#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৬
_________________
শেহরেয়ারের কথায় কিছুটা ভয় পেলেন হেনা সাহেবা।আমতা আমতা করে বললেন,
-“মা মা মানে কোন সত্যিই কথা বলছিস তুই?”
-“জানি তো মা সত্যিটা স্বীকার করার তোমার সাহস নেই।আর এই কথা আমি তোমাকে নিজের মুখে বলতেও চাচ্ছি না।তাই তুমি এইসব নিয়ে কথা বলা বাদ দেও।”
শেহরেয়ার কথাগুলো বলে তার রুমের দিকে চলে গেল।হেনা সাহেবা থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
-“কি বলে গেল ও?ও কোন সত্যি জানতে পেরেছে!”
শেহরেয়ার তার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল।
-“এই বিয়েটা এতো পিছানো যাবে না।যা করার শীঘ্রই করতে হবে।
_______________________
-“আমার তোমাদের সবাইকে কিছু বলার আছে।”
ব্রেকফাস্ট শেষ করে অফিসে যেতে গিয়ে রাজের কথায় থেমে গেল শেহরেয়ার।কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“তোর আবার কি বলার আছে?”
শেহমীর মির্জা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,
-“কি বলবে বলো রাজ!”
-“আমি হাফসার বিষয়ে কথা বলতে চাই।”
রাজের কথায় শেহমীর মির্জার মুখ নিমিষেই লাল হয়ে গেল।তিনি উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-“তুমি কি জানো না এই বাড়িতে ও-কে নিয়ে কথা বলা নিষেধ।”
রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“জানি আঙ্কেল।তবে যেই বিষয়ে আমি জড়িয়ে আছি সেই বিষয় নিয়ে কথা বলতেই হবে।”
শেহরেয়ার দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“তুই আবার কোন নাটক শুরু করলি?”
-“কোনো নাটক না শেহরেয়ার।তুই যা জানিস আমি সেটাই সবাইকে জানাতে চাই।”
শেহরেয়ার অবাক হয়ে বললো,
-“বাহ্!নিজের কুকর্মের কথা নিজেই বলতে চাচ্ছিস?”
রাজ কিছু বলার আগেই হেনা সাহেবা বললেন,
-“শেহরেয়ার তুই ওর সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো?”
শেহরেয়ার চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“প্লিজ মা….কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় আমি সেটা জানি।”
শেহমীর মির্জা কিছুটা উচ্চস্বরে বললেন,
-“তোমরা চুপ করো সবাই।রাজ কি বলতে চাও তুমি?”
রাজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করলো,
-“হাফসা এই বাড়ি থেকে পালিয়েছিল আমার জন্যই।আমি আর হাফসা একে-অপরকে ভালোবাসতাম!কিন্তু তোমাদের কাউকে তা বলার সাহস হয়নি আমার।তাই আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলাম।আমাদের সংসার ভালোই কাটছিল কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার কিছু ফ্রেন্ড আমাদের বাড়িতে আসে আমার বউকে দেখতে।আমার একটু নেশা করার স্বভাব আছে তা তো জানোই।সেদিনও ওদের সাথে বাড়িতে বসেই ড্রিংক করেছিলাম।ওরা আমাকে বলে হাফসাকে এক রাতের জন্য চায়।আমি প্রথমে রাজি না হলেও টাকার লোভে ওদের কথা মেনে নেই।বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই হাফসাকে ওদের সাথে একা রেখে।তারপরে ওরা ওদের মনে ইচ্ছা পূরণ করে ও-কে বাড়িতে রেখে আসে!আর আমি তারপরে বাড়িতে গিয়ে দেখি হাফসা গলায় দড়ি দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে।”
রাজের কথা বলা শেষ হতেই শেহমীর মির্জা এসে ঠাস করে রাজের গালে একটা চ*ড় মারলেন।রাজের কলার টেনে ধরে বললেন,
-“Scoundrel!তোকে সেই ছোট থেকে আমি বড় করেছি তার এই প্রতিদান দিলি তুই?এর জন্যই এতোদিন আমাদের বাড়ি থেকে ছিলি!তোর জন্য আমি আমার মেয়েটাকে ভুল বুঝেছি।আমার সেই ছোট্ট মেয়ে…….”কথা শেষ না করেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন শেহমীর মির্জা।সেতারা বেগম এসে শেহমীর মির্জাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।উনার চোখেও পানি! রাজ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।হেনা সাহেবা বাকরুদ্ধ হয়ে শুধু রাজের দিকে তাকিয়ে আছেন।উনি সেখান থেকে ধীর পায়ে হেঁটে তার রুমের দিকে যেতে গেলে শেহরেয়ার উনাকে আটকাতে গেল।হেনা সাহেবা নিচু স্বরে বললেন,
-“ভয় পাস না।আমি মর*তে যাচ্ছি না।যেই কাজটা করা জরুরি তা করতে যাচ্ছি।”
হেনা সাহেবা চলে যেতে শেহরেয়ার রাজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
-“কি মনে করে সবটা স্বীকার করলি?”
-“এগুলো স্বীকার না করলে মরে গেলেও শান্তি পেতাম না আমি।”
-“তোর যখন এতো টাকার দরকার ছিল আমাদের বলতি।আমার বোনটাকে এভাবে কেনো মেরে ফেললি?”
-“জানি না রে।কিন্তু ওরা সবাই মা*রা গেছে।শুধু মাত্র আমিই বেঁচে আছি।”
-“বাকিগুলোকে তো শাস্তি দিয়েছি।তুইও এতোদিন বাঁচতি না।শুধু মাত্র পালিয়ে ছিলি আর পালিয়ে যেতে পেরেছিস তাই বেঁচে গেছিস।”
-“তার মানে ওদের তুই মেরেছিস?”
শেহরেয়ার রাজের কথায় বাঁকা হাসি দিল।রাজ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
-“তুই এতোগুলো মার্ডার করেছিস শেহরেয়ার?”
-“করেছি।তো?”
-“তোর জেল হয়নি?”
-“সেটা তোকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করছি না।”
হঠাৎ করে বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি এসে থামলো।সবাই বেশ অবাক হলো।শেহরেয়ার ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“পুলিশকে কে খবর দিল?”
-“আমি।”
হেনা সাহেবা কিছুটা উচ্চস্বরে বললেন।রাজ অবাক হয়ে বললেন,
-“মা তুমি এটা করলে?”
হেনা সাহেবা এসে ঠাস করে রাজের গালে একটা চ*ড় মেরে বললেন,
-“খবরদার!তুই একদম আমাকে মা বলে ডাকবি না।এই অধিকার তুই হারিয়েছিস।”
এর মধ্যে পুলিশরা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।তাদের উদ্দেশ্য করে হেনা সাহেবা বললেন,
-“অফিসার ও-কে ধরে নিয়ে যান।”
রাজকে অ্যারেস্ট করা হলো।রাজ হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
-“আমাকে শুধু অ্যারেস্ট করছেন কেনো?শেহরেয়ারকেও অ্যারেস্ট করুন।ও আমার বাকি ফ্রেন্ডদের হ*ত্যা করেছে।”
রাজের কথায় কেউ কান না দিয়ে ও-কে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেল।শেহরেয়ার গিয়ে হেনা সাহেবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“নিজের ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিলে মা?”
শেহরেয়ারের কথায় অবাক হয়ে শেহমীর মির্জা বললেন,
-“নিজের ছেলে মানে?”
-“বাবার সামনে এইসব এখন বলা যাবে না।”
শেহরেয়ার মনে মনে কথাটা বললো।শেহরেয়ারকে চুপ থাকতে দেখে শেহমীর মির্জা আবার বললেন,
-“কি হলো?কিছু বলছিস না কেনো তুই?”
-“মা তো রাজকে নিজের ছেলেই ভাবতো বাবা।এটাই বুঝাতে চেয়েছি।”
শেহরেয়ার কথাগুলো বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।শেহরেয়ার গাড়ি চালিয়ে থানায় গেল।তাকে দেখে কিছু সংখ্যক পুলিশ স্যালুট করলো।সে সোজা রিয়াদের ক্যাবিনে গেল।রিয়াদ শেহরেয়ারকে দেখে অবাক হয়ে বললো,
-“শেহরেয়ার তুই এখানে?”
-“আমার তো আসারই ছিল।”
-“কিন্তু কেনো?”
-“রাজ যে এখানে এসেছে তুই জানিস না?”
-“ওহ্ আচ্ছা।বুঝলাম!আসল কালপিটকে তাহলে পেয়েছিস।”
-“অনেক আগেই পেয়েছিলাম।সেদিন যদি নোমানের কথা শুনে ও-কে মে*রে ফেলতাম তাহলে আর ও এখানে থাকতো না।”
-“আর এই ভুল করিস না শেহরেয়ার।এই ভুলের জন্য সবটাই শেষ হলো।”
-“তাতে আমার কিছু যায় আসে না।এখন তুই আমাকে একটা সাহায্য কর।আমাকে কথা দে রাজ যেন এখান থেকে ছাড়া না পায়!”
-“তুই নিশ্চিন্ত থাক।ও কিছুতেই ছাড়া পাবে না।”
-“আজ তাহলে আসি।”
-“চা খেয়ে যা।”
-“পরে এসে খাবো।”
শেহরেয়ার মৃদু হেসে থানা থেকে বের হয়ে আসলো।গাড়ি ড্রাইভ করে অফিসে গেল।সেখানে কিছুক্ষণ কাজ করে মেহরিনের ভার্সিটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
মেহরিন ভার্সিটি থেকে বের হয়ে দেখলো শেহরেয়ার গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-“দেখ দেখ ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম!যদি আমার বয়ফ্রেন্ডটা এমন হতো!”
-“আসলেই রে।তবে এই ছেলে এখানে কি করছে?দেখে তো ভার্সিটির স্টুডেন্ট বলে মনে হয় না!”
মেহরিন খেয়াল করলো তার পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েগুলো শেহরেয়ারকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছে।সে চোখ রাঙিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।রাগ হচ্ছে প্রচুর!সে মেয়েগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে দুজনে একসাথে সালাম দিল।
-“ছেলেদের নিয়ে কথা বলতে কলেজে আসো?”
সেখান থেকে একটা মেয়ে বললো,
-“ম্যাডাম আসলে ছেলেটা অনেক সুন্দর।”
-“ছেলে না ভাইয়া!শুধু ভাইয়া না বড় ভাইয়া বলবে!উনাকে নিয়ে যেন এরপরে থেকে আর আলোচনা করতে না শুনি।”
-“কেনো ম্যাডাম?উনাকে নিয়ে আলোচনা করলে কি সমস্যা?”
-“কারণ উনি আমার হবু বর।”
দুজনে মাথা নিচু করে বললো,
-“সরি ম্যাডাম।”
-“ইট’স ওকে।”
মেহরিন মুচকি হেসে তাদের সামনে থেকে চলে গেল।মেহরিন গিয়ে শেহরেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আপনি এখানে?”
-“আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে।চলুন আমার সাথে।”
শেহরেয়ার মেহরিনকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল।হঠাৎ করে শেহরেয়ার মেহরিনের হাত জোড়া তার দুই হাত দিয়ে ধরে বললো,
-“আমরা যদি আজকে বিয়েটা করি,তাতে কি আপনার কোনো আপত্তি আছে?”
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]