স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_২০

0
441

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_২০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

” কিছু কষ্ট। কষ্ট করে হলে-ও সহ্য করতে নিতে হয়। ” আমি না হয় আরাভ স্যারের খারাপ অতীত জেনে, তাকে সহ্য করে নিব। আরাভ স্যারের থেকে দূরে যেতে বলো না। দরকার পড়লে আমি সারাজীবন কুমারী হয়ে থাকবো। তবু্ও আরাভ স্যারকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি বিয়ে করলে, আরাভ স্যারকেই করবো। ”

স্মৃতির কথায় চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো স্রুতির। সে ক্রোধে বশিভূত হয়ে, স্মৃতির দুই গাল চেপে ধরলো। দাঁতের ওরপে দাঁত চেপে বলতে শুরু করল,

–তোকে কিভাবে বোঝালে বুঝবি? আরাভ তোর জন্য যোগ্য পাত্র নয়। সে অত্যন্ত জঘন্য এবং নোংরা মনের মানুষ। তুই আরাভকে বিয়ে করলে, সুখী হতে পারবি না। তোর বোন হই আমি। কখনো খারাপ চাইবো না তোর। একটা বার আমার কথা বোঝার চেষ্টা কর। আজকেই বাবা-মাকে বলে, তোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

–নিজের ভালোবাসা ঠিকই বুঝে নিয়েছো। আমার বেলায় কেন এত অনিহা? একটা কথা কান খুলে শুনে রেখো আপু৷ আজকে আমি আরাভ স্যারকে বিয়ে করার জন্য কান্না করছি। একদিন আমি বিয়ে না করার জন্য তোমরা আফসোস করবে। কথা গুলো বলেই স্মৃতি বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

রাতে সবাই মিলে খেতে বসেছে। আরাভ কিছুক্ষণ আগেই বাসায় এসেছে। মুখটা বরাবরের মতোই গম্ভীর। ভয়ে সাহস করে, কেউ দু’কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না। ছেলেটার রাগ সম্পর্কে সবাই অবগত। এমন সময় আকাশী নিজে কক্ষ থেকে বের হয়ে এসে, ডাইনিং টেবিলে বসে। আরাভ নিঃশব্দে নিজের স্থান থেকে উঠে, নিজের কক্ষ চলে যায়। সবাই নিরব দর্শকের মতো ছেলেটার দিকে চেয়ে রয়েছে। আকাশী সেদিকে মন না দিয়ে, খাবারের দিকে মনস্থির করল।

স্মৃতি কয়েকদিন হলো অভ্রদের বাসায় আসছে না দেখে, অভ্র স্রুতিরকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–তোমার বোন আমাদের বাসায় আসছে না কেনো? তুমি কি স্মৃতিকে কোনো কিছু বলেছো? মেয়েটা হঠাৎ করে, আমাদের বাসায় আসা ছেড়ে দিল। স্রুতির মুখে আঁধার ঘনিয়ে এলো। সে বিরক্ত মাখা মুখশ্রী করে বলল,

–ওর সামনে পরীক্ষা। পড়াশোনা রেখে, আমাদের বাসায় এসে পড়ে থাকলেই চলবে? তুমি কোথায় থেকে ভিজে এসেছো? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো। তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে। তুমি কি এখনো ছোট মানুষ আছো? যে তোমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে। স্রুতির কথা শুনে, অভ্র হাসিমাখা মুখশ্রী করে বলল,

–বর্ষার মৌসুম চলছে। বাহিরে গিয়ে দেখো। ছোট-বড় সবাই ভিজছে। চলো না। দু’জন মিলে ভিজে আসি। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে, বিয়ের পরে বউকে নিয়ে বৃষ্টিবিলাস করবো। ছোট বেলার কত ভিজতাম। মা কত বকতো। ভিজতে ভিজতে এক এলাকা থেকে, অন্য এলাকায় চলে যেতাম। অভ্রের কথায় স্রুতি হেসে দিল। নরম কণ্ঠে বলল,

–আজকে আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। তুমি যখন বলেছো। অবশ্যই তোমার সাথে একদিন বৃষ্টিবিলাস করবো। আজকে তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। তোমার জন্য না খেয়ে বসে আছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসলে, দু’জন মিলে একসাথে খাব। অভ্র আর কথা বাড়ালো না। নিঃশব্দে স্থান ত্যাগ করল।

বিষন্ন মন নিয়ে স্মৃতি ছাদে আসলো। ভেতরটা জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। ছন্নছাড়া হয়ে, ছাদের রেলিংয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল স্মৃতি। বাহির পুড়লে মানুষ দেখতে পায়। ভেতর পুড়লে কেনো দেখতে পায় না। বৃষ্টির সাথে সব দুঃখ কষ্ট গুলো ধুয়ে মুছে যেতো। কতই না ভালো হতো। আজকে স্মৃতি কাঁদবে। ভিষণ করে কাঁদবে। আজকে স্মৃতির চোখের পানি দেখার বা বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া কারো থাকবে না। স্মৃতি পরশ আবেশে আঁখি জোড়া বন্ধ করে, জোরে জোরে কয়েকটি শ্বাস নিল। দু’হাত বাড়িয়ে আকাশের দিকে মুখশ্রী রেখেছে। বৃষ্টির পানি এসে স্মৃতির মুখ উপচে পড়ছে। এমন সময় মুনতাসীর আসে, পেছনে থেকে কারো বাজে উক্তি কর্ণকুহরে আসতেই আঁখি জোড়া মেলে তাকায় স্মৃতি।

–মেয়ে মানুষ বৃষ্টির মধ্যে একা একটা ছেলের সাথে কি করছিস মিষ্টি পাখি? মুনতাসীরের কথা শুনে, স্মৃতি বিস্ময় নয়নে মুনতাসীরের দিকে দৃষ্টিপাত করে। পেছনের দিকে ঘুরতেই স্মৃতির আঁখি জোড়া স্থির হয় ছাদের এক কোণে। আরাভ স্থীর হয়ে ছাদের রেলিং ধরে ব্যস্ত শহরের দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি নিদিষ্ট জায়গায় স্থির। স্মৃতি নিজের দৃষ্টি ঘুরিয়ে মলিন মুখে মুনতাসীরের দিকে তাকালো। কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল,

–উনি যে ছাদে আছেন। সেটা আমি জামতাম না। জানলে কখনোই আসতাম না। মাকে কিছু বলবেন না প্লিজ। মুনতাসীর গভীর ভাবে স্মৃতিকে পর্যবেক্ষণ করছে। তার বিচক্ষণ আঁখি জোড়া বলছে, মেয়েটা কাঁদছে। দু-চোখ অসম্ভব ভাবে রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। ভালোবাসলে বুঝি এভাবেই কাঁদতে হয়। নিজের আঁখি জোড়া এতটা স্বার্থপর হয় কেনো? এরা নিজের হয়ে-ও অন্যের জন্য কাঁদে। মুনতাসীর গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–তুই কাঁদছিস মিষ্টিপাখি। মামি তোকে কি বলেছিল? সেটা কি তুই ভুলে গিয়েছিস? মামি বলেছে। তুই যদি আরাভের আশেপাশে যাস৷ তাহলে মামির মরা মুখ দেখবি। তাহলে জেনেশুনে আরাভের সাথে ছাদে এসেছিস কেন? মুনতাসীরের কথায় জ্বলে উঠলো না স্মৃতি। আহত কণ্ঠে বলল,

–আমি সত্যি জানতাম না। আরাভ স্যার ছাদে আছে। যদি জানতাম। তাহলে বিলম্ব করতাম না। আপনি এটা ভুলে যাবেন না। উনি আমার স্যার হন। মা প্রয়োজনের বাহিরে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু প্রয়োজনে তো কথা বলতে বলেছেন। আমার সব বিষয়ে আপনাকে এত মাথা ঘামাতে হবে না। কথা গুলো বলেই স্মৃতি চলে গেল। মুনতাসীরের মুখশ্রীতে উঠলো চমৎকার হাসি। সে ধীর পায়ে আরাভের দিকে এগিয়ে গেল। কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই আঁতকে উঠলো আরাভ। হুস আসলো তার। এতক্ষণ গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিল সে। মুনতাসীরকে দেখে, দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। মুনতাসীর রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,

–স্মৃতিকে ভালোবাসিস আরাভ?

–বেঁচে থাকার ইচ্ছে আছে মুনতাসীর ভাই? আরাভের উত্তরে মুনতাসীরের শিরা-উপশিরা কেঁপে উঠলো। ছোট একটা। কি ছিল এই কথায়? যার কারণে মুনতাসীর এতটা ভয় পেল। আরাভের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস হলো না মুনতাসীরের। সে নিঃশব্দে স্থান ত্যাগ করল। তা দেখে আরাভ হাসলো। সময় আমাদের এমন বানিয়ে দেয়। মানুষের সাথে ভালো করে, কথা বলতে আমরা ভুলে যাই।

পরের দিন প্রভাতের আলো ফুটতেই স্মৃতি উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজে চলে আসলো। বিজ্ঞান ভবনের দিকে এগিয়ে আসছিল স্মৃতি। এমন সময় আরাভের সাথে দেখা। আরাভ স্মৃতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–আজ থেকে তোমাকে প্রাইভেট পড়াবো না। এটা সবাই ভালো চোখে নিচ্ছে না। তুমি পদার্থ বিজ্ঞানের নতুন শিক্ষক রাখো। আমি তো কাউকে প্রাইভেট পড়াই না। তোমাকে পড়ালে, বাকি শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যায় করা হবে। স্মৃতি আরাভের দিকে না তাকিয়েই বলল,

–জি স্যার আমি আর আপনার কাছে আলাদা ভাবে পড়তে আসবো না। বাসায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই সকাল সকাল কলেজে চলে আসছি। কথা গুলো বলেই ক্লাস রুম চলে গেল স্মৃতি। আরাভ ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

সময় স্রোতের ন্যায় গড়িয়ে চলছে। জীবন যেমন থেমে থাকেনি। তেমন করে সময়-ও কারো জন্য অপেক্ষা করেনি। কিছু ধাপ এগিয়ে ঈদের আনন্দে মাতিয়ে তুলেছে শহরের প্রতিটি মানুষকে। আজকে স্মৃতি খুব খুশি। আজকে তার মা নিজে বলেছে স্রুতিদের বাসা থেকে ঘুরে আসতে। প্রিয় মানুষটিকে দেখার লোভ সামলাতে পারলো না স্মৃতি। ছুটে চলে আসলো বোনের বাসায়। সে কি জানতো। এই আসাই তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে। স্মৃতিকে রোকেয়া বেগম সালামি নেওয়ার জন্য ডাকছিলেন। স্মৃতি রোকেয়া বেগমের কাছে থেকে সালামি নিতে যাচ্ছিল। এমন সময় রোকেয়া বেগম স্রুতিকে-ও ডাকে। দুই বোন একসাথে যাবার সময়। স্মৃতির পা বেঁধে স্রুতি পড়ে যায়। সাথে সাথে স্রুতির আর্তনাদ সকলের কর্ণকুহরে এসে পৌঁছায়। স্মৃতি আতংকিত হয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। স্রুতি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থায় স্রুতি এত বাজে ভাবে পড়ে গিয়েছে। কথা ভাবতেই গলা শুকিয়ে কাট হয়ে আসছে। সে তো স্রুতিকে ফেলিয়ে দেয় নাই। সবাই স্রুতিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মুহূর্তের মধ্যে আনন্দের রেশ কেটে গিয়ে, চিন্তার রেশ গিয়েছে ধরলো প্রতিটি মানুষের মনে। ডক্টর ডাকা হলো। ডক্টরের কথা মতো স্রুতিকে বাসার সামনের হসপিটালে নেওয়া হলো। ঘন্টা চারেক পরে স্রুতিকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। স্রুতি বাসায় এসে, সজোরে কষে স্মৃতির গালে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here