শেষটা_সুন্দর #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৩৬।

0
726

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৩৬।

রাবীর মেহুলের দিকে এগিয়ে আসতেই মেহুল আরো পিছিয়ে যায়। ভীত সুরে জিজ্ঞেস করে,

‘কী হলো?’

রাবীর জবাব না দিয়ে আরো অগ্রসর হয়। মেহুলের চোখে মুখে ভীষণ অস্বস্তি। রাবীর এগিয়ে গিয়ে মেহুলের দুই গালে তার গাল ঘষে। মেহুল চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। রাবীর সিটে সরে এসে বলে,

‘এবার ঠিক আছে।’

মেহুল চোখ মেলে তাকায়। বলে,

‘আমার গালে কি হলুদ কম ছিল যে আপনাকেও লাগাতে হয়েছে?’

রাবীর মৃদু হেসে বলে,

‘হলুদ ছিল, তবে আমার ছোঁয়া ছিল না। তাই সেটাও পরিপূর্ণ করে দিলাম।’

মেহুল কপাল কুঁচকে তার গালে হাত দিয়ে মিনমিনিয়ে বলে,

‘দাঁড়ি তো নয় যেন ক্যাকটাস। গাল’টা জ্বালা করে দিয়েছে।’

রাবীর তার দিকে চেয়ে বলে,

‘কী হলো, গালে হাত দিয়ে বসে আছেন কেন? এবার আপনি বাসায় যেতে পারেন। আমার কাজ শেষ।’

‘হু, যাচ্ছি। আপানাকে ডাকা’ই আমার ভুল হয়েছে।’

মেহুল গাড়ি থেকে নেমে দু’কদম এগিয়ে গিয়ে আবার গাড়ির কাছে গিয়ে বলে,

‘আপনি ভেতরে যাবেন না?’

‘না। আজ আর যাব না। কাল একেবারে আসব। আসছি।’

রাবীর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। মেহুলও আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে চলে যায়।

________

পরদিন খুব সকালেই মেহুল রিতাকে নিয়ে পার্লারে চলে যায়। বউ সাজাতে অনেক সময় লাগে। তাই একটু তাড়াতাড়িই চলে গিয়েছে সে। রিতাও তার সাথে সাজবে। মেহুলের সাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ব্রাইড সাজানোর রুমটা আলাদা। রিতা তাই সাজার জন্য অন্য রুমে বসেছে। তবে রিতার সাজ শুরু হওয়ার আগেই তার ফোনে একটা কল আসে। রিতা কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন কিছু বলে তাকে। যেটা শুনে সে আর বসে থাকতে পারে না; দ্রুত পার্লার থেকে বেরিয়ে যায়। তবে মেহুল তখন এসবের কিছুই জানতো না।

প্রায় চার ঘন্টা পর মেহুলের সাজ শেষ হয়। ঘড়িতে তখন এগারোটা বাজে। একটা লাল রঙের গর্জিয়াস বেনারসী পরেছে সে। তার সাথে গয়না আর গর্জিয়াস একটা মেকআপে অসাধারণ লাগছে। নিজেকে আয়নায় দেখে নিজেই যেন চিনতে পারছে না। সে পুরোপুরি রেডি হওয়ার পর একজন মেকআপ স্টাফকে বলল,

‘ঐ রুমে আমার একজন ফ্রেন্ড আছে, ওর মেকআপ কি হয়ে গিয়েছে?’

মেয়েটি বলল,

‘নাম কী উনার?’

‘রিতা।’

‘ননব্রাইডাল মেকআপ তো, এতক্ষণে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। আচ্ছা আপনি বসুন, আমি দেখছি।’

মেহুল একটা চেয়ারে বসে। ফোনটা পার্স থেকে বের করে অনেকগুলো ছবি তুলে। রাবীরকে ছোট্ট একটা মেসেজ দেয়, “কখন আসছেন?”

সেই মেয়েটি আবার রুমে এসে বলল,

‘ম্যাডাম, রিতা নামের ঐ রুমে কেউ নেই।’

মেহুল ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘মানে? ও তো আমার সাথেই এসেছিল। আপনারাই তো ওকে ঐ রুমে সাজার জন্য যেতে বললেন।’

‘হ্যাঁ, কিন্তু এখন তো উনি ঐ রুমে নেই। হয়তো সাজ শেষে চলে গিয়েছেন।’

‘না না, আমাকে না নিয়ে ও যাবে না।’

মেহুল তখন তার ফোন দিয়ে রিতার নাম্বারে কল লাগায়। কিন্তু, অদ্ভুত ব্যাপার! তার নাম্বার বন্ধ বলছে। মেহুল পরে সেই রুম থেকে বেরিয়ে পুরো পার্লার ভালোভাবে খুঁজে। কিন্তু রিতাকে সে কোথাও খুঁজে পায় না। সে এবার চিন্তায় পড়ে যায়। বাসায় মা’কে কল দেয়। জিজ্ঞেস করে, সেখানে রিতা গিয়েছে কিনা। কিন্তু রামিনা বেগম বললেন, রিতা সেখানে যায়নি। মেহুল রিতার মা’কে কল করে। জিজ্ঞেস করে, উনি কিছু জানেন কিনা। কিন্তু রিতার মাও কিছু বলতে পারেন না। মেহুল এবার ভীষণ চিন্তায় পড়ে। মেয়েটা হুট করে কোথায় চলে গেল? সে আরো কয়েকবার রিতার ফোনে কল করে কিন্তু, বরাবরই ফোনটা বন্ধ বলছে। মেহুল কী করবে বুঝতে পারছে না। সেই সময় তার ফোনে রাবীরের মেসেজ আসে। সে লিখেছে, তারা আর আধ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবে। মেহুল সময় দেখে।।বারোটা বাজতে চলল। এইদিকে রিতার কোনো খোঁজ নেই। পার্লারে ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখল, রিতা নাকি সাজতেই বসেনি। এর আগেই নাকি সে চলে গিয়েছে। মেহুল কোনো উপায় না পেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। তার গার্ডকে জিজ্ঞেস করে,

‘আপনি কি আমার ফ্রেন্ডকে পার্লার থেকে বেরুতে দেখেছেন?’

‘ম্যাডাম, আসলে অনেকেই তো যাচ্ছে বের হচ্ছে, আমি তো অতটা খেয়াল করিনি। কেন ম্যাডাম, কিছু হয়েছে?’

‘আসলে, ওকে কলে পাচ্ছি না। কোথায় আছে, সেটাও বুঝতে পারছি না।’

‘উনি হয়তো বাসায় চলে গিয়েছেন।’

‘না, বাসায় তো কল করিছি। বাসায় যায়নি।’

‘হতে পারে কোনো জরুরি কাজ পড়েছে। সেখানেই গিয়েছেন।’

মেহুলের চিন্তা বাড়ছে। সে বলে,

‘আচ্ছা আপনি বাসায় চলুন।’

মেহুল বাসায় গিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করে, রিতা এসেছে কিনা বা কারোর রিতার সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা। কিন্তু, সবাই তাকে বলে, রিতা এখানে আসেনি। তার চাচি বলেন,

‘রিতা তো তোমার সাথে গিয়েছিল তারপর তো সে আর এখানে আসেনি। তুমি একা গেলে যে?’

মেহুল বিচলিত সুরে জবাব দেয়,

‘চাচি, ও আমার সাথে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু হুট করে আবার পার্লার থেকে বেরিয়ে যায়। আর তারপর থেকে ওকে আমি অনেকবার করে কল দিয়েছি কিন্তু ওর ফোনও বন্ধ বলছে। আন্টিকেও কল দিয়েছিলাম কিন্তু আন্টি বলেছেন উনিও কিছু জানেন না। মেয়েটা হুট করে কোথায় চলে গেল? কোথাও যাওয়ার আগে তো ও অবশ্যই আমাকে বলে যেত। কিন্তু এভাবে না বলে কয়ে হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেল? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না চাচি।’

চাচি বলেন,

‘আরে, এত টেনশন করো না। চলে আসবে।’

মেহুল কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না। রিতা তো কখনোই এমন কিছু করেনি। কিছু আবার হয়নি তো?

বরপক্ষ সেন্টারে পৌঁছে গিয়েছে। বাসায় এখন কোনো মেহমান নেই। কেবল আছেন মেহুলের মা আর চাচি। বাকি সবাই সেন্টারে। তারা এখন মেহুলকে নিয়ে বেরুবেন। মেহুল তখনও রিতাকে লাগাতার কল করে যাচ্ছে, মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। তার চিন্তার মাত্রাও বাড়ছে। ঐদিকে রিতার মা বাবাও সেন্টারে গিয়ে মেয়েকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না।

মেহুল গাড়িতে বসে অস্থির গলায় মা’কে বলল,

‘মা, রিতার ফোন তো এখনও বন্ধ বলছে।’

রামিনা বেগমও চিন্তায় পড়লেন। বললেন,

‘কোথায় গেল মেয়েটা?’

‘বুঝতে পারছি না মা। ওর কোনো বিপদ হয়নি তো?’

‘আরে না, কিচ্ছু হবে না। চিন্তা করিস না দেখবি সেন্টারে ঠিক চলে আসবে।’

মেহুল সেন্টারে গিয়ে পৌঁছানোর পর তার সব কাজিনরা তার কাছে ছুটে আসে। মেহুল তখনও তাদের মাঝে রিতাকে খুঁজে। কিন্তু এখানেও রিতা নেই। সবাই তাকে ধরে ভেতরে নিয়ে যায়। মেহুল আশেপাশে রিতাকে খুঁজে চলছে। তবে পায়না। তাকে নিয়ে রাবীরের পাশে বসানো হয়। আর এত চিন্তায় চিন্তায় সে রাবীরের দিকে তাকানোর কথাও ভুলে গিয়েছে। তবে রাবীরের কাছে তার চোখ মুখ দেখে অন্যরকম লাগে। কিছুক্ষণ পরই সেখানে রিতার মা এসে মেহুলকে জিজ্ঞেস করেন,

‘মেহুল, তোমার রিতার সাথে কথা হয়েছে?’

‘না আন্টি। ও নাম্বার তো বন্ধ দেখাচ্ছে।’

‘হ্যাঁ। আমরাও তো ওকে খুঁজে পাচ্ছি না। ও কোথায় গিয়েছে?’

‘এই সেন্টারে কোথাও নেই?’

‘না, ভালোভাবে খুঁজেছি। পাইনি কোথাও।’

‘আচ্ছা আন্টি। আপনি চিন্তা করবেন না। চলে আসবে। হয়তো আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কোনো প্ল্যান করছে।’

রিতার মা চলে গেলেন। রাবীর তখন জিজ্ঞেস করল,

‘কী হয়েছে? কোনো সমস্যা?’

‘হ্যাঁ, রিতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? এখানেই আছে হয়তো। এত মানুষের ভিড়ে হয়তো বুঝতে পারছেন না।’

‘না রাবীর। ও এখানে নেই। আমার সাথে পার্লারে গিয়েছিল। তারপর সেখান থেকেই উধাও। আর এখন পর্যন্ত ওর ফোনও বন্ধ। চিন্তা হচ্ছে খুব।’

রাবীর তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,

‘চলে আসবে মেহুল। চিন্তা করবেন না।’

________

চারদিকে বেশ হৈ চৈ। মেহমানরা খেতে বসেছেন। ফটোগ্রাফাররা সব ছবি তুলাতে ব্যস্ত। তবে মেহুল ঠিকমতো কিছুই করতে পারছে না। রিতার এখনো কোনো খোঁজ নেই। চিন্তায় বুক ধুকধুক করছে তার। একটু সময় পেলেই রিতাকে কল করছে। রিতার মা বাবাও ঐদিকে খুব অস্থির। উনারাও তার সাথে যোগাযোগ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু সবাই বরাবরের মতোই ব্যর্থ।

এতসবের মাঝেই হুট করেই সেখানে অনেক সাংবাদিক এসে হাজির হন। সাংবাদিক দেখে মেহুল মেজাজ হারায়। রাবীরকে জিজ্ঞেস করে,

‘সাংবাদিক কেন? আপনি ডেকেছেন উনাদের?’

রাবীর অবাক হয়ে বলে,

‘না, আমি তো ডাকিনি।’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here