#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪
বেলা সাড়ে এগারটা বাজতে চলল। ক্যালেন্ডারে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ চলছে। কুয়াশা কেটে সূর্যের দেখা মিলেছে তাতে মানুষরা যেন একটু হাফ ছেড়ে বেচেঁছে। শীতের জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে নিজের কাজে ছুটে চলছে লোকজনরা।
তীর আর ইশা কোচিং পরীক্ষা দিয়ে সবে মাএ বের হয়েছে। তীর বের হয়েই ইশার উদ্দেশ্য বলল,
–এত কঠিন প্রশ্ন করার কোনো মানে আছে তুই বল।
–কি আর করার বল না পারলে যা হয় আর কি?
–স্যারটা ইচ্ছে করে এমন কঠিন প্রশ্ন করেছে আমি সিউর।
–পাশ করতে পারবি?
–হুমম।
এমন সময় ওদের পিছন থেকে দুজনের কাধ জড়িয়ে ধরে নীরা বলে।
–কিরে পরীক্ষা কেমন হলো?
তীর হতাশ চোখে নীরার দিকে তাকিয়ে বলে,
–আর পরীক্ষা। তোর কেমন হলো সেটা বল?
–হুমম মোটামুটি।
ইশা নীরার কথা শুনার সাথে সাথে ছিটকে দুরে সরে নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–তর পরীক্ষা মোটামুটি হলেও তো কিভাবে যেন হায়েস্ট মার্কা পেয়ে যাস প্রত্যেক পরীক্ষায়।
–বিশ্বাস কর আজকের পরীক্ষা আমার তেমন ভালো হয় নি। শীতে পুরা হাত বরফ হয়ে গেছে ভালো করে কলমটাই ধরতে পারি নাই।
–আমাদের বলদ পেয়েছিস না আর রুমে এসি ছিলো তাই উল্টাপাল্টা কথা বলবি না। আর তুই পরীক্ষা দিস ভালো করে আর বলিস মোটামুটি। পরীক্ষার সময় আমার সিট যদি তর আশে পাশে হতো তাহলে আমি তর খাতা পুরা কপি করতাম। কিন্তু র্দুভাগ্য আমরা তিন জন তিন দেশে বসে পরীক্ষা দেই।
–আচ্ছা বাদ দে! চল আজকে তিন জন মিলে ফুচকা খাবো। ঝাল বেশি করে দিয়ে খাবো তাহলে শরীর পুরা গরম হয়ে যাবে।
তীরও খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
–হুম চল অনেক দিন হলো ফুচকা খাই না। আজকে পুরা চার প্লেট ফুচকা খাবো।
–হুম।
_____
ইশান চিত হয়ে শুয়ে আছে আজকে ছুটির দিন অফিস নেই তাই শান্তি মতো লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। মাঝে একবার উঠে শুধু ব্রেকফাস্টটা করে নিয়েছে। কিন্তু ইশানের শান্তি আর রইলো না ফোনটা কখন থেকেই বেজেই যাচ্ছে। থামার কোনো নামেই নেই। এক প্রকার বিরক্ত হয়েই ফোনটা পিক করে। ফোনের ওপাশ থেকে ইশানের পিএ আবির বলে।
–সরি স্যার আজকে আপনাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করার জন্য। কিন্তু কিছু করার ছিলো না আমার তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ফোন দিলাম আপনাকে।
ইশানের ভ্রুজোড়া কুঁচকে আসে আবির ছেলেটা এত কথা বলে যা বলার বাহিরে। কাজের থেকে অকাজের কথা একটু বেশিই বলে ছেলেটা।
–মেইন পয়েন্টে আসো আবির এত কথা না বলে।
–আসলে স্যার গোডাউনে শ্রমিকদের মাঝে একটু ভেজাল হয়েছে।
–মানে। কখন থেকে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
–দশটা থেকে শুরু হয়েছে এখন আমি আসার পর ওদের থামিয়েছি। কিন্তু আপনি আসলে ভালো হতো আর কি।
–আচ্ছা আসছি আমি বিশ মিনিটের ভেতরে।
–ওকে স্যার।
ইশান ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হয়ে আসে। আলোমেলো চুলগুলা হাতের আঙুল দ্বারা আছড়িয়ে নিয়ে গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে গাড়ি চাবি নিয়ে বের হয়ে পড়ে।
_______
তিন বান্ধবী রাস্তার পাশে বড় একটা ফুচকার দোকানের সামনে এসে দাড়ায়। এখানে প্রচুর ভিড়। বলতে গেলে এই ফুচকার দোকানটা খুব ফেমাস। এক প্লেট ফুচকা পেতে হলে দশ পনেরো মিনিট তো অপেক্ষা করতেই হবে।
তিন বান্ধবী মিলে মোট ছয় প্লেট ফুচকা অর্ডার দিয়ে একটা টেবিলে এসে বসে। নীরা জিভ দ্বারা ঠোট ভিজিয়ে বলে।
–দোস্ত আর সহ্য হচ্ছে না কখন যে পাবো হাতের কাছে ফুচকার প্লেটটা। উফফ….
তীর ঠোট ভিজিয়ে বলে।
–আমরাও না। অনেক দিন পর ফুচকা খাবো আজ।
নীরা ইশার দিকে তাকিয়ে দেখে ও বা হাত দিয়ে পেট চেপে বসে আছে। আর মুখের আকৃতি কেমন যেন করুন করে রেখেছে।
–কি রে ইশু? তুই এমন করে পেট চেপে বসে আছিস কেন?
ইশা কাদো কদো চেহারা নিয়ে বলে।
–দোস্ত আমরা না ইয়ে পাচ্ছে।
–ইয়ে মানে।
–হুমম আমার এখনেই বাড়িতে যেতে হবে।
–সকালে পেট পরিস্কার করে আসিস নি?
–নাহ।
–এর জন্যই তো বলি আজকের পরিবেশ এত র্দুগন্ধ যুক্ত কেন?
–একটা দিবো তকে শয়তান মাইয়া।
–তো এখন কি করার বল?
তীর বলল,
–চল তাহলে বাসায় চলে যাই আমরা। আজকে আর ফুচকা খেতে হবে না।
–না না তরা থাক। তরা ফুচকা খা আর অর্ডারও দেওয়া হয়ে গেছে এখন চলে গেলে কি করে হবে? আমি একটা রিকশা করে ঠিক চলে যেতে পারবো।
তীর ঠোট ফুলিয়ে বলে।
–তকে ছাড়া একা একা কি করে ফুচকা খাবো ইশু।
ইশা তীরের মাথায় চটি মেরে বলে।
–উমমম এমন একটা ভাব ধরছিস যেন আমাকে ছাড়া তুই আর ফুচকা খাস নি জীবনে।
–তা খেয়েছি কিন্তু তর এই অবস্থা।
–আরে কিছু হবে না সবে পেট মোছর দিয়ে উঠছে। তরা ফুচকা খা মজা করে আমি বরং যাই। পাচ মিনিটের রাস্তা রিকশা করে গেলে।
–আচ্ছা সাবধানে যাবি।
–হুম।
ইশা একটা রিকশা করে চলে যায় বাসার দিকে। ইশা ওদের চোখের আড়াল হতেই নীরা মুখটা কালো করে বলে।
–ধুর মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো।
–হুম।
–আচ্ছা এত গুলা ফুচকা কি করে খাবো এখন? মোট ছয় প্লেট মানে ষাটটা ফুচকা।
–চল ফুচকা চ্যালেন্জ করি।
–না রে বোন আর কয়েকসিন পর টেস্ট পরীক্ষা এখন যদি পেট খারাপ হয় তাহলে আর পরীক্ষা দিতে হবে না বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে।
–তাহলে এখন কি করার?
–দাড়া রাহুলকে ফোন করি। ওর বাসা তো এখানেই।
–এই না একদম না।
–কেন?
–আরে জানিস না তুই ওর স্বভাব কেমন। খালি গায়ে পড়ে কথা বলে।
–ধুর ও একটু ফান করে আমাদের সাথে।
–আর যাইহোক ইশা নেই ভালো হয়েছে। না হলে ওরা দুইডা এক সাথে হলেই সাপে নেউলে লেগে পড়ে।
এর মাঝে ফুচকার প্লেট এনে দোকানদার টেবিলে রেখে যায়। নীরার চোখ যায় রাস্তার ওপারে রাহুল আর তার বন্ধু মিলে কোথায় যেন যাচ্ছে। রাহুলক দেখার সাথে সাথে নীরা চিৎকার করে ডাকা শুরু করে ওদের। রাহুলরাও নীরার ডাক শুনে দোকানে আসে। রাহুল ওদের কাছে এসেই বলে।
–কি রে তরা এখানে?
–ফুচকা খেতে এসেছি। খাবি ফুচকা?
–উমম খাওয়া যায়।
–তাহলে বস।
রাহুল আর ওর বন্ধু বসে। রাহুল তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।
–কি রে ইশা কই? তুই এখানে আর ইশা তর সাথে নেই কারনটা কি ঝগড়া করেছিস নাকি তরা দুইডা।
–তর কি মনে হয় তর মতো আমি ওর সাথে ঝগড়া করি।
–ওই আমি ওর সাথে কখন ঝগড়া করলাম।
–সেটা তো ইশা থাকলে বুঝা যায় কে ঝগড়া করে।
–ওই একদম মিথ্যা কথা বলবি না তীর।
–এই দেখ এখন ঝগড়া কে লাগছে?
–তুই শুরু করেছিস আগে আমি না।
–যা তো এখান থেকে মেয়েদের চিপায় চিপায় থাকতে তর শরম করে না।
–ইয়া মাবুদ কত বড় আপমান।
তীরের মাথা চটি মেরে রাহুল বলল।
–ওই তরাই তো আমাদের এখানে ডেকেছিস। আমার কি নিজ থেকে এসেছি নাকি। তরা মেয়েরা আসলেই বেজাল।
তীরও রাহুলের পিঠে কিল দিয়ে বলে,
–তো এখন বলছি চলে যায়। আর একদম মাথায় হাত দিবি না রাহুল তাহলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম।।
নীরা ওদের দুইডার ঝগড়া দেখে বলে।
–উফফ থামবি তরা। ওই রাহুল তুই চুপ কর তুই মেয়েদের মতো এমন ঝগড়া করিস কেন বলতো।
রাহুল কিছু বলতে যাবে সাথে সাথে নীরা রাহুলকে থামিয়ে বলে।
–চুপ আরেকটা কথা বললে স্টেপলার মেরে দিবে তদের মুখে চুপচাপ ফুচকা খা।
রাহুল ফুচকা খেতে খেতে বলে,
–ওই ফুচকা যে এভাবে ডেকে এনে খাওয়াছিস টাকা কে দিবি?
তীর বলে উঠে।
–তুই দিবি।
–কিহ? আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই আমরা টাকা দিতে পারবো না।
–কেন দিবি না নিজের মুখে খাচ্ছিস তাহলে টাকা দিতে পারবি না কেন??
নীরা চিৎকার করে বলে উঠে।
–ওই টাকা আমি দিবো খা তরা। আমার ভুল হয়েছে রাহুলকে ডেকে এখানে আনা।
–তাহলে এখন তুই টাকা দিয়ে ভুলের মাশুল দে।
_____
এদিকে ইশা একটা পার্কের সামনে আসে। রিকশা থেকে নেমে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুজছে। কিন্তু যাকে খুজছে তাকে পাচ্ছে না। হঠাৎ করেই ইশার পেছন থেকে কেউ “ভোঁও” করে উঠে। বেচারি ইশা ভয়ে লাফিয়ে উঠে। বুকে থুতুঁ দিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রিফাত সাদা হুডি আর মুখে মাক্স পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইশা কিছুটা রাগি মুড নিয়ে বলে।
–এভাবে তাড়াতাড়ি আসতে বলার মানে কি। জানেন আমি ওদের সাথে কতগুলা মিথ্যা কথা বলে এসেছি।
–প্রেম করলে একটু আধটু মিথ্যা বললে কিছু হয় না। আর আমি তো বলেছিলাম আমি আসি তোমার কাছে কিন্তু তুমিই তো না করলে।
–না করেছি কি আর সাধে। ওখানে আমাদের ক্লাসমেটরা ছিলো ওরা যদি দেখতো তাহলে কি ভাবতো।
–কি ভাবতো? কেউ যদি কিছু ভাবতোও তাহলে বলতে আমি তোমার ভাইয়ের বন্ধু।
–বন্ধু বন্ধুর সাথে দেখা করতে না এসে বন্ধুর বোনের সাথে দেখা করতে এসেছে সেটা মানুষ খুব ভালো চোখে দেখতো। সবাই তো বলদ কেউ কিছু বুঝবে না।
–আচ্ছা বাদ দাও বুঝতে পারছি তোমরা যুক্তি। বাট কি মিথ্যা বলেছো ওদের।
–সেটা আপনার না জানলেও চলবে আগে বলুন কেন এভাবে ডেকেছেন।
–ওয়েট করো! আসছি আমি।
রিফাত গাড়ির কাছে গিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে মাঝারি সাইজের একটা গোলাপ ফুলের তোঁরা আর এক বক্স চকলেট এনে ইশার হাতে দেয়। ইশা আবাক হয়ে রিফাতকে বলে।
–হঠাৎ এসব?
–এমনেই ইচ্ছে হলো দিতে।
ইশা ফুলের তোঁরা আর চকলেট বক্সটা ব্যাগে ডুকাতে ডুকাতে বলে।
–ঠিক আছে তাহলে আমি এখন আসি।
–চলে যাবে।
–হুম।
রিফাত ইশার আরেকটু কাছে এসে ইশার ছোটছোট চুল গুলা কানে গুজে দিয়ে বলে।
–কোথায় যাবে এখন?
–বাসায় চলে যাবো ওদের কাছে গেলে ওরা সন্দেহ করবে।
–ঠিক আছে সাবধান যাও। জানি আমি দিয়ে আসতে বললে না করবে তাই বললাম না কথাটা।
–হুম! ঠিক আছে আসি তাহলে।
#চলবে_______