[১৮+ এলার্ট]
#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম
#ফারজানা_মুমু
[১০]
ভোর না হওয়ার পূর্বেই ঘুম থেকে উঠে পড়ল তিনজন। এখনও আলো ফুটেনি। পুরো বাড়ি জুড়ে নিস্তব্দ,নির্জন,শূন্য-শূন্যে অনুভুতি। মৃ’ত্যু’পু’রী থেকে কম লাগছে না। ঝুমঝুমি কপালে হাত রেখে চিন্তায় ব্যাস্ত। কারণ,ওদের রুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। পরবর্তী সমস্যার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নীরার মাঝে কোনো প্রকার হেলদোল নেই। নদীর ঢেউ যেখানে থামবে সে সেখানেই যাবে নিজ ইচ্ছে সাঁতরিয়ে নদী পার হবে না এমন হাবভাব। তৃষ্ণা চটে আছে নীরার উপরে। রেগে যাওয়ার কারণ আছে বৈ’কি। হিরণ নাকি ওকে বলেছিল তোমাদের জন্য সকালে সারপ্রাইজ আছে। দূর্বল মন সবল করার কথা বলেছে কিন্তু এ মেয়ে কিছুই বলেনি রাতে, মাত্র বলেছে। রাতে বললে হয়তো সতর্ক থাকতো। তৃষ্ণা মুখ খুলল এবার।
-” এখন কী হবে ঝুমি?
-” আমাদের হাতে কিছু নেই। যা হবে দেখা যাবে। এখান থেকে যেতে হলেও টাকার প্রয়োজন যা আমাদের কাছে এখন এই মুহূর্তে নেই। বাসায় বললে চিন্তা করবে সবাই তার থেকে ভালো দেখ ওদের প্ল্যান।
গোপনে নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো তৃষ্ণা। বাথরুম চেপেছে। জমিদার বাড়িতে লাগোয়া ওয়াশরুম না থাকায় নীরার পানে কড়মড় দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, ইচ্ছে করছে তোকে ওয়াশরুম ভেবে চালিয়ে দিই।
নাকমুখ ছিটকে অন্যদিকে ফিরে তাকালো। তৃষ্ণা দরজার কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কাঁদো-কাঁদো মুখ করে বলল, প্লিজ দরজা খুলে যা। আলী বাবা ও চল্লিশ চোরের গল্পের মতো চিচিং ফাঁক বলার সাথেসাথে খুলে যা প্লিজ। ধৈর্য খুলাচ্ছে না আর।
তৃষ্ণার দুআ কবুল হলো কিন্তু সমস্যা বাঁধলো তৃষ্ণা দরজার সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল দরজা খোলার পর পরেই সামনে ঝুঁকে পড়তে যাবে শক্ত একটি হাত চেপে ধরলো। কিন্তু তাল সামলানোর আগেই তৃষ্ণা মেঝেতে ধপাস করল সাথে-সাথে যে তাকে ধরেছিল সেও পড়ল। আচমকা ঘটনায় বাকি ছয়জন বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া উপায় পেলো না। মিরাজ হাত যারা দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তৃষ্ণা কোমরে হাত রেখে উঠল। রক্তিম নজরে মিরাজকে ভস্ম করার জন্য ওর চোখের দৃষ্টিই যথেষ্ট। মুখ ফুটে শব্দ বের না করেই ছুটল ওয়াশরুমে। তৃষ্ণার এরূপ ব্যাবহারে ছেলে চারজন একজন আরেকজনকে চোখাচোখি করে হেসে দিল। আষাঢ় ঝুমঝুমির সামনে অপরাধ মুখ নিয়ে বলল, দুঃখিত। ভুলে গিয়েছিলাম এখানে ওয়াশরুম নেই। তোমাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য আমরা সত্যিই দুঃখিত।
_
ঝুমঝুমি বুঝতে চাইলো আষাঢ় মজা নিচ্ছে নাকি সত্যিই ক্ষমা চাচ্ছে। আষাঢ়ের চেহারায় বিন্দুমাত্র তাকিয়ে থেকে বুঝতে না পেরে বলল, আমরা এখান থেকে চলে যাব। বাসের কন্ট্রাক্টর মামা কোথায়?
হিরণ দাঁত পাতি বের করে হেসে দিল। নীরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, ওরা তো রাতেই চলে গেছে ভাবী।
দুজনে চমকে তাকালো। হিরণ ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসির রেখা টেনে আবারও বলল, কেমন হলো সারপ্রাইজ?
ঝুমঝুমির পুরো শরীর রাগে ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কন্ঠস্বর থেকে শব্দরা আসছে না। কি করবে বুঝতে পারছে না, মাথার ভিতরে সব এলোমেলো হয়ে গেছে। অসহায় দৃষ্টিতে আষাঢ়কে দেখল। বলল, প্লিজ যেতে দিন আমাদের, অনুরোধ করছি অযথা বাড়াবাড়ি করবেন না।
-” যদি ভালোবাসো তাহলে যেতে দিবো।
-” আমার পক্ষে কাউকে ভালোবাসা কিংবা বিয়ে করা সম্ভব নয়।
ঝুমঝুমির গম্ভীর হয়ে বলা বাক্যটিকে নাজিম অন্যকিছু ভেবে বসলো। চোখ বড়-বড় করে বলল, তুমি তৃতীয় লি*ঙ্গে*র মানুষ?
নাজিমের মুখ ফসকে বলা কথাখানি শুনে নীরা রেগে উঠল। তৃষ্ণা সবে মাত্র দাঁড়িয়েছে নাজিমের কথা শুনে জুতো খুলতে ব্যাস্ত হলো। মিরাজ ও হিরণ থামালো তৃষ্ণাকে। আষাঢ় নাজিমকে শান্ত চোখে পর্যবেক্ষণ করল। নাজিম ভয়ে চুপসে গিয়ে মিরাজের পিছনে লুকালো।
মিরাজ বলল, বলোদটাকে ধরে বাইরে নিয়ে জুতো পেটা করছি তুই প্রেম কর।
-” মুখের ভিতরে ফেভিকল লাগাতে ভুলবেন না।
তৃষ্ণার কড়া বাক্য। মিরাজ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে বলল, তোমার হাতে হ্যান্ডকাফ পড়াতে হবে। যখন-তখন ছুড়াছুড়ি করতে চাও।
ঝুমঝুমির মধ্য হেলদোল নেই। সে চুপচাপ শুনে যাচ্ছে সব। ঠোঁটের কোণায় ফুটলো নিরাশ হাসি। তিক্ততা জীবন বয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে।
সকালের নাস্তা শেষ করে ঝুমঝুমিরা জমিদার বাড়ির পিছনের দিগটায় হাঁটতে বের হলো। নীরা বকে যাচ্ছে অনগত। তৃষ্ণা রাগ ঝারছে নীরার উপর। ঝুমঝুমি ব্যাস্ত জঙ্গলের শেষ মাথায় বট গাছ দেখতে। অনেক বছরের পুরনো বট গাছ।
-” গ*লা*য় দ’ড়ি দেওয়ার জন্য পারফেক্ট গাছ এটা। ভাবছি মা-বোনকে সুন্দর একটি জীবন উপহার দিয়ে আমি আবার এখানে চলে আসবো তারপর মৃ*ত্যু*পু*রী*তে মৃ*ত্যু বরণ করব।
ঝুমঝুমির এহেন কথা শুনে ওরা দুজন জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। কান্নার অবশ্য একটি কারণ আছে। কিছুক্ষণ আগে মেঘের ম্যাসেজ এসেছিল। সুন্দর ম্যাসেজ নয় বরং হাড় কাঁপানোর মত ম্যাসেজ।
‘ ভালোই তো ইনজয় করছিস ঝুমি। মনের সাথে-সাথে শরীরেরও। টাকা কামানোর নতুন ধান্দা। এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করার মতো। শরীরের চাহিদার পাশাপাশি টাকার চাহিদা দুটোই মিটবে। আমাকে একবার বলতে পারতি যত টাকা দরকার আমি দিবো। অন্যরা তোকে র’ক্ষি’তা রাখবে আমি নাহয় বউ হিসেবে রাখতাম। ও হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি। তোর তো আবার এক পুরুষে মন উঠে না। নিত্যনতুন পুরুষ লাগবে। ঝর্ণাকে সাথে নিতে পারিস, ইনকাম ভালো হবে। কচি মেয়েদের ডিমান্ড বেশি।”
নিজেকে নিয়ে বাজে কথা শুনতে-শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে কিন্তু ঝর্ণাকে নিয়ে এসব বলার পর বিষিয়ে উঠে ঝুমঝুমির মন। মনে-মনে মৃ’ত্যু কামনা করে। আর পারছে না সে কিছুতেই পারছে না। নষ্ট জীবন বয়ে বেড়াতে হাঁপিয়ে উঠেছে।
ঝুমঝুমির পিছন-পিছন এদিকে আসছিল আষাঢ় হঠাৎ ঝুমঝুমির মৃ’ত্যু কামনা শুনতে পেয়ে বুকের ভিতরে ধক করে উঠল। কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠল,
-” আরেকবার বাজে বকলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না ঝুমি।
ঝুমঝুমি আষাঢ়কে দেখল। বিবেক জাগ্রত হলো। এই ছেলেটা ওর জন্য লুকিয়ে-লুকিয়ে অনেক সাহায্য করেছে। ছেলেটা যাইহোক প্রতারক নয়। মনকে বুঝাল, ছেলেটাকে সব সত্য কথা বলে দিবে। সত্য জানার পর হয়তো আষাঢ়ের হৃদয়ে প্রেম পাখিটা ছলাৎ করে উড়ে যাবে। তবে তাই হোক উড়ে যাক প্রেমের পাখি। তবুও তো আশায় থাকবে না। আষাঢ়ের চোখে তাকালে বুঝা যায় ছেলেটা তাকে কত ভালোবাসে। এই ভালোবাসার যোগ্য ও নয়। প্রথমে কষ্ট পেলেও পরবর্তীতে নিজেকে শুধরাতে পারবে। তিলে-তিলে গড়ে উঠা ভালোবাসা শুরুতেই ধ্বংস করা উচিত তানাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।
নীরা-তৃষ্ণাকে চলে যেতে বলে আষাঢ়কে বলল, আপনার সাথে আমার ব্যাক্তিগত কথা আছে। আমি চাইনি আমার ব্যাক্তিগত কথা এখানের কেউ জানুক কিন্তু বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে। আপনার অনুভূতি নিয়ে খেলা আমার ঠিক হচ্ছে না। আমার কালো রাতের ঘটনা আপনাকে আজ বলব। সব শুনার পর আপনি নিজ থেকেই আমাকে ঘৃনা করবেন। আমাদের দুজনের ভালোর জন্য আজ আপনাকে সত্য কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি।
ঝুমঝুমির এহেন কথাবার্তা শুনে আষাঢ় ভয়ার্ত চোখে তাকালো। বলল,
-” আমি শুনতে চাই না তোমার ব্যাক্তিগত কথা। আমি জানি তুমি আমাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছো। আমার ভালোবাসার পূর্ণতা না দিয়ে শূন্যতা দিতে চাইছে।শুনো মেয়ে আমার ভালোবাসায় খাদ নেই। তোমাকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি। তোমার অতীতের কথা আমি শুনতে চাই না। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমাকে খুব ভালো কথা বলবে না। অতীত না জেনে তোমায় ভালবাসি তোমার অতীত যতই আঁধার হোক আমার কাছে তুমি নামক মানুষটিই আলো। আঁধারকে সরিয়ে আলোর দেখা। জানি না তোমায় পাব কিনা তবুও আমার কল্পনায় তুমি শুধু আমার। বাস্তবে না হোক কল্পনায় সুখী থাকি আমি। প্রতিদিন আশায় নিয়ে থাকি এই বুঝি তুমি আমাকে ভালোবাসি বলবে এই আশাকে নিরাশাকে করো না। আমার হৃদয়ে কাল বৈশাখী ঝড় তুলতে চাইছ তুমি? আমি হতে দিবো না। ভালো না বাসো অন্তপক্ষে পুড়াতে এসো না। আমি খুব দূর্বল মনের মানুষ। অল্পতেই অভিমান করে বসি। যে দুটো শব্দ ছেলেদের মাঝে বেমানান সেইগুলোই আমার মধ্য বিদ্যমান। তোমাকে হারানোর কথা ভাবলে আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,দম বন্ধ হয়ে আসে,চারদিকে শূন্যতা-শূন্যতা লাগে। তোমাকে ছাড়া আমি মৃ’ত। তোমাকে আমি কি পরিমান ভালোবাসি তুমি জানো না ঝুমি। নির্ভেজাল , সহজ সরল মানুষটি কি করে তুমি নামক পাথরের প্রেমে মজেছ জানি না। তোমার অতীত আমার কাছ থেকে দূরে রাখ। যে অতীত তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে নিতে চাইবে সেই অতীত ধামাচাপা থাকুক। বর্তমান-ভবিষ্যত্ সুন্দর থাকায় যথেষ্ট। তোমার আমার মাঝে অতীত নামক কাল বৈশাখী ঝড়ের তান্ডব আনতে যেও না।
ফিচেল হাসলো ঝুমঝুমি। অকপটে বলে ফেলল, আমি ধ’র্ষি’তা আষাঢ়।
##চলবে,
গল্পটি গতকাল সম্পূর্ন লিখার পর কপি করতে গিয়ে ডিটেল হয় তাই আপলোড দিতে পারিনি।