#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব তেত্রিশ
৩৩.
‘তুমি আমার হাসি মুখের কারণ হবে
তুমি আমার শত ভুলের বারন হয়ে যাবে।’
অপরাজিতার পরিবর্তিত গানের লাইন শুনে হাসলো ফায়াদ৷ সে অপরাজিতার নাক টেনে দিল।গানের মতো নয় তবে সে স্বাভাবিক ভাবেই হাসি মুখে গানের পরবর্তী দু লাইন নিজের মতো করে বলল,
‘দেবো না জল আসতে চোখে কোনোদিন আর
যদি দেও আমায় জল মোছার অধিকার।’
অপরাজিতা খিল খিল করে হেসে দিল। বলল,
‘সব অধিকার আপনার জনাব।’
ফায়াদ সামনে তাকালো। দেখলো বাকিরা তাদের থেকে অনেক এগিয়ে। নানা কথাবার্তা, হাসাহাসি করতে করতে হাটছে।সেদিকে তাকিয়ে ফায়াদ অপরাজিতার হাত ধরে তাকে অন্যদিকে নিয়ে গেল। অপরাজিতা কিছু বলতে নিতেই ফায়াদ বলল,
‘চুপচাপ আসো।’
রিজু হাটছে আর মনে মনে নিজেকে বকছে।কি দরকার ছিল পিচ্চি পোলাপান বুঝানোর৷ সামিয়া মেয়েটার আচরণ তার কাছে খুবই অস্বস্তি লাগছে। মেয়েটা ঘুরে ঘুরে শুধু তাকেই দেখে। রাফিয়া তা দেখে খুবই মজা পাচ্ছে। রিজু রাফিয়াকে চোখের ইশারায় বলল,
‘বাঁচা বোন!’
রাফিয়া গিয়ে সামিরের পাশে হাটা শুরু করলো।সামির ফোনে চ্যাটিং করছিল। রাফিয়া কেশে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। সামির তাকাতেই সে বলল,
‘আপনার বোন আমার ভাইয়ের উপর বাঁ’শ খেয়েছে।’
‘ওওও ব্যাপার না। বয়সের দোষ।’
সামির এমনভাবে বলল যেন আসলেই কোনো ব্যাপারই না। রাফিয়া অবাক হয়ে বলল,
‘বোনকে বুঝাবেন না? আপনার বোন তো ছোট৷ প্রেম ভালোবাসায় এখনি মন দিয়ে ফেললে তো বিপদ!’
সামির মাথা ঝাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
‘আরে ব্যাপার না৷ আর আপনার ভাইকে আমার পছন্দ হয়েছে। বোন জামাই হিসেবে খারাপ হবে না৷’
রাফিয়া প্রতিবাদ করে বলল,
‘কিন্তু আমার আপনাকে বেয়াই হিসেবে পছন্দ হয় নি! আপনার বোন অনেক ছোট তাকে বুঝান’
সামির মোবাইল টা পকেটে রেখে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুমি কি নিজেকে খুব বড় মনে করো?’
সামির আপনি থেকে তুমি তে নেমে এসেছে। তা নিয়ে মাথা ঘামালো না রাফিয়া। সে তেতে বলল,
‘আমি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি।কলেজে!! আপনার বোন এখনো স্কুলে!’
সামির হাই তুলে বলল,
‘আরে সবই একই গোয়ালের গরু!’
রাফিয়া রেগে আর কথার বলল না। সে গিয়ে তার ভাইয়ের পাশে হাটতে লাগলো।সামির সামিয়াকে হাত ধরে রেখেছে। ছোট মানুষ। আবার হারিয়ে টারিয়ে গেলে! রাফিয়ে মনে মনে ভেঙচি কেটে বলল,
‘হাত ধরে রাখে আবার বলে কিনা বোন জামাই বানাবে আমার ভাইকে! যত্তসব কাহিনী’
ফারাজ আর নীতি টুকিটাকি কথা বলতে বলতে এগোচ্ছিল। ফারাজ হঠাৎই পিছে তাকালো। পিছে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে হেসে দিল। নীতি ফারাজকে হাসতে দেখে বলল,
‘কি হয়েছে?’
ফারাজ হাসতে হাসতে বলল,
‘পিছে দেখেন।’
নীতিও পিছে একপলক দেখে মুখে হাত দিয়ে হেসে ফেলল।পিছে নেই তারা। বাতাস বইছে। কোনো এক জায়গায় দাড়িয়ে হয়তো প্রেমিকযুগল এই পরিবেশ উপভোগ করছে। হতে পারে নিজেদের অনুভব করছে।
নীতি হাসতে হাসতে অন্যদিকে তাকিয়ে ব্রিটিশ একসেন্টে আনমনে বলল,
‘why is love so cute but also painful?’
নীতি কি ভেবে কি বলেছে তার খেয়াল নেই। সে ঠান্ডা এই পরিবেশ উপভোগ করছে। মনে যা এলো বলে দিল। কিন্তু ফারাজ তা শুনে তাকিয়ে রইলো নীতির দিকে। মেয়েটার পেইনফুল ফিলিংস এর জন্য সে দায়ী? সেদিনের পর নীতির সাথে সে স্বাভাবিক থাকার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু হুটহাট নীতির কথাগুলো মাথায় চলে আসে। সে রাতে নীতি তার কাধে মাথা রেখে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। ঘুমের ঘোরে সে এক পর্যায়ে বলছিল,
‘আমি আপনাকে ভালোবাসি ফারাজ।আপনি কি আমাকে কখনো গ্রহণ করবেন?ভালোবাসি।’
বার বার একই বুলি আওড়াচ্ছিল সে। হাত থেমে গিয়েছিল ফারাজের। আর বাজাতে পারে নি গিটার৷ নীতির সাথে স্বাভাবিক আগের মতো আচরণ করলেও মন যেন হুট করে বলে ফেলে তাকে যে ‘সামনের মেয়েটা তোকে ভালোবাসে। কিন্তু তুই তাকে কষ্ট দিচ্ছিস।’
আচ্ছা? তার কি উচিৎ জীবনকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া? আরেকবার কারো ভালোবাসায় নিজেকে ভালোবাসতে শেখা?
নীতি সামনে আইস্ক্রিম দেখে বাকিদের দিকে দৌড় দিল। বাকিরা আইস্ক্রিম কিনছে।সেও খাবে। ফারাজকে রেখেই এগিয়ে গেল। কিন্তু সে খেয়াল করলে দেখতো কেউ আজকে অনেকটা সময় ধরে তাকে দেখছিল। তাকে ভাবছিল। তাকে বুঝার চেষ্টা করছিল।
ফায়াদ অপরাজিতা তাদের থেকে অনেকটা দূরে এসে একা একা হাটতে লাগলো।দুজনেই নিরবে হাটছে। একে অপরকে অনুভব করছে। এদিকে মানুষ কম। অনেকটা সময় হাটার পর ফায়াদ আশেপাশে তাকিয়ে কোমর চেপে অপরাজিতাকে কাছে নিয়ে আসলো। অপরাজিতা চমকে উঠে আশে পাশে তাকালো।ফায়াদ অপরাজিতা কে এভাবে চমকে উঠতে দেখে মজা পেল।
কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
‘কেউ দেখছে না।’
অপরাজিতা কাচুমাচু করে বলল,
‘হুটহাট এমন করেন কেন? চমকে যাই তো’
ফায়াদ যেভাবে হুট করে ধরেছিল সেভাবেই হুট করে ছেড়ে দিল। তারপর ভাবলেশহীন ভাবে হাটতে লাগলো। বলল,
‘আমার ইচ্ছে’
হুট করে ছেড়ে দেওয়ায় অপরাজিতা একটু পিছিয়ে গেল৷ ভেঙচি কেটে বলল,
‘আসছে ইচ্ছে!!’
ফায়াদ ঘাড় বাকিয়ে অপরাজিতার দিকে তাকালো।অপরাজিতা ভেঙচি কেটে দাঁড়িয়ে রইলো। ফায়াদ ফিরে আসলো অপরাজিতার কাছে। অপরাজিতা অন্যদিকে তাকিয়ে বিরবির করছে। ফায়াদ অপরাজিতার হাত টেনে অনামিকা আঙ্গুলে একটি সুন্দর ডায়মন্ড এর রিং পড়িয়ে দিল।হাতের দিকে তাকিয়ে চোখ চিকচিক করে উঠলো অপরাজিতার। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো,
‘ওয়াও!’
অপরাজিতার রিয়েকশন দেখে হাসলো সে। হাতের আঙুলে চুমু খেয়ে বলল,
‘ভালোবাসি ফুল’
অপরাজিতা কোনো দিক না তাকিয়ে জড়িয়ে ধরলো। অপরাজিতার কান্ডে হেসে দিল ফায়াদ। অপরাজিতা আবেগে টইটম্বুর হয়ে বলল,
‘আমার কান্না পাচ্ছে৷ খুশিতে কান্না পাচ্ছে৷ ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব! সেই ছোট থেকে ভালোবাসি।’
ফায়াদ অপরাজিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দুষ্টুমির সুরে বলল,
‘এতোক্ষণ কেউ ছিল না কিন্তু এখন একজন দেখছে আমাদের।’
অপরাজিতা বুকে মাথা ঘষে বলল,
‘দেখুক!’
——————-
আজ অপরাজিতার রেজাল্ট দিবে এইচএসসি এর। অপরাজিতা সকাল থেকে টেনশনে শেষ।এদিক ওদিক পাইচারি করছে শুধু। কিছুক্ষন পর পরই পানি খাচ্ছে। আবার পানি খেতে গেল। তখনই রামিসা বেগম পানি নিয়ে গেলেন হাত থেকে।
‘কতো পানি খাচ্ছিস? তোকে দেখে লাগছেই যে আর পানি খেতে পারছিস না।’
অপরাজিতা অসহায় হয়ে বললেন,
‘গলা শুকিয়ে যাচ্ছে মা’
রামিসা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘টেনশন কম কর। ভালো হবে।’
অপরাজিতা রুমে এসেও শান্তি তে বসতে পারছে না। মাথায় শুধু অশান্তিরা ঘুরাফেরা করছে। একে একে সবাই তাকে ফোন করলো। তার শশুর, শাশুড়ি, রাফিয়া,রিজু,ফারাজ,নীতি সকলে ফোন করে শান্তনা দিচ্ছে তাকে। ফায়াদ কাল রাত থেকে ফোনে বুঝাচ্ছে ভালো হবে।কিন্তু মানুষের কথা কি আর কানে লাগে। যে পরীক্ষা দেয় সে জানে রেজাল্ট এর দিন কেমন লাগে।
ফারাজ আবার কল দিল।বলল,
‘ছোট ভাবি। আপনি নাকি টেনশনে কান্না করছেন।’
অপরাজিতা বলল,
‘জ্বি না ভাইয়া। আমি কান্না করি না।’
ফারাজ বলল,
কিন্তু আপনার শশুর শাশুড়ি তো বুঝে না। আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়ছে। এখন তাদের নিয়ে আমি আসছি আপনার বাসায়। এটা জানাতেই কল দেওয়া। রাখি।’
অপরাজিতা ফোন রেখেই তার মা কে বলল তাদের আসার কথা। রামিসা ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
আখি বেগম অপরাজিতার কাছে আসতেই তাকে নানা উপদেশ,শান্তনা দেওয়া শুরু করলেন। একবার বলছেন,’পরীক্ষাই সব না। একদম মন খারাপ করবে না’,আবার বলছেন,’রেজাল্ট যাই আসুক আমরা তাতেই খুশি’,আবার,’ফায়াদও কিছু বলবে না’
এরকম নানা কথা। অপরাজিতার ভালো লাগলো। এরকম শাশুড়ী কয়জন পায়।
ফারাজ আখি বেগমকে নামিয়ে দিয়ে আবার চলে গেছে অফিসে। অফিসে পৌছাতেই দেখলো নীতি হেসে হেসে চ্যাটিং করছে মোবাইলে। আজ নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত এই কাজ টা করছে নীতি। মোবাইলে একটু বেশি টাইম দিচ্ছে।
আজ জিজ্ঞেস করেই ফেলল,
‘আপনি কার সাথে কথা বলেন নীতি?’
নীতি লুকালো না। হাসি মুখে বলল,
‘রাফিদ।’
ফারাজ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলল,
‘রাফিদ? ‘
নীতি বলল,
‘ওই যে অপরাজিতার ‘
বাকিটুকু বলতে হলো না। তার আগেই ফারাজ বলল,
‘তার সাথে আপনার কিসের কথা?’
‘আমরা ফেসবুক ফ্রেন্ড।’
ফারাজ চোয়াল শক্ত করে বলল,
‘আপনি তার সাথে কথা বলবেন না’
‘কেন?’
ফারাজ বলল,
‘আমি বলেছি তাই।’
বলে সে চলে যেতে নিল। নীতি নিচের দিকে তাকিয়ে শক্ত করে বলল,
‘আপনি বললেই আমার মানতে হবে?’
একথা শুনে ফারাজের পা থেমে গেল। সে নীতির দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। রাগ লাগছে তার।নীতির কাছে এসে ঝুকে ফিসফিস আওয়াজে শাসানোর সুরে বলল,
‘হবে।মানতে আপনি বাধ্য।আমি মানুষ টা কিন্তু সুবিধার না। না মানলে কি যে করবো ভাবতেও পারবেন না৷ শান্ত থাকি তাই আমাকে শান্ত থাকতে দেন। ভার্সিটি লাইফের ফারাজ হয়ে গেলে আপনার কপালে শনি নেমে আসবে।’
বলে নীতিকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল। নীতি হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। উনার এতো গায়ে লাগে কেন নীতি যার সাথেই কথা বলুক।জেলাস?
দুপুর রেজাল্ট বের হচ্ছে সকলের। অপরাজিতার রেজাল্ট ফায়াদ চেক করে কলে জানিয়ে দিবে বলেছে।
ফায়াদ ফোন দিচ্ছে কিন্তু অপরাজিতা ধরছে না। তার আসলে ভয় লাগছে। অপরাজিতা ধরছে না দেখে আখি বেগম ধরলেন। ফায়াদকে বললেন অপরাজিতা কেন ফোন ধরছে না।ফায়াদ যা বলার তার মা কে বলে দিল। অপরাজিতা উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে শুনার জন্য।
আখি বেগম বললেন,
‘ফায়াদ এসে বলবে। আমাকে বলে নি।’
অপরাজিতা ধরেই নিল সে এ+ পায় নি৷ মন খারাপ করে রুমে চলে গেল। তার খুব কান্না পাচ্ছে। খুব পরিশ্রম করেছিল সে। ডাক্তার সাহেব নিশ্চয়ই রাগ করেছে তার সাথে। সে কান্না করতে লাগলো। কান্না করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে গেল।
ফারাজ নিজের কেবিনে গিয়ে নিজের চুল নিজে টানছে। সে কেন সেটা বলল নীতিকে? নীতি যার সাথে ইচ্ছা কথা বলুক তার কি? কিন্তু তার যে সহ্য হচ্ছিল না।নীতি কেন অন্য কারো সাথে কথা বলবে।
নীতি একটা ফাইল দিতে আসলো। তার দিকে তাকাচ্ছে না নীতি। শুধু কাজই করছে। ফারাজ নীতিকে ডেকে বলল,
‘নীতি আই এম স্যরি।’
নীতি কাজেই মনোযোগ দিয়ে বলল,
‘ইটস ওকে স্যার!’
বলে চলে যেতে নিলে ফারাজ তাকে হাত ধরে আটকায়।বলে,
‘নীতি আপনি রাগ করেছেন?’
নীতি হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর ফারাজের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আপনি কি চান?’
ফারাজ এই প্রশ্নে যেন অসহায় বোধ করলো। সে কি চায় সে জানে না।তবে নীতিকে সে হারানোর ভয় পাচ্ছে। নীতিকে কারো সাথে কথা বলতে দেখতে তার ভালো লাগে না। আজকাল নীতি হুটহাট ভাবায় তাকে। সে কি আবারো ভালোবেসেছে? দ্বিতীয়বার ভালোবাসা যায় কি?সে জানে না। জানে না সে।
ফারাজ হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
‘জানি না’
চোখ বেয়ে অশ্রু পড়লো নীতির। তবে সে শক্ত কণ্ঠে বলল,
‘আচ্ছা’
বলে বেরিয়ে গেল।ফারাজকে বলেছিল তার সামনে অনুভূতি প্রকাশ করবে না কখনো আর। নিজের কথা রাখছে নীতি।বলবে না কিছু ফারাজকে। ফারাজের নিজেকে খুব খাপছাড়া লাগছে। সে কি করবে জানে না সে। কি করা উচিৎ তার?
ঘুম ভাঙতেই অপরাজিতা দেখলো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।রেজাল্টের কথা ভেবে মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেল।ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই অপরাজিতাকে দেওয়ালের সাথে আটকে ধরলো কেউ। ঘুমটা এবার পুরোপুরি ছুটলো অপরাজিতার। সামনে তাকিয়ে দেখলো ফায়াদ ঝুকে আছে তার দিকে।
হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে ফায়াদ। বলল,
‘কেদেছো কেন?’
মন খারাপ করে বলল,
‘আমার রেজা–‘
বলতে পারলো না।ফায়াদ বলতে দিল না। ঠোঁটে আলতো চুমু খেয়ে বলল,
‘এ+ পেয়েছো।’
অপরাজিতা চোখ বড় বড় করে তাকালো।বলল,
‘সত্যি?’
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো সে। এবার অপরাজিতা ভ্যা করে কেদে দিল। অপরাজিতার কান্না দেখে হেসে দিল ফায়াদ।তাকে হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বলল,
‘না ঘুমালে বুঝতে কি রকম হইহুল্লোড় চলছে বসার রুমে। তোমার আমার বাবারা বসার রুমকে মিষ্টির দোকান বানিয়ে রেখেছেন।’
অপরাজিতা কাদতে কাদতে অভিযোগ করে বলল,
‘আপনি আমাকে বলেন নি কেন?’
ফায়াদ ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ফোন ধরেছিলে? ধরো নি। তাই শাস্তি!’
অপরাজিতার কান্না থেমে গিয়েছে। তার এখন নাচতে ইচ্ছে করছে। সে বসার ঘরে গিয়ে দেখলো সকলে খুব খুশি। আগে তো শুধু এক পরিবার খুশি হতো এখন দুই পরিবার।ফারদিন আহমেদ তাকে গিফট দিল খুশি হয়ে৷ সবাই থাকলেও ফারাজ নীতি ছিল না সেখানে। তাদের নাকি অফিসে কাজ আছে।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ফায়াদদের থেকে যেতে বলল সবাই৷ কিন্তু ফারদিন আহমেদ ও আখি বেগন থাকবেন না। বাসায় ফারাজ নীতি একা। তাদের না খেয়ে থাকতে হবে পরে। ফায়াদ থাকবে আজ সিদ্ধান্ত হলো৷
ফারদিন আহমেদ আর আখি বেগম চলে গিয়েছেন৷ ফায়াদ থাকবে শুনে অপরাজিতার হার্টবিট বেড়ে গেল৷ বর্তমানে ফায়াদ আসিফ ইসলামের সাথে কথা বলছে। যেকোনো টাইমে রুমে আসবে৷
অপরাজিতার মাথায় অনেক কিছু ঘুরছে। আজ প্রথম বার ফায়াদ আর সে একসাথে থাকবে৷ ভাবতেই শিহরণ জাগে।
ফায়াদ এলো কিছুক্ষণ পর। এসে দেখলো অপরাজিতা বসে আছে বিছানার এক সাইডে। অপর সাইড তার জন্য ফাকা রেখেছে। দেখে হাসলো সে। দরজা আটকে লাইট অফ করে বিছানার দিকে এগুলো। ঘরে মৃদু আলো রয়েছে। বিছানার পাশে দাড়িয়ে গায়ের শার্ট টা খুলে ফেলল সে। যেহেতু থাকার কথা ছিল না তাই সে এক্সট্রা কাপড় আনে নি। অপরাজিতার ভাই ও নেই যে তার টা পড়বে। শার্ট টা বালিশের পাশে রেখে শুয়ে পড়লো।
অপরাজিতা দম আটকে বসে বসে দেখছে৷ ফায়াদ বলল,
‘শুয়ে পড়ো।’
বাধ্য মেয়ের মতো শুয়ে পড়লো অপরাজিতা। কেউ কিছু বলছে না। দুজনের মধ্যেই অনেক কিছু চলছে। অপরাজিতা শুয়ে শুয়ে হাসফাস করছে। ফায়াদ তা দেখে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে।’
অপরাজিতা আস্তে করে বলল,
‘গরম লাগছে।’
ফায়াদ তাকিয়ে রইলো অপরাজিতার পানে বেশ কিছুক্ষন। তারপর নিজের জায়গা থেকে উঠে অপরাজিতার উপর ঝুকে পড়লো।অপরাজিতা নিঃশ্বাস ধরে রাখলো। ফায়াদ অপরাজিতার গলা থেকে উড়না টেনে খুলে ফেলল।বলল,
‘উড়না নিয়ে ঘুমালে গরম তো লাগবেই ‘
অপরাজিতা কিছু বলছে না। কিছুক্ষণ অপরাজিতাকে পর্যবেক্ষণ করে ফায়াদ অপরাজিতার উন্মুক্ত গলায় মুখ গুঁজে দিল। অপরাজিতা শক্ত হয়ে গেল। ফায়াদ গলায় মুখ গুজে আদুরে স্বরে বলল,
‘শ্বাস নাও জান!’
অপরাজিতা দম ছেড়ে শ্বাস নিতে লাগলো ধীরে ধীরে।পরক্ষণেই আবার চোখ বন্ধ করে খামচে ধরলো ফায়াদের পিঠ।ফায়াদ তার গলায় ছোট ছোট চুমু খাচ্ছে। ধীরে ধীরে তা যেন বেড়েই যাচ্ছে। অপরাজিতার নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে৷ সে ফায়াদকে আরো আকড়ে ধরছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেল।
দুজনেই যেন হারিয়ে যেতে চাচ্ছে ভালোবাসায়। একে অপরের চোখে নেশা একে যাচ্ছে। ভালোবাসার নেশা।
যেই ফায়াদ অপরাজিতার অধরে অধর মিলাবে তখনই ফোন বেজে উঠলো ফায়াদের।
ফায়াদ ফোন টা রিসিভ করে কানে ঠেকাতে শুনতে পেল তার ভাই অসহায় ব্যাকুলভাবে তাকে বলছে,
‘ভাই একটু আসবি? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!’
ফোন রেখে ফায়াদ অপরাজিতার দিকে তাকালো। মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে। ফায়াদ অপরাজিতার কপালে সময় নিয়ে চুমু খেয়ে উঠে বসলো। ফায়াদ কিছুটা সময় দিল নিজেকে আর অপরাজিতাকে৷ নিজেদের সামলে নেওয়ার।
অপরাজিতাও নিজেকে সামলে উঠে বসলো।ফায়াদ অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বলল,
‘আমি এখন আমার ভাইয়ের কাছে গেলে তুমি কি কিছু মনে করবে?ফারাজের আমাকে দরকার।’
অপরাজিতা মুচকি হেসে এগিয়ে এলো ফায়াদের কাছে।মাথা উচু করে গালে হাত রেখে ফায়াদের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
‘আপনি যান’
ফায়াদ গেল। অপরাজিতা দরজা আটকে দিয়ে আসলো। যাওয়ার আগে ফায়াদ অপরাজিতার হাতে সেই ছোট বাক্সটার চাবি দিয়ে গিয়েছে যা সে অপরাজিতাকে পরীক্ষার আগে দিয়েছিল।
বিছানায় বসে আছে অপরাজিতা। সামনে সে ছোট বাক্সটা। ফায়াদ নেই এখন তার সাথে। তবে লোকটা যেতে যেতেও তাকে একরাশ নতুন অনুভূতি দিয়ে গেল। অস্থিরতা, ভালোবাসা মিশ্রিত এক নতুন অনুভূতি। মুরোব্বিরা আসলে ভুল বলে না,প্রেমে পড়লে মানুষ পাগল হয়ে যায়।অপরাজিতারও এখন নিজেকে পাগলই মনে হচ্ছে। বাক্সটার দিকে তাকিয়ে গুনগুন করলো,
‘লোকে পাগল বলুক
মাতাল বলুক আমি
তোমার পিছু ছাড়বো না..’
(চলবে)
(কাল রাতে বাসায় এসে খুব টায়ার্ড ছিলাম৷ কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম খবরই ছিল না🙂।)