দাম্পত্য_জীবন #মেহু_আপু #পর্ব_২৪

0
192

#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_২৪

অফিসের সব ওয়ার্কার নতুন নতুন ডিজাইন নিখুত ভাবে আর্ট করতে লাগলো। কারণ এবারের অর্ডার বাঙালী আনা পাঞ্জাবি । সবাই নিখুঁত ভাবে তাদের স্যাম্পল কাগজে আর্ট করে আকাশের চেম্বারে জমা করেছে।

আকাশ অফিসে ঢুকে সবার ডিজাইন গুলো দেখলো কিন্তু কিছুতেই ডিজাইন গুলো আকাশের মনমতো হলোনা। এমন সময় বায়ারের প্রবেশ হয় তাদের কোম্পানিতে। চারদিকের পরিবেশ পরিষ্কার সুন্দর করে গোছানো। কোনো আইসমাক গ্লোব নেই যা দেখে বায়ারের খুব ভালো লাগে। বায়ার মালিকের সাথে ডিসকাস করার জন্য তার চেম্বারে প্রবেশ করলো!!

বায়ারকে দেখে আকাশ অবাক হয়ে যায়। চেনা চেনা লাগে বায়ারের ফেস দেখে। বায়ার বলে উঠে হাই আমি তারা খান। আকাশ নাম শুনে মুসলিম ভেবে সালাম দেয়। তারা সালাম নেয়। আকাশ তারাকে বসতে দেয়। তারা বলে এই কোম্পানির মালিক কি আপনি?
হুম আমি।
আচ্ছা এই কোম্পানিতে আমি আমার স্যাম্পল দিয়েছি দেখেছেন।
হ্যা ম্যাম দেখেছি সেই অনুযায়ী ওয়ার্কারদের ডিজাইন করাচ্ছি।
আচ্ছা সেই আপনি যাই করুন আমার ১৫০০০ হাজার মাল ২০ দিনের মধ্যে চাই। কথাটা মনে রাখবেন আর হ্যা একপিস স্যাম্পল তৈরি করুন আমি যদি দেখি মাল ঠিকঠাক ভাবে তৈরি হয়েছে তাহলেই পাস দিবো। তখন আপনি অর্ডার টা পেয়ে যাবেন। আমি লন্ডন প্রবাসীদের বিয়ের জন্য এই উদ্যেগ নিছি। তারা যাতে ইংল্যান্ডকে নিজ দেশের মতো উপভোগ করে। ওইখানে বাঙালি আনা পরিবেশে থাকতে পারে।

আচ্ছা ম্যাম তৈরি হয়ে যাবে। আমাদের কোম্পানির উপর ভরসা রাখেন।
হুম ভরসা করছি বলেই অর্ডার নিয়ে আসছি।
আচ্ছা আপনার থাকার ব্যবস্থা সব কিছু ঠিক করা হয়ে গেছে। আর চেম্বার টা ডানদিকে আপনার। আগে থেকেই বজোহরি রায় আমাদের সবটা বলে দিছে। আপনি চিন্তা করবেন না।

আমি আমার স্যাম্পল নিয়ে চিন্তিত যতদিন না আপনারা স্যাম্পল আমার স্যাম্পলের মতো ডিজাইন করছেন ততদিন নিশ্চিত হতে পারছিনা। কারণ মাল গুলো আমার খুব দরকার। বাঙলাী লোকদের বাঙালী আনার সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে চাই বাংলাদেশের প্রবাসীদের তারা যেনো লন্ডন শহরকে আপন করে নেয়।

এসব নিয়ে একবারো ভাববেন না, আমাদের উপর ভরসা রাখেন। কিছু যদি মনে না করেন আপনাকে একটা কথা বলতে চাই ম্যাম।
বলেন কি বলবেন আকাশ।
আপনি বাংলাদেশী ছিলেন, না মানে বাংলা কথা গুছিয়ে বলতেছেন তো।
হুম আমি বাংলাদেশী।
আপনাকে আমার চেনা চেনা লাগছে ম্যাম। আমার একজন পরিচতের নাম তারা খান ছিলো সে ১২ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমায়। তার সাথে আপনাকে গুলিয়ে ফেলতেছি ক্যান জানি? অভিকল সেই চোখ আর মুখটা।
তুমি সেই আকাশ।তোমার নামটা শুনেই আমার বুকটা ছ্যাত করে উঠেছিলো আকাশ। কিন্তু তোমাকে তো চিনা যাচ্ছে না কত গুলমুলু ছিলা আগে। এখন দুই গাল ভর্তি দাড়ি,আর কতোটা ইয়াং, হট লাগছে তোমাকে।
ও আচ্ছা ধন্যবাদ ম্যাম। আমি কিন্তু আপনাকে চিনেছিলাম তাই আবছা আবছা চেহেরা মনে পড়েছিলো। কেমন আছেন ম্যাম? কি খবর আপনার?

তুমি আমাকে আপনি করে বলছো ক্যান?
আমরাতো পরিচিত।
সরি ম্যাম আগের সবকিছু আপনি পনেরো বছর আগে ভূলে গেছেন। সো অপরিচিতদের আপনি করেই বলা ভালো এটা সম্মানের ব্যাপার। তার উপর আপনি আমাদের কোম্পানির বায়ার। আপনার ডিসিশনেই আমার কোম্পানি অর্ডার পাবে।
আকাশ তুমি আমাকে ইনসাল্ট করলা কিন্তু?
এতো বড় স্পর্ধা নেই আমার। আমার ঘাড়ে কয়টি মাথা আছে যে আমাদের কোম্পানির শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে ইনসাল্ট করবো।
তুমি বিয়ে করে নিয়েছো কি আকাশ?
হ্যা ম্যাম, জীবনতো আর থেমে থাকেনা গত চার মাস আগেই বিয়ে করে নিছি। আপনি বিয়ে করেন নাই।
না, যোগ্য জীবনসঙ্গী পাইনাই তো। আগের সব কথা ভূলে গেছো তুমি?
কেউ যদি তার প্রতিশ্রুতি ভূলে থাকে, তাহলে তার জন্য তো লাইফকে থেমে যেতে দিলে হবেনা তাই লাইফ টাকে এগিয়ে নিয়ে গেছি।
তা ঠিক বলেছো। আমি অনেক বড় ভূল করেছি আকাশ। তুমি দেশে থেকেও দিব্যি কোম্পানির মালিক। আর আমি অন্য কোম্পানির বায়ার। দেশে থেকেই যে উন্নয়ন সম্ভব তুমি সেইটা দেখিয়ে দিয়োছো। সেসব বাদ অভিনন্দন তোমার দাম্পত্য জীবনের জন্য।

থ্যাংস ম্যাম।
আচ্ছা আবার দেখা হবে আসি তাহলে।
নিশ্চয়ই ম্যাম।

এবার আকাশ মনে মনে বললো, তোমার জন্য আমি কোনো মেয়েকে তারপরে থেকে ভালোবাসিনি। কারণ তোমার জন্যই ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস উঠে গেছিলো। কিন্তু একটা সময়ের পর মনে হয়েছে বিয়ে করা উচিত, তাইতো নীলার সাথে আ্যারেন্জ ম্যারেজ করলাম। ভাগ্যবান আমি নীলার মতো বউ পেয়ে, তুমি আমার লাইফ থেকে চলে গেছো ভালো হয়েছে। নাহলে আমি নীলার মতো বউ পেতাম না নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়।

ডিজাইন কোনোটাই তারার দেওয়া নকশার মতো হচ্ছে না। তা দেখে আকাশ সব ওয়ার্কার দের ডাকে।

ঈশান আর আকাশ চেম্বারে বসে সব ওয়ার্কারদের কড়া ভাবে শাসন করে। সামান্য একটা ডিজাইন তোমরা ৩৬ জন ডিজাইনার মিলে এখনো আর্ট করতে পারলা না। কি শিখছো তোমরা।

একজন ডিজাইনার বলে উঠলো এই কোম্পানির ডিজাইন আমাদের কাছে নতুন, বায়ারো নতুন তাই একটু সময় লাগবে। এর আগে আমরা বজোহরির কাজ করে অভস্ত্য ছিলাম। নতুন বলে এতো সমস্যা হচ্ছে।

ঈশান বলে উঠে কোম্পানি আমাদের ২০ দিন টাইম দিছে এর মধ্যে একদিন চলে গেছে। আর ১৯ দিন এর মধ্যে ১৫ হাজার মালে ডিজাইন করে সিপমেন্ট করতে হবে ক্রেতার কাছে। তাহলে আমাদের কাছে সময় কই।

আকাশ বলে তোমরা কি চাওনা, আমাদের কোম্পানি গ্রো করুক। নতুন নতুন বায়ার আমাদের কাজ দিক।

সব ডিজাইনার বললো অবশ্য চাই স্যার।

আকাশ বললো এর জন্য ম্যানেজার কে ডাকি নাই আমরা। তোমরা যাতে ম্যানেপুলেট না করো তার জন্য তোমাদের সাথে সরাসরি কথা বললাম। আমাদের ৮ ঘন্টা কাজের জায়গায় আজ থেকে ১০ ঘন্টা কাজ করা হবে। এতে কারো আপত্তি আছে।

সব ডিজাইনার বললো না স্যার।

ঈশান বললো এখন তোমরা যাও যার যার সেক্টরে। গভীরভাবে কাজের সঙ্গে মিশে যাও। আর শুনো এই কোম্পানির অর্ডার সাকসেসফুলি হলে তোমাদের সবাইকে পুরুস্কার করা হবে।

সব ডিজাইনার বের হয়ে গেলো। আকাশ ঈশানকে বললো ভাইয়া ওদেরকে আমাদের হেল্প করতে হবে। দেখিতে ডিজাইন টা আমরা রিসার্চ করে?

এমন সময় নীলা ভাতের বাটি নিয়ে আকাশের চেম্বারে ঢুকলো। ঈশানকে দেখে বললো ভাইয়া তুমি এখানে। ভাবি এসেছে,তোমার চেম্বারে গেলো। সকাল বেলা এভাবে না খেয়ে আসছো তোমরা।

ঈশান বললো ভাই খাবার টা খেয়ে নে। বাড়ির খাবার মিস করিস না।পরে এই বিষয়ে কথা হচ্ছে।

আকাশ বললো আচ্ছা যাও। ঈশান বের হয়ে নিজের চেম্বারে গেলো। উষশীকে বসে থাকতে দেখে খুশি হলো।

এতো তাড়াতাড়ি আসবা আমাকে জানাবা না আকাশ।
কাজের চাপে আছিতো, নতুন বায়ারের কাজ, ডিজাইন সম্পূর্ণ আলাদা। ডিজাইনার গুলো এখনো ডিজাইন করতে পারছে না ঠিকমতো। হাতে সময় কম। আর বলে আসলে কি বউয়ের আদর পেতাম অফিসে।

যা দুষ্ট, খাবার টা বাড়ছি। হাত ধুয়ে আসো।
তুমি আসছো ক্যান, হাত ধুতে পারবো না খেয়ে দাও।
দেখো চেম্বারে যেকোনো সময়ে স্টাফের আগমন হতে পারে।
কেউ আসবে না, দরজা লক করা আছে।
নীলা খাবার বেড়ে আকাশ খাইয়ে দিলো।
আকাশ ল্যাপটপে স্যাম্পল দেখছে আর খাচ্ছে।

উষশী ঈশানকে খাইয়ে দিচ্ছে। কারণ ঈশান ও সেইম বাহানা করছে উষশীর কাছে।

আকাশকে খাওয়াতে খাওয়াতে নীলার চোখ পড়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে স্যাম্পল দেখে বলে এতো সোজা ডিজাইন।

আকাশ বললো কি বললা, তুমি এটা পারবা।

পারবো না মানে গতকালকেই তো তোমার জন্য একটা পাঞ্জাবিতে এইরকম সেইম ডিজাইন করছি
অবশ্য তুমি পাঞ্জাবি টা এখনো দেখো নাই। কারণ কালকের ওই বিষয়ের পর উপহারের কথাটা ভূলে গেছি।
তুমি এক্ষুনি ওইটা আনার ব্যবস্থা করো নীলা।

নীলা রিয়াকে ফোন দিয়ে এসব কথা বলে। রিয়া পাঞ্জাবি টা খুঁজে বের করে ইমরানের দাড়ায় পাঠিয়ে দেয়।

দুই ভাই খাওয়া শেষ করে। নীলা আর উষশী বাটি গুলো পরিষ্কার করে ব্যাগে নিয়ে নেয়। আকাশ ঈশানকে ফোন করে চেম্বারে ডাকে। ঈশান উষশীকে নিয়ে আকাশের চেম্বারে ঢুকে। এরপরে আকাশ ঈশানকে সবটা বলে। ঈশান বলে দ্রুত আগে পাঞ্জাবিটা আনুক ইমরান! তারপর দেখি স্যাম্পলের সাথে ম্যাচ খায় কিনা?

ইমরান পাঞ্জাবি নিয়ে আকাশের চেম্বারে ঢুকে। আকাশ পাঞ্জাবি টা হাতে নিয়ে দেখে স্যাম্পলের সাথে দারুণ ম্যাচ খেয়েছে। একেবারে ১০০ তে ১০০।

ঈশান নীলাকে বলে তোমাকে এই সেইম ডিজাইন টা একটা পেজে আর্ট করে দিতে হবে। তাহলে কাজ হয়ে যাবে।

নীলা ওকে ব্যাপার না! বলেই পেন্সিল আর পেজ নিয়ে আকাশের চেয়ারে বসে পড়ে।

আকাশ নীলাকে ওই চেয়ারে দেখে বলে এইতো নীলাকে একদম বসের মতো লাগছে। তুমি এতো সুন্দর ডিজাইন পারো তাহলে ইংলিশ নিয়ে পরছো ক্যান?

ইংলিশ বাবার পছন্দ! আর আমার আর্ট পছন্দ ছিলো। বাবার পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে এমএসসি করছি ইংলিশ নিয়ে।

তোমাকে আমি জব অফার করছি নীলা! আমাদের কোম্পানিতে ডিজাইনার হিসাবে যোগদান করতে পারো। মজা করে বললো

নীলা হেসে উঠলো, বিজনেস ম্যান আকাশ চৌধুরীর ওয়াইফ চাকরি করবে।

ঈশান বললো আরে ও মজা করছে।

আকাশ বললো এইটা যেহেতু গিফট করছো আমাকে। আমি যদি এইটা কোম্পানির সার্থে ব্যবহার করি তুমি রাগ করবে নীলা।

আরে না!

ঈশান বলে তাহলে এইটা তারা খানকে দিয়ে ১৫০০০ হাজার মালের অর্ডার পাস নিয়ে আসি।

উষশী বলে যাও! এতে আমাদের কোম্পানির লাভ।

আচ্ছা ভাবী তুমি ভাইয়াকে নিয়ে স্যাম্পলটা দেখিয়ে অর্ডার টা পাস করে নিয়ে আসো।

ইমরান আমার এসবে ইন্টারেস্ট নাই আমি চললাম।

উষশী বললো হ্যা যাও। এরপরে ঈশান আর উষশী স্যাম্পল নিয়ে বায়ারের চেম্বারে গেলো মাল পাস করতে।

এদিকে নীলা তারা খান নাম শুনে অবাক হয়ে যায়। আকাশ নীলার ডিজাইনের দিকে নিখুঁত ভেবে চেয়ে দেখছে।

বায়ার স্যাম্পল পেয়ে খুব খুশি। অর্ডার পাস করে দেয় চৌধুরী গ্রুপের।

চলবে,,,,

গল্পটি কেমন হয়েছে জানাবেন!!! বোনাস পর্ব লাগলে বলিয়েন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here