স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_০৪

0
556

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_০৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

মুহুর্তের মধ্যে পরিবেশ শীতল হয়ে উঠলো। এ যেন ঝড় আসার পূর্বাভাস। রহমান শেখ রক্তিম চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র বাবার দৃষ্টি উপেক্ষা করতে না পেরে, দৃষ্টি নত করে নিল। স্রুতির বাবার একটি বাক্য সবার মুখের কথা কেঁড়ে নিয়েছে। রহমান শেখ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

–আপনাদের মেয়ে আপনারা না দিলে, আমাদের করার কিছু নেই। বিয়েটা না হলে, আমাদের অনেক অসন্মানিত হতে হবে। আমাদের আত্মীয়-স্বজন সবাই জানে, আপনার মেয়ের সাথে আমার অভ্রের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। ওদের সামনে কিভাবে মুখ দেখাবো। চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি। তবে ব্যাপার না। আপনার মেয়ে যদি আমার ছেলেকে বিয়ে করতে না চায়। তবে আমরা জোর করে আপনার মেয়েকে, আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে পারি না। আবিদ রহমান হতাশার সুরে বলল,

–আমাদের জন্য আপনাদের অনেক সন্মান নষ্ট হবে। তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। মেয়ের বিয়ে ঠিক করার আগে, আগে মেয়ের মতামত নেওয়া উচিৎ ছিল। সব থেকে বড় ভুল হচ্ছে মেয়ের মতামত না নেওয়া।

–আপনি কষ্ট পাবেন না। আপনারা আমাদের সাথে আগের মতো ভালো সম্পর্ক রাখবেন। এতেই আমাদের শান্তি। বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে বলে, আমরা আপনাদের শত্রু ভাববো। এমনটা ভাবার দরকার নেই। আবিদ রহমান কোনো কথা বলতে পারলো না। মাথা নত করে তাদের বাসা থেকে বের হয়ে আসলো। বাসায় এসে কারো সাথে কথা বলেনি। বাসায় যখন থেকে এসেছেন। কক্ষে দরজা বন্ধ করে বসে আছেন। বাসার সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে। স্রুতির ভেতরে ভেতরে অপরাধ বোধ কাজ করছে। আবেগের বসে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ হয় নাই। সে কিভাবে পারলো স্বার্থপরের মতো নিজের কথা ভাবতে? মানুষের জীবনে কত বাজে অতীত থাকে। সে তো একজনকে ভালোবেসে ছিল। আর ভালোবাসা তো কোনো অন্যায় নয়। তবে তার সত্যি আমাকে কেনো জানালো। সেটা আড়ালে থাকতো। অজানা এক অতীত গোপন রেখে নতুন জীবন শুরু করা যেত না। কোন মেয়ে চায় যে, তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে রেখে অন্য কাউকে ভালোবাসে। কিন্তু বাবার সন্মানের কথা মনে হতেই, বুকটা কেঁপে উঠলো। রাস্তায় বের হলে, লোকে কত কথা শোনাবে। বাবা আমার এক কথায় বিয়ে ভেঙে দিল। আমার বাবার জন্য কিছু করা উচিৎ। আমি কি করলে বাবা একটু শান্তি পাবে। স্রুতি আর ভাবতে পারলো না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করে রাখলো।

পরের দিন দুপুর বেলা রাস্তার এক কোণায় অত্যধিক মানুষের কোলাহল শোনা যাচ্ছে। কয়েকজন মানুষ গোল হয়ে ঘিরে রয়েছে। এমন সময় থেমে যায় আরাভের বাইক। সে বাইক থেকে নেমে দেখে একটি মেয়ে রাস্তার মাঝখানে বসে আছে। বাম হাত আর ললাট বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। কেউ সাহায্য করা তো দূর। সবাই মিলে ভিডিও করছে। ছবি তুলছে। দুই একজন সাহায্য করতে আসার নাম দিয়ে, মেয়েটিকে বাজে ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। মেয়েটি এতে বেশ বিরক্ত। কেউ সাহায্য করতে আসতে চাইলেও সাহায্য নিচ্ছে না। সবাই সরে যেতে বলছে, কেউ সরছে না। মৌমাছির চাকের মতো ঘিরে ধরে রেখেছে। এত ভিড়ের মাঝে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। মেয়েটির মুখ সামনের দিকে আসতেই আরাভের মুখ রক্তিম বর্ন ধারণ করল। নিজের সর্বস্ব দিয়ে গর্জন করে উঠলো। মুহূর্তের মধ্যে পরিবেশ শীতল হয়ে গেল। কোলাহলের রেশ কমে গিয়ে, চারিদিকে নিরবতা ঘিরে ধরলো। আরাভ গম্ভীর মুখ করে স্মৃতির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রাগান্বিত হয়ে সবাইকে সরে যেতে বলল। আরাভের ক্রোধের কাছে দমে গেল সবাই। নিঃশব্দে স্থান ফাঁকা করে দিল। আরাভ স্মৃতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–উঠে দাঁড়াও মেয়ে। তোমাকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে। আরাভের আসায় স্মৃতি কিছুটা স্বস্তি পেল। কাতর শরীরে উঠে দাঁড়ালো। আরাভ স্মৃতির পিছু পিছু যাচ্ছে। স্মৃতি ধীর গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আরাভ একটা রিক্সা ডেকে স্মৃতিকে তুলে দিল। রিক্সাওয়ালা আগে আগে যাচ্ছে। আরাভ রিক্সার পেছনে পেছনে বাইক নিয়ে আসছে।

কাউকে না ছুঁইয়েও কাউকে সাহায্য করা যায়। এটা স্মৃতির জানা ছিল না। আজকাল কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে, মানুষ ভিডিও করায় ব্যস্ত থাকে। সেখানে একটা মানুষকে না ছুঁয়ে, সবাইকে সরিয়ে এত সুন্দর ভাবে সাহায্য করা যায়। এটা আরাভ স্যারকে না দেখলে মানুষের প্রতি চিন্তা ধারা বদলাতই না। হাতে প্রচন্ড জ্বালা পোড়া করছে। মাথার ব্যথাটা প্রচন্ড বেড়েছে। পুরো শরীরে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। সময়ের সাথে রোদের প্রখরতা বেড়েই চলেছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে স্মৃতি আর আরাভ হসপিটালের সামনে পৌঁছে গেল। আরাভ স্মৃতিকে নিয়ে হসপিটালের মধ্যে প্রবেশ করল। স্মৃতিকে জরুরী বিভাগে বসিয়ে আরাভ ডক্টরকে ডাকতে গেল। একটু পরে একজন মহিলা ডক্টর আসলো। হাত পরিষ্কার না করেই স্মৃতিকে স্পর্শ করতে যাবে। তখনই আরাভের গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো,

–আপনি একজন ডক্টর হয়ে, এমন খাম খেয়ালি ভাবে কাজ করছেন। এটা আমার পছন্দ হলো না। এভাবে আপনি সব রোগী দেখেন। আপনাকে আমি একটা রোগীর কেবিন থেকে নিয়ে আসলাম। আপনি হাত পরিষ্কার না করেই, অন্য এক রোগীকে কিভাবে স্পর্শ করতে পারেন? এভাবেই হসপিটালের সব রোগীকে দেখা হয়। এই হসপিটালের মালিক কে?

–আপনি এমন ভাব করছেন ডক্টর আমি না আপনি! আমি কিভাবে কাজ করবো না করবো। সেটা এখন আপনার থেকে শিখতে হবে। এতই যখন জানেন তাহলে আপনি নিজেই তার চিকিৎসা করতে পারতেন।

–নিজেদের চিকিৎসা যদি নিজেদের করতে হয়। তাহলে হাজার হাজার টাকা দিয়ে আপনাদের কাছে আসতে হয় না। নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে যদি চিকিৎসা করতে না পারেন। তাহলে আপনাকে ডক্টর হতে কে বলেছে। আমরা যদি নিজের চিকিৎসা নিজেই করি। তাহলে আপনাদের দরকার নেই। সুন্দর ভাবে চিকিৎসা দিতে না পারলে, ডক্টরই করা ছেড়ে দিন।

–তুমি রেগে যাচ্ছো কেনো? আমাদের হাত সব সময় পরিষ্কার করা থাকে। দিনে কতবার হাত পরিষ্কার করবো বলো। এক হাত বার বার পরিষ্কার করতে করতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। ডক্টরের কথা রক্তিম চোখে তাকালো আরাভ কোনো কথা না বলে, হন হন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

চলবে…..

(অনেক ছোট পর্ব হয়েছে। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। পরের পর্ব বড় করে দিব ইনশাআল্লাহ। রিচেক করি নাই। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here