#এক_টুকরো_সুখ
#পর্ব_১০
#লেখনীতে_শুভ্রতা_প্রাণ
ফুপুর বাড়িতে আমার দিন গুলো বেশ ভালোই কাটতে লাগলো। প্রথম যেদিন এসেছিলাম সেদিন একটু মন খারাপ থাকলেও আস্তে আস্তে সব ভুলে গেলাম। ফুপুর কাছ থেকে দর্জি কাজ আর মিনা আপার কাছ থেকে কম্পিউটার কোর্স করেই অনেকটা সময় কেটে যায় । বাকি সময়টা ভার্চুয়ালে ঘোরাফেরা। একটু বোধহয় বেশিই সময় যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার পেছনে। নতুন নতুন হলে যা হয় আরকি। হঠাৎ একদিন একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো। সাধারণত আব্বা ছাড়া কেউ কল দেয় না। তাই একটু না অনেকটাই অবাক হলাম। কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়েই কল রিসিভ করলাম।
“হ্যালো! আয়না শুনতে পাচ্ছো?”
ফোনের ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ শুনে যেন আরো ঘাবড়ে গেলাম। গলা কেমন শুকিয়ে আসছে। কখনো কোনো ছেলের সাথে এভাবে কথা বলিনি তাই হয়তো।
“জী কে আপনি? আমার নাম্বার কোথায় পেলেন? কল কেনো করেছেন? কি দরকার?”
একপ্রকার এক নিঃশাসেই বলে থামলাম। ওপাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে এলো।
“আস্তে ধীরে প্রশ্ন করো একটু। এত গুলো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দেবো? আমি রাফিদ। তোমার ভাইয়ের কাছ থেকে নাম্বার নিয়েছি। আর দরকার বলতে তেমন কিছু না শুধু একটু আধটু কথা বলা আরকি।”
“ওহ আচ্ছা রাফিদ ভাইয়া। আমি ভাবলাম কে না কে।”
“হ্যাঁ রাফিদ ভাইয়া। এখন বলো কেমন আছো? দিন কাল কেমন যাচ্ছে? পরীক্ষা কেমন দিলে?”
“সবকিছুই ভালো। আপনার কি হালচাল?”
“এইতো আছি বেশ।”
এভাবে কথা শুরু হলো রাফিদ ভাইয়ার সাথে। তারপর প্রায়ই কথা হয়। ফেসবুক আইডি দেওয়া নেওয়া, মেসেঞ্জার চ্যাট সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ বলা চলে আরকি। আমি শুধু বন্ধু বা বড় ভাইয়ের মতো ভাবলেও রাফিদ ভাই যে একটু বেশি ভাবতে চাইতেন তা বুঝতাম। কিন্তু সেভাবে পাত্তা দেয়নি। ভাবছে তো নিজে নিজে, আমাকে বললে নাহয় কিছু বলা যেত। আগ বাড়িয়ে বলার কোনো মানে হয় না।
সময় এগোতেই আছে। রেজাল্ট বের হলো, বেশ ভালো একটা মার্কস। কলেজে ভর্তির সময় এগিয়ে আসছে। বাড়ি ফিরতে হবে এবার। সব গোছানো প্রায় শেষ। কালই আব্বা এসে আমাকে নিয়ে যাবেন। মিনালের সাথে বসে বসে লুডু খেলছিলাম। এমন সময় মিনা আপা এসে বললো তার কোনো এক বন্ধু আসবে। আমি যেন তাকে হাতে হাতে সাহায্য করি। ফুপু এখনো অফিস থেকে ফেরেনি কি না। তাই আপাকেই নাস্তার জোগাড় করতে হবে। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো সাহায্য করতে থাকলাম। এর মধ্যে মধ্যে মিনালের সাথে ফাজলামিও করছি। কলিং বেল বেজে উঠলে আপা গেলো দরজা খুলতে। আমি মিনালকে কাতুকুতু দিয়ে কাবু করার চেষ্টায় আছি। এরকম সময় চেনা কণ্ঠস্বরে চমকে উঠলাম।
“আয়না সুন্দরী তবে বাচ্চামিও করতে জানে? আমি তো ভেবেছিলাম সে শুধু ঝগড়াই করতে জানে।”
“আমি এরকম অনেক কিছুই করতে জানি যা আপনি জানেন না মিস্টার রাতের বাপ।”
কথাটা বলেই মিনালকে নিয়ে ঘরে চলে এলাম। মিনা আপার সাথে দুপুরের এত বেশি ঘনিষ্ঠতা কেন জানি ভালো লাগে না আমার। তারা ফ্রেন্ড, নিজেদের মতো কথা বলুক। আমি আবারও মিনালের সাথে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।
“কিরে কি বুঝলি?”
দুপুরের প্রশ্নে সব গুলো দাঁত একসাথে বের করে হাসে মিনা।
“আমি আবার কি বুঝবো? বুঝবি তো তুই! বাই দ্যা ওয়ে দুপুর এটা কিন্তু ঠিক হলো না। কথা তো ছিলো তোর বউয়ের বড় ভাইয়ের সাথে আমি প্রেম করবো। কিন্তু এখন তো দেখছি সে গুঁড়ে গোবর।”
“থাম তো তুই। এখন আর ভেজাল করিস না। এমনিতেই জানিনা বাচ্চা মানুষ করতে কত বছর কেটে যাবে আমার। আল্লাহ মালুম কপালে রোমান্স আছে কি না। সারাজীবন মনে হয় আমাকে কুমার হয়েই থাকতে হবে রে মিনু।”
“হ্যাঁ রে দুপুর তুই এত লাগাম ছাড়া হলি কবে থেকে? আগে যখন আমরা কেউ প্রেম ট্রেম করতাম, ক্রাশকে নিয়ে আলোচনা করতাম তখন খুব তো বলতিস আমি কখনো এমন ছ্যাচড়ামি করবো না। এখন কি করছিস এগুলো? আর মামা তুই কাকে বাচ্চা বলছিস? ও তোকে এক হাটে বেচে অন্য হাটে কিনে নিতে পারবে বুঝলি। হাদা একটা।”
মিনা আর দুপুর নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।
মিনাল আর আমাকে কিছুক্ষণ পরে মিনা আপা খাবার জন্য ডাকতে আসলো। আমি ফোন স্ক্রল করতে করতেই এগোলাম। অমনি পেছন থেকে মিনাল চুলে টান দিয়ে দৌড়।
“মিনালের বাচ্চা….”
“আহা আয়ুপু পাগল হয়ে গেছে। আয়ুপু পাগল হয়ে গেছে। আমার নাকি বাচ্চা হয়েছে। আমার নাকি বাচ্চা হয়েছে। হিহিহি।”
মহা বিচ্ছু তো। মনে মনে ভেবে নিলাম বাটে পেলে মিনাল ভাইকে আচ্ছা মতো ক্যালাবো। আর সেটা বাড়ি যাওয়ার আগেই হু। এই বলে খেতে বসে গেলাম। ফুপুর জন্য বসে থেকে দুপুরে খাওয়া হয়নি অথচ ফুপু এখনো এলোই না। এক মনে খাচ্ছিলাম এরমধ্যে বিকট শব্দে ফোন বেজে উঠলো। মহা বিরক্ত হলাম আমি। শান্তি নেই কোথাও।
“হ্যাঁ কে বলছেন?”
“আমি রাফিদ। এরই মধ্যে ভুলে গেলে আয়না।”
চাপ লেগে স্পিকার অন হয়ে যাওয়ায় মিনা আপা, মিনাল আর দুপুরও কথা গুলো শুনতে পেলো। সবাই কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত। পরে কথা বলবো বলে ফোন রেখে খেতে থাকলাম। খাওয়া শেষে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুতে যাবো সেই সময় কেউ দরজা ধাক্কাল। ভাই কার মুখ দেখে উঠেছিলাম কে জানে। এত জ্বালা আর ভাল্লাগেনা।
চলবে…?
[আস্সালামুআলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আজকের পর্বটা অনেক ছোট প্লাস অগোছালো হয়ে গেছে। জানিনা কি হয়েছে আমার লেখালেখির ব্যাপারে কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়েছি। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ🖤]