প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_১৯

0
678

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৯

প্রাপ্ত বয়স্ক একজন পুরুষের সামনে যদি কোনো নারী নিজেকে এমন মোহনীয় আর আবেদনময়ী করে উপস্থিত করে তাহলে যেকোনো ছেলেই নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে আর সে নারী-টার জায়গায় যদি হয় তার ভালোবাসার মানুষ, একান্ত মনের মানুষ তাহলে তো মনের ভেতরের বেসামাল সকল অনুভুতিরা সজাগ‌ হবে এটাই নিশ্চিত।

ঠিক যেমন ইশান নিজের ভালোবাসার মানুষটার এমন কান্নামিশ্রিত মুখশ্রী, ফুলো ফুলো চোখ, টমেটোর মতো লাল হয়ে যাওয়া গাল দুটো দেখে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে।

ইশান তীরের মায়াবী মুখশ্রী নিজের দু হাত দ্বারা আবদ্ধ করে নেয়। কিছুক্ষন ধ্যান মেরে তীরের রক্তিম রাঙা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থেকে তীরের চোখের দিকে তাকায়। বুঝার চেষ্টা করে তীর কি চায় কিন্তু মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে তবে কি তীরও ইশানের ছোঁয়া পেতে চায়।

আচমকা তীরের গাল বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। ইশান নিজের বুড়ো আঙুল দিয়ে সেই জল পরম যত্নে মুজে দেয়। ইশানের ছোঁয়া যেন তীরের গায়ে কাটার মতো বিধছে। গলা শুকিয়ে আসছে, কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে। সারা শরীর ক্ষনেক্ষনে কেঁপে‌ উঠছে নাম না জানা ভয়ে। তীরের এমন কাঁপুনি যেন ইশানকে আরও উন্মাদ করে‌ দিচ্ছে। মেয়েটা ইশানকে কেন এভাবে পাগলের মতো কাছে টানছে বাধা দিচ্ছে না কেন?

ইশান এবার ধৈর্য হারা হয়ে আস্তে আস্তে করে নিজের ঠোঁট জোড়া বাড়িয়ে দেয় তীরের কাঁপাকাঁপা অধর জোড়ার দিকে। তীরের মুখের উপর‌ ইশানের গরম নিশ্বাস আছরে পড়ছে তাতে যেন সারা শরীর বরফের ন্যায়ে জমে গেছে। শত চেষ্টা করেও নড়াতে পারছে‌ না পা দুটো, আটকে গেছে যেন ফ্লোরের সাথে। নিশ্বাসের গতি ক্রমশ ভারি হয়ে আসছে তীরের, পেটের ভেতরের রঙিন প্রজাপতিরা সুরসুরি দিয়ে যাচ্ছে ক্ষনেক্ষনে। বা হাতে থাকা কানের দুল জোড়া জোরে চেপে ধরে তীর যার জন্য হাতের তালুতে গেঁথে গেছে দুল জোড়ার ধারালো কোনদ্বয়। কিন্তু তাতে তীরের কোনো হেলদোল নেই সে তো ভাসছে নতুন অনুভুতির জোয়ারে। যে জোয়ার তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বহুদুর।

ইশান যেই তীরের অধরে নিজের অধর মিলিত করতে যাবে ওমনি প্যান্টের পকেটে থাকা ইশানের ফোনটা বেজে উঠে। চারদিকের পিনপিনে নিরবতা যেন নিমিষেই কোলাহলে পরিনত হলো। ইশান নিজের সম্মতি ফিরে পেয়ে নিজেকে তীরের এতটা কাছাকাছি দেখার সাথে সাথে তড়িৎ বেগে তীরের কাছ থেকে ছিটকে দুরে সড়ে দাঁড়ায়। এটা কি করতে যাচ্ছিলো ইশান। এতটা ইউক কি করে হতে পারে ইশান ভেবে পাচ্ছে না। এতো দিন যেভাবে নিজের আবেগ, ভালোবাসা শামুকের মতো শক্ত গোলসের মাঝে বন্দি করে রেখেছিলো সেটা কিনা আজ এতো সহজে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলো। তীরকে এখন কী জবাব দিবে ইশান ভেবে পাচ্ছে না মেয়েটা যে এখনও টাই দাঁড়িয়ে আছে। কি করে পারলো এমন একটা বাজে কাজ করতে ইশান মাথায় আসছে না। নাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই ইশানকে এই ঘর থেকে প্রস্থান করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ ইশান ফ্লোর থেকে ফাইলটা তুলে তীরের দিকে একবারের জন্য না তাকিয়েই ঝড়ের গতিতে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার আগে দরজা শব্দ করে যায় যাতে তীর নিজের সম্মতি ফিরে পায়।

দরজার শব্দে তীর নিজের সম্মতি ফিরে পেতেই হাটু ভাঁজ করে বসে পড়ে ফ্লোরে, বসেই ডুকরে কেঁদে উঠে। কোনো জানি বুকের মাঝে খুব ব্যাথা অনুভব করছে। কি করতে চাচ্ছিলো তীর এটা কেন বাঁধা দিলো না ইশানকে। নিজের কাছে নিজেকে এখন খুব ছোট লাগছে। কি করে এখন ইশানের সামনে পড়বে ভাবতেই লজ্জায় গাঁ শিউরে উঠছে। কি ভাববে এখন লোকটা তাকে নিশ্চয়ই খুব বাজে মনমানসিকতার একটা মেয়ে ভাববে। কিছু ভাবতে পারছে তীর মাথা ভার হয়ে আসছে ওর। এই ঘর থেকে এখন বের হতে হবে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি।

তীর বা হাত ফ্লোরের উপরে রেখে যেই উঠতে যাবে ওমনি ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। বাথ্যায় চোখ মুখ খিচে বা হাতটা সামনে ধরতেই তীর বড় বড় চোখ করে তাকায়। রক্তে লাল হয়ে আছে হাতের তালু। ভয়ে গুলা শুকিয়ে আসছে এতটা বাজে ভাবে কানের দুল জোড়া গেঁথে গেছে কখন বুঝতেই পারলো না। এবার কি হবে এগুলা হাত থেকে তুলতে গেলে তো আরও রক্ত বের হবে। কিন্তু তারপরও এগুলা হাত তুলতে হবে কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই আস্তে আস্তে করে দুল জোড়া হাতের তালু থেকে তুলতেই রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। তীর সাথে সাথে গলায় থাকা ওড়নাটা দিয়ে হাতটা চেপে ধরে যাতে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। রক্তের কয়েকটা ফোঁটা ফ্লোরেও পড়ে।

তীর বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে ওয়াশরুমে যায়। ঊদ্দেশ্য কানের দুল জোড়া আর হাত, মুখ ধুয়ো। যাতে কেউ বুঝতে না পারে কি হয়েছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয় তীর, কিন্তু হাত থেকে রক্ত পড়া কমছে না তাই ওড়না দিয়ে আবার পেছিয়ে রেখেছে হাত আর কানের দুল জোড়া রেখে দেয় ইশানের টেবিলের উপর। চাইলে দুল জোড়া তীর নিয়ে যেতে পড়তো কিন্তু নিবে না এই দুল জোড়া ইশানকেই দিয়ে গেলো।

তীর আর ইশার সাথে দেখা করে না। ইশার সাথে দেখা করার তেমন মনমানসিকতা নেই এখন। তাই তাড়াতাড়ি ইশানের রুমে থেকে বের হয়ে সিড়ি বেয়ে ড্রয়িং রুম পেরিয়ে যেই তীর বাড়ি থেকে বের হতে নিবে তখনেই নেহা বেগম বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

–তীর কখন এসেছিস তুই? আর এমন তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছিস কেন পড়ে যাবি তো।

তীর সাথে সাথে স্টান মেরে দাঁড়িয়ে যায় আর হাতটা সাবধানে লুকিয়ে ফেলে। নেহা বেগমের দিকে তাকিয়ে জোড়া পূর্বক হাসি দিয়ে বলে।

–একটু আগে এসেছিলাম আন্টি।

–ওও ইশার সাথে দেখা হয়েছে?

এবার কি বলবে তীর মাথা কাজ করছেনা ইশার সাথে তো দেখা হয় নি। বরং যা হয়েছে ওর সাথে সেটা নেহা বেগমকে কোনো দিন বলতে পারবে না। তীর ঢোক গিলে বলে।

–না মানে আন্টি আসলে ওর সাথে দেখা হয় নি আমার। ওর ঘরে যখনেই ডুকতে যাবো তখনেই একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ মন পড়ে গেছে যেটা এখন না করলেই নয় তাই তাড়াতাড়ি করে চলে যাচ্ছি আর কি।

নেহা বেগম সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।

–ও আচ্ছা। কিন্তু তর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?

–ও কিছু না আসলে আর কয়েক দিন পরে বোর্ড পরীক্ষা তো তাই একটু টেনশনে আছি।

–ও আচ্ছা।

–তাহলে আসি এখন আমি।

–ঠিক আছে যা।

তীর যেতেই নেহা বেগম বলে উঠে।

–কিছু তো একটা হয়েছে? যেটা তীর আমার কাছ থেকে লুকাছে। ইশানকেও দেখলাম কেমন তাড়াহুড়ো করে চলে গেছে আর এখন তীর। ওদের মাঝে কিছু তো একটা হয়েছে? কথা বলতে হবে আমাকে ইশানের সাথে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি।

_______

হাই স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে ইশান। মাথায় ঘুড়ছে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা। নিজেকে এখন বার বার দোষারুপ করে যাচ্ছে কেন গিয়েছিলো বাড়িতে এসময় কেন? আর কেনই বা নিজেকে আটকাতে পারলো না? কেন এভাবে অনুভুতির সাগরে নিজেকে ভাসতে দিলো?

ফাঁকা একটা জায়গাতে এসে গাড়ি থামায় ইশান। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে দ্বিগুন। চোখ দুটো বন্ধ করে ড্রাইভিং সিটে মাথাটা হেলিয়ে দেয়। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। এর মাঝেই ইশানের পিএ আবির কল করে। মিটিং এর সময় হয়ে গেছে কিন্তু ইশান চলে এসেছে শহরের বাইরে। বার বার কল করেই যাচ্ছে আবির কিন্তু ইশান পিক করছে না। শেষের কলটা ইশান পিক করতেই ফোনের ওপাশ থেকে আবির তাড়াহুড়ো কন্ঠে বলে।

–স্যার কোথায় আপনি এদিকে তো সিকদার সাহেব অধৈর্য হয়ে পড়েছে আপনার অপেক্ষা করতে করতে। হয়তো এখন রেগে চলেও যেতে পারে।

–আসছি আমি ওনাকে আর দশ মিনিট অপেক্ষা করতে বলো।

–ওকে স্যার। আমি চেষ্টা করছি।

ইশান কল কেটে ঠোঁট দুটো ফাঁকা করে নিশ্বাস ছেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। অন্য দিন হলে আজকে এই মিটিংটা বাতিল করে দিতো কিন্তু এখন এই মিটিংটার উপরে কোম্পানির ভালো মন্দ নির্ভর করছে। তাই এক প্রকার মনে উপর জোর ঘাটিয়ে এই মিটিংটাতে সামিল হতে হবে ইশানকে।

#চলবে______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here