জ্ঞানহীন। তারা রোগী দেখার দিকে এখনো সর্তক নন৷ একজন রোগীর কেবিন থেকে বেড়িয়ে, হাত পরিষ্কার না করে আরেকজন রোগীকে কিভাবে স্পর্শ করতে পারে? আপনাদের এখানের ডক্টরকে সে কথা বলায়। তিনি বলেছেন। নিজের চিকিৎসা নিজেকে করতে। নিজের চিকিৎসা যদি নিজেকে করতে হয়। তাহলে উনাকে আপনার হসপিটালে কেনো রাখছেন? এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন ডক্টর হসপিটালে না রাখাই ভালো। উনার খাম খেয়ালির জন্য যদি কোনো রোগী বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাহলে তার দায় ভার কি তিনি নিবেন? আরাভের কথা শুনে রাশেদ খানে মুখটা কঠিন হয়ে এলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–কোন ডক্টর তোমার সাথে এমন বাজে ব্যবহার করেছে? আরাভ বিলম্ব করল না। দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। রাশেদ খানকে নিজের সাথে আসতে বলে, রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। জরুরি বিভাগের সামনে এসে দেখলো। নার্স শিউলি স্মৃতির মাথায় আর হাতে সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। হালকা ক্ষত স্থান গুলোতে সুন্দর ভাবে পরিষ্কার করে দিয়েছে। আরাভ নার্স শিউলির কাছে গিয়ে নরম কণ্ঠে বলল,

–ধন্যবাদ আন্টি। এত সুন্দর করে যত্ন সহকারে ওর সেবা দেওয়ার জন্য। শিউলি আরাভের কথায় হাসলো। হাতের ছোট্ট কাঁচিটা পকেটে রাখতে রাখতে বলল,

–মেয়েটা তোমার কে হয়?

–আমার ছাত্রী আন্টি। শিউলির কথা শেষ হবার সাথে সাথে ডক্টর নার্গিস বলে উঠলো,

–কেমন ছাত্রী সেটা দেখতেই পাচ্ছি। একজন টিচার হয়ে, একজন ছাত্রীর জন্য এত উতলা হওয়ার কি আছে? এটাই আমি বুঝতে পারলাম না। কথা গুলো আরাভের কর্ণকুহরে আসতেই আরাভের দৃষ্টি গিয়ে পড়লো ডক্টরের ওপরে, আরাভের চক্ষুদ্বয় জোড়া মুহুর্তের মধ্যে অস্বাভাবিক ভাবে রক্তিম বর্ন ধারন করেছে। আরাভ কিছুটা চেচিয়ে বলল,

–আপনাকে মানুষের সেবা করার জন্য মাসে মাসে বেতন দিয়ে রাখা হয়। কার সাথে কিসের সম্পর্ক এটা দেখার জন্য রাখা হয় নাই। মেয়েটার সাথে আমার কিসের সম্পর্ক সেটা জেনে আপনার কোনো কাজ নেই। আপনি আমার কথা বিশ্বাস করলেই কি আর না করলেই কি? তাতে আমার কোনো যায় আসে না। আরাভ কারো ভাবনার ধার ধারেন না। রাশেদ আংকেল এমন একজন ডক্টরকে হসপিটালে না রাখাই ভালো। আপনার হসপিটাল দু’দিনে রসাতলে ডুবে যাবে। শিউলি আন্টি কষ্ট করে স্মৃতিকে ধরে বাহির পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবেন? কথা গুলো বলেই হসপিটালের বাহিরে চলে আসলো। শিউলি স্মৃতিকে নিয়ে ধীর পায়ে বাহিরে আসছে। জরুরি বিভাগ ফাঁকা হতেই রাশেদ খান বোনকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–তোমাকে কতবার বলেছি। তুমি ক্ষমতার অপর ব্যবহার করবে না। তুমি আমার বোন হয়েছো বলে, তোমার সবকিছু আমি মেনে নিব। টাকা দিয়ে সবকিছু কেনা গেলেও মেধা কখনো কেনা যায় না। তোমার নামে যদি আর একটা অভিযোগ এসেছে। তাহলে তোমাকে আমি কানাডা পাঠিয়ে দিব। কথা গুলো বলেই রাগান্বিত হয়ে রাশেদ খান কক্ষ ত্যাগ করল।

–ডক্টর নার্গিস রাশেদ খানের বোন। তাই সব সময় ক্ষমতার অপর ব্যবহার করে। এতে রাশেদ খান বেশ নারাজ। বেশ কয়েক বার তার নামে অভিযোগ এসেছে। তবুও তিনি নিজের ভুলো শুধরে নেন না। রাশেদ খান তাকে বলেছিল। আর তিনটা অভিযোগ আসলে তাকে কানাডা পাঠিয়ে দিবে। তার মধ্যে দু’টো অভিযোগ পড়ে গিয়েছে। আর একটা অভিযোগ আসলেই হসপিটাল থেকে আপদ বিদায় হবে৷ শিউলির কথায় বিরক্ত হলো আরাভ। মুখে কিছু বলল না। শিউলির থেকে বিদায় নিয়ে, বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিল। স্মৃতিকে রিক্সায় তুলে দিয়ে, সে বাইক নিয়ে আস্তে আস্তে রিক্সার পেছনে পেছনে আসছে।

পনেরো মিনিট পরে দু’জন বাসার সামনে এসে নামলো। স্রুতি আইসক্রিম কেনার জন্য নিচে এসেছিল। প্রচন্ড গরম পড়েছে। ক্লান্ত দুপুরে মনটা আইসক্রিম খাওয়ার অনুভূতি জানান দিল। সে নিজেকে দমিয়ে রাখতে চায় না৷ পরাজিত হয়ে বদ্ধ ঘরে মুখ লুকাতে চায় না। মুক্ত পাখির মতো আকাশের নিচে ঘুরে বেড়াতে চায়। প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিতে চায়। নিজের ইচ্ছে গুলো পূরন করতে চায়। হালকা আনন্দের মাঝে নিজের প্রান প্রিয় বোনের অবস্থা দেখে, মুহুর্তের মধ্যে মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ছুটে গেল বোনের কাছে। স্রুতিকে দেখে আরাভ আর দাঁড়ালো না। সোজা ভেতরে চলে গেল। স্রুতি আস্তে করে স্মৃতিকে ধরে নামালো। স্মৃতি একবার আরাভের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মানুষটা এমন কেনো? সব সময় গম্ভীর মুখ করে রাখে। একটু হাসতে পারে না। মানুষের সাথে ভালো করে দু’টো কথা বলতে পারে না। আমাকে সাহায্য করল। অথচ আমার সাথে একটা কথাটাও বলল না। প্রচুর বিরক্ত হলো স্মৃতি। সমস্ত মুখশ্রী কুঁচকে রেখেছে।

–প্যাঁচার মত মুখ করে রেখেছিস কেনো? তোর এই অবস্থা হলো কি করে? অনেক আঘাত পেয়েছিস। আব্বু দেখলে চিন্তা করতে করতে শেষ হয়ে যাবে। স্রুতির কথায় হুস আসলো স্মৃতির। বোনের দিকে তাকিয়ে, কাতর স্বরে বলল,

–আর বলো না আপু। বাসায় আসার সময় অর্ধেক রাস্তায় এসে গাড়িটা খারাপ হয়ে যায়। পরে ঐ গাড়িওলা আমাকে অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য, আরেকটা গাড়িওলাকে দাঁড় করায়। আমি রাস্তা পার হতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় একটা বাইক এসে আমাকে রাস্তার মাঝখানে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। ভাগ্য ভালো ছিল। তাই অল্পের ওপর দিয়ে বেঁচে গিয়েছি। রৌদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে, তাড়াতাড়ি বাসার মধ্যে যেতে চাই। স্মৃতির কথা শুনে, স্রুতি এক মুহুর্ত দেরি করল না। বোনকে নিয়ে বাসার দিকে অগ্রসর হলো। সিঁড়ির কাছে আসতেই অভ্রের সাথে দেখা।

চলবে…..

(আন্তরিক ভাবে দুঃখিত আজকেও বড় করে দিতে পারলাম না। গল্পটা এলোমেলো করতে চাই না। তাই অল্প করেই দিচ্ছি। ২১ তারিখ থেকে আমার পরীক্ষা।
আশা করছি সবাই বুঝবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here