#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৫ক]
____________________
৮৩.
” আমি আগেই সর্তক করেছিলাম তোমরা কেউ পাত্তা দাওনি আমার কথা এবার বোঝো।সামনে আর কি কি দেখতে হবে আল্লাহ ভালো জানেন।”
তীব্র ক্রোধ নিয়ে কথাটি বললো হাসিন।মুজাহিদ হাসান মাথা নুইয়ে বসে আছেন মেয়েটার খোঁজ পাওয়া গেল না ঈশান বলছে জানে না তবে কোথায় আছে সে?মেয়েটা সুস্থ অবস্থায় থাকলে নিশ্চিয়ই একবার না একবার ফোন করতো কিন্তু এই দুটো দিনে একবারেও সে ফোন করলো না।সহ্যর শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছেন মুজাহিদ হাসান।ঈশা নিখোঁজ হলো দুইদিন হয়ে গেলো বংশে তার বনাম উঠেছে মেয়ে নাকি পালিয়েছে।এসব কথা রটিয়েছেন ঈশার মামি সেটি আর সন্দেহের অবকাশ নেই।পুলিশকে জানাতে চেয়েও বার বার পিছিয়ে আসছেন মুজাহিদ হাসান তবে যে মেয়েটার বদনাম ভয়াবহ ভাবে রটবে।
সুলতানা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন হেঁচকি তুলে বলেন,
” তোমার মামাকে বোঝাও হাসিন পুলিশকে জানাতে বলো মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে থাকলে ঘরে মেয়ে ফিরবে না।”
” মামি ঠিক বলেছে মামা একবার ভেবে দেখো।”
” আমি ঈশানকে সন্দেহ করছি আমার মেয়ে ঈশানের কাছেই আছে।”
কথাটি বেশ দৃঢ়তা নিয়ে বললেন তিনি।মুজাহিদ হাসানের কথায় প্রচন্ড বিরক্তবোধ করলো হাসিন।কিছুক্ষণ আগে তারা ঈশানের বাড়ি থেকে ফিরেছে।ঈশার ব্যপারে জানতে চাইলে ঈশান এমন ভাব ধরে যেন ঈশা নামের কোন মেয়েকে সে চেনে না।ঈশানের এই হেয়ালিতে প্রচন্ড রেগে যায় হাসিন দুজনের মাঝে ঝামেলা বাঁধার আগে মুজাহিদ হাসান হাসিনকে নিয়ে ফিরে আসেন।
” মামা ঈশানকে সন্দেহ করা আর কাটা চামচে পানি খাওয়া এক কথা।ওই ব্যাটার ভাব দেখেছো?ওর ভাবে থুথু মা রি।”
” ঈশানের কাছে ঈশা আছে।ঈশান নাকি ইদানীং বাড়ি থাকে না।সেদিন রাসেল আর ঈশানের নাকি ঈশাকে নিয়ে কি কথা বলছিলো কোন ফ্লাটে আছে যাই হোক ঈশানের মা হাতে নাতে ধরবেন ছেলেকে আমাকে বলছে অন্তত আর একদিন অপেক্ষা করতে।”
” তোমাকে বললো আর তুমি বিশ্বাস করলে?উনি জানতেন উনার ছেলে খারাপ তাও আমাদের গলায় ছেলেটাকে ঝুলিয়ে দিতে চাইছিলেন।ঈশাকে একবার পাই আমি নিজে ছেলে খুঁজে বিয়ে দিব এসব বড়লোক ঘরের নষ্ট ছেলের কাছে আমার বোনকে আমি দিব না।”
হাসিনের কথায় সহমত পোষণ করলেন সুলতানা।
” ঠিক বলেছিস আমার মেয়ের উপর শকুনের নজর পড়েছে।”
দুজনের সম্মতির মাঝেও মুজাহিদ হাসান এখনো নিরব তার মুখে রা নেই।
.
টিভির দিকে ধ্যান জ্ঞান সব ঢেলে দিয়েছে ঈশা খুব মনোযোগ সহকারে একটি মুভি দেখছে সে।এত মনোযোগ দিয়ে মুভি দেখার মূল কারণ তার প্রিয় নায়কের মুভি চলছে।নায়কটার প্রতিটা অভিনয় খুব নিখুঁত সুন্দর।ঈশান আধা ঘন্টা যাবৎ ঈশাকে পরখ করছে।সেদিন অতীত জানানোর পর ঈশা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি বরং রুমে ফিরে সটান হয়ে শুয়ে ঈশানকে বেরিয়ে যেতে বলে।মেয়েটার মতিগতি বুঝে এলো না ঈশানের।
” ঈশা।”
” হু।”
” টিভিটা অফ করো এবার।”
” চুপ করেন।”
ঈশান থমকে গেল।কিছুটা এগিয়ে এলো ঈশার পাশে।
” এত মন দিয়ে মুভি দেখছো যে?”
” নায়কটা ভীষণ প্রিয় ভাল্লাগে।”
” ভীষণ!”
” হুম।”
” কেন ভালোলাগে?”
” কিছু ভালোলাগার কারণ হয় না এমনি ভালো লাগে চোখের নেশা।”
ঈশান উঠে দাড়ালো।টিভির মেন সুইচ অফ করে।রিমোটটা নিয়ে নিলো ঈশার হাতে।
” আরে কি করছেন বন্ধ করলেন কেন?”
” চোখের নেশা এত নেশা?আমার দিকে তো কোনদিন এত মনোযোগী হওনি।”
” ঈশান অবুঝের মতো আচরণ কেন করছেন?”
” হ্যাঁ আমি অবুঝ।দুই ঘন্টাতেও টিভি চলবে না।এই মেয়ে তাকাও আমার দিকে তাকাও।”
ঈশা তাকালো না মুখ ঘুরিয়ে বসলো সে।ঈশার প্রত্যাখ্যান মোটেও সহ্য না ঈশানের তাই তো জেদ দেখি বাহু টেনে ধরলো তার।
” আমার দিকে তাকালে কি গায়ে ফোসকা পড়বে?”
” হাত ছাড়বেন?”
” আমার ব্যাপারে কি ভেবেছো?সেদিন সবটা বলার পরেও চুপ রইলে কেন?”
” প্রমাণ ছাড়া মুখের কথা আমি কি বিশ্বাস করবো?”
” আমি যে ভালোবাসি বলেছিলাম এই ভালোবাসায় কি এমন প্রমাণ দিয়েছিলাম যে তার ভিত্তিতে তুমি আমায় গ্রহণ করেছিলে?বলো আমায়।”
” আমি বাড়ি ফিরতে চাই ঈশান।আমি আপনাকে বিশ্বাস করি আমি মেনে নিয়েছি আপনি এসব কিছুই করেননি কিন্তু আমার মা বাবা মানবে?কখনো না।”
” আমি মানিয়ে নিব।”
” পারবেন না।”
” তোমাকে তো পেরেছি।”
ঈশা চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ঈশানের দিকে।কয়েক মিনিট পর তার চাহনি নিবদ্ধ হলো খোলা জানলার বাইরে অন্ধকার আকাশটায়।ঈশান যেন এতে একটু বেশি বিরক্তবোধ করলো।গাল টেনে ধরলো ঈশার নিজের দিকে ফিরিয়ে কড়া সুরে বলে,
” তুমি শুধু তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে অপলক,নিরন্তর শেষ নিশ্বাস অবধি।”
ঈশা হাসলো সে তাকিয়ে রইলো ঈশানের চোখে।
৮৪.
এতদিন ক্লাস করা হয়নি অনুর।ঈশার ছিল না সে কি করে ক্লাসে যাবে?তবে আজ ক্লাস নয় রাসেলের সাথে দেখা করা মূল কারণ ছিল মেয়েটার।ক্লাস শেষ বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষণ তার পাশে ছিল দিহান এবং মীরা।রাসেল আসলে তারা দুজন চলে যাবে।রাসেল এলো বেশ কিছুটা সময় পর ছেলেটার সাথে রাজীব ছিল।দুজনে একসাথে গাড়ি থেকে নেমে এলো অনুর কাছে।মীরা রাজীবকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো রাজীবের চাহনি কেমন যেন।তাকিয়ে আছে নির্ণিমেষ।দিহান বিষয়টা বুঝতে পারলো সে মীরাকে আড়াল করে দাঁড়ালো রাজীবের মুখোমুখি।লহমায় পালটে গেল রাজীবের চাহনি।এই মেয়েটাকে সে না চাইতেও ভালোবেসে ফেলেছে।নাহ ভালোবাসেনি হয়তো, তবে ভালোলাগে, মায়া কাজ করে যেটা তার জন্য অপরাধ।
” গুন্ডাটাকে এখানে কেন এনেছো?”
ফিসফিস করে কথাটি রাসেলকে বললো অনু।রাজীবকে তারা কেউ পছন্দ করে না এর মূল কারণ রাজীব সেদিন ঈশাকে আঘাত দিয়েছিল।
” ও চলে যাবে কাজে এসেছে।”
” যেতে বলো এক্ষুনি।”
” চুপ করো অনুরূপি।”
অনু চুপসে গেলো রাজীব রাসেলের সাথে কথা শেষ করে চলে গেলো নিজ গন্তব্যে।দিহান আর মীরাও দাঁড়ালো না তারাও চলে গেলো।রাসেল অনু নিয়ে গেলো একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়াটা এক সাথে করবে তারা।
” ঈশান ভাই কি সত্যি ঈশাকে ভুলে যাবে?তাদের সম্পর্ক কি আসলেই শেষ?”
” তোমার কি মনে হয় এত কিছুর পরেও সব ঠিকঠাক থাকবে?”
” একটা সত্য কথা বলবে রাসেল?এতদিন জিজ্ঞেস করতে চেয়েও পারিনি।ঈশান ভাই কি আসলেই রেপিস্ট?”
” অনু!”
চোখ রাঙিয়ে বেশ জোরে ধমকে উঠলো রাসেল।তার ধমকে রেস্টুরেন্টের সবাই ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো।সবার চাহনিতে লজ্জায় পড়লো অনু।কিছুটা অভিমান জমলো মনে।
” খবরদার এই কথা আমার সামনে আর কোন দিন বলবে না।”
” আ..আমি বলিনি সবাই এটাই বলছে।”
” সবাই বলছে বলুক তুমি বলবে না।”
” কৌতূহল** থেকে বলে ফেলেছি রাসেল আমি ভীষণ দুঃখিত।”
” এসব মিথ্যে তুমি এসব কখনো মাথায় ঢোকাবে না বুঝলে?”
” হুম।”
রাসেল জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো।মেয়েটার সাথে অনেকদিন বাদে দেখা হয়েছে কিন্তু রাগের মাথায় ধমক দেওয়া মোটেও উচিত হয়নি।জড়তা নিয়ে অনুর হাত ধরলো রাসেল এগিয়ে এনে হাতে ছোঁয়ালো ঠোঁট।
” আমি ভীষণ যন্ত্রণায় আছি সরি।”
” আমি বুঝতে পারছি রাসেল।আমার একটা ভয় কাজ করছে জানো তো কী?”
” কী?”
” তোমাদের পরিবারটাকে অপছন্দ করতে শুরু করেছে সবাই।এমনকি আমার পরিবারো তোমাদের ভুল বুঝেছে।সবাই বলছে ঈশার শ্বশুর বাড়ির লোক … যাই হোক এসব ঝামেলার মাঝে আমাদের সম্পর্কের মান কোথায়?”
” সময় সব ঠিক করে দেবে এখন এসব ভেবো না।”
” ঈশা কোথায় কী সত্যি তোমরা জানো না?ঈশান ভাই এত সহজে ছেড়ে দিলো ঈশাকে?আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।যদি ঈশান ভাইয়া ঈশাকে ছেড়ে দেয় তবে বিশ্বাস শব্দটা আমার জীবন থেকে মুছে যাবে।”
” তুমি বসো আমি একটু মুখে পানি ছিটিয়ে আসি।”
রাসেল উঠে গেলো হাত মুখ ধুয়ে ফিরলো সে।দুজনের মাঝে কথা হচ্ছিলো তাদের কথার মূল টপিক ঈশা ঈশান।ওয়েটার এগিয়ে এসে দুজনের জন্য কাচ্চির প্লেট এগিয়ে দিলো।অনু হতভম্ব চাহনি নিক্ষেপ করলো রাসেলের দিকে।
” তুমি এটা কখন অর্ডার দিয়েছো?”
” যখন ফ্রেশ হতে গেলাম তখন।কেন?”
” আমি কাচ্চি খাব না।”
” কেন খাবে না?এটা তো তোমার পছন্দের তাই অর্ডার করলাম।”
” আমি এখন ডাইটে আছি তাই কোন কাচ্চি চলবে না।”
রাসেল অনুকে আগা গোড়া একবার জহুরি চোখে দেখলো।
” এই চামচিকা তোমার আবার কিসের ডাইট?”
” আরো স্লিম হবো দেখতে সুন্দর লাগবে।”
” এই মেয়ে তোমার ঢং থামাও দেখি গাল দেখি।”
রাসেল টেনে দিলো অনুর গাল।কিছুটা রাগ নিয়ে বসিয়ে দিলো আদুরে একটা চড়।
” এই হাড্ডি ওয়ালা গাল দিয়ে আমি কি করবো?তাই তো বলি আমার অনুরূপি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে কেন?আমি ভাবলাম ঈশার শোকে নাওয়া খাওয়া ছেড়েছো।এখন তো দেখি উনি ডাইটে আছে।শুনে রাখো আমার আগে অনুকে চাই,এসব হাড্ডি ওয়ালা অনুকে চলবে না।”
রাসেল এবার তর্জনীর আঙুল আর বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে চেপে ধরলো অনুর গাল।মেয়েটার গোমড়া মুখখানী দেখে হাসি পেলো রাসেলের।অনুর দুই গাল সংকোচন হয়ে দু’ঠোঁট পাউট হতে চোখের পলকে তার ঠোঁটে আলতো ভাবে ঠোঁট মেশালো সম্মুখে থাকা মানুষটি।অনু দ্রুত ঠোঁট আড়াল করলো হাতের সাহায্যে তার কান্ড দেখে হাসলো রাসেল।
” নাও খাওয়া শুরু করো এরপর আরো অনেক কিছু খাবো।তোমাকে আগের মতো নাদুসনুদুস হতে হবে তো।”
.
ঈশার সামনে সারাটা রুম জুড়ে পাইচারি করছে ঈশান এই ছেলের মতলবটা কি?ঈশান অফিস থেকে ফিরেছে এলোমেলো টাই,গায়ের স্যুটটা চেয়ারে ছুড়ে রেখেছে যা মাটিতে ছুঁই ছুঁই অবস্থা।এলোমেলো চুল কিয়ৎক্ষণ বাদে খামছে ধরছে।ঈশা নিরবে পর্যবেক্ষণ করলো ঈশানকে।দ্রুত উঠে গিয়ে পানি এনে এগিয়ে দিলো।ঈশান বারণ করলো না এক নিশ্বাসে শেষ করলো পুরো পানির গ্লাসটা।
” আমার কিছু কথা আছে ঈশা ব্যপারটা সিরিয়াস।”
” বলুন।”
” চলো আমরা বিয়ে করি।তোমার হাসিন ভাই তোমার জন্য ছেলে খুঁজতেছে।”
” কি!মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার?আমাকে তারা খুঁজে পেল না আর আমার জন্য ছেলে খুঁজতে লেগে গেলো?”
” হ্যাঁ তাই তো!কিন্তু আমায় এ কথা অনু বলেছে।”
” ওটা আরেক মাথা মোটা নিশ্চয়ই মজা করেছে।”
” না মজা নয় তারা সবাই সন্দেহ করছে তুমি আমার কাছে আছো।”
” তো?”
” আমাকে পটিয়ে তোমাকে নিয়ে যাবে তারপর তোমায় অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেবে হয়তো এটাই চাইছে তারা।”
” চাইলে চাইছে আপনার সমস্যা কী?”
” তুমি বিয়ে করবে?”
” পরিবার রাজি থাকলে আমি রাজি হবো না কেন?”
” কি বললে তুমি?আরেকবার বলো।”
ঈশা চুপচাপ বিছানায় বসলো ঈশান ক্ষেপেছে।হাটু মুড়ে বসেছে ঈশার সম্মুখে।ঈশার হাত টেনে বেশ কয়েকবার হাত ছোঁয়ালো ঠোঁটে।
” চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।”
” না এ হয় না।”
” তুমি একবার বলো সবটা সম্ভব হয়ে যাবে।”
” আমি কখনোই সম্মতি দিব না।এভাবে আমি কোন কিছু চাই না।”
” একা একটা ছেলের সাথে তিনদিন আছো এসব জানলে কেউ বিয়ে করবে তোমায়?
” না করলে না করবে আমার সাথে আমার পরিবার আছে।”
” যদি পরিবারটা না থাকে?”
” ঈশান পাগল হয়ে যাচ্ছেন আপনি ।অসুস্থ মস্তিষ্ক আপনার দ্রুত চিকিৎসা করান।”
” ভয় পেলে?”
” আমার পরিবারের আর একটি সদস্যর ক্ষতি হলে আমি কিন্তু আপনাকে ছেড়ে কথা বলবো না।”
ঈশার উত্তেজিত মুখখানী দেখে হাসে ঈশান।ঈশার হাত টেনে ঠোঁট ছোয়ালো বারংবার।
” তুমি কী চাও?ভালোবাসি বলতে বলতে এই দোহাই দিয়ে হারিয়ে যাবে?”
#চলবে__