স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_১৩

0
597

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

নিস্তব্ধতার রেশ ঘিরে ধরেছে রাতের মধ্য প্রহরকে। সবাই নিদ্রা দেশে তলিয়ে আছে। এমন সময় রাত জেগে পরীক্ষার খাতা দেখছে আরাভ। স্মৃতিদের পরীক্ষা শেষ হয়েছে দু’দিন হলো। এই পর্যন্ত যতগুলো খাতা দেখছে। বিশটার মধ্যে দশটাই ফেল করেছে। স্মৃতির খাতার দিকে তাকিয়ে কিছুটা তব্দা খেয়ে গেল আরাভ। মেয়েটার হাতের লিখা যেমন সুন্দর, তেমনই সুন্দর নির্ভুল অংক করেছে। আরাভ কোথায় থেকে মার্ক কাটবে বুঝতে পারছে না। খাতার মধ্যে কোনো কাটাকাটিও নেই। মেয়েটার খাতার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হলো আরাভ। মার্ক কাটলেও আরাভকে জবাব দিহিতা করতে হবে। সে অন্যান্য স্যারদের কাছে শুনেছিল। স্মৃতি খুব ভালো ছাত্রী। আরাভ সে কথা গায়ে মাখেনি। সে ভেবেছিল। সে ছাত্রী পরীক্ষার আগেন দিন তাড়াতাড়ি ঘুৃমিয়ে যায়। সেই ছাত্রী কিভাবে ভালো হতে পারে। আরাভ আজ বুঝতে পারছে। স্মৃতি সারাবছর পড়ে আর পরীক্ষার আগের দিন সকাল সকাল ঘুমিয়ে যায়। যেন সকালে উঠে পরীক্ষা ভালো দিতে পারে। মেয়েটার বুদ্ধি আছে ভালো। আরাভ সাত-পাঁচ না ভেবে স্মৃতিকে একশো নাম্বর দিয়ে দিল।

পরের দিন সকাল বেলা স্রুতি উঠে নামাজ শেষ করে, বাহিরের দিকে যাচ্ছিল। তখনই অভ্র উঠে স্রতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–আমার জামা গুলো জামাগুলো আয়রন করে দাও। আমাকে তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে। আজকে বাসায় না-ও ফিরতে পারি। আজকে আমার হাতে অনেক কাজ আছে। কাজ শেষ করতে তিন দিনও লাগতে পারে। বাবা-মাকে জানাতে পারবো না। তুমি সবাইকে বলে দিও। আমার জামা-কাপড় গুলো একটা ব্যাগে গুছিয়ে দাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুমি কিছু শুকনো খাবার নিয়ে আসো। কথা গুলো বলেই বিলম্ব করল না অভ্র। ওয়াশরুমের দিকে ছুটে গেল। স্রতি অভ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে মনোমুগ্ধকর হাসি দিল। মানুষটা পারছে না। তবুও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। মানুষটাকে দেখে যতটা খারাপ ভেবেছিল। মানুষটা আসলে এতটাও খারাপ নয়। কিন্তু অভ্র চলে যাবে। কথাটা ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেল স্রুতির। মানুষটা চলে গেলে কাকে জ্বালাবে সে। অভ্রের কাজের জিনিস এলোমেলো করে দেওয়ায় স্রুতির কাজ। মানুষটাকে এত বিরক্ত করে সে। তবুও মানুষটা রেগে স্রুতিকে রেগে দু’কথা শোনায়নি। এটা স্রুতিকে আরো মুগ্ধ করে তুলেছে। স্রুতির আর ভাবতে পারলো না। অভ্রের কথা মতো কাজ করে। খাবার নিয়ে আসতে চলে গেল। স্রুতি অভ্রের জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে এসে দেখে, অভ্র তাড়হুড়ো করে রেডি হচ্ছে। স্রুতি শান্ত কণ্ঠে বলল,

–খাবার নিয়ে এসেছি। একটু তাড়াহুড়ো কম করুন। খাবার না খেয়ে বাসা থেকে বের হতে দিব না। সকাল খাবার না খেলে মাথা কাজ করে না। বাহিরে গিয়ে কাজে মন দিতে পারবেন না। স্রুতির কথায় অভ্র ব্যস্ততা দেখিয়ে উচ্চ স্বরে বলল,

–খাবার সময় নেই। আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তুমি খেয়ে নাও। আমি বাহিরে গিয়ে খেয়ে নিব৷ অভ্রের কথায় বিরক্ত হলো স্রুতি। সে অভ্রের কথা উপেক্ষা করে, খাবার নিয়ে গিয়ে অভ্রের সামনে ধরলো। অভ্র প্রথমে নাকচ করলে-ও স্রুতি অভ্রের কথা শোনেনি। জোর করে অভ্রকে খাইয়ে দিয়েছে। অভ্র দরকারি জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য পুরো কক্ষে গোল গোল হয়ে ঘুরছে। স্রুতিও খাবার নিয়ে অভ্রের পেছনে পেছনে ঘুরছে। স্রুতির কান্ড দেখে অভ্রের প্রচুর হাসি পাচ্ছে। বহু কষ্টে নিজেকে দমিয়ে রেখেছে। তবে এটা ভেবে বকুটা প্রশান্তিতে ভরে উঠছে। মেয়েটা তাকে ভিষণ ভালোবাসে। এমন ভালোবাসার মানুষ পেতে কপাল লাগে। যা সবার ভাগ্যে থাকে না। অভ্র মনে মনে আপসোস করতে লাগলো। এতদিন তুমি কোথায় ছিলে স্রুতি। আমার জীবনে কেনো আরো আগে এলে না। আমার এই অসম্পূর্ণ জীবনকে কেনো সম্পূর্ণ করে দিলে না। আমি তোমার মতো মেয়েকে ভালো না বেসে, কেনো স্বার্থপর মেয়েকে ভালোবাসলাম। তুমি আরো আগে আমার জীবনের আসলে আজ আমাদের জীবনটা অনেক সুন্দর হতো। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি। যতদিন বেঁচে থাকবো। আমার বেস্টটা দিয়ে তোমাকে আগলে রাখবো। ভালোবাসার বাসার চাদরে তোমাকে মুড়িয়ে ফেলবো। তুমি শুধু আমাকে একটু সময় দাও। তোমাকে আপন করে নেওয়ার সুযোগ দাও। আমি কথা দিলাম। একদিন তুমি গর্ব করে বলবে। আমার স্বামী পৃথিবীর সেরা স্বামী। অভ্রের ভাবনার মাঝে স্রুতি অভ্রের মুখের সামনে একটা লোকমা খাবার তুলে দিল। অভ্র খাবার মুখ নিয়ে টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল। স্রুতিকে আসছি। বলেই কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। অভ্র চলে যেতেই স্রুতির মাথা নুইয়ে গেল। মুহুর্তের মধ্যে বিষাদ এসে মনটাকে গ্রাস করে ফেলল। স্রুতির মন খারাপের মাঝে অনুভব করে অভ্র আবার কক্ষে এসেছে। তার দিকেই এগিয়ে আসছে। অভ্র স্রতির কাছে এসে। স্রুতির মুখশ্রী নিজের দিকে তুলল। স্মৃতির অবাক করে দিয়ে অভ্র স্রুতির ললাটে গভীর ভাবে অধর ছোঁয়ালো। স্রুতি পরম আবেশে আঁখি জোড়া বন্ধ করে ফেলল। অভ্র স্রুতিকে নিজের বুকে আগলে নিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল আসছি। কথা গুলো বলেই অভ্র পেছনে না তাকিয়ে সোজা বাসা থেকে বের হয়ে গেল। অভ্র চলে যেতেই স্রুতি চোখ মেলে তাকালো। এই প্রথম অভ্র তাকে স্পর্শ করল। প্রিয় মানুষটার স্পর্শ বুঝি এতটাই স্নিগ্ধ হয়। বিষাদের ঘেরা মনটা মুহুর্তের মধ্যেই হাওয়া হয়ে গেল। অনুভূতিরা আনন্দে মেতে উঠলো। সে প্রতিটি মেয়েই স্বামীর কাছে একটু ভালোবাসা আশা করে। মেয়েদের খুশি করার জন্য বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না৷ একটা মেয়েকে খুশি করার জন্য প্রিয় মানুষটার ভালোবাসা আর সুন্দর ব্যবহারই যথেষ্ট।

স্মৃতিরা কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তোহা এখনো আসছে না। আজকে ক্লাস শেষ করে তারা ঘুরতে যাবে। পরীক্ষার ফলাফলও আজকে দিয়ে দিবে।সবাই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কলেজ থেকে উধাও হবে। এমন সময় আরাভ কলেজে আসছিল। আরাভকে দেখে সবাই সালাম দিল। আরাভ বাইক দাঁড় করিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–আজকে আমার ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ কোথাও যাবে না। তোমাদের সবার বিচার আছে। আমি কি তোমাদের এতটাই খারাপ পড়াই? যে একজনও পাস করতে পারলে না। স্মৃতি তোমাকে অবশ্যই ক্লাস রুমে থাকতে হবে। তুমি নাকি সারাবছর পড়াশোনা করো। সারাবছর পড়াশোনা করে তোমার খাতার এই অবস্থা কেনো? আজকে সবাই ক্লাস রুমে আসো খালি। সবার বাসায় কল দিব। কথা গুলো বলেই আরাভ চলে গেল। আরাভের কথা শুনে সবার মনে ভয়ের দানা বাসা বাঁধলো। এই প্রথম আরাভ ক্লাসের বাহিরে তাদের সাথে কথা বলল। স্মৃতির পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে। সেদিন ছাদে আরাভের কাছে যায়নি বলে, আরাভ তাকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিল। নিজের ভাবনাকে নিজেই ধিক্কার জানালো স্মৃতি। এসব সে কি ভাবছে। প্রথম ক্লাসই আরাভের কিসের তোহার জন্য অপেক্ষা করা। সবাই মিলে ছোট বাচ্চাদের মতো ক্লাসের দিকে দৌড়ে দিল। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে হাসছে। সবাই মিলে ক্লাস রুমে এসে প্রথমে জায়গা দখল করে বসলো। একটু পরে তোহা আসলো। তোহা আসার পরেই আরাভ ক্লাস রুমে এসে, একে একে নাম ডেকে খাতা দিতে শুরু করল। খাতা দেওয়া শেষ হলে বলতে লাগলো,

–প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে। আমি নাকি তাদের ইচ্ছে করে ফেল করিয়ে দিয়েছি। তোমরাও অভিযোগ করতে পারো। তোমাদের খাতা দেখে কোনো অভিযোগ থাকলে বলো। আমি সংশোধন করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। তোমার পরীক্ষার ফলাফল বাহিরে সকলেই দেওয়া হয়েছে। তোমাদের অভিযোগ থাকতে পারে। তাই খাতা দেখালাম। তোমাদেরও যদি কোনো অভিযোগ থাকে। সবাই খাতা পেয়ে এর ওর খাতার দিকে তাকাচ্ছে। সবাইকে এমন করতে দেখে৷ আরাভ উচ্চ স্বরে বলে উঠলো,

–সবাই অন্যের খাতার দিকে না তাকিয়ে নিজের খাতার দিকে তাকাও। কে কি করেছে সেটা না দেখে, তুমি নিজে কি করেছো। সেটা দেখো। আরাভের কথায় পুরো ক্লাস রুম নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মেঘলা আর রোহান স্মৃতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–তুমি কত পেয়েছিস? ওদের কথায় স্মৃতি চমৎকার হাসি উপহার দিয়ে বলল,

–আমি একশো পেয়েছি। স্মৃতির কথায় মেঘলা মুখশ্রী গম্ভীর করে বলল,

–তুই একশো পেলি কি করে? মেঘলার কথায় স্মৃতি হাসোজ্জল মুখ করে বলল,

–আমার কলমের কালি ফুরাই নাই তাই। স্মৃতির কথা শুনে আশেপাশে কয়েকজন শব্দ করে হেসে উঠলো।

চলবে…..

(রিচেক করা হয় নাই। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here