অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ৩৫খ]

0
708

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৫খ]
_________________
অফিসের কয়েকটি কাগজ ফাইলে ঘুছিয়ে রেখে উঠে পড়লেন মুজাহিদ হাসান।একটু আগে দারোয়ান এসে বলে গেলো তার সাথে নাকি কেউ দেখা করতে এসেছে।মুজাহিদ হাসান অফিসের বাইরে গেলেন কালো স্যুট পরা কোন ছেলেকে তার নজরে এলো না।দারোয়ান তো বললো কালো স্যুট পরা ছেলে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।প্রচন্ড বিরক্তবোধ করলেন তিনি।কাজের সময়ে এত তামাশা মোটেও ভালো লাগে না।

” আসসালামু আলাইকুম ফাদার ইন ল।”

ভীষণ চমকে গেলেন তিনি।কানের কাছে কে সালাম করলো?ঘুরে তাকাতে ঈশানের হাস্যজ্বল মুখখানী দেখে বিব্রত বোধ করলেন।

” তুমি এখানে?”

” আসতে কি মানা?”

” কেন এসেছো সেটা বলো।”

“সামনে একটি রেস্টুরেন্ট আছে চলুন সেখানে বসি।”

” আমার ওত সময় নেই অফিসে অনেক কাজ।”

“শুধু বিশ মিনিট চলুন তো।”

ঈশান মুজাহিদ হাসানকে যেন আবদার নয় আদেশ করলো।মেশিনের মতো আদেশ পেয়ে ঈশানের সাথে চললেন তিনি।তাদের গন্তব্যে ফুরালো কোলাহল মুক্ত একটি রেস্টুরেন্টে।ঈশান দুটি কফি অর্ডার করে বসলো মুজাহিদ হাসানের মুখোমুখি।কোন ভনিতা ছাড়া সে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

” এভাবে আর কতদিন চলবে?এবার এর সমাধান চাই।”

” কিসের সমাধান চাও তুমি?আমি বিশ্বাস করি আমার মেয়ে তোমার কাছে আছে আর এটাও বিশ্বাস করি তার কোন ক্ষতি তুমি করবে না।সে স্পর্ধা তোমার নেই।”

” ঠিক বলেছেন।আমার প্রতি এতটা বিশ্বাস রাখার জন্য কৃতজ্ঞ আমি।”

” আমি বলেছিলাম তুমি প্রমাণ করো তুমি নির্দোষ।কি পারবে তো প্রমাণ করতে?”

” প্রমাণ করার কিছুই নেই যা আমি করিনি বুকে হাত রেখে দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি।আপনি রাজীবের কথায় আমাকে অবিশ্বাস করছেন!আমাদের এত সুন্দর সম্পর্কটা ভেঙে দিতে চাইছেন একটা বাইরের মানুষের কথায়!”

শুকনো কেশে উঠলো মুজাহিদ হাসান।ঈশানের পিছনে এত সব চালবাজি রাজীব করেছে কিন্তু এই কথা ঈশান কি করে জানলো?মুজাহিদ হাসানের অবস্থা দেখে পৈশাচিক হাসলো ঈশান।পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে মোলায়েম সুরে বলে,

” কুল কুল ফাদার ইন ল এভাবে কাশছেন কেন?আপনি কী ভেবেছেন অন্যর গানে আপনারা নৃত্য করবেন আর আমি বসে বসে দেখবো এত সহজ?এত!।আপনার কোন ধারণা নেই এই বিয়ে ফাইনাল করতে আমাকে কতটা খাটতে হয়েছে এমনি এমনি তো সব আমি ছাড়বো না।”

মুজাহিদ হাসান চুপসে রইলেন।তার হাভ ভাব দেখে ঈশানের বেশ হাসি পেলো।শর্ষের মধ্যে ভূত আছে ঘটনা টা তাই ঘটলো। রাজীব এতদিন ঈশানের সামনে নাটক দেখিয়ে এলো কিন্তু পেছনে ছুরিটা মা র লো সে।ঈশানের প্রতি রাজীবের কীসের এত শত্রুতা সেদিনের সেই চড়ের জন্য?ঈশার গলায় আঘাতটা মারাত্মক ছিল বলেই রাগের মাথায় চড় মেরেছিল ঈশান।রাজীবের শত্রুতার ভিন্ন কারণ থাকতে পারে নাকি রাজীবকে সরিয়ে দিহান আর মীরার সম্পর্কে পূর্ণতায় সাহায্য করায়।ঈশান সেদিন ঈশার গলায় আঘাত লাগা থেকে শুরু করে রাজীবের সম্পর্কে সবটা বললো।সবটা শুনে হতভম্ব মুজাহিদ হাসান গলার এই আঘাত নিয়ে বারবার ঈশার কাছে জানতে চাইলেও মেয়েটা মিথ্যে বলেছে অথচ কারণটা সম্পূর্ণ ভিন্ন।ঈশানের কথাটি শুনে চুপচাপ রইলেন তিনি।কিয়ৎক্ষণ বাদে বলেন,

” অবশ্য রাজীব মিথ্যে কিছু বলেছে?বলেনি সে আমাদের সতর্ক করেছে।”

” মেনে নিলাম মিথ্যে বলেনি তবে মেয়েকে পালানোর জন্য বলেছিলেন কার কথায়?রাজীবের কথায় নয় কী?”

” তুমি অয়নকে বেঁধে রেখেছিলে কেন সে তোমার কি ক্ষতি করেছে?”

” ক্ষতি করেছে অনেক ক্ষতি।একটা মেয়ের জীবন ধ্বংস করেছে দুটো বাচ্চা মেরেছে,আপনার মেয়ের দিকে কুনজর দিয়েছে।নানান বাহানায় ঈশার শরীর নোংরা ভাবে ছুঁয়েছে।আমার গায়ে হাত তুলেছে।”

” আমার ঈশা..”

” আপনার মেয়ে এসব বলেনি?বলবে কি করে কেউ তো বিশ্বাস করবে না।ভদ্রের লেভাস ধরে থাকা অয়ন ছেলেটাকে সবাই উপর থেকে ভালো জানে।অয়নের মা পরিকল্পনা এঁটেছেন তার ছেলের সাথে আপনার মেয়ে বিয়ে দেবেন।এসব নিয়ে আপনার সহধর্মিণী মানে ঈশার মায়ের মাথা ইতোমধ্যে সাফ করে দিয়েছেন।আপনি শুধু ঈশাকে বাসায় তুলুন দেখবেন আপনার স্ত্রী বলবে অয়নের সাথে ঈশার বিয়ে।”

” অসম্ভব ওই লোভী বর্বর পরিবারে আমি মেয়ে দেব না।প্রয়োজনে সারাজীবন ঘরে বসিয়ে রাখবো তবুও না।”

” দিতে হবে না আমি আছি না?”

শেষোক্ত বাক্যটি মুচকি হাসির ছলে বললো ঈশান।তার হাসিতে গা পিত্তি জ্বলে উঠলো মুজাহিদ হাসানের তিনি চোখ রাঙিয়ে বলেন,

” তোমার কাছেও না।তুমি একটা মেয়েকে ছি ছি ছি।”

” এসব কোন প্রমাণ আছে?বিশ্বাস হলো মনের ব্যপার এত বছরেও আমি এত প্রমাণ দিয়ে নিজেকে নির্দোষ করতে পারিনি এখনো পারবো না যদি আপনারা বিশ্বাস না করেন।আমার বাবা চান আমি তার বোনের মেয়েকে বিয়ে করি অবশ্য ফুফুর ছোট থেকেই এই পরিকল্পনা কিন্তু আমার পরিবার রাজি ছিল না শেষ পর্যায়ে এত নোংরা খেলায় মেতে উঠলো যাই হোক এসব বলে লাভ নেই।আমি ঈশাকে কথা দিয়েছিলাম রাগের মাথায় মা রা মা রি ছেড়ে দিব আর আমি আমার কথা রাখতে সর্বদা প্রস্তুত।আপনি আপনার পরিবারকে বোঝাবেন আমি আজ ঈশাকে নিয়ে যাব আর এই সাপ্তাহের মাঝে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হবে।আর কোন ধরা বাঁধা আমি চাই না।”

” তোমার বাবা না এলে এই বিয়ে কিছুতেই আমি দেব না।তিনি আসবেন আর সত্যিটা বলবেন।”

ঈশান এবার একটু বেশি বিরক্তবোধ করলো।জোরাজোরির ব্যপারটা তার মোটেও পছন্দ না।কিন্তু নিয়তি তাকে বার বার সেদিকেই ধাবিত করছে।কফির মগে আঙুল ঘুরিয়ে শান্ত স্বরে ঈশান বলে,

” আপনার মেয়ে আমার কাছে এটা আশা করি ভুলে জাননি?আপনার একটি হ্যাঁ না তে আপনার মেয়ের জীবন পালটে যাবে।আরেকটা কথা পুলিশের ভয় আমাকে দেখাবেন না আমিও পালটা চাল চালতে পারি আমাদের সাথে বিয়ের নাম করে আপনারা অন্যত্র মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন এটা কি আমাকে ঠকানো নয়?”

মুজাহিদ হাসান পালটা উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না।তিনি চুপচাপ মাথা নুইয়ে বসে রইলেন।ঈশানকে তিনি পছন্দ করতেন কিন্তু এখন আর হয়তো করেন না কিন্তু ঈশানের মাকে বড্ড শ্রদ্ধা করেন।কোমল মনের সেই মানুষটা বোধহয় ঈশার বাবার সেদিন পা ধরার বাকি রেখেছিলো।ঈশানের বিরুদ্ধে এই অপবাধ মিথ্যে একদিন না একদিন সত্যতা প্রমাণ হবে।তবে তার আগে জল এতদূর না গড়ালেও হয়।বুকে পাথর রেখে ঈশানের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হলেন মুজাহিদ হাসান মেয়ের ভাগ্য যদি খারাপ থাকে তবে কোন মতেই তিনি খন্ডাতে পারবেন না।

” আমার মেয়েকে আজ নিয়ে এসো।”

“অবশ্যই।রাতে তাকে নিয়ে যাব।”

ঈশানের হাস্যজ্বল মুখ দেখে কিঞ্চিৎ হাসলেন মুজাহিদ হাসান।

” ওহ ফাদার ইন ল আপনার হাসিটা ভীষণ সুন্দর।”

ঈশানের কথায় বিব্রতবোধ করলেন তিনি কপট রাগ দেখাতে ঈশান করে বসলো আরেক কান্ড।ঈশানের কাছে থাকা শপিং ব্যাগ থেকে একটি সাদা গোলাপের ছোট্ট তোড়া বের করে মুজাহিদ হাসানের সম্মুখে হাটু মুড়ে বসে বলে,

” উইল ইউ বি মাই ফাদার ইন লো?”

ঈশানের কথায় সবাই ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো।আশেপাশে মানুষের কৌতূহল বাড়লো সবাই তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে।মুজাহিদ হাসান দাঁতে চেপে বলেন,

” ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে?”

” মোটেও না।আপনার মেয়েকে বিয়ের জন্য এভাবে প্রপোজ করিনি অথচ দেখুন আপনার কি কপাল আপনাকে প্রপোজ করছি।প্লিজ আমাকে গ্রহণ করুন আপনার কি চাই বলুন?নাতি নাকি নাতনি?কয়টা লাগবে?”

” নিলর্জ্জ ছেলে দাঁড়াও বলছি।”

” আগে ফুল নিন।”

মুজাহিদ হাসান ফুল গ্রহণ করলেন।আতঙ্কে তার চাহনিটা পালটে গেছে।আশেপাশে সবাই হাসছে ঠোঁট চেপে তবে এ তাচ্ছিল্যর হাসি নয় পুলকিত**চমকে যাওয়ার হাসি।

৮৬.
ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বউ নিয়ে যেন জামাই এলো শ্বশুরবাড়ি।ঈশানের হাবভাবে এখন তাই মনে হচ্ছে।হাতে ব্যাগপত্র চোখে কালো চশমা ঠোঁটের কোনে লেপ্টে থাকা হাসি।মেয়েকে পেয়ে কান্নায় বুক ভাসালেন সুলতানা।তার কান্নার শেষ নেই। হাসিন ঈশানের দিকে তাকিয়ে আছে কড়া দৃষ্টিতে ইচ্ছে করছে গলাটা চেপে মে রে ফেলতে।কিন্তু এখন কিচ্ছু করা যাবে না।এই ছেলের সাথে তর্ক করাও বারণ বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুজাহিদ হাসান।মামার নির্দেশ অমান্য করার সাহস হাসিনের নেই তবুও মনের জেদ মেটাতে বলে,

” এত নাটক করার কি দরকার ছিল?ঈশা তোমার কাছে বলে দিলেই হতো।আমাদের আর পাগলা ষাঁড়ের মতো ছুটতে হতো না।ড্রামা কিং কোথাকার।”

” আর তোমরা ফুল ফ্যামিলি ড্রামাবাজ হা হা হা।”

ঈশান কাট কাট জবাব দিয়ে হাসতে থাকলো।হাসিনকে হারিয়ে ভেতরের সত্তাটা তার পিঠ চাপড়ে বাহবা দিচ্ছে।
” আহ হাসিন।”

গলা তুলে বললেন মুজাহিদ হাসান।ঈশানকে বসতে ইশারা করলে ছেলেটা বিনা বাক্যে বসে যায়।সুলতানা মেয়েকে নিয়ে ভেতরের কক্ষে যেতে নিলে ঈশান গলা ছেড়ে বলে,

” শুনছেন মাদার ইন ল যেভাবে সহি সালামতে বউ দিয়ে গেছি সেই ভাবে আবার নিতে আসবো।সুসম্মানে আমার জিনিস আমায় ফেরত দিয়ে দিয়েন।”

” মেয়েকে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেব তবুও তোমার কাছে দেব না।”

” সুলতানা চুপ থাকতে বলেছিলাম।”

মুজাহিদ হাসানের ধমকে চুপসে গেলো সুলতানা।স্বামীর ঝারি খেয়ে ঈশানের দিকে তাকালেন দাঁত কিড়মিড়িয়ে।

” সুলতানা ঈশানের জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করো।”

” পারবো না।এক্ষুনি যেতে বলো আপদ্’টাকে।”

মায়ের রাগ দেখে ঢোক গিললো ঈশা।ঈশান কি ভাবছে?অদ্ভুত এই ছেলেটা হাসছে কেন?সামনের ঝকঝকে চকচকে দাঁত দেখিয়ে ছেলেটা নিলর্জ্জের মতো হাসছে এত অপমানের পরেও!

” শ্বাশুড়ি আমার যেমন তেমন শ্বশুর আমার মনের মতন।আমরা গতকাল আসছি ফাইনাল কথা সারতে হবে।আর কোন চালাকি কাজে দেবে না আপনাদের। তাই ভালোই ভালোই ঝামেলা মিটিয়ে নিন।”
.
ঈশান চলে গেলো।অনেকদিন পর নিজের ঘরে ফিরে শান্তির শ্বাস ছাড়লো ঈশা।সুলতানা হন্তদন্ত পায়ে প্রবেশ করলো তার রুমে।মেয়েটাকে টেনে বসালেন বিছানার এক কোনে।

” সত্যি করে বলো বদমাইশটা তোমার সাথে কিছু করেনি তো?”

” কী করবে?”

” নাটক করো না তোমাকে যা বোঝাতে চাইছি… ”

” মা প্লিজ এবার চুপ যাও।এসব অযথা কথা মাথায় কেন আনছো?”

” তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”

” বলো।”

” অয়নকে তোমার কেমন লাগে?তোমার মামা আবদার করলো তোমাদের দুই হাত এবার এক করে দিতে।বিয়েটা…”

গর্জে উঠলো ঈশা।হাতের মুঠোয় থাকা গ্লাসটি ছুড়লো মেঝেতে।কাঁচের গ্লাসের দরুনে মুহূর্তে টুকরো টুকরো হয়ে গেল সেটি।ভাঙাচুরার শব্দে দ্রুত পায়ে মেয়ের কক্ষে এলেন মুজাহিদ হাসান ঈশাকে রেগে যেতে দেখে বলেন,

” কি হয়েছে মা?”

” বাবা দেখো মায়ের মাথায় কিসব ভূত ঢুকেছে মা এসব কি বলছে?অয়ন ভাইকে আমি বিয়ে করবো ভাবলে কি করে তোমরা।অয়ন ভাইয়ের প্রক্তন স্ত্রীর কথা মনে নেই?”

” মেয়েটা গরিব ঘরের ছিল।তাদের কোন চাহিদা পূরণ করতে পারেনি।তাছাড়া মেয়েটা বেশি স্বাধীনতা চেয়েছিল।”

মায়ের কথায় তাচ্ছিল্য হাসলো ঈশা।

” চাহিদা মানে কি বুঝাতে চাইছো?চাহিদা মানে কি তুমি বুঝতে পারছো না?তাদের লোভ হয়েছে আমাকে একবার যদি ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে পারে তবে আমার বাবার সব কিছু তো ওদেরি হবে।”

” একদম আমার ভাইয়ের নামে উলটা পালটা কথা বলবে না।আমার ভাইকে নিয়ে কথার বলার যোগ্যতা তোমার চৌদ্দগুষ্টির নেই।”

” আমার বাবার বংশের মানুষের সাথে কার তুলো না করো তুমি?একেই বোধহয় বলে ময়নার সাথে কাকের তুলনা।”

” তোর এত গলা বেড়েছে?ছিলি তো আরেক ছেলের কাছে এতদিন, এসব জানলে কোন ভালো ঘরে তোকে বউ করবে?আমার ভাইয়ের ছেলে তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এতে তোর সাত জনমের ভাগ্য।”

” যে ছেলের কাছে ছিলাম সেই ছেলেকেই বিয়ে করবো।দিন দুনিয়ায় রটে যাক,হাজার ঘটনা ঘটে যাক তবুও তার কাছেই ফিরবো।”

ভয়ে থরথর কাঁপছে রাজীব গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বারংবার।ছেলেটার সম্মুখে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে ঈশান।তার পাশে হৃদয়।ঈশানকে যতটা না সে ভয় পায় তার থেকেও বেশি ভয় পায় হৃদয়কে।হৃদয়ের কোন গতিবিধি নেই সে বেসামাল।চোখের পলকে চাকু গলায় বেঁধে দিতে তার কয়েক সেকেন্ডের কাজ শুধুমাত্র মনিবের একটি মাত্র নির্দেশ তারপর তার খেল দেখানো শুরু।চুপচাপ থাকা ঈশান এবার মুখ খুললো কিছুটা রাগ নিয়ে বলে,

” আমার মন চাইছে তোর কলিজাটা একটু দেখি।তোর এত বড় সাহস ঠিক কবে হলো!”

” ভ..ভুল হয়ে গেছে ভাই আমাকে দয়া করুন।”

” এটাকে ভুল বলে না।এটাকে বলে ইচ্ছাকৃত ভুল।তুই ভুল করেছিস জেনে শুনে তোর আবার কিসের মাফ?”

” ভাই..”

ঈশান দাঁতের সাহায্যে ঠোঁট কামড়ালো।তার ছটফটে ভাব দেখে হৃদয় কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ে।

” ভাই কোন সমস্যা?”

” তোর ভাবিকে কথা দিয়েছি হাত আর চালাবো না এখন দেখ মারতেও পারছি না।হাত কেমন কেমন করছে মনে হচ্ছে সে অনেক ক্ষুদার্ত।”

” তাহলে আমি মা রি?”

” মা র বি?আচ্ছা মার কষে একটা চড় দিবি।”

হৃদয় সত্যি সত্যি চড় লাগালো।কানের ভেতর ভো ভো করে উঠলো রাজীবের।মুখ ফুটে কিছু বলার আগে অন্য গালে কষে পড়লো আরেকটি চড়।

” আমার সাথে বেইমানি কেন করেছিস রাজীব?”

” ভাই…”

” আমি তোর ভাই না।তোকে শাসন করেছি, দেখভাল করেছি নিজের খুব আপন ভাবতাম আর তুই আমার পিঠে ছুরি দিয়েছিস মানতে বড্ড কষ্ট হয়।”

” দিহান আর মীরাকে আমি সহ্য করতে পারি না ভাই।ওদের একসাথে দেখলে আমার সব এলোমেলো লাগে।আপনাকে আর ঈশা ভাবী একসাথে দেখলে মনে হয় আমাকে নিসঙ্গ করে আপনারা সুখে আছেন আর তাই তো আমি আপনার শ্বশুরের সাথে যোগাযোগ করি।”

” কিন্তু আমার বাবার সাথে তোর যোগাযোগ হলো কি করে?”

“আপনার আর রাসেলে ভাইয়ের কথপোকথন একদিন আড়াল থেকে শুনেছিলাম।আপনার বিয়েতে আপনার বাবা সম্মতি দেননি এটা জানতে পেরে খোঁজ লাগাই নাম্বার জোগাড় করে ফোন করি।উনি আমার সাথে ডিল করেন যদি আমি আপনাদের বিয়ে ভেঙ্গে দি তাহলে আমাকে মোটা অংকের টাকা দেবেন।”

” সম্পর্ক তুচ্ছ হয়ে গেল টাকার নেশায়?”

” মাফ করবেন ভাই।আমি লজ্জিত।”

” তুই মীরার প্রতি ঝুঁকেছিস হিংসাত্মক হয়ে এর কারণ মীরা দিহান সুখী ঠিক এই কারণে।তুই এসব ছাড় তুই অপরাধী তবুও তোকে একটি সুযোগ দিচ্ছি।দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দিব।তুই তোর মতো লাইফ সাজিয়ে নিবি কিন্তু তার আগে তোর একটা দায়িত্ব আছে।”

” কি দায়িত্ব ভাই?”

” আমার বাবার সাথে যত কল রেকর্ড মেসেজ সব ঈশার বাবাকে দিবি।সব মানে সব কোন কিছুই আড়াল হবে না।”

” জি জি আপনার কথা মত হবে ভাই।তবে একটা কথা বলি?”

” বল।”

” আপনার বাবা আপনার ফুফুর কথায় প্রভাবিত।উনি যাই বলেন তিনি তাই করেন।”
৮৭.
অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সময় এসে দুয়ারে কড়া নাড়লো আজ ঈশার বিয়ে।সম্পূর্ণ ঘরোয়া ভাবে স্বল্প অতিথি নিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।ঘরের ভেতর সাজাতে কার্পণ্য করেনি হাসিন যেভাবে পেরেছে সে সাজিয়েছে লাইটিং ফুল কোন কিছুর কমতি নেই।স্বল্প আয়োজনে এখন বিয়েটা হলেও পরবর্তীতে তাদের বেশ জমকালো অনুষ্ঠান করা হবে এমনটাই কথা হয়েছে দুই পরিবারের।রুমার অনুরোধ ছিল ঈশাকে আজ পার্লারে সাজানো হবে যেহেতু বিয়ের আয়োজন রাতে তাই সন্ধ্যার আগেই পার্লারে চলে যায় ঈশা।তার সাথে ছিল অনু।বর পক্ষ এলো রাত আটটায়।আটটা পেরিয়ে ঘড়ির কাটা ছুঁয়ে গেলো দশটা।সবার মাঝে চিন্তার আভাস পাওয়া গেল।ঈশা বাড়িতে ফোন রেখে গেছে অপরদিকে অনু ফোন নিলেও মেয়েটা ফোন তুলছে না।ঈশাকে নিয়ে অনু মেয়েটা কোন পার্লারে গেল সঠিক নাম মনে নেই সুলতানার একে তো তিনি এই বিয়েতে খুশি নন যার কারণে তার মাথা সর্বদা গরম থাকে অপরদিকে ব্যস্ততার মাঝে মেয়ে কি বলে বাসা থেকে বেরিয়েছে তিনি বেমালুম ভুলে বসে আছেন।অনুকে বেশ কিছুক্ষণ পর ফোনে পাওয়া গেলো।ফোনটা ধরতে ঈশান তাকে ধমকে বলে,

” ফোন ধরতে এত সময় লাগে?”

” আরে বকছেন কেন?আজকের দিনেও..”

” অল্পের জন্য তো মেরেই ফেলতে।শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।এমন বেখেয়ালির জন্য তোমার কপালে শনি আছে মনে রেখো।ফোন যদি সময় মতো না ব্যবহার করতে পারো তবে ফেলে দাও পুকুরে।ঈশা কোথায়?”

ঈশানের ধমকে মেজাজটা খারাপ হলো অনুর।হাতে থাকা কাঁচা ফুলগুলো দুমড়েমুচড়ে ধরে বলে,

” পালিয়েছে আপনার বউ।শুনছেন পালিয়েছে।”

” ক..কি!”

এই ভয়টাতে ছিল ঈশান।সুলতানার কর্মকান্ড তার মোটেও সুবিধার লাগে না।ঈশান দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লো।তার মাথায় ঝিম ধরেছে।রাসেল ঈশানের হাত ধরতে ছেলেটা উঠে দাঁড়লো।পাঞ্জাবির পকেটে ফোন পুরে দৌড়তে দৌড়তে বলে,

” পালিয়েছে আবার পালিয়েছে।এই মেয়ের প্রতি আবেগ দেখাই লাভ নাই।আমার আবেগ বিবেক সব দৌড়ের উপর রাখে।”
#চলবে__

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here