#এক_টুকরো_সুখ
#পর্ব_৯
#লেখনীতে_শুভ্রতা_প্রাণ
“আরে বাব্বাহ। আয়না সুন্দরীর হাতে যে নতুন মোবাইল। তা কাকে কাকে নাম্বার দিতে চলেছো গো সুন্দরী? আমাকেও দাও। আমিও নাহয় মাঝে মধ্যে একটু আধটু যোগাযোগ করবো।”
হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে চমকে তাকালাম আমি। আপাকে নিতে তো ওর শশুর বাড়ির লোকজনের আসার কথা ছিলো। মানে শশুর, শাশুড়ি, দুলাভাই। তবে দুপুর কেনো? আমার ভাবনার মাঝেই দুপুর আবার কথা বলে ওঠে।
“বুঝেছি দেবে না। আহারে কি কপাল আমার। আজ সুন্দরী না বলে কেউ নাম্বার দিতে চায় না। একদিন আমিও সুন্দরী হবো দেখে নিও হু।”
এবার আমি হেসেই ফেললাম। এই লোকটা পারেও বটে। সে নাকি সুন্দরী হবে! হাহাহা। একটু মজা করার জন্য বললাম
“ঠিকাছে তবে সুন্দরী হওয়ার পরে দেখা করবেন কেমন।”
যেন খুব বেশি অবাক হয়ে গেছে এমন ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকালো দুপুর। বুকে হাত রেখে বললো
“তুমি আমার এই খানে থাকা মনটা আবারও ভেঙে দিলে সুন্দরী। কোনো দয়া মায়া নেই তোমার মনে।”
“হ্যাঁ এটা ঠিক বলেছেন। দয়া মায়া আমার মনে একটু কমই আছে। কি আর করবো বলুন! গরিব মানুষ, একটু দয়া মায়া কিনতেও পারি না।”
কথাটা বলেই দুপুরকে আহাম্মকের মতো অবস্থায় ফেলে চলে গেলাম নিজের কাজে। ফুপুর বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরী হতে হবে আমাকে। কাপড় চোপড় গোছাতে শুরু করলাম। ওমা দেখি দুপুরও আমার পিছে পিছে ঘর অবধি এসে পড়েছে। খানিক ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবারও নিজের কাজে মন দিলাম। দুপুর কিছুক্ষণ চুপ রইলো। আমি কিছু বলছি না দেখে পরে নিজেই শুরু করলো।
“তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?”
বাব্বাহ ইনি তো সিরিয়াস গলায় কথা বলছেন। কোনো ঠাট্টা নেই। বিশ্বাস করার মতো বিষয় না।
“ফুপুর কাছে।”
“এরকম কেনো? না মানে তোমাদের বাড়িতে আমরা বেড়াতে এলাম আর তুমি চলে যাবে! খারাপ দেখায় না?”
“বাকিদের খারাপ না লাগলে আপনারও লাগবে না। আর তাছাড়া আমি আপনারা যাওয়ার পরে যাবো। আব্বা নিয়ে যাবেন।”
কিছু সময় চুপ থেকে আবার প্রশ্ন করলো।
“কদিন থাকবে? কে কে আছে তোমার ফুপুর বাড়িতে? ফুপুর ছেলে আছে কোনো? মেয়ে কয়টা? কত বড় তারা?”
“একটা মেয়ে। মিনা আপু, আমার থেকে ছয় বছরের বড়। একটা ছেলে আছে মিনাল। মুহিনের সাথে পড়ে।”
“বেশ বাঁচা গেলো। আচ্ছা তোমার ফুপুর বাড়ি কোথায়?”
“গাজীপুর।”
জায়গার নাম শুনে যেন দুপুর একটু অন্যরকম ভাবে হাসলো।
“সুন্দরী তুমি জানো আমাদের বাড়ি কোথায়?”
“না কখনো বলেননি।”
দুপুর বাঁকা হেসে আমার খাটে বসে পড়লো।
“আমার বাড়ি ফুলতলা।”
“ওহ আচ্ছা।”
আমার এমন উত্তর হয়তো আশা করেনি দুপুর। কেমন চোখ মুখ কুঁচকে চেয়ে আছে। আমার গোছানো শেষ তাই বেরিয়ে যাচ্ছিলাম।
“আরে সুন্দরী আমাকে একা রেখে কোথায় যাচ্ছো? তুমি এরকম মরা মরা টাইপ হয়ে গেছো কেন বলো তো? কেমন খাপছাড়া খাপছাড়া উত্তর দিচ্ছো। আবার কথা না বলে পারলে আর বলছো না। ব্যাপার কি আয়না সুন্দরী?”
“আপনাকে কেউ খেয়ে ফেলবে না। আমার কাজ আছে তাই কাজে যাচ্ছি। আর কি তখন থেকে সুন্দরী সুন্দরী করে যাচ্ছেন? আমার থেকে আপনি বেশি সুন্দর। এখন যান তো।”
একপ্রকার বিরক্ত হয়েই জায়গা ত্যাগ করলাম। এই ছেলের সামনে থাকলে বকবক করতেই থাকবে। কথা ফুরোবে না এনার। তার চেয়ে ভালো আমিই সরে যাই। পরে আবার দেখা যাবে আমার আপা বলছে আমি তার দেবরকে লাইন মারছি। হাহ।
দুপুরে খাবারের আয়োজন করার মধ্যেই মিনা আপা আর মিনাল এসে হাজির। আমি প্রচুর অবাক সাথে খুশিও বটে। ফুপু নাকি কাজের জন্য আসতে পারেনি। যাই হোক গিয়েই তো দেখতে পাবো ফুপুকে। মুহিন গেছে দুলাভাই আর দুপুরকে নিয়ে পুকুরে গোসল করতে। নইলে এতক্ষণে তার আওয়াজ পাওয়া যেত। মিনাল আসবে আর মুহিন লাফাবে না এটা হতেই পারে না।
“রুবি আপাকে নিতে কে কে এসেছে রে আয়ু?”
মিনা আপার মুখে হঠাৎ এরকম প্রশ্ন শুনে অবাক হলাম। কৌতূহল নিয়ে তাকালাম তার দিকে।
“দুলাভাই আর তার এক ভাই।”
“ওভাবে তাকাস না। এখন বেয়াইদের না পটালে আর পটাবো কবে? আচ্ছা দুলাভাই এর ভাইটা হ্যান্ডসাম তো? কিউট আছে নাকি হগা টাইপ। ওরকম হলে আবার চলবে না।”
এই মিনা আপা আর ভালো হবার নয়। যেখানেই যাবে “এখন না ছেলে পটালে পটাবো কবে?” হায় কপাল। এরমধ্যে আম্মার ডাক শুনে সেদিকে এগোলাম দুজনেই। মিনাল চলে গেছে পুকুর পাড়ে। আমি আর মিনা আপা দুজনেই আম্মার সাথে কাজে লেগে গেলাম। মিনা আপা বড় মিশুক মেয়ে। ঐজন্যই এত ভালো লাগে আমার। বারান্দায় সব খাবার দাবার এনে রাখছিলাম। দেখলাম দুলাভাইরা চলে এসেছে।
“ঐযো তোমার বেয়াই এসে গেছে। যাও পটিয়ে নাও আপা।”
মিনা আপাকে খোঁচা মেরে কথাটা বলেই মুখ টিপে হাসতে থাকলাম। কিন্তু আপা এরকম অবাক হয়ে কি দেখছে দুপুরের দিকে। মানলাম সে সুন্দর কিন্তু এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। কনুই দিয়ে খোঁচা মারলাম। আপার যেন হুশ ফিরলো। আপা একপ্রকার দৌড়ে উঠোনে নেমে গেলো। দেখলাম দুপুরও কেমন অবাক হয়ে চেয়ে আছে।
“আরে দুপুর তুই! হোয়াট অ্যা সারপ্রাইস ভাই। তারমানে তুই দুলাভাই এর সেই ভাই?”
“হ্যাঁ কিন্তু তুই এখানে কেন রিতা?”
রিতা মিনা আপার ভালো নাম। স্কুল, কলেজে ব্যবহার করে। এর মানে কি দুপুর আর রিতা আপা দুইজন দুইজনকে আগে থেকে চেনে? হ্যাঁ হয়তো চেনে।
কথাবার্তায় বুঝলাম দুপুর মিনা আপার সাথে একই কলেজে পড়েছে। সেই সূত্রে দুজন খুব ভালো ফ্রেন্ড। এখানেও কেমন পাশাপাশি বসে গল্প করছে। আমি আর অত নজর দিতে গেলাম না। ভালো লাগছে না কিছু। দুপুরে খাওয়ার সময় মিনা আপা দুপুরের পাশে বসলো। ব্যাপারটা কেন জানি খালি লাগলো আমার। হয়তো আপা মেয়ে হয়ে একটা ছেলের পাশে বসেছে বলেই। আর ভাবলাম না এসব নিয়ে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে কিছু সময় বাদে দুলাভাই আর দুপুর আপাকে আর তার বাচ্চাকে নিয়ে চলে গেলো। তার পরেই আমিও মিনা আপা আর মিনালের সাথে ফুপুর বাড়ির দিকে রওনা হলাম। আপার সাথে যাচ্ছি বলে আর আব্বা গেলেন না। আমাকে সাবধানে থাকতে বলে কাজে চলে গেলেন। সারাটা রাস্তায় চুপচাপ রইলাম আমি। কথা বলতে কেমন বিরক্ত লাগছে। আমাকে হঠাৎ চুপ হয়ে যেতে দেখে মিনা আপা কারণ জানতে চাইলে বলতে পারলাম না। কি বলবো? আমি নিজেই তো জানিনা!
চলবে…?